২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ শাবান ১৪৪৬
`

মার্কিন প্রভাব মোকাবেলায় তালেবান

-

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তানে ফেলে যাওয়া মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র জরুরি ফেরত দেয়ার জন্য তালেবান সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তালেবান সরকার জানিয়েছে, বিলিয়ন ডলারের বিনিময়েও সেসব অস্ত্র ফেরত দেয়া হবে না। তারা বলেছে, এগুলো তালেবান সরকারের সম্পদ। পশ্চিমারা সেনা প্রত্যাহারের বেশ ক’দিন পর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন ফান্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেও তালেবান নীতি বা তাদের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে বা একটুও দমন করতে পারেনি। মি: ট্রাম্পের অস্ত্র ফেরতের আহ্বানের পর আমেরিকায় জব্দ করা আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ নিয়েও নতুন করে বিতর্ক পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।

আমেরিকার শেষ সামরিক বিমানটি কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ে, ১৪ আগস্ট ২০২১। সেদিনই কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। তখন কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর থেকে সামরিক ও বেসামরিক উদ্ধার কার্যক্রম চলছিল। জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এবং জোটবাহিনীর বিমানে করে সব মিলিয়ে এক লাখ ২৩ হাজার বেসামরিক ব্যক্তিকে সরিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজারের বেশি বাসিন্দা কাবুল ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যবিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ওয়াশিংটনে বলেন, ‘নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।’ তালেবানদের হাতে কাবুল পতনের পর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গচ্ছিত আফগানিস্তানের ৭ বিলিয়ন ডলার জব্দ করেন। পরে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার মানবিক ত্রাণের জন্য সুইসভিত্তিক তহবিলে স্থানান্তর করেন। তবে আজও সে অর্থ তালেবানদের হাতে আসেনি এবং তহবিলটি তখন থেকে সুদে আসলে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তালেবান আমিরাত পুরো অর্থ ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। উভয়পক্ষ পরস্পর দু’টি বিরোধী বিষয় নিয়ে এখন রশি টানাটানি করছে।

তালেবান প্রশাসন যেসব যুদ্ধসরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারসহ ৭৮টি বিমান, হামভিসহ ৪০ হাজার সামরিক যান, অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো তিন লাখের বেশি অস্ত্র, এয়ার-টু-গ্রাউন্ড অপারেশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র, বিভিন্ন যোগাযোগ ডিভাইস এবং সিস্টেম এবং বিবিধ সামরিক সরঞ্জাম ও উপকরণ। এসব অস্ত্র ও সরঞ্জামের মূল্য ৭ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়। সেনারা দেশ ত্যাগের সময় অনেক যুদ্ধযান অকেজো করে দেয়। উল্লেখ্য, এসব যুদ্ধযান ও উড়োজাহাজ তালেবান সরকার বিদেশী প্রকৌশলীদের নিয়োগ দিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করেছে। যুদ্ধ উপকরণগুলো ফেরত না পেয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার কাবুলে আক্রমণ চালাবেন কি না সে নিয়ে চলছে নানা হিসাব। তবে সে সম্ভাবনা কম। তার প্রথম মেয়াদে, ট্রাম্প ২০২০ সালে দোহা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সংশ্লিষ্টতার অবসান ঘটানো, সেনা প্রত্যাহার এবং সঙ্ঘাতের অবসান ঘটানো। এখন তার দৃষ্টিভঙ্গি আরেকটি যুদ্ধ শুরু করার চেয়ে কূটনৈতিক ও আর্থিক চাপের দিকে বেশি প্রায়োগিক বলে মনে হচ্ছে।

আফগানিস্তানের স্থিতিস্থাপকতা এবং সম্পদশীলতা ইতিহাসজুড়ে স্পষ্ট। আফগানিস্তানে লিথিয়াম, তামা এবং বিরল উপাদানসমৃদ্ধ খনিজ রয়েছে। এই সম্পদের বিকাশ রাজস্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করছে, যা অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করতে এবং সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বা আর্থিক চাপের প্রভাব হ্রাস করতে পারে। উন্নত রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করবে, আফগানিস্তানকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাজারে আরও কার্যকরভাবে সংহত করতে সহায়তা করবে।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খনি ও অবকাঠামো প্রকল্পে চীন ও রাশিয়ার সম্পৃক্ততাসহ অর্থনৈতিক উদ্যোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন তালেবানকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিয়েছে। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তৈরির মাধ্যমে তালেবানরা আন্তর্জাতিক চাপ থেকে উদ্ভূত কিছু মানবিক প্রভাবকে প্রশমিত করতে পারে। আফগানিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পে চীন ও রাশিয়ার মতো বড় শক্তির সম্পৃক্ততা তালেবানের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। আফগানিস্তানে চীনের সম্পৃক্ততার কারণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগস্থলে আফগানিস্তানের অবস্থান এটিকে চীনের জন্য একটি কৌশলগত সম্পদে পরিণত করেছে। আফগানিস্তানে বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন এ অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াতে চায় এবং দেশটির অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। আফগানিস্তান চীনের বিআরআই, বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার লক্ষ্য এশিয়া এবং এর বাইরেও যোগাযোগ ও বাণিজ্য রুট উন্নত করা। আফগানিস্তান পর্যন্ত চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, সিপিইসি সম্প্রসারণ এই উদ্যোগের একটি মূল উপাদান। তালেবানের সাথে সম্পর্ক জোরদার এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা করে চীন সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাস এবং বিনিয়োগের জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করছে। চীনের সম্পৃক্ততা এই অঞ্চলে পশ্চিমা প্রভাবের পাল্টা ভারসাম্য হিসাবেও কাজ করছে। শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে চীন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঐতিহ্যগত আধিপত্যকে মূলত চ্যালেঞ্জ করছে। তালেবানদের ভেতরও প্রচুর আত্মবিশ্বাস কাজ করছে এবং স্বাধীনভাবে পশ্চিমা শক্তির মোকাবেলা করতে ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও বিত্তের অধিকারী হচ্ছে। আফগানিস্তানে ক্রমাগত অস্থিতিশীলতা চীনের জন্য নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে অপ্রথাগত আন্তঃদেশীয় নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কাও রয়েছে। চীনের সম্পৃক্ততার লক্ষ্য এই উদ্বেগগুলো মোকাবেলা করা এবং এই অঞ্চলে তার স্বার্থ রক্ষা করা।

আফগানিস্তানে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর জড়িত থাকার বেশ কিছু ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার দেশগুলো আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতার কুফল নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সম্ভাব্য শরণার্থীর ঢল, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থী মতাদর্শের বিস্তার নিয়ে শঙ্কিত। আফগানিস্তানের কৌশলগত অবস্থান এটিকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বিশ্ববাজারে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুটে পরিণত করেছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, সিপিইসি এবং ট্রান্স-আফগান পাইপলাইন, টাপির মতো প্রকল্পগুলো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়ার দেশগুলো কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন, সিএসটিও এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন, এসসিও-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করেছে।

মধ্য এশিয়ার দেশগুলো তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক মনোভাব গ্রহণ করেছে। যদিও তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে, তারা তালেবানের প্রভাব এবং আঞ্চলিক গতিশীলতার ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে। আফগান তালেবানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক জটিল ও বহুমাত্রিক। ইরান ও তালেবানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা বৈরিতা ও সহযোগিতার সময়কাল দ্বারা চিহ্নিত। ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে তালেবানের শাসনের সময়, ইরান একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল, বিশেষত মাজার-ই-শরিফ-এ ইরানি কূটনীতিকদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর। তার পরও ইরান তালেবানের সঙ্গে বাস্তবসম্মত যোগাযোগ রেখেছে। ইরানের প্রাথমিক উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা এবং আফগান শিয়া সম্প্রদায়, বিশেষত হাজারা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা। ইরান ও আফগানিস্তানে হেলমান্দ নদীর পানির অধিকার নিয়ে বিরোধ চলছে। ইরান আফগানিস্তানের রাস্তাঘাট নির্মাণ ও জ্বালানি প্রকল্পসহ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে। এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বাড়ানোর বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে এসব বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্সের, আইএসকেপির মতো গোষ্ঠীর উপস্থিতি নিয়ে ইরান উদ্বিগ্ন। ইরান এই নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় তালেবানদের সাথে সহযোগিতা করছে। এজন্য তালেবানরা ইরানের তৈরি অস্ত্র পেয়েছে। ইরান লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। এই সমর্থন ইরানকে আফগান জনগণের মধ্যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি এবং প্রভাব বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। ইরান তার স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রচারের জন্য তালেবানের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।

ইরান-তালেবান গোপন সম্পর্ক আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির একটি স্পর্শকাতর ও জটিল দিক। মার্কিন প্রভাব মোকাবেলা এবং এ অঞ্চলে ইসরাইলি স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রে তাদের অভিন্ন স্বার্থের কারণে ইরান ও তালেবানের মধ্যে গোপন সম্পর্ক রয়েছে। কিছু তালেবান গোষ্ঠীর প্রতি ইরানের সমর্থনের প্রমাণ থাকলেও এই সম্পর্কের পরিধি কিছুটা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ইরান ও তালেবান উভয়ই আইএসআইএস-এর মতো গোষ্ঠী থেকে হুমকির সম্মুখীন আর আফগানিস্তানে আইএসের বড় উপস্থিতি রয়েছে। এই পারস্পরিক হুমকি তাদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং কৌশলগত সমন্বয়কে উৎসাহিত করেছে। ইরানের বাস্তববাদী কূটনীতি দেশটিকে তার আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার জন্য তালেবানসহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখতে সচেষ্ট করেছে।

আফগান তালেবানরা মার্কিনিদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার ট্রাম্পের নির্দেশ অমান্য করে উল্লেখযোগ্য শক্তি, দাবি মানতে অস্বীকৃতি এবং স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে। পরিবর্তে, তারা তাদের বিজয় দিবস উদযাপনের সময় বন্দী মার্কিন সামরিক সরঞ্জামগুলোর কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেছে এবং এমনকি পরামর্শ দিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের আরও উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করা। তালেবানের সরঞ্জাম ফেরত দিতে অস্বীকৃতি তাদের বর্তমান সামরিক ও রাজনৈতিক লাভের পাশাপাশি বাইরের চাপ প্রতিহত করার ক্ষমতাকেও তুলে ধরেছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement
পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, মধ্যরাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘২০০ ভরি’ স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই পাঠ্যবই মুদ্রণে সফল ৩৫ প্রতিষ্ঠানকে এনসিটিবির সংবর্ধনা অপারেশন ডেভিল হান্টে আরো ৫৮৫ জন গ্রেফতার সেনা অফিসারদের হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ দেশের আকাশসীমায় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট : বিমান বাহিনী রমজানে কোনো নিত্য পণ্যের দাম বাড়বে না : অর্থ উপদেষ্টা নতুন গবেষণা ইনস্টিটিউটের আত্মপ্রকাশ মিরসরাইয়ে উদয়ন মেধাবৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন নাহিদের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে যা জানা গেল জার্মান নির্বাচন : বুথ ফেরত জরিপে এগিয়ে সিডিইউ

সকল