আর একটি কথাও নয়, চুপ!
- মিনা ফারাহ
- ৩০ জুন ২০১৮, ১৮:৪৬, আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮, ১৫:০১
২০০২ সালের ১৮ নভেম্বর রেজ্যুলেশন ১৪৪১ পাস করে ইরাক যুদ্ধের ম্যান্ডেট দিয়েছিল কে? সেই যুদ্ধই এখন বিশ্বজুড়ে ‘আইএস’ নামক অ্যাটম বোমা। জেনেভা কনভেশন, আইসিটি, জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের মিটিং, শান্তির নোবেল... শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সার্কাসের জন্ম দিয়েছে জাতিসঙ্ঘের এই ম্যান্ডেট। নিজের মানবাধিকার হত্যার রেকর্ড লুকিয়ে রেখে, উল্টো স্বৈরাচারীদের প্লাটফর্ম আরো বিশাল করছে। সেপ্টেম্বর এলেই ভয়ে মরি। এই প্লাটফর্মের কারণেই প্রতি বছর স্বৈরাচারীদের তাণ্ডব আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারছে। জাতিসঙ্ঘ এর সুযোগ করে দিচ্ছে। যারাই ভূমধ্যসাগরে সারা বছর রিফিউজি ডুবিয়ে মারছে- সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, পাকিস্তানের মতো ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সাফল্যের একটি দৃষ্টান্তও দেখাতে পারেনি। উল্টো, ভূমধ্যসাগরে লাশের সংখ্যা বাড়ছেই।
এর পরও আমেরিকার মানবাধিকারের সমালোচনায় মুখর! জানি না, এত লাশ দেখার পরেও, উদ্ভট চিন্তা কিভাবে আসে! আমেরিকার বহু দোষ। কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে কুৎসা রটানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। পৃথিবীতে এমন একটি দেশ যে এখনো আছে, সেটাই বিস্ময়! কারণ বাংলাদেশ দেখেছি। আমার মতো অন্য অনেক দেশের নাগরিকেরাই মাতৃভূমির অমানবিক অভিজ্ঞতা জানে। সত্য হলো, যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ, প্রতি বছর যেখানে লাখ লাখ নবাগত, মানুষের মতো জীবনের সুযোগ পায়। বর্তমানে অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের সংখ্যা প্রায় এক লাখ, স্বৈরাচারের স্টিমরোলারে পিষ্ট হয়ে দেশ ছাড়তে যারা বাধ্য হয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের রিফিউজি ক্যাম্প থেকে আসা বালকটি হয়তো হার্ভার্ডে ডাক্তারি পড়ছে। সোমালিয়ায় ডাকাতি পেশার সঙ্গে যুক্ত যুবকটি বর্তমানে সিলিকন ভ্যালিতে আইটি স্পেশালিস্ট। জাতিসঙ্ঘের বেপরোয়া আচরণের কথা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না।
ভবনটি যেখানে দাঁড়িয়ে, বিলিয়ন ডলারের জমি, মার্কিন ধনকুবের রকেফেলারের অনুদান। বার্ষিক খরচের ২৫ শতাংশ বহন করে আমেরিকা। মূলত জাতিসঙ্ঘ এক ধরনের এনজিও। কাজকর্মে ‘পুঁজিবাদীদের রাজনৈতিক ক্লাব’। এখানেই পাঁচটি ভেটো পাওয়ারের হাতে আট বিলিয়ন মানুষের মানবাধিকার বন্দী হয়ে আছে। ভেটোর কারণেই সিরিয়ার গণহত্যা বন্ধ হচ্ছে না, অথচ দুতার্তে-সিসির মতো খুনিদের বিচার বন্ধ করা হয়। ‘পাঁচটি শক্তির হাতে আট বিলিয়ন মানুষের মানবাধিকার বন্দী থাকাটা মানবসভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।’
ইন্টারনেটের কারণে কোনো খবর আর লুকানো থাকে না। ৯ বছর ধরেই মানবাধিকার ভঙের রেকর্ড ভাঙছে বাংলাদেশের অনির্বাচিতরা। কিন্তু কিছুই না করে, মহাসচিবসহ সবাই যেন সারি বেঁধে নতিস্বীকার করেছেন।
২
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খবর :
সিএনএন- ‘জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।’ সংবাদটিকে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া খুব রঙ মাখিয়ে প্রকাশ করেছে। গুজবে বিশ্বরেকর্ড করা মন্ত্রী বলতেই পারেন, আমেরিকা যাদের বিশ্বাস করে না, আমরা করব কেন? ওদের ঢোকার অনুমতি না দিয়ে সঠিক কাজ করেছি।
সংবাদটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। মানবাধিকার কমিশনারের দাবি, রিফিউজিদের সন্তানদের পরিবার থেকে আলাদা করে মানবাধিকার ভঙ্গ করছে আমেরিকা। সুইজারল্যান্ডে জাতিসঙ্ঘের ফিলিপ অ্যাস্টন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ বৈষম্যপূর্ণ। ট্রাম্প আমলে যুক্তরাষ্ট্রে গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। বৈষম্য আরো তীব্র হচ্ছে। শিশু মৃত্যুহার বেড়েছে। চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে।’ গরিব হচ্ছে? বৈষম্য হচ্ছে? নিশ্চয়ই বাস্তবতা খতিয়ে দেখতে হবে।
কার্যত আমেরিকাতে এখন কাজের লোকের অভাব। কালো এবং হিস্পেনিকদের বেকারত্ব ৬০ বছরে সর্বনিম্ন। কর্মীর অভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেকায়দায়। এই দেশে কেউ না খেয়ে থাকে না। সাহায্যের টাকা নিয়ে কেউ ড্রাগ খেলে কিন্তু কিছুই করার নেই। জাতিসঙ্ঘের উচিত, মানবাধিকারের কম্পাসটি রিপেয়ার করা।
ভূমধ্যসাগরের তীরে বালুর ওপর লাল শার্ট পরা, সিরিয়ার দুই বছরের মৃত আয়লান কুর্দিকে ভুলে যাইনি! ভুলে যাইনি হাজার হাজার রিফিউজিসহ ভূমধ্যসাগরে মানবাধিকারের নিয়মিত সলিলসমাধি। স্টিমরোলার থেকে বাঁচতে, লিবিয়ার দালালদের খপ্পরে পড়ে ইতালির পথে হাজার হাজার বাংলাদেশীর সলিলসমাধি। সমুদ্র, নদী, উপত্যকা, গুহা, ট্রাক, কারাগার... পৃথিবীর অর্ধেকটাই যেন ভাসমান রিফিউজিদের কারাগার। যখন লিখছি, খবরের শিরোনাম- ‘ইউরোপ যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে ২০০ জনের প্রাণহানির আশঙ্কা।’ মৃতদের ৭২ জন সিলেটী। নাকে তেল দিয়ে কি ঘুমাচ্ছে ভদ্রলোক জাতিসঙ্ঘ?
বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে রিওগ্রান্দে নদী... সর্বত্রই যখন রিফিউজিদের অভয়াশ্রম, তখন প্রত্যেক দিন রেকর্ড ভাঙছে- ডাউ জোন্স। আর বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর শাসকরা আরো বেশি বেশি রিফিউজি তৈরি করে, ক্ষমতার রশি স্থায়ী করছেন।
‘যেসব দেশ প্রতি বছর লাখ লাখ রিফিউজি তৈরি করছে তাদের দায়ী করে, অনুদান বন্ধের ঘোষণা ট্রাম্পের।’ আমেরিকাকে রিফিউজিদের অভয়াশ্রম বানানোর বিরুদ্ধে যেকোনো ট্যাক্সপেয়ার ইমিগ্র্যান্ট এই পলিসিকে সমর্থন করাই স্বাভাবিক। কারণ, এদের পেছনে যখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে ওয়াশিংটন, তখন সোমালিয়া-বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর শাসকরা আরো বেশি বেশি রিফিউজি তৈরি করতে থাকেন।
৮ জুন, নিউ ইয়র্কের সাপ্তাহিক ঠিকানার লিড নিউজ। ‘দেশে দেশে বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক আশ্রয় ভিক্ষার হিড়িক।’ অতি সম্প্রতি মেক্সিকো-টেক্সাস বর্ডারের মধ্যখানে ‘রিওগ্রান্দে’ নদীতে হৃদয় ও নাঈম নামের ১৮ এবং ২১ বছরের দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে দেশে পাঠানো হয়েছে। রিওগ্রান্দে নদীটা বহু হৃদয়-নাঈমের লাশের ঠিকানা। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা সরকারের কাজ একটাই, নাঈম-হৃদয়ের মতো হাজার হাজার লাশ তৈরির মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। এরা জাতিসঙ্ঘের ডিবেটিং ক্লাবের সম্মানিত তারকা। উন্নতি প্রচারে ওদের পোস্টারে জাতিসঙ্ঘের স্ট্যাম্প থাকাটা বাধ্যতামূলক। আয়লান কুর্দি, হুগো, অ্যালেক্স, নাঈম, হৃদয়... জাতিসঙ্ঘের বেপরোয়া আচরণের কথাই বলছে।
ইরাকের সিসি, সোমালিয়ার আবদুল্লাহ, নাইজারের মাহমুদ, মিয়ানমারের সু চি, বাংলাদেশের বাহিনী- একজনকেও কাঠগড়ায় তোলা হয়নি। চাইলে পারত। আমি ট্রাম্পের সমালোচক আবার বহু পলিসির সঙ্গেও একমত। ‘ঠিকানা’র লিড নিউজটি হাজারের মধ্যে একটি সাক্ষী। বাংলাদেশ থেকে টাকা এবং মানুষ, দুটোই সমানতালে পালাচ্ছে কিন্তু কেন? জাতিসঙ্ঘের উচিত, এসব বেপরোয়ার লাগাম টেনে ধরা। ‘সেপ্টেম্বর মাসের প্রহসন’ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
নয়া দিগন্ত, ‘মানবাধিকার তদন্তের অনুরোধে সাড়া দিচ্ছে না বাংলাদেশ।’
বিষয়টি রোহিঙ্গা ক্রাইসিস। কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলতে হলে, মূলত ভিকটিম দেশকেই আবেদন করতে হয়। অন্যান্য দেশের সদস্যরা সমর্থন করে থাকেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং সু চিকে আইসিটির কাঠগড়ায় তোলার প্রয়োজনীয়তা, আওয়ামী লীগের চেয়ে কেউ বেশি জানে না। কারো সঙ্গে আলোচনা না করে, তারাই কিন্তু অতিরিক্ত আট লাখ রোহিঙ্গা ঢুকিয়েছে।
বর্মি সেনাবাহিনী এবং সু চির নিষ্ঠুরতা যুদ্ধাপরাধের ক্লাসিক দৃষ্টান্ত। হলোকাস্টে যেভাবে পুড়িয়ে মারত, একইভাবে মেরেছে মিয়ানমারের সন্ত্রাসীরাও। হলোকাস্টের সময় গুগল ছিল না। এখন আছে। গুগল ম্যাপে ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, পুড়িয়ে মারা ইত্যাদির তথ্যপ্রমাণ জাতিসঙ্ঘের হাতে। কিন্তু আইসিটির পথে, প্রধান বাধাকে আওয়ামী লীগ আজ অবধি ১০টি অনুরোধের একটিরও উত্তর না দেয়ার অভিযোগ মানবাধিকার কমিশনার জেয়াদের। এর প্রমাণও আছে। উদাহরণস্বরূপ, একমাত্র হাইকমান্ডই আজ অবধি ‘গণহত্যা’ শব্দটি উচ্চারণ না করে উল্টো, সংসদে সু চিকে ‘অসহায়’ উপাধি দিলেন! কেউই কি এর সমালোচনা করলেন? অসহায় নয়, সু চি একজন প্রমাণিত সিরিয়াল কিলার। চরম দণ্ড কি তার প্রাপ্য নয়?
যা হোক, জাতিসঙ্ঘের অনুরোধে সাড়া না দেয়ার কারণ, ভেটো পাওয়ারদের আপত্তি। ওয়ানবেল্টওয়ের সদস্য বাংলাদেশ। আরাকানে বেল্টওয়ে ছাড়াও, শত শত প্রকল্প বানাচ্ছে চীন-রাশিয়া-ভারত। আসলে, এদের অনুমতি ছাড়া কিছুই করার ক্ষমতা নেই ঢাকার।
অন্য দিকে, মিলিয়ন ডলারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ৪৭ বছরে সবচেয়ে বড় লাভবান- ক্ষমতাসীনরাই। গণহত্যার অভিযোগে সাড়া দেয়ার বদলে, দেশে দেশে গিয়ে ভিক্ষা তোলার খবর মিডিয়ায়। রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ফটোসেশনের রেকর্ড। বিদেশে গিয়ে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানোর মাধ্যমে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার অভাবনীয় প্রয়াস। ঢাকা যেন রেকর্ডসংখ্যক রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের গন্তব্যস্থল। তালিকায় এবার জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। আসবেন, দেখবেন, ফটোসেশন করবেন, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্র“তি দেবেন। অথচ দানের টাকা অবৈধভাবে ব্যবহার করার অভিযোগ।
এবার আসল কথা। তথ্যপ্রমাণ হাতে, জাতিসঙ্ঘ তবু কেন ‘অনুরোধেই’ সীমাবদ্ধ? জাতিসঙ্ঘ জানে, ঢাকার অপেক্ষায় থাকলে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে জীবনেও আইসিটিতে তোলা যাবে না। মহাসচিব এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারবেন না।
যুদ্ধাপরাধী হিসনে হেব্রের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে নয়া দিগন্তে কলাম লিখেছিলাম। প্রবাসী সুলায়মানের অভিযোগের ভিত্তিতে নিউ ইয়র্কের হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ এবং জাতিসঙ্ঘের সমন্বয়ে ঐতিহাসিক বিচারের কথা লিখেছি। এরকম বহু দৃষ্টান্ত ডাইনে-বাঁয়ে। মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ৯ বছরে বাংলাদেশের ফোর্সড ডিসঅ্যাপেয়ারেন্সের সংখ্যা, হিসনে হেব্রের তুলনায় বেশি হবে। সাদা পোশাকে গুম-খুনের সংখ্যাও হিসনে হেব্রের তুলনায় বেশি হতে পারে।
১৯ জুন, বণিক বার্তা, ‘বাংলাদেশ সফরের অনুমতি পাচ্ছে না জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিদল।’ -কমিশনার জেয়াদ।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি চায় জাতিসঙ্ঘ। এদের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না? বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ জাতিসঙ্ঘের সাথে আওয়ামী লীগের ‘মামু সম্পর্ক’ এমনকি কিসিঞ্জারের পক্ষেও ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। মামাবাড়ির আম-জাম, কাঁঠাল যা চেয়েছে, সেটাই পেয়েছে। ভদ্রলোক থেকে সন্ত্রাসী, সবাই কাঁঠাল খেয়েছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি সাত দিন ধরে পালন করতে বাধ্য করা হলো। সর্ববৃহৎ দলবলসহ সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসঙ্ঘে একক কোনো ব্যক্তির বক্তৃতার রেকর্ড কার? বান কি মুনকে কনস্যুলেটের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ‘গড়াগড়ি খেতে’ দেখেছি। শুধু নিয়ম রক্ষার্থে এদের ঢুকতে দেয় না? তবুও সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘে যাওয়া বন্ধ করা উচিত।
মূল কথা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ঢাকার অনুমতি জরুরি কেন? বরং এসব বন্ধ করতে বাধ্য করা জাতিসঙ্ঘের দায়িত্ব। অন্যথায় নানা ব্যবস্থা নিতে পারে বৈ কি।
পারবে না। কারণ গোদের উপর বিষফোঁড়া, শান্তিরক্ষা মিশন। বাংলাদেশ একনম্বরে, সংখ্যায় ৯৪০২। যে ৭০টি দেশ সৈন্য পাঠায়, অধিকাংশই গণতন্ত্রহীন। তালিকাটি নেটে। তাদের দিয়ে শুধু শান্তিরক্ষাই নয়, বিতর্কিত নির্বাচন কিভাবে করায়! হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচসহ অনেকেই কিলার বাহিনীর বিলুপ্তি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তার পরও প্রতি বছরই কিভাবে এমন বাহিনীর আরো সদস্য নিচ্ছে! আমাদের সৈন্য দিয়ে আফ্রিকার বিতর্কিত নির্বাচন করানো হচ্ছে কিন্তু যেভাবে ৫ জানুয়ারি রক্তাক্ত হলো, কিছুই করেননি বান কি মুন। উল্টো কনস্যুলেটে বিতর্কিত ব্যক্তির জন্মদিনের কেক কেটেছেন।
৩
‘ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ নামে গুগলে সার্চ দিলে প্রথম ১০টির তালিকায় বাংলাদেশ। বার্ষিক রিপোর্টে প্রতি বছরই অধঃপতন। আগের লেখাতে ‘গুলাগ’ শব্দটি ব্যবহার করেছি। ত্বকী, সাগর-রুনি, সাত মার্ডার, ইলিয়াস আলী ইত্যাদি কি ইঙ্গিত দেয় না, গোপন গুলাগের অস্তিত্ব দেশজুড়ে। ৭ মার্ডারের পরেই গুলাগের অস্তিত্ব ফাঁস হয়েছে। পরিবেশবিদের স্বামীকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার পরে যে বর্ণনা মিডিয়ায়, বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিনের বেলায়ও গুলাগের একই বর্ণনা।
পেছন থেকে সাদা পুলিশ চোখ বেঁধে ফেলে। নাকে ওষুধ মাখায়। গাড়িতে তুলে কয়েক ঘণ্টা দূরে নদীর ওইপাড়ে নিয়ে যায়। গভীর জঙ্গলে একটি বিরাট বাড়ির বর্ণনা। দূরে গাড়ির শব্দ। ফিসফিস কথা বলে। অদৃশ্য বস্ আসে। নির্দেশ দিয়ে চলে যায়। দরজার নিচে রেখে যায় ভাতের প্লেট। হঠাৎ চোখ খুলে দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে রাস্তায় ফেলে চলে যায়...। তবে পরিবেশবিদের স্বামীর মতো অধিকাংশই ভাগ্যবান নয়। ভাগ্য ভালো হলে, লাশ পায়। খুঁজলে ইলিয়াস আলীর মতো অনেককেই হয়তো এখনো জীবিত পাওয়া সম্ভব।
প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও কেন নীরব জাতিসঙ্ঘ? নির্বাচনের আগে রাজনীতির যে ‘টাইম বোমা’টি টিকটিক করছে, এমন দুঃসময়ে মহাসচিবের মানবিক সফর নিতান্তই অমানবিক। তাদের এসব ফটোসেশন, আসন্ন নির্বাচনে আরো বেশি সহিংসতা বৈধতা দেবে। আরো বেশি বেপরোয়া হওয়ার উৎসাহ জোগাতে পারে। উচিত, বেছে বেছে নয় বরং সু চি এবং সেনাবাহিনীর মতো প্রত্যেকটি ক্রিমিনালকেই আইসিটির কাঠগড়ায় তোলা।
ই-মেইল : : [email protected]
ফেসবুক : : minafarahfacebook
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা