২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘পুতিনের বন্ধু’ এরদোগানের বিজয়

রজব তাইয়েব এরদোগান - ছবি : সংগ্রহ

তুরস্কের নির্বাচনে নির্বাহী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ে বিজয়ী হয়েছে এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টির) নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট। প্রেসিডেন্ট এরদোগান এখন ‘অসীম’ ক্ষমতার অধিকারী। পশ্চিমা গণমাধ্যমে বেশ কিছু দিন ধরে তাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। রাশিয়ার সাথে তুরস্কের কৌশলগত সম্পর্ক বেশ দৃশ্যমান। এ সম্পর্ক কতটা গভীর তার একটি উদাহরণ হচ্ছে- মধ্যরাতে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সকালে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রথম টেলিফোনটি এসেছে পুতিনের কাছ থেকেই। পশ্চিমা গণমাধ্যমে এরদোগানকে ‘সুলতান’ বিশেষণ বহু আগেই দেয়া হয়েছে।

লন্ডনের ইকোনমিস্ট কিংবা জার্মানের স্পাইগেলের মতো সাময়িকীতে বহুবার সুলতানদের পাগড়ি পরা এরদোগানের ছবিকে প্রচ্ছদ করা হয়েছে। সমালোচনার ধরন এমন- যেন এরদোগান উসমানীয় সুলতানদের ঐতিহ্যে ফিরে যেতে চাওয়া এমন এক প্রেসিডেন্ট, যিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় জনতুষ্টিবাদকে প্রাধান্য দিয়ে অপার ক্ষমতার মালিক হতে যাচ্ছেন। কিন্তু এরদোগান সুলতান আল জিল্লুল্লাহ নন কিংবা খলিফাতুল মুসলিমিনও নন। তুরস্কের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একজন প্রেসিডেন্ট তিনি। সমালোচনা যাই হোক না কেন, জন-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের একক ক্ষমতার চাবিকাঠি এখন তার হাতেই। প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলোপ হয়ে যাবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করবেন তিনি। মন্ত্রিসভার জবাবদিহিতাও থাকবে তার কাছে।

এরদোগানের অসীম ক্ষমতার সাথে পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, বিরাট বিমানবন্দর, তার নিজস্ব জেট বিমান নিয়ে বহু কাহিনী প্রচার করা হয়েছে। সেই সাথে এবারের নির্বাচনে তিনি হেরে যাচ্ছেন, এমন ইঙ্গিত তো ছিলই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- তার দল একে পার্টি যেখানে ভোট পেয়েছে ৪২ দশমিক ০৫ শতাংশ, সেখানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এরদোগান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ। তার জোটের আসন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ৩০০ আসন পেরিয়ে ৩৪৪-এ পৌঁছেছে।

এ কথাও সত্য- ভূরাজনৈতিক নানা হিসাবে পুতিন এখন ‘এরদোগানের বন্ধু’। কিন্তু পুতিনের ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল আর এরদোগানের রাজনৈতিক কৌশল এক নয়। ভ্লাদিমির পুতিন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জেলে ভরে, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে এবং ডাণ্ডা দিয়ে পিটিয়ে রাজনীতির মাঠ আগে পরিষ্কার করেছেন। অপর দিকে, এরদোগান পশ্চিমা গণতন্ত্রের পথ বেয়ে ক্ষমতার মগডালে গেছেন। ইস্তাম্বুলের মেয়র থেকে প্রধানমন্ত্রী, এরপর প্রেসিডেন্ট। ভোটের রাজনীতির মাধ্যমেই তিনি ক্ষমতা সংহত করেছেন। পুতিনের মতো প্রহসনের নির্বাচন তাকে করতে হয়নি এমনকি উগান্ডার মতো নির্বাচন তো নয়ই। বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনও নয়। এখন পর্যন্ত তার বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভোটে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা ভোট কেন্দ্রে তার সমর্থকদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করা হয়নি। কিংবা কূটকৌশল করে বিরোধী নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করার মতো ঘটনাও ঘটেনি।

গত এক দশকে এরদোগানকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান, দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা, শরণার্থীর চাপ ও আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এরদোগানের নীতিকে সমর্থন দিয়েছেন। সম্ভবত, এর প্রধান কারণ- দেশটিতে আপাতত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে, বেকারত্বের হার কমেছে এবং একই সাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তুরস্কের ভূমিকা ও গুরুত্ব বেড়েছে; যা তুরস্কের জনগণের মধ্যে তুর্কি খেলাফতের ঐতিহ্যের মুসলিম ভাবধারাসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দুর্নীতিগ্রস্ত সেনাতন্ত্রের সাথে সেকুলার রাজনীতিবিদদের শিকড় চিরতরে কেটে দিয়েছেন। কথায় কথায় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অবৈধ সুযোগ তিনি আর রাখেননি। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যমে সেনা হস্তক্ষেপ বন্ধের ব্যাপারে এরদোগানের পদক্ষেপ প্রশংসা পায়নি, যতটা গুরুত্ব পাচ্ছে ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিচারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।

কিন্তু জনগণের সমর্থন নিয়ে তিনি যখন বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছেন, তখন পশ্চিমা বিশ্বের জন্য গণতন্ত্রের এই ‘বিষ গেলা’ ছাড়া করণীয় বেশি কিছু নেই। আর দেশটির অবস্থান এমন যে, উপেক্ষাও করা যায় না। ফলে পশ্চিমা বিশ্বকে এরদোগানের সমালোচনা যেমন করতে হচ্ছে, তেমনি তাকে নিয়েই চলতে হবে। এক সময়ের ফুটবল মাঠের এ খেলোয়াড় যেমন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভোটের মাঠের পাকা খেলোয়াড়, তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতির কুশলী খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর পুতিন যেমন রাশিয়াকে বিশ্বরাজনীতির রঙ্গমঞ্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাজির করেছেন, তেমনি এরদোগানও উসমানীয় খিলাফতের সুলতানদের মতো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছেন। ভুলে গেলে চলবে না যে, পারস্য ছাড়া পুরো মধ্যপ্রাচ্যে তুর্কিরাই শাসন করেছে। ফলে হিজাজের বেদুইন থেকে জর্দানের হাশেমীয় গোত্র কিংবা মিসরীয় বা ফিলিস্তিনিদের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাক্সক্ষা কিংবা বেঈমানির সাথে তারা পরিচিত। আরবরা কখন কী চায়, তুর্কিরা সম্ভবত তা ভালো বুঝতে পারে। ফলে এরদোগান আবার বিজয়ী হয়ে আসায় পশ্চিমা বিশ্বের মতো অনেক আরব শাসককের বেদনা কম নয়। ফলে এরদোগানের প্রতিপক্ষ, সেকুলার রাজনৈতিক জোটকে শুধু পশ্চিমা দেশগুলো নয় সৌদি-আমিরাতি পক্ষ থেকে সমর্থন জোগানো হয়েছে। তবে এরদোগানের বিজয়ে সবচেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন কাতারের আমির। যেসব দেশের সরকারপ্রধানের কাছ থেকে প্রথম অভিনন্দন এসেছে, তার মধ্যে তিনি আছেন। কাতারের তরুণ আমির তার ভাগ্য আর এরদোগানের ভাগ্য এক সুতায় বেঁধে ফেলেছেন। একই সাথে এ বিষয়ে সবচেয়ে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। কাতারে ক্ষমতার পরিবর্তন কিংবা দেশটিকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার যেকোনো পরিকল্পনা থেকে এমবিএসকে দূরে সরে থাকতে হবে। আগামী দিনে কাতারে মার্কিন সৈন্যদের সাথে আরো বেশি তুর্কি সৈন্য দেখা যাবে, নিশ্চিত করে বলা যায়।

আরেকজন ব্যক্তির জন্য এরদোগানের বিজয় শুধু অস্বস্তি নয়, উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার পর থেকে তুরস্ক-ইসরাইল সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। গাজা সীমান্তে নতুন করে হামলার পর ইসরাইলি দূতকে বহিষ্কার করেছে আঙ্কারা। ইসরাইল এখন প্রকাশ্য হামাসের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এরদোগানকে হাজির করার চেষ্টা করবে। তবে তার জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছেÑ গাজায় এখন ফিলিস্তিনের পতাকার সাথে নিয়মিত তুর্কি পতাকাও উড়তে দেখা যায়। ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে রিয়াদ নয়, আঙ্কারার দিকে তাকিয়ে থাকে। হামাসের সাথে সম্পর্ক এরদোগান কখনো অস্বীকার করেননি, বরং আন্তর্জাতিক ফোরামে হামাসকে বৈধ সংগঠন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তুর্কিরা হয়তো উসমানীয় খিলাফতের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি দায় বোধ করেন। ফলে ইসরাইলবিরোধী বড় বিক্ষোভগুলো এখন ইস্তাম্বুলে হচ্ছে। উড়ছে ফিলিস্তিনের পতাকা। অপর দিকে, এরদোগানের বিজয় মিসরের স্বৈরশাসক জেনারেল সিসির জন্য অস্বস্তিকর। ড. মুরসি মিসরের বৈধ প্রেসিডেন্ট এ নীতি থেকে এখনো সরে আসেনি তুরস্ক। ক্ষমতাচ্যুত মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সিসি সরকারের একটা বোঝাপড়া না হওয়া পর্যন্ত মিসরের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক কতটা স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত নয়।

এরদোগানের এবারের বিজয়ের প্রভাব আগামী দিনে আরব বিশ্বের সঙ্ঘাতময় রাজনীতিতে আরো নতুন মাত্রা যোগ করবে, না স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যাবে; তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন যে মেরুকরণ প্রক্রিয়া চলছে তা দ্রুত এগিয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সিরিয়া সঙ্কট, ইউরোপে শরণার্থী সমস্যা, আরব দেশগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, ফিলিস্তিনিদের স্বাধিকারের সংগ্রাম, রাশিয়ার সাথে ন্যাটোর সম্পর্ক এবং ইরান ও ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের মতো জটিল ভূরাজনৈতিক ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তুরস্ককে বাদ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের কোনো সমাধান সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে এরদোগানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘মুসলিম বিশ্বের কণ্ঠস্বর’। তার দেশের ও রাজনীতির স্বার্থে এরদোগান যে তার কণ্ঠস্বর আরো জোরালো করবেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

এরদোগানের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে সিরিয়া সমস্যার সমাধান বের করা। ইরানকে সাথে নিয়ে যে আলোচনার পথ তৈরি করা হয়েছে তা শেষপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। ৩৪ লাখ সিরীয় শরণার্থীর বোঝা তাকে বহন করতে হচ্ছে। তবে সিরিয়ার সাথে তুরস্কের যে এক ধরনের বোঝাপড়া হচ্ছে তা স্পষ্ট। সিরিয়ার আফরিন ও মানবিজে কুর্দিবিরোধী অভিযানে নীরব সমর্থন দিয়েছে আসাদ সরকার। এক সময় আসাদ ছিলেন এরদোগানের পারিবারিক বন্ধু। সেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। সিরিয়ার সাথে একটি বোঝাপড়ায় আসতে রাশিয়ার ভূমিকাও হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আসাদের মেন্টর শুধু রুহানি নন, পুতিনও। একে পার্টির ঘনিষ্ঠ, ডেইলি সাবাহ জানাচ্ছেÑ পুতিন এরদোগানকে অভিনন্দন জানানোর পর দুই নেতা আলোচনা করেছেন দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো, বিশেষ করে সিরিয়ায় দুই দেশ কিভাবে একসাথে কাজ করবে তা নিয়ে। একই সময় অভিনন্দন আসে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কাছ থেকে। পুতিনের সাথে এরদোগানের বন্ধুত্বের মূলে ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের নানা যোগ-বিয়োগ রয়েছে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খেলোয়াড়ের আসন থেকে ছিটকে এখন নিছকই অস্ত্রব্যবসায়ীর ভূমিকায়। আর কেজিবির এক সময়ের এজেন্ট পুতিন হয়ে উঠেছেন মধ্যপ্রাচ্যের মুখ্য খেলোয়াড়।

পশ্চিমা বিশ্ব এখন পর্যন্ত এরদোগানকে এক ধরনের উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখতে চায়। নির্বাচনের পর ইউরোপীয় দেশগুলো খুব সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আগামী দিনে এ উপেক্ষার নীতি কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এর প্রধান কারণ এরদোগানের ‘পুতিন কার্ড’। ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্ক এখন রাশিয়ার অস্ত্র ক্রেতা দেশগুলোর একটি। এরদোগান জানেন কিভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়। রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ব্যাপারে চুক্তির পর, লকহিড মার্টিন ঘোষণা দিয়েছে টেক্সাস থেকে এফ-৩৫ ফাইটার জেট তুরস্কে পৌঁছে যাবে। ১০০ জেট বিমানের অর্ডার অনেক আগে দেয়া হলেও মার্কিন কংগ্রেস তুরস্কে বিক্রির ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

মস্কো-আঙ্কারা কৌশলগত সম্পর্কের ঘোষণা আগেই দেয়া হয়েছিল। এর পর থেকে মার্কেল-ম্যাক্রোঁর চোখ ছানাবড়া। কারণ, ইউরোপে রাশিয়ার যেকোনো হস্তক্ষেপে বাফার হিসেবে কাজ করবে তুরস্ক। কৃষ্ণসাগর ও বলকান অঞ্চলে রাশিয়া যদি প্রভাব বাড়াতে চায় তাহলে তুরস্ককে দরকার। এ সুযোগে পূর্ব ইউরোপের অটোমান সাম্রাজ্যর অধীনে থাকা দেশগুলোতে প্রভাব বাড়াচ্ছে আঙ্কারা। কসোভো, আলবেনিয়া আর বসনিয়ায় এরদোগান ‘আপন মানুষ’। অপর দিকে, তুরস্কের সমর্থন ছাড়া ইউরোপের নিরাপত্তা কখনো নিশ্চিত হবে না, তা এরদোগান ভালোই বোঝেন। ফলে দরকষাকষির সুযোগটি তিনি ভালোভাবেই নিচ্ছেন। ইউরোপের এখন যে নিরাপত্তার শঙ্কা, তার মূলে রয়েছে ন্যাটোর দুর্বল অবস্থান। এর ভিত্তি তৈরি করেছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আর ইউরোপের দেশগুলোর বিভক্তি এবং উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের চেতনায় ধস নামিয়েছে। কিন্তু সব ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে এরদোগানের ওপর। এরদোগানের ‘ইসলামপন্থী’ পরিচয় মেনে নিতে পারছে না ইউরোপ। জার্মানি ও ফ্রান্সে অবস্থানরত তুর্কিরা যেন এরদোগানকে ভোট না দেয়, সেজন্য বহু তৎপরতা চালানো হয়েছে। এরদোগানের পক্ষে সেখানে প্রচারণা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠতায় ইউরোপের চোখে এরদোগান ‘ভিলেন’। কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী জাতীয়তাবাদী তুর্কিদের চোখে এরদোগান ‘হিরো’। এবার ভোটের ফলাফল এটাই বলে। 
alfazanambd@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement