বাজেট কাঠামোতে সংস্কার ও তিন শূন্য
- মাসুম খলিলী
- ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৪৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর শাসন ইতিহাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নানা কারণে ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো এই সরকারের প্রধান ব্যক্তি থেকে শুরু করে অন্তত তিনজন উপদেষ্টা অর্থনীতিতে পিএইচডি করা বিশেষজ্ঞ। আর এই সরকারকে বলা হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারের সরকার। এমন এক সরকারের সময় নতুন অর্থবছরের বাজেট কেমন হবে সেটি নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রত্যাশা সৃষ্টি হতে পারে স্বাভাবিকভাবেই।
এর মধ্যে সরকার এবার এমন এক বাজেট তৈরির কথা বলছে যাতে সেটিকে দেশের মানুষের জন্য কার্যকর ও প্রয়োজনীয় করা যায়। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস শুধু নোবেল বিজয়ী একজন অর্থনীতিবিদই নন তিনি একজন বিরল ‘আইডিয়া ব্যক্তিত্ব’ হিসাবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। আইডিয়া বা ধারণা এমন একটি বিষয় যা গোটা সমাজ বা রাষ্ট্রকে পাল্টে দিতে পারে। আদর্শ ও ধারণার মধ্যে রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। আমরা আইডিয়া বলতে বুঝতে পারি একটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসাবে একটি চিন্তা বা পরামর্শ। আর আদর্শ বলতে সাধারণভাবে বুঝি-ধারণা ও আদর্শের এমন একটি ব্যবস্থা, বিশেষত এমন কিছু যা অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং নীতির ভিত্তি তৈরি করে।
অধ্যাপক ইউনূসের থ্রি জিরো থিউরি বা তিন শূন্য তত্ত্ব সাম্প্রতিক বৈশ্বিক আলোচনার জগতে এক ধরনের স্থান করে নিয়েছে। শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ এই তিন শূন্য বিশ্বকে স্বস্তি এনে দিতে পারে নিঃসন্দেহে। প্রফেসর ইউনূস মনে করেন, এটি অর্জনে লাগবে তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা। টেকসই উন্নয়নের এই তত্ত্বের প্রয়োগের মাধ্যমেই ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এগিয়ে নিতে চাইবেন বলে ধারণা করা স্বাভাবিক।
অধ্যাপক ইউনূস তার তত্ত্ব বাস্তবায়নের জন্য একটি অনন্য সুযোগ সামনে পেয়েছেন। বাংলাদেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এবার এমন একসময় এই বাজেট প্রণয়নকাজ শুরু হচ্ছে যে সময়টাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বত্র দেড় দশকের স্বৈরশাসন দগদগে চিহ্ন হয়ে রয়েছে। আর এ সময়ে এমন এক উচ্চাভিলাষী অঙ্কের বাজেট ঘোষণা করা হয়ে আসছিল সংশোধনের পরও যার ১০ ভাগের বেশি বাস্তবায়ন করা যেত না। রাজস্ব আদায়ের উৎস হিসাবে নির্ভর করা হচ্ছিল সরাসরি নিত্য ব্যবহার্য দামে প্রভাব ফেলে আর দরিদ্র মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন সব পণ্য সেবার ওপর। রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে নতুন কোনো উদ্ভাবন না থাকায় কর-জিডিপির হার কোনোভাবেই বাড়ানো যাচ্ছিল না। আবার উন্নয়ন বাজেটে দুর্নীতি ও লুটপাট এমনভাবে জেঁকে বসে যে রক্ষণশীল হিসাবেও বলা হয় উন্নয়ন ব্যয়ের ৪০ শতাংশ সরাসরি লুটপাট হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের গড়পড়তা খরচ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি হতে দেখা গেছে। অথচ এই লুটপাট ও দুর্নীতির অর্থ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসাবে যুক্ত হয়। এ অবস্থায় নতুন ধারণা ছাড়া দেশের স্থবির বাজেট ব্যবস্থায় কোনো উন্নয়ন করা যাবে বলে মনে হয় না।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বাজেট প্রণেতাদের মূল ব্যক্তি অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রধান আবদুল রহমান খানকে নতুন বছরের বাজেটের সারসংক্ষেপ তুলে ধরার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রায়োগিক অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা অর্থনীতির তিন শিক্ষক অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও যোগাযোগ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. ফৌজুল কবির খান উপস্থিত থাকতে পারেন বলে আশা করা যায়। এদের তিনজনই বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে মাঠে এবং নীতিপ্রণয়ন পর্যায়ে কাজ করেছেন। ড. ওয়াহিদ বাংলাদেশের আগে একটি বাজেট দিয়েছেন এবং দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন, ড. সালেহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পিকেএসএফের প্রধান, ড. ফৌজুল কবির খান শুল্ক কর্মকর্তা হিসাবে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং পরে ইডকলের প্রধান এবং বিদ্যুৎসচিব ছিলেন। তিনজনই অর্থনীতি বিষয়ে দেশে বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
সঙ্কটকালে তাদের কাছ থেকে নতুন অর্থবছরে একটি নতুন কাঠামোর বাজেট জনগণ প্রত্যাশা করতেই পারেন। আর এই বাজেটে প্রধান উপদেষ্টা যে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেটকার্বন নিঃসরণের তত্ত্ব দিয়েছেন তা অর্জনের জন্য অন্তত কাঠামোগত একটি পথ দেখাবেন বলে আশা করা যায়।
নতুন কাঠামোতে কী প্রয়োজন?
তিন শূন্য তত্ত্বের প্রথমটি হলো শূন্য দারিদ্র্য। দারিদ্র্য দূর হয় উপার্জনের সক্ষমতা ও সুযোগ তৈরির মাধ্যমে। এজন্য কর্মদক্ষতা প্রয়োজন। সমাজের অসচ্ছল শ্রেণী দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষায় সন্তানদের অধিক সময় নিয়োজিত রাখতে পারেন না। তাদের পরিবারের সহায়তায় উপার্জনের কাজে লাগাতে হয়। সরকারের বাজেট সহায়তার মধ্যে তাদের জন্য সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়। অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়াও বিনামূল্যের বই এবং কিছু ক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহের মতো সীমিত কর্মসূচি বাজেটে রয়েছে।
এর সাথে নতুন একটি কর্মসূচি বাজেট কাঠামোতে ঢোকানোর বিষয় চিন্তা করা যেতে পারে। এই ধারণাটি হতে পারে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের জন্য শিক্ষা থেকে কর্মসংস্থান পর্যন্ত একটি চেইন তৈরি করা। এর আওতায় মাধ্যমিক পর্যন্ত আট বছরের একটি কার্যক্রম নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে যে উদ্যোক্তা রয়েছে তারা এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করবে যার স্বীকৃতি থাকবে সরকারিভাবে। কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভর্তি এবং কারিগরি ও অন্যান্য নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে দক্ষ জনবল হিসাবে তাকে কাজ দেবে অথবা বাইরে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রতিষ্ঠানগুলোও এর সাথে যুক্ত হতে পারে।
এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি থেকে শুরু করে প্রতি বছর সেই প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যে খরচ করা হবে সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় কর রাজস্বের সাথে সমন্বয় করা হবে। আর এটি এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেয়া রাজস্ব আয় ও ব্যয়কে রাজস্ব বা উন্নয়ন ব্যয় হিসাবে সরকারের বাজেটে দেখানো হবে। এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে ব্যক্তির ব্যবস্থাপনায়। আর যেহেতু এখানকার আয় ব্যয় সরকারের আয় ব্যয়ের সাথে সমন্বয় হবে সেজন্য সরকারিভাবে এক ধরনের তদারকি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের একটি মূল কারণ হলো এখানে উৎপাদনের জন্য যে লভ্য শ্রমশক্তি রয়েছে সেটাকে উন্নত করে উৎপাদনের কাজে লাগানো এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মজুরির অংশ শ্রমদাতাদের কাছে পৌঁছানো কাঠামোগত অনুপস্থিতি। যেমন এখানে একজন কৃষক ফুলকপি উৎপাদন করে ১০ টাকা পায় আর বাজার থেকে ভোক্তাকে সেটি হয়তো ৪০ টাকায় কিনতে হয়। রাজধানীর বিলাসবহুল চেইন স্টোরে যে কাপড়টি দুই হাজার টাকায় ভোক্তা কেনেন সেটি হয়তো প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে সরবরাহ নেয়া হয় ৩০০ টাকায়। সর্বক্ষেত্রে এই মধ্যস্বত্বের অঙ্কটিকে যৌক্তিক করার একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা তৈরির চিন্তা করা প্রয়োজন।
সরকারের আরেকটি উদ্যোগ এবারের বাজেটে উল্লেখ করার মতো হতে পারে। এটি দারিদ্র্য বেকারত্ব ও পরিবেশ দূষণ রোধ এই তিন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
আমরা জানি মাস পাঁচেকের মধ্যে ঈদুল আজহা আসবে। দেশে সারা বছরের কাঁচা চামড়ার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাংলাদেশে এ সময় পাওয়া যায়। চামড়া বিক্রির এই অর্থ কোরবানিদাতা ব্যক্তি ভোগ করতে পারেন না। এটি এতিম বিধবা বা দুস্থ গরিবদের বিতরণ করতে হয়। দেশের অনেক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতিমদের জন্য চামড়া সংগ্রহ করে এর অর্থ এতিম শিশুদের খাবারের জন্য ব্যবহার করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর এক কোটির মতো পশু কোরবানি হয়। এক দশক আগে এসব পশুর চামড়া গড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হতো। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এটি ৫০০ টাকায় নেমেছে। এর অর্থ হলো এতিম ও দুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর কেড়ে নেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রের সামান্য উদ্যোগে এটি দুই বা তিনগুণ করে সেই হতদরিদ্রদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া যায়। প্রশ্ন হলো কিভাবে?
কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য সরকারি উদ্যোগে অথবা অনুমোদনক্রমে প্ল্যান্ট স্থাপন এবং সেখানে নির্ধারিত মূল্যে চামড়া সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সাভারের ট্যানারি পল্লীর মতো অন্তত আরো দু’টি স্থানে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ ও দূষণ পরিশোধন প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে বিদেশে মানোত্তীর্ণ বাজার উপযোগী পাকা চামড়া তৈরিতে সহায়তা এবং সেটি রফতানি ও স্থানীয় রফতানিকারকদের জন্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এখন শুধু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বিপুল কাঁচা চামড়া নষ্ট হচ্ছে একদিকে, আর অন্যদিকে জুতা তৈরির কারখানাগুলো বেশি মূল্যে বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করছে।
বাংলাদেশে অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখনো কৃষিতে নিয়োজিত। এখানে কৃষিপণ্য বেশি উৎপাদিত হলে এর দাম এতটা কমে যায় যে, চাষিরা উৎপাদনমূল্য পায় না। উৎপাদন কেন্দ্র আর বাজারের মূল্যে বেশ বড় ব্যবধান থাকে। এই দুইয়ের মধ্যে সংযোগ সাধনের পাশাপাশি কৃষিপ্রক্রিয়াজাত শিল্পের সাথে কৃষি উৎপাদন ও প্রযুক্তির একটি সংযোগ স্থাপন করে চাহিদা ও সরবরাহে সমন্বয় করা যায়। এটি বাজেটারি উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ টুলস হতে পারে।
রাজস্ব স্থবিরতা দূর করা
বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনার একটি দুর্বলতা হলো, রাজস্ব আহরণের সুপ্ত সম্ভাবনাগুলোকে কাজে না লাগিয়ে গড়পড়তা করারোপ করে রাজস্ব সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালানো হয়। অন্তর্বর্তী সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে গত সাড়ে তিন দশকে রাজস্ব উল্লম্ফনের একটি মাত্র উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল নব্বই এর দশকের শুরুতে মূল্য সংযোজন কর চালুর বিষয়টি। এরপর রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় এমন কোনো সংস্কার আনা সম্ভব হয়নি যার কারণে রাজস্ব আহরণে বড় কোনো প্যারাডাইম শিফটের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। নতুন করব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এবং ভ্যাট সেলের প্রধান শাহ আব্দুল হান্নানের বিশেষ অবদান ছিল।
প্রশ্ন হলো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনার মতো এমন কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে উপেক্ষিত বিদেশে সমাদৃত একজন অর্থনীতিবিদ প্রফেসর এম এ মান্নানের একটি বিস্তারিত সাক্ষাৎকার তার মৃত্যুর আগে নেয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশের বাজেটকাঠামো ও রাজস্ব স্থবিরতায় উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি বলেছিলেন বড় কোনো দিকপরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশের বাজেট কাঠামোর বিদ্যমান স্থবিরতা দূর করা সম্ভব হবে না।
মুসলিম বিশ্বে ক্যাশ ওয়াকফ ধারণার প্রবক্তা আইডিবির সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মান্নান বলেছিলেন, বাংলাদেশে সামাজিকভাবে বিত্তবানদের মধ্যে সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ আছে। এই সুপ্রবণতার সাথে তার প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক উপকারের সংযোগ করা গেলে এদেশে যারা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারাও স্বেচ্ছায় সরকারকে রাজস্ব দেবে। সেটি হতে পারে এভাবে
ধরে নেই সরকার একটি বড় শিল্পগ্রুপ থেকে এক হাজার কোটি টাকার কর বা শুল্ক নেয়। অন্যদিকে এই রাজস্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও দু’টি মেডিক্যাল কলেজ চালানোর জন্য ব্যয় করে। এখন যদি শিল্পগ্রুপকে অফার দেয়া হয় যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে যে রাজস্ব দিচ্ছে তার বিপরীতে তিনি সরাসরি দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় ও তিনটি মেডিক্যাল কলেজে অর্থ সরবরাহ করবেন। সেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার সাথে তিনি সংযুক্ত থাকবেন। সরকার তার ব্যয়কে গ্রুপটির প্রদেয় রাজস্বের সাথে সমন্বয় করবে। জনগণ জানবে যে এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার খরচ এই গ্রুপ বহন করছে। এতে তিনি আগের ব্যবস্থার চেয়ে দেড় বা দ্বিগুণ অর্থ রাজস্ব হিসাবে ব্যয় করতে উৎসাহিত হবেন।
এ ধরনের ব্যবস্থা অন্যান্য সড়ক, সেতু বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নেও প্রবর্তন করা যেতে পারে। এমনকি সরকার কোনো স্থানে একটি হাসপাতাল বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য কোনো ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সাথে বিদ্যমান ব্যবস্থা অনুসারে চুক্তি করতে পারে। ওই কোম্পানিটি তিন একর জায়গার ওপর একটি হাসপাতাল তৈরি করে দেবে। আর এর বিপরীতে সমপরিমাণ জায়গা ওই ডেভেলপারকে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হবে বাণিজ্যিক কাজের মাধ্যমে সেখান থেকে তিনি যেন বিনিয়োগ লাভসহ তুলে নিতে পারেন।
এ ব্যবস্থাকে বাজেট কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে এটি রাজস্ব আহরণে এমন এক বিপ্লব নিয়ে আসবে যে, সাধারণের ওপর চাপ দিয়ে সরকারকে রাজস্ব আদায় করতে হবে না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়ের জোগান উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রভাব দারিদ্র্য ও বেকারত্বের ওপর পড়তে বাধ্য। আর উন্নয়নের কাজকে পরিবেশ রক্ষার বাধ্যবাধকতার কিছু নির্দেশনা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হলে প্রফেসর ইউনূসের থ্রি জিরো তত্ত্ব বাংলাদেশেই বাস্তবায়ন শুরু করে দেখানো সম্ভব হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা