২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬
`

ঢাকার বায়ুদূষণ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বেশ কিছুদিন থেকে ঢাকার বায়ু স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দূষিত। ২০২৪ সালে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ৮৩.৩ মাইক্রোলিটার প্রতি তিন বর্গ ঘনমিটার বায়ুতে। শ্বাস নেয়ার অনুপোযোগী বায়ুদূষণের মাত্রা হচ্ছে ৫৩.৩ পিএম একই সমান আয়তনের বায়ুতে। অর্থাৎ ঢাকার নাগরিকদের সারা বছর ধরে অস্বাস্থ্যকর বায়ুর ভেতর বাস করতে হয়েছে। এ বছরও খুব একটা ভালো শুরু হয়নি। শুধু ঢাকাতে বায়ুদূষণের কারণে বার্ষিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৯২ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। সারা দেশে ১৭.৬ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি এবং কর্মক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বায়ুদূষণ। প্রায় ২১ মিলিয়ন জন অধ্যুষিত ঢাকা নগরী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের নগরী। বিশ্বের তৃতীয় বাস অযোগ্য শহরের তকমা নিয়ে ধুঁকছে ঢাকা নগরী, ধুঁকছে এর নাগরিকেরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে মহামান্য হাইকোর্টকে রুলনিশি জারি করতে হয়েছে বায়ুমান রক্ষার জন্য।

মূলত ঢাকার অতিরিক্ত যানবাহনের ধোঁয়া, যানবাহনে ব্যবহৃত ভেজাল জ্বালানির ব্যবহার, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন, সারা বছর ধরে চলমান নির্মাণকাজ, চতুর্দিকে ভাগাড়, জলাধার ভরাট, অবাধে বৃক্ষ নিধন, ঢাকার চতুর্দিকে অসংখ্য ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া সবকিছু ঢাকার বায়ুমানকে স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক করে তুলেছে।

১০৫৫৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ বাস, মিনিবাস, ১৪৬৮৩টি মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাক এবং লরির নির্গত ধোঁয়ার আক্রমণে ঢাকার বায়ু ক্ষতবিক্ষত। এগুলো ক্রমান্বয়ে সরিয়ে ফেলার সরকারি পরিকল্পনা এখনো বাক্সবন্দী। যারা এটা নিয়ন্ত্রণ করবেন, তাদের নাকের ডগার ওপর দিয়ে এসব বাস, ট্রাক নির্বিবাদে চলাচল করছে। যাওয়ার পথে মাঝে মাঝে কালো বিষাক্ত ধোঁয়ার আস্তরণ ছড়িয়ে পরিবেশ এবং বায়ুদূষণ করছে। দায়িত্ব পালনরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। এসব গাড়ি, ট্রাক, লরি প্রভৃতি থেকে কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, সিসা, এমনকি কার্বন মনোক্সাইড নামক বিষাক্ত গ্যাস। বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে সিসার কণা, সাথে জৈব গ্যাসের সংমিশ্রণ যা বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রচণ্ড স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। বাতাসে এসব দূষিত এবং বিষাক্ত পদার্থের মিশ্রণ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার, গর্ভপাত, বিকলাঙ্গ ও কম ওজনের শিশু জন্মের জন্য দায়ী। শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের রোগজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে দূষিত বায়ুর ভূমিকা ৪০ শতাংশ। ঘরে ঘরে এখন শ্বাসতন্ত্রের ওষুধের বিরাট বাজার। ওজোন গ্যাসে ২০২১ সালে ১৫০০০ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। বায়ুদূষণে বাংলাদেশীদের গড় আয়ু কমেছে চার বছর ৮ মাস। সাথে কর্মযোগের হিসাব তো আছেই। অতিরিক্ত ঘন জনবসতি এবং বাধা বন্ধনহীনভাবে মানহীন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বায়ুদূষণ রোধে রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা ও দায়বোধ না থাকায় পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ঢাকা হয়তো অদূরে একটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে। পরিস্থিতির মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ- ঘরে বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র স্থাপন এবং বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার কতটুকু বাস্তবসম্মত অবশ্যই ভাবার দাবি রাখে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি যে কোনো মূল্যে সরানো দরকার। প্রয়োজনে সারা বছর ধরে নির্মাণকাজের চলমান ধারার পরিবর্তন জরুরি। ফুটপাথ, সড়কদ্বীপ ও সড়ক বিভাজে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এক্ষেত্রে গার্লস গাইড, বয় স্কাউটসহ বিভিন্ন শিশু-কিশোর সংগঠনকে কাজে লাগানো যেতে পারে। মসজিদের খতিব ও ইমামদের এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণ এবং যতœ নেয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বৃক্ষরোপণ বৃত্তি স্কিম চালুর পরিকল্পনা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবেশ অধিদফতর, বিআরটিএ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের ব্যবস্থা করা দরকার।

বায়ুদূষণ রোধে গাছের বিকল্প নেই। তাই গাছ লাগানো এখন জরুরি অবস্থার মতো। একই সাথে শহরের ভেতর চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা সীমিত করার উদ্যোগ নেয়া দরকার। মোটকথা তাৎক্ষণিক, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ পরিশোধন কর্মসূচির মাধ্যমে বায়ুদূষণ সীমিত পর্যায়ে আনা দরকার। ঢাকার চতুর্দিকের ইটভাটাগুলোয় কাঠ ও কয়লার পরিবর্তে গ্যাস, ইলেকট্রিক চুল্লি বা বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। প্রয়োজন শহরের পাশে প্রবহমান জলাধার এবং নদীগুলো দূষণমুক্ত করা। বায়ুদূষণ রোধে সর্বাত্মক এবং সর্বজনীন প্রচেষ্টা ছাড়া সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বায়ু’ কর্মযজ্ঞ শুরুর সময় এখনই।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
মহিলাবিষয়ক অধিদফতরে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হবে সিদ্ধান্ত জনগণের : অধ্যাপক ইউনূস ট্রাম্প নিয়ে ভারতের উচ্ছ্বাসে কি ভাটা? সীমান্তে বিএসএফের বিশেষ সতর্কতা জারি পরিস্থিতি থমথমে সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে, ঊর্ধ্বমুখী চাল-মুরগির দাম মাওনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দেড় ঘণ্টা মাটিতে পড়েছিলেন আমিনুল পশ্চিমতীরে হামলা বাড়ানোর হুমকি ইসরাইলের লন্ডন ক্লিনিকের ছাড়পত্র পেয়েছেন খালেদা জিয়া দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে : ডা: শফিকুর রহমান বহিরাগত শ্রমিকদের তাণ্ডবে দেশ ছাড়ছেন ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টের চীনা নাগরিকরা গুজব ছড়ানো হচ্ছে আমরা ভালো আছি : আসিফ নজরুল

সকল