শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন ও ইসলাম : চাই সমন্বয়ী প্রক্রিয়া
- মুসা আল হাফিজ
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৪৫
শিক্ষাব্যবস্থা একটি জাতির সভ্য ও সংস্কৃতিবান হওয়ার দিশা ও দলিল। জাতীয় উন্নতি, অগ্রগতি, বিকাশ, সঙ্কট উত্তরণ ও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারের পথনির্দেশ করে শিক্ষাব্যবস্থা। তাই শিক্ষায় জাতীয় মনন, বুদ্ধিবৃত্তি ও হৃদয়বৃত্তির প্রতিফলন অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের শিক্ষা খাত বিপুল সম্ভাবনাময়। কিন্তু এর প্রকৃত বিকাশের কাজ কমই হয়েছে। আমাদের চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী এবং ১৩ লাখের মতো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। আছে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক, কারিগরি, মাদরাসা ও কওমি মাদরাসা এবং উচ্চ শিক্ষা। এর সাথে যুক্ত করব মক্তব ও ফোরকানিয়া মাদরাসাকেও, যেখানে প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। বিদেশী কারিকুলাম অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কথাও বলতে হবে। এত বৈচিত্র্যময় ধারা, এত বিপুল সংখ্যক ছাত্র ও শিক্ষক আর এত বহুমুখী শিক্ষাপ্রয়াসে সমন্বয় ও সংস্কার খুব জরুরি। এই সমন্বয় ও সংস্কারে মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ইসলামী শিক্ষার যথাযথ ও যথোচিত অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক।
কিন্তু সেই প্রক্রিয়া কতদূর এগিয়েছে? অন্তত ৯টি শিক্ষা কমিশন আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পরে। ১৯৭২ এর কুদরত-ই খোদা শিক্ষা কমিশন থেকে নিয়ে ২০২১ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম। চরিত্রগতভাবে কমিশনগুলোর ভাবাদর্শিক মূল সুর যেন বেঁধে দিয়েছিল কুদরত-ই খোদা কমিশন। সেই সুর এখনো বাজছে। আওয়ামী সরকারের গঠিত কমিশন ২০২১ সালে শিক্ষাব্যবস্থার যে রূপরেখা হাজির করে, তা জাতীয় জীবনে প্রবল বিতর্ক ও অস্থিরতা তৈরি করে। চব্বিশের ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের ফলে গঠিত সরকার একে বাতিল করে কিন্তু নতুন কোনো রূপকল্প নিয়ে কাজ করেনি; বরং ২০১২ সালের সৃজনশীল শিক্ষাক্রম অবলম্বনে পাঠ্যপুস্তক সংস্কার ও পরিমার্জন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে।
এই সরকারের কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল, শিক্ষা কমিশন গঠন করবে এবং গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জাতির মেরুদণ্ড পুষ্ট করবে। সরকারের দায়িত্ব ছিল জাতির আশা-আকাক্সক্ষা, বিশ্বাস-ঐতিহ্য, মনন এবং দক্ষতা ও মানব-উন্নয়নের সমন্বয় ঘটানো।
বিগত স্বৈরতন্ত্র শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে অবক্ষয় ঘটিয়েছে, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতিকে স্থায়ী অবয়ব দিয়েছে এবং দক্ষতার প্রতি জোর না দিয়ে দেদার ডিগ্রি ও জিপিএ বিতরণ করেছে। পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃত করেছে, ইসলামী শিক্ষার সঙ্কোচন করেছে, ইসলামবৈরী বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়েছে, হিন্দুত্ববাদী বয়ান ও এলজিবিটিকিউ প্রমোট করেছে।
নৈতিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি শিক্ষার মানের বিনাশ ঘটিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল থেকেই তা আন্দাজ করা যায়। ২০২৪ সালে সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’ ইউনিটে (বিজ্ঞান) পাসের হার ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞানের ‘খ’ ইউনিটে পাসের হার মাত্র ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ভাগে অন্তর্ভুক্ত। এতে মূলত তিনটি বিষয় উল্লেখ আছেÑ ১. আইনানুযায়ী; ২. সর্বজনীন, গণমুখী এবং ৩. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন নয়, গণমুখী চরিত্র এখানে অবিকশিত, শিক্ষা অবৈতনিক হতে পারেনি প্রকৃত অর্থে। আর বাধ্যতামূলক অর্থে শিক্ষা নিজেকে জাহির করতে পারেনি গণস্তরে। চরিত্রগতভাবে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মকে খুব গৌণ অবস্থান দিয়েছে। মুসলিমদের জন্য আবশ্যিক যে জ্ঞান, তা থেকে বঞ্চিত মুসলিম ছেলেমেয়ে। এই শিক্ষা তাদের ফরজ ধর্মীয় কর্তব্য, শিক্ষায় এর প্রতিফলন তাই তাদের অধিকার কিন্তু কোনো কমিশনই এদিকে মনোযোগ দেয়নি।
কমিশনগুলো নানা ক্ষেত্রে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে কিন্তু মৌলিক ও বুনিয়াদি দৃষ্টি ও সৃষ্টির অভাবে তা যথাযথ ফলদানে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো কমিশনই গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের সমন্বিত উপাদানগুলো নিশ্চিত করেনি; বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সমন্বয়হীন একটি একপেশে শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা নীতিনির্ধারণে অদূরদর্শিতা যেমন ছিল, তেমনি জাতিসত্তার সাথে সাংঘর্ষিক উপাদান পাঠ্যপুস্তকে লক্ষ করা গেছে।
শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি শিক্ষিত, নৈতিকতাসম্পন্ন ও দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তোলার দায়িত্ব পালনে আমাদের ব্যর্থতার আকারটি কেবল প্রসারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে জাতীয় বিনির্মাণের জন্য জরুরি হলো, শিক্ষা সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন। এই শিক্ষানীতি ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ও একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দক্ষতা নিশ্চিত করবে। সেখানে নতুন আলোকে স্থির করতে হবেÑ ১. শিক্ষাদর্শন; ২. শিক্ষার ভিশন ও মিশন এবং ৩. শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
শিক্ষাদর্শন যথাযথ না হলে শিক্ষার অন্যান্য দিক পথ হারাবে। শিক্ষা-সম্পর্কিত কোনো বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনা, ভাবনার প্রয়োগ ঘটানোই শিক্ষাদর্শনের অন্বেষা। শিক্ষাদর্শনের উপর ভিত্তি করে সামগ্রিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে তোলা হয়। এই দর্শন কেবল ইহজাগতিক বা বস্তুগত হতে পারে না; বরং এতে থাকতে হবে ইহকালীন কল্যাণ, মানবমেধার সম্ভাবনা ও সামর্থ্যরে যথাযথ বিকাশের কর্মসূচি, আবার থাকতে হবে পারলৌকিক সাফল্যের ধর্মীয় দিকনির্দেশনাও। এই শিক্ষাধারা যেমন বস্তুগত উন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক-প্রযুক্তিগত ও শাস্ত্রীয় দক্ষতার অনন্য বিনির্মাণ নিশ্চিত করবে, তেমনি নৈতিক-মানবিক ও চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশে নিবেদিত থাকবে।
শিক্ষার রূপকল্প বা ভিশন হবে সর্বজনীন। শিক্ষা সবার মৌলিক অধিকার। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মানসম্মত ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতার সরবরাহ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিক্ষাকে নিছক প্রাতিষ্ঠানিকতার বাঁধনে আবদ্ধ করা চলবে না। শিক্ষা হবে সবার জন্য, শিক্ষা হবে জীবনব্যাপী। শিক্ষার অভিলক্ষ্য বা মিশন তাই পরিষ্কার। তা হলো, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার সুযোগের সম্প্রসারণ এবং দক্ষতা ও মানবিক উন্নয়নভিত্তিক জীবনব্যাপী শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।
কী হবে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য? অবশ্যই তা হবে ‘দেশীয় সত্তা ও মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন, দক্ষ ও ভালো মানুষ তৈরি।’
শিক্ষাপাঠ্যক্রম কিসের জন্য প্রণীত হবে? দু’টি জিনিস নিশ্চিত করার জন্য ১. জ্ঞান ও ২. দক্ষতা। শিক্ষা কমিশনকে মনে রাখতে হবে, জ্ঞান মূলত দু’টি ভাগে বিভক্ত ১. আসমানি বা নাজিলকৃত জ্ঞান; ২. অর্জিত জ্ঞান, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং দার্শনিক চিন্তার ফলস্বরূপ। আসমানি জ্ঞানও দু’টি দিক নিয়ে আসে, ব্যক্তিগত আবশ্যকতা ও সামগ্রিক আবশ্যকতা।
অপরদিকে দক্ষতারও আছে বিভিন্ন ধরন। প্রথমত, মৌলিক দক্ষতা যার মধ্যে রয়েছে ভাষাগত দক্ষতা, মৌলিক গণিত ও কর্মদক্ষতা। দ্বিতীয়ত, উচ্চতর চিন্তা-দক্ষতা। যার মধ্যে আছে সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সৃজনশীলতা এবং শিক্ষণ দক্ষতা। তৃতীয়ত, সংবেদনশীল দক্ষতা। যার মধ্যে রয়েছে নির্ভরশীলতা, দায়িত্বশীলতা, ইতিবাচক মনোভাব, আত্মনির্ভরশীলতা, অভিযোজন ক্ষমতা, নিয়মতান্ত্রিকতা, আত্মপরিচালনা ও সততা।
এসব দক্ষতা কিভাবে অর্জিত হবে? বৈজ্ঞানিক ও ব্যবহারিক দক্ষতার জন্য মানুষের অর্জিত, গবেষণালব্ধ জ্ঞানে দক্ষ ও পরিপক্ব হতে হবে। মানসিক ও আত্মিক দক্ষতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য আসমানি জ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হবে। যা নৈতিকতা, কর্মদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার মূল্যবোধের বিকাশ নিশ্চিত করবে। এর মানে পরিষ্কার। আমরা তথ্য-প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষার সর্বাত্মক বিকাশ ও অনুশীলন যেমন চাইছি, তেমনি এর পাশাপাশি চাচ্ছি মুসলিম পরিসরে ওহিভিত্তিক হেদায়েত তথা দ্বীনের জ্ঞানের চর্চা ও অনুশীলন। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের জন্য থাকবে যার যার রিলিজিওনের ফান্ডামেন্টাল শিক্ষা। মুসলিমদের জন্য ‘ফান্ডামেন্টালস অব ইসলাম’ তথা ফরজ ইসলামী শিক্ষা হবে বাধ্যতামূলক। উচ্চায়তনিক শিক্ষায় ‘প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় কোর্স’ থাকবে বাধ্যতামূলক। অর্থনীতির শিক্ষার্থীরা ইসলামী অর্থনীতি জানবে না, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা জানবে না, আইনের শিক্ষার্থীরা ইসলামিক লিগ্যাল থিওরি জানবে না এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সমন্বয়ের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিভাবে? প্রথম-চতুর্থ আন্তর্জাতিক মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে গৃহীত (১৯৭৭-৮৩) মক্কা ডিক্লারেশনে অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। মক্কা ডিক্লারেশনে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার যে সুপারিশগুলো ঘোষিত, তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। ফলে শিক্ষা কমিশনকে অবশ্যই সেই ডিক্লারেশনের সুপারিশগুলোকে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিফলিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, ইসলামী শিক্ষা আমাদের জাতীয় আকাক্সক্ষার বিষয়। চব্বিশের ২৭ মার্চ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে স্পষ্ট, বাংলাদেশে ধর্মশিক্ষার প্রতি আগ্রহ ক্রমবর্ধমান। প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপ ২০১৯ জানাচ্ছে, হিন্দু-মুসলিম তরুণদের ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ ধর্মকর্মে যুক্ত। বস্তুত ধর্মীয় শিক্ষা এবং ধার্মিকতার প্রতি বাংলাদেশের জন-আকাক্সক্ষা গভীর ও বিস্তারণশীল।
আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুতর সঙ্কট হলো নৈতিকতার অবক্ষয় ও অনুপস্থিতি। নৈতিকতা শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিফলিত না হলে দক্ষ ও শিক্ষিত দুর্নীতিবাজ আমরা তৈরি করব। কিন্তু নৈতিকতা নিয়মিত ও একনিষ্ঠ অনুশীলনের বিষয়। সেই অনুশীলন না থাকায় নৈতিকতার পৃষ্ঠাগুলো মৃত কথামালায় পরিণত হয়েছে। এই বাস্তবতায় কেবল ধর্মীয় ও নৈতিক পাঠ থাকাই যথেষ্ট নয়, অনুশীলনের প্রশিক্ষণও জরুরি। যারা ধর্ম বাদ দিয়ে নৈতিক শিক্ষার কথা বলেন, তারা আসলে সোনার পাথরবাটির প্রস্তাব করেন।
এমনিতেই সমাজে বহুমুখী অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা ও বিকৃত যৌনাচারের প্রসার ঘটছে। তরুণ প্রজন্ম লাগামহীন ইন্টারনেটে নেশাগ্রস্ত, অসুস্থ। ২০২৩ সালে আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইন্টারনেটের কারণে ৯১ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভোগছে। এদের মধ্যে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, তাদের সমস্যার ‘পুরোপুরি দায়’ ইন্টারনেটের। আর ‘মোটামুটি দায়ী’ করতে চায় ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এই বাস্তবতা বিপজ্জনক অ্যালার্ম দিচ্ছে।
র্যাগ ডে, গালা ডিনার ও হোলি উৎসবের মতো বিজাতীয় সংস্কৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সয়লাব। চারদিক থেকে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে এবং সমাজে আত্মহত্যা, অবৈধ সম্পর্ক ও পরকীয়ার প্রবণতা বাড়ছে, কিশোর অপরাধ, কিশোর গ্যাং কার্যক্রম, মাদকাসক্তি, ছিনতাই ও রাহাজানির মতো অপরাধ ব্যাপক।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ তরুণ, যা একটি দেশের জন্য ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হিসেবে বিবেচিত। এই তরুণদের সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষায় দক্ষ না করে অগ্রসর জাতি গঠন অসম্ভব।
পাঠ্যক্রমে তাই ধর্মশিক্ষাকে গৌণ করার পথরোধ করতে হবে। সব ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সাধারণ বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে থাকবে : বাংলাদেশ পরিচিতি, ইতিহাস ও সভ্যতা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ধর্মশিক্ষা। পাশাপাশি ভাষাগত ও কম্পিউটার দক্ষতা অর্জনও বাধ্যতামূলক করতে হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে অবশ্যই বাংলা, ইংরেজি ও আরবি তিনটি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আরবি পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা, একই সাথে দেশের একটি বিশাল জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। সব স্তরের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচিতে জীবনমুখী দক্ষতা ও বিষয়ভিত্তিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি মসজিদভিত্তিক মক্তব, ফোরকানিয়া মাদরাসা, ইবতেদায়ি মাদরাসা, আলিয়া মাদরাসা ও কওমি মাদরাসা। আলিয়া মাদরাসা থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রীরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। কওমি মাদরাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে (দাওরা) বিগত সরকার মাস্টার্স ডিগ্রির সমমানের নাম করে দায়হীন একটি ঘোষণা দিয়েছিল। যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রগুলোতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার সুযোগ পায় না এবং সাধারণ শিক্ষাধারায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এ সঙ্কট উত্তরণে কওমি মাদরাসা বোর্ড ও সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। কওমি সনদের স্বীকৃতি কার্যকর করা এবং শিক্ষাবোর্ডের ন্যায্য ক্ষমতায়ন রাষ্ট্র্রের দায়িত্ব। মাদরাসা তার স্বকীয়তা রক্ষা করে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে অধিকতরো দক্ষতা ও ক্রিয়াশীলতা নিশ্চিত করার পথ সন্ধান করবে এবং উলুমুল মানকুলাতের (ওহির জ্ঞান) সাথে উলুমুল মাকুলাত (বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান) জ্ঞানগুলোর উপযুক্ত ও যথার্থ সমন্বয় ঘটাবে। বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭-৮ শতাংশ মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। এমতাবস্থায় মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি, অবিকল্প।
ইসলামী শিক্ষা একুশ শতকে সঙ্কট উত্তরণের পথে আমাদেরকে সেবা দিতে চায়। আমাদের দেহ, মন ও আত্মার সমন্বিত বিকাশের ধারায় দক্ষতা, সৃজনশীলতা, মননশীলতা নৈতিকতা ও মানবিক সমৃদ্ধির বিকাশে পথ দেখাতে চায়। আমরা তার কল্যাণকারিতা থেকে বঞ্চিত থাকব আর কতকাল?
লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা