০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

খালেদা জিয়ার ৪৩ বছরের রাজনীতি : আদর্শিক পুনরুত্থান

-

তাত্ত্বিকরা বলেন, ‘দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সমষ্টিই হচ্ছে রাজনীতি।’ রাজনীতির গতি-প্রকৃতি ও ধরন-ধারণ বদলেছে। আগেকার দিনে রাজনীতি বলতে বোঝাত এমন একদল লোক- যারা সদা-সর্বদা মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণে ব্রতী, সেবা ও শুশ্রুষায় দিবা-রাত্রি ব্যস্ত ও মানুষের কল্যাণ চিন্তায় নিমগ্ন। এদের নীতি হলো, ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। এরা যখন নির্বাচন বা এরকম কর্তৃত্বের জন্য লড়াই করে তখন তারা পরোপকারী, জনদরদি ও একনিষ্ঠ সমাজসেবক এরকম বিশেষণে নিজেদেরকে বিশেষিত করত।

বিগত ৫০ বছরের রাজনীতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিকে সেবা বলেই মনে করেন, সম্পদ বা ক্ষমতার ধারক নয়। তবে অস্বীকার করা যাবে না যে, সেবার লেবাছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠী ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বণ্টনকে রাজনীতি বানিয়ে ফেলেছে। বস্তুবাদীরা দেশ বিদেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর উপরি কাঠামোকে রাজনীতি বলে চিহ্নিত করে থাকেন। অন্যদিকে আদর্শবাদীরা অনুসৃত মৌলিক বিশ্বাস, নীতিমালা ও কর্মকৌশলের সমষ্টিকে রাজনীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বলে ব্যাখ্যা করেন। সবাই বুঝি আদর্শ একটি অদৃশ্য বিষয়, যা দৃশ্যমান হয় নেতা নেত্রীর আচরণ ও কর্মে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত গতানুগতিক তথা ক্ষমতাশ্রয়ী। দ্বিতীয়ত আদর্শিক বা বাস্তবের সাথে সমন্বয়শীল। তৃতীয়ত অতি আদর্শিক বা বিশুদ্ধচারী। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর যারা ক্ষমতাসীন হন তারা গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। ক্ষমতাই তাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। ‘ওলটপালট করে দে মা লুটেপুটে খাই’ এটা ছিল শাসকদের অনুসৃত নীতি। বিস্ময়ের ব্যাপার, ১৯৯৬ কিংবা ২০০৯ পরবর্তী দীর্ঘ ১৫ বছরেও তারা ওই নীতিরই বাস্তবায়ন করে গেছে। একটি বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিতন্ত্র গোটা জাতিকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। দুঃশাসনের দুষ্টচক্র অর্থনীতিকে লুটেরাতন্ত্রে পরিণত করেছে। অন্যদিকে আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি আদর্শবাদিতার সাথে দেশের বাস্তব অবস্থার সমন্বয় সাধন করতে চায়। বাংলাদেশের আদর্শবাদী ডান ও বাম ধারার রাজনীতিকদের সম্পর্কে অতি আদর্শিক ও বিশুদ্ধচারিতার অভিযোগ রয়েছে। প্রথম এবং তৃতীয় গোষ্ঠীর মাঝামাঝি অবস্থান করে এই রাজনৈতিক শক্তি জনগণের বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আরেকটু স্পষ্ট করে বলতে হয়, বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তি এই রাজনীতির ধারক ও বাহক। জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তার নীতি ও আদর্শের দ্বারা বাংলাদেশে তার দলের ভিত সুদৃঢ় করে যান। তিনি একদিকে আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বলেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উন্নয়ন কৌশলে প্রগতির পথে এগিয়ে নেন। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, তার এই দূরদর্শী নেতৃত্ব দীর্ঘকাল টেকেনি। ১৯৮১ সালে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রে তিনি প্রাণ হারান।

সেই সঙ্কটময় সময়ে বিএনপির নেতৃত্ব যখন অনেকটাই অনিশ্চিত তখন অনেককে অবাক করে একজন গৃহবধূ দল, দেশ ও জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তখন দেশপ্রেমিক জনগণ এবং জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তি ছিল হতাশাগ্রস্ত। সুবিধাবাদ, দোদুল্যমানতা এবং নানামুখী ষড়যন্ত্রে বিএনপি যখন নিষ্পিষ্ট তখন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে বিএনপি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সাল থেকে হিসাব করলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৪৩ বছর। এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় আরোহণ করেন। তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী তিনি। তিনি পরিপূর্ণ আদর্শবাদিতার সাথে বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচির সমন্বয় সাধন করেন। রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে তিনি ভূখণ্ডকেন্দ্রিক উদার জাতীয়তাবাদ, বহুত্ববাদ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে ধারণ করেন। জিয়ার উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি, সুশাসন এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে ১৯ দফা লালন, পালন ও ধারণ করেন।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বেগম খালেদা জিয়া। একজন গৃহবধূ থেকে শীর্ষ রাষ্ট্র নেতৃত্বে তার ভূমিকা কেমন হয়, এটাই ছিল দেশজ ও আন্তর্জাতিক অনুসন্ধিৎসা। সাবাশ, বাংলাদেশ, ‘এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়’, বেগম খালেদা জিয়া মেধা ও চমৎকারিত্বের সাথে তার প্রথমবারের মেয়াদ পূর্ণ করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ মন্তব্য করেন যে, নৈতিকতা ও জনকল্যাণের চেতনা ধারণ করে তিনি নিপুণভাবে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের সাথে খাপ খাইয়ে নেন। নিজেকে পর্যায়ক্রমে তৈরি ও বিকশিত করেন। দল ও রাষ্ট্র পরিচালনায় রাখেন সক্ষমতার স্বাক্ষর। এই সময়কালে তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অর্জন পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন। নির্বাচনপূর্ব ঘোষণায় বিএনপি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার কথা বলে আসছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর জনমত এবং রাজনৈতিক দলসমূহের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তিনি সংসদীয় সরকারব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার সরকার এই সময়ে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তি শাসনের পরিবর্তে আইনের শাসন তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। জিয়ার আদর্শ ও শাসননীতি অনুসরণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত অবস্থার উপযোগী কর্মপন্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে দেশে সার্বিক প্রাণচাঞ্চল্য ও জাগরণ সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা, তথ্যপ্রবাহ, আর্থ-সামাজিক কল্যাণ, শিল্প বাণিজ্য, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে প্রভূত উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে উল্লেখ করার মতো বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সাফল্য পরিদৃষ্ট হয়।

এই সময়কালে বেগম খালেদা জিয়া সরকার একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মোকাবেলা করেন। তা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি। বিরোধী দলের লাগাতার হরতাল, অবরোধ, নাশকতা ও সংসদ বর্জন এবং সংসদ থেকে পদত্যাগের ফলে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের সম্ভাবনা তিরোহিত হয়। সরকার ও বিরোধী দলের বিরোধ মীমাংসায় দেশী বিদেশী সমঝোতা ব্যর্থ হয়। দেশের এ নাজুক অবস্থায় সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজনের জন্য এই সাংবিধানিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২৫ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসংবলিত বাংলাদেশ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এর পরপরই প্রদত্ত ওয়াদা মোতাবেক খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার অনুরোধ জানান। এভাবে ৩১ মার্চ ১৯৯৬ প্রথম সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির বিভাজনের সুযোগে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। ১১৬টি আসন লাভ করে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম বিরোধী দলের ভূমিকা অর্জন করেন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তাদের স্বভাবসুলভ দলীয়করণ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দমন পীড়নে দেশে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী নেত্রী হিসেবে সাংবিধানিকভাবে ও গণতান্ত্রিকভাবে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন।
১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী চারটি দলের শীর্ষ নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট গঠন করেন। দলগুলো হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (একাংশ) ও ইসলামী ঐক্যজোট। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ভূমিধস বিজয় লাভ করে।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগ এবং এর অনুগামী দলগুলোর অনিয়মতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের মোকাবেলা করে। মেয়াদ শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ইস্যুতে তারা দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালে তারা রাজপথে লগি বৈঠার তাণ্ডব সৃষ্টি করে। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে তারা সেনা হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করে।

এক-এগারো এর সৃষ্ট তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আক্রোশের শিকারে পরিণত হয় বিএনপি। এ সময় কথিত মাইনাস টু ফর্মুলার অধীনে বেগম জিয়াকে রাজনীতি ও দেশত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা চলে। বেগম জিয়ার উত্তরাধিকার তার দু-সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে গ্রেফতার করে চালানো হয় চরম নির্যাতন। অবশেষে তারা ২৯ ডিসেম্বর এক সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দেশে সুস্থিতি ফিরিয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করে বিএনপি। প্রথম দিকে তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে সাংবিধানিক সহযোগিতা দেয় কিন্তু আওয়ামী লীগ নিপীড়ন, নির্যাতন ও অপশাসনে লিপ্ত হয়। বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন থেকে অন্যায়ভাবে উৎখাত করে। আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বিডিআর সদর দফতরে ইতিহাসের এক কলঙ্কময় হত্যাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। এসব অন্যায় এবং অপকর্মের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেন। বিএনপির ক্রমবর্ধমান আন্দোলন ও জনপ্রিয়তা দেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিশ্চিত হয় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে তারা কখনোই জয়লাভ করবে না। তাই ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। এটিই দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৪ সালের অনুষ্ঠিত ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অবিলম্বেই অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ এই মর্মে বেগম খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু হাসিনা বিশ্বস্ত থাকেননি। পরে বেগম খালেদা জিয়াকে চিরতরে রাজনীতি তথা নির্বাচন থেকে নির্বাসনে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়।

২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি জাতির পিতার কন্যা, আমাকে বিশ্বাস করুন। মানুষ তাকে বিশ্বাস করেছিল। তিনি দিনের ভোট রাতে করে তার বিশ্বস্ততার! প্রমাণ দেন। ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপ করে হাসিনাচক্র তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চেয়েছে।

একটি অন্যায়, অসত্য ও ঠুনকো অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা প্রদান করে। এটি জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা বলে পরিচিত। মূল মামলাটি ১/১১-এর সামরিক আমলের। ওই সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও বেশ কিছু মামলা হয়। ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে আরোপিত সব মামলা খারিজ করিয়ে নেন আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন বিপরীত। ওই মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আওয়ামী সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করেন এবং সাজা বৃদ্ধি করে ৩০ অক্টোবর ২০১৮ সালে ১০ বছরে উন্নীত করা হয়। এ মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো বেশ কিছু মামলা করা হয়।

রাজনীতির জীবন কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। যেখানে জয় আছে সেখানে পরাজয়ও আছে। খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৯ বছর ৪ মাস। এই অশীতিপর নেত্রীর জীবন বর্ণাঢ্য। নিয়তির অমোঘ নিয়মে তিনি রাজনীতিতে অতিক্রম করলেন ৪৩ বছর। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপির সাধারণ সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ক্রমে তিনি হলেন জাতির কর্ণধার। তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে রাজনৈতিক শত্রুতায় নিপতিত করেছেন। তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে, জেল, জুলুম, মামলা, হামলা, নিপীড়ন ও নির্যাতন। তিনি কখনোই মাথা নিচু করেননি। এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন আপসহীন নেত্রী অভিধায়। ১/১১’র সময় জেল খেটেছেন এক বছর আট দিন। হাসিনা স্বৈরাচারের কারাগারে ছিলেন দুই বছর এক মাস ১৭ দিন।

দীর্ঘ কষ্টকর জীবন-অবশেষে তিনি গৌরবময় মুক্তি লাভ করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের সংগ্রামশীল জীবনে-কারাগারের গহিন-গভীরে অথবা গৃহান্তরীণ সময়ে তিনি লাখ লাখ মানুষের চেতনার বহ্নিশিখা হিসেবে থেকেছেন নিরন্তর জাগরূক। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তার একান্ত মানুষেরা-বিএনপির সন্তানেরা তার আদর্শকে ধারণ করে স্বাধীনতার পথে, গণতন্ত্রের পথে ও মানবাধিকারের পথে রক্তের স্বাক্ষর রেখেছে। ২০২৪ সালের গৌরবময় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আত্মিক নেত্রী তিনি। তার সংগ্রামী ধারায় উদ্ভাসিত হয়েছে মুক্তির পথ। সে পথেই এসেছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। তার অতিক্রান্ত রাজনীতির ৪৩ বছরের পাদভূমিতে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রার্থনা, আপনি হাজার বছর বাঁচুন। বেঁচে থাকুন কোটি কোটি জনতার অন্তরে। আল্লাহ আপনাকে আবারো বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্রের হাল ধরার তৌফিক দিক।

লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও
রাজনীতি বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল