১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ শাবান ১৪৪৬
`

শিক্ষা কেন রাহুর কবলে

লেখক : ড. গাজী মো: আহসানুল কবীর - ছবি : নয়া দিগন্ত

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন শরীফে মানব জাতির উদ্দেশে প্রথম বার্তা দিয়েছেন, ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’। ‘পড়ো, তোমার প্রভুর নামে।’ সব ধর্মেই জ্ঞানার্জন তথা শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের স্থানে রাখা হয়েছে। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ নানাভাবে জ্ঞানার্জন করে আসছিল। এক মহান ব্রত নিয়ে জ্ঞান বিতরণের এক স্বপ্রণোদিত পন্থায় প্রাচীনকালে পৃথিবীর কোণে কোণে কিছু মহাজ্ঞানী ব্যক্তিত্বের আশ্রয়ে গড়ে উঠেছিল কয়েকটি গুরুগৃহ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্ঞানপিপাসু লোকজন জড়ো হতেন পূজনীয় জ্ঞানীজনদের দরবারে। কী অদ্ভুত এক আত্মনিবেদিত নিষ্কলুষ প্রচেষ্টা। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা এক একজন হয়তো কেউ কারো ভাষা বোঝেন না। অথচ গুরুর সাথে একত্র বাসের প্রক্রিয়ায় সবাই একটি ভাববিনিময়ের মাধ্যম সহজে গড়ে তোলেন। এভাবেই খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দ থেকে এথেন্সের গৃহকোণে মহান গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, ডেমোক্রিটাস, এরিস্টটল ও প্লেটোর মতো জ্ঞানীজন মানুষকে জ্ঞান বিতরণ করে আসছিলেন। কোনো বিনিময় ছিল না, শুধুই স্বপ্রণোদিত স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞান বিতরণের কাজ। এ প্রক্রিয়াকে সুশৃঙ্খল করার জন্য একসময় খ্রিষ্টপূর্ব সাড়ে তিন শ’ অব্দে দার্শনিক প্লেটো এথেন্সের উপকণ্ঠে নিজের ভূমিতেই গড়ে তোলেন পৃথিবীর প্রথম শিক্ষালয় ‘অ্যাকাদেমিয়া’ যা আজ ‘এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। সেই নির্মোহ প্রচেষ্টাই আজ বিশ্বের বুকে দাঁড় করিয়েছে লাখ লাখ বিদ্যাপীঠের এক সুবিশাল শিক্ষাব্যবস্থাপনা বলয়।

আজ আমার এ লেখার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অঙ্গন। পুরো অঙ্গনটি আজ পোকায় আক্রান্ত। পত্রিকার পাতা ওল্টালে একটির পর একটি মন খারাপ করা খবর। সম্ভবত ২০১৬ সালের কথা। নগরীর একটি নামকরা স্কুলের একটি ছেলে সে স্কুলেরই এক শিক্ষকের বাসায় কোচিং করতে যেত। কোনো কারণে একপর্যায়ে সেই শিক্ষকের কাছে তার পড়া বন্ধ করে দিতে হলো। আর যায় কোথায়? শিক্ষক একদিন স্কুলে তাকে কাছে ডেকে নিভৃতে খুব শাসালেন। দেখে নেবেন বলে জানিয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি দেখে নিলেন। ছেলেটি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করল। এ অনাকাক্সিক্ষত ফলাফলপ্রাপ্তির যন্ত্রণা এ কিশোরটি সইতে পারল না। মন খারাপ দেখে মা-বাবা জানতে চান, কী হয়েছে? কোনো উত্তর নেই। দু-চার দিন পর একদিন স্কুলে যাওয়ার কথা বলে ছেলেটি বাসা থেকে যে বেরুল আর ফিরল না। তার অসাড় দেহ পাওয়া গেল শহরের একপ্রান্তের ডোবায়।

শিক্ষক নামের এমন কত অমানুষের খবর তো মাঝে মধ্যেই পত্রিকার পাতায় দেখা যায়। নিজের কিশোরী ছাত্রীকে পড়া দেখানোর নামে বাসায় ডেকে শ্লীলতাহানি করে দণ্ডিত হয়, চাকরি হারায় এমন নজির তো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজের ছাত্রীকে অথবা তার অধীনে থিসিস করা গবেষণাকর্মীকে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিয়ে বা অনাকাক্সিক্ষত প্রচেষ্টার ফলে চাকরি হারিয়েছেন, নিন্দিত হয়েছেন এমন ঘটনা কম না। এই সে দিনেরই পত্রিকার খবর; মেহেরপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ড্রেসমেকিং ট্রেডের এক ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা ব্যবহারিক ক্লাসে তাদের শরীরে হাত দেয়ার মতো যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছে অধ্যক্ষের কাছে। অবাক ব্যাপার হলো, অধ্যক্ষ বলেছেন, এত ছাত্রীর মধ্যে দু-একজনের গায়ে হাত পড়তেই পারে। কী সাঙ্ঘাতিক! এমনকি অন্যের গবেষণাপত্র বা থিসিসের বিষয়বস্তু নকল করে নিজের নামে প্রকাশ করার মতো হীন-অসাধু কাজও একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক করতে পারেন, ভাবতেও অবাক লাগে। কেন এসব লোক শিক্ষক হতে আসেন বুঝি না। কত পেশাই তো আছে।

আমাদের শিক্ষাঙ্গনে নানা রকমের সমস্যা। ২০১৮ সালের এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী নিজের জীবনই দিয়ে দিলো নিদারুণ অভিমানে। স্কুলের সাময়িক পরীক্ষায় নাকি অরিত্রীর কাছে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন সেট পাওয়া গেছে। সে ওই ফোনসেট থেকে দেখে দেখে নকল করার অভিযোগে হল পরিদর্শক (শ্রেণিশিক্ষিকা) সেটটি নিয়ে নিলেন। এখানেই শেষ হলে কথা ছিল না। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওর সেট জব্দ করে মা-বাবাকে তলব করল। মা-বাবার অভিযোগ, তাদের নাকি অপমান করে মেয়েকে টিসিসহ নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ অপমান সইতে না পেরে অভিমানী মেয়েটি সে দিনই আত্মহত্যা করল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় বয়ে গেল। স্কুলের সব শিক্ষার্থী-অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। এর ত্বরিত সমাধান হিসেবে স্কুল অধ্যক্ষ বরখাস্ত এবং শ্রেণিশিক্ষিকা গ্রেফতার হলেন। কাকে দোষ দেবো? শিক্ষার্থীকে, মা-বাবাকে নাকি স্কুল কর্তৃপক্ষকে? শিক্ষার্থী বা মা-বাবাকে কেন দোষ দেবো? আমাদের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আজকাল মোবাইল সাথে রাখা কোনো অপরাধই নয়। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ? তাদেরও দোষ দেয়া মুশকিল। কারণ, মোবাইল নিয়ে স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ- এ নিয়ম নাকি দীর্ঘ দিনের। এর আগেও বেশ ক’জন মেয়েকে এ অপরাধের জন্য টিসি দেয়া হয়েছে। আর বেশ কড়াকড়ি নিয়ম এবং শৃঙ্খলা রক্ষার কারণে ফলাফলের দিক থেকে এ স্কুল যে বহু বছর ধরে দেশ সেরা হচ্ছে তা তো সবারই জানা। সুতরাং এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মের এ কড়াকড়ি উঠে গেলে শুধু ভিএনএস নয়, দেশব্যাপী পড়ালেখা ও ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সুতরাং এ ব্যাপারে সম্ভবত কৌশলী সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।

আর কত ধরনের সংবাদের কথা বলব! বেশ কিছুদিন আগের একটি ঘটনা। দেশের একটি প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলে একটি সরকারি কলেজে রসায়ন বিষয়ে দীর্ঘ দিন কোনো শিক্ষক নেই। অথচ শিক্ষার্থীদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার উদগ্র বাসনা তো আর আটকে রাখা যায় না। তাই উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখায় প্রতি বছরই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতি বিষয়েই প্রাইভেট টিউশনের সুযোগ থাকলেও শিক্ষকের অভাবে রসায়নের প্রাইভেট টিউশনে হাহাকার। সুযোগ বুঝে অর্থনীতির একজন নবীন শিক্ষক রসায়ন বিষয়টি পড়ে নিয়ে নিজেই প্রাইভেট টিউশন শুরু করেন। অল্প ক’দিনের মধ্যে তার গুরুগৃহে শিক্ষার্থীদের ভিড় জমে গেল। কিন্তু দিন শেষে ফলাফলের ভাণ্ডারে তেমন উন্নতি দেখা গেল না। আর নৈতিকতাই বা থাকল কোথায়? অর্থনীতির শিক্ষক রসায়ন পড়াচ্ছেন। কেন? দোষ কি কর্তৃপক্ষের? শিক্ষা অধিদফতর ঠিকই রসায়নে পোস্টিং দিচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল পছন্দ নয় বলে সবাই পোস্টিং বাতিল করিয়ে সুবিধাজনক স্থানে ব্যবস্থা করে নেন। আসলে মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ একটু সক্রিয় না হলে এসব সমস্যার সহজ সমাধান নেই।

শুধু শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; বেহাল করা বহু খবর আছে প্রশাসন নিয়েও। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেয়া বিভিন্ন শিক্ষাউন্নয়ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অথবা ন্যূনতম সুবিধাবঞ্চিত অজোপাড়াগাঁয়ে ল্যাপটপসমৃদ্ধ আইসিটি ল্যাব স্থাপনের নামে শত শত কোটি টাকা অপচয়ের খবর তো বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। এ দেশের মানুষের ঘামঝরা উপার্জনের অর্থ দিয়ে পরিশোধ করতে হয় যে ঋণের বোঝা তার এমন দুঃখজনক লোপাট আল্লাহও তো সইবেন না।

সবকিছু ছাপিয়ে বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন সমস্যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে রীতিমতো পঙ্গু করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুল- কোনো ভিসি, অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক চালাতে পারতেন না। সব চলত ক্ষমতাসীন সরকারের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের নির্দেশে। শিক্ষাপ্র্রতিষ্ঠানগুলোতে ঢুকলে চেনাই যেত না এটি কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাকি চিত্রকলার প্রদর্শনীকেন্দ্র। ব্যক্তিবিশেষের ম্যুরাল, ভাস্কর্য, ছবি, পোস্টার আর ব্যানারের নোংরা ছড়াছড়ির আড়ালে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছিল। হল-হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীদের জোর করে ধরে নিয়ে দলীয় মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিতে বাধ্য করা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। হেডমাস্টার থেকে ভিসি- সবাই রীতিমতো দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করতেন, রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতেন। ভুলেই যেতেন তিনি ক’দিন আগেও শ্রেণিশিক্ষক ছিলেন। ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের আচরণ ছিল রীতিমতো পাশবিক। কতটুকু নিচে নামলে এককালের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড-খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রভোস্ট রাত গভীরে টেলিফোন করে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ধামরাই থেকে একজন অভিভাবককে ডেকে তার হাতে শিক্ষার্থীকে তুলে দিতে পারেন? অপরাধ, সে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে (২০১৮) অংশ নিয়েছিলেন। কী অমানবিক এ শাসন! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে আবাসন ব্যবস্থার কথা কিছু নাই বললাম। শিক্ষার্থীরা হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে ভর্তি হন। আর তাদের শুরুতে থাকতে হয় গণকক্ষ নামে এক নরক-সম গারদখানায়। সেখানে পড়ালেখা তো দূরের কথা, এমনকি যথাযথভাবে ঘুমানোর ব্যবস্থাও ছিল না। এক গ্রুপ শিক্ষার্থীকে এসব গণকক্ষে রাতের এক অর্ধসময় ঘুমোনোর পর উঠে গিয়ে অবশিষ্টদের রাতের বাকি সময়টুকু ঘুমোনোর জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হতো। আর তাই বাকি রাতটুকু তাদের বিনিদ্রই বসে থেকে কাটাতে হতো। কী বীভৎস, কী মানবেতর অবস্থা! আবার গণকক্ষ থেকে রুমে স্থানান্তরের জন্য সিট বরাদ্দ পাওয়া সেটিও নাকি হল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পতিত সরকারের পোষ্য ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কর্তৃত্বেই ছিল এসব। তাও আবার তাদের হুকুম মতো মিছিল-মিটিংয়ে গেলেই বরাদ্দ জুটত, না গেলে গণরুম থেকেও বহিষ্কার। কথা হলো, ছাত্রসংগঠন এসব দায়িত্ব পালন করলে এত অর্থব্যয়ে হল প্রশাসন লালন-পালনের কী দরকার ছিল? ভিসি, প্রক্টর, প্রভোস্ট পদগুলোরই বা প্রয়োজন কী? হল সংখ্যার অপ্রতুলতাই যদি সব সমস্যার মূলে থাকে তাহলে হল আরো বানালেই তো হয়। জায়গার অভাব তো নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নবাব সলিমুল্লাহর দেয়া ৬০০ একর জায়গার অর্ধেকেরও বেশি বেহাত আছে। তা উদ্ধার করুন। নির্মাণ ব্যয়ের অর্থ? শিক্ষক-কর্মচারী আবাসনের জন্য সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণের টাকার অভাব না হলে শিক্ষার্থী আবাসনের তহবিলেরও অভাব হবে কেন?

সবারই মনে থাকার কথা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ভিসি এবং তার স্বামী ও ছেলে পতিত সরকারের সহযোগী ছাত্রনেতাদের সাথে মিলে কিীভাবে ভাগাভাগি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তহবিলের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন। তা তো তাদের ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে এবং গণমাধ্যমের রিপোর্টেই দেখা গেছে। মাথা হেট হয়ে যায় যখন ভাবি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড-খ্যাত শতবর্ষী যে শিক্ষাঙ্গনে আমার মতো লাখ লাখ মানুষ শিক্ষা লাভ করে দুনিয়াজোড়া দীপ্তি ছড়িয়েছে, যেখানে ভিসির পদ অলঙ্কৃত করেছেন কালজয়ী কর্মবীর প্রফেসর হার্টগ, প্রফেসর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, ইতিহাসবিদ প্রফেসর রমেশ চন্দ্র মজুমদার এবং শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন প্রফেসর নলিনী বসু, হরিপ্রসাদ ভট্টাচার্য, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, আইনস্টাইন-বোস তত্ত¡¡খ্যাত ক্ষণজন্মা অধ্যাপক সত্যেন বোস বা জ্ঞানতাপস জ্ঞান ঘোষ, ড. শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অতীতে এমনই এক দলদাস ভিসি ছিলেন যিনি কিনা সিঙ্গারা-সমুচা-চা-এর মূল্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে স্থান নির্ধারণের কথা বলতেন। শিক্ষা আর জ্ঞানের মান কোন পর্যায়ে গেলে একজন ভিসি এমন সব কথা বলেন বা কাজ করেন!

এসব রুচিহীন ও অনাকাক্সিক্ষত কাজ বাদ দিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কবে একটি মসৃণ পথের দেখা পাবে? আমাদের দেশের কেউ কি সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো বা নিদেনপক্ষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা ড. কুদরত-ই-খুদার মতো স্ব^প্রণোদনার বাতিঘর হয়ে জ্বলে উঠতে পারেন না? অবশ্যই পারেন। দেশের সব শিক্ষাপ্রেমী সুধীজন ও বরেণ্য শিক্ষকই পারেন একটি থিংক-ট্যাংক গঠন করে অতিসত্বর এ বিষয়ে একটি গাইড লাইন/কর্মপন্থা প্রণয়ন করতে। কার্যক্রম নির্ধারণ করতে হবে আমাদেরই এবং ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে শিক্ষা বাঁচানোর বিশাল কর্মযজ্ঞে। আমাদের দেশ বাঁচাতে হলে শিক্ষাকে এ অচেনা পথ থেকে বের করে সঠিক পথে আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ তা না হলে যে আমরা হারিয়ে যাবো। সেটি তো এ জাতি হতে দিতে পারে না। এর প্রমাণ জাতি রেখেছে বায়ান্নতে, একাত্তরে, নব্বইয়ে এবং অতি সাম্প্রতিক তারুণ্যদীপ্ত চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড


আরো সংবাদ



premium cement