৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৫
`

অর্থ অপচয় এবং কালাকানুন রচনার আওয়ামী সংসদ

-

দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত নির্বাচনের একটি ঘোষণা সম্প্রতি এসেছে। সে ঘোষণায় নির্বাচনের দিন-ক্ষণ নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না বলে সেটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সূচনা হয়েছে। হওয়া স্বাভাবিক; কেননা নির্বাচন নিয়ে সব দল অনেক দিন থেকে চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্ত ছিল, বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্র শাসনের হাল ধরতে। দ্রুত সেই তৃষ্ণা মেটাতে নির্বাচন আগানো-পেছানোর এমন রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ানোর কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই। আমাদের দেখার বিষয় নির্বাচনে ভোটাররা যাতে নিরাপদে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। সে জন্য নির্বাচন শুদ্ধ ও প্রশ্নমুক্ত হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। তবে এতটুকুতে আমাদের আগ্রহ সীমাবদ্ধ নয়। কোন রাজনৈতিক দল কেমন বাংলাদেশ চায় এবং কাদের নির্বাচনে প্রার্থী করে কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গড়া হবে তা নিয়ে আগ্রহ-কৌতূহল রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে যেমন প্রবল, তেমনই আমাদের মধ্যেও। মাকাল ফলের বীজ বুনে যেমন সুমিষ্ট আতাফলের আশা যায় না, ঠিক তেমনি যোগ্য-অযোগ্য বিবেচনায় না নিয়ে যে কাউকে প্রার্থী করা হলে সেটি হবে রাষ্ট্রের জন্য অর্থহীন।

নির্বাচনে প্রার্থী করার একটা পটভূমি স্মরণ করতে চাই। ওই পটভূমির আলোচনা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না। বিগত তিন-তিনটি জাতীয় তথা সংসদ নির্বাচনে (যা দৃশ্যত ছিল সিলেকশন) যাদের প্রার্থী হিসেবে বাছাই করা হয়েছিল, তাদের বাছাই করেছিলেন পতিত লীগের অধঃপতিত নেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং। সে সময় তিনি কঠোর ভাষায় দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, নির্বাচনে যাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে (তিনি যাদের বাছাই করেন) মনোনয়ন (তথা সিলেকশন) দেবেন; তাদের পক্ষেই নির্বাচনে (পড়তে হবে ভোটারবিহীন বা মধ্যরাতের নির্বাচন) সবাইকে কাজ করতে হবে। এই হুঁশিয়ারির কারণ হয়তো এটিই যে, তিনি কখনো ‘মন্দের ভালো’ কাউকে সিলেকশন করতেন না। শেখ হাসিনার বাছাই করা প্রার্থীদের যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি ছিলÑ যারা দিনমান নেত্রীর জপতপ করতেন এবং নিয়মিত খোরমা, খেজুর উপঢৌকন পাঠাতেন। এর বাইরে তাদের আর কোনো গুণ মানের প্রয়োজন হতো না। ওই বশংবদ ব্যক্তিরা সিলেকটেড হয়ে, বিনা ভোটে ইলেকটেড হতেন।

বাংলাদেশে যেহেতু সাংবিধানিকভাবে সংসদীয় ব্যবস্থা কায়েম (বস্তুত নামসর্বস্ব) রয়েছে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে সংসদীয় গণতন্ত্রের লেবাস পরিয়ে চরম স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। তার অনুসৃত রাষ্ট্রাচার ছিল মূলত ভ্রষ্টাচার। তাই দেখা দরকার পতিত সরকারের (সাড়ে ১৫ বছর) আমলে সত্যিকার অর্থে তিনটি সংসদ কতটা আইনানুযায়ী তথা সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধি অনুসরণ করা হয়েছে। কারণ ওই গ্রন্থের অনুশীলন না হলে সংসদের সব কিছু হবে অর্থহীন। এখানে মনে রাখতে হবে, সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধি, প্রকৃত অর্থে সংবিধানের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। কেননা সংবিধানের ৭৫(১) (ক) অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুসারে সেটি রচিত। সে জন্য সংসদ যদি কার্যপ্রণালী-বিধি পাশ কাটিয়ে চলে বা অনুসরণ না করে পরিচালিত হয়; সে ক্ষেত্রে সংসদের যাবতীয় কার্যক্রম (কর্মকাণ্ড) বৈধতা পাবে কি না তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সংসদ (তথা আইনসভা) বস্তুত রাষ্ট্রের অত্যাবশকীয় একটি প্রতিষ্ঠান, এই আইন বিভাগের দায়িত্ব যথাযথ পালিত না হলে রাষ্ট্রকর্ম ভণ্ডুল হয়ে যাবে। বিগত তিনটি সংসদ তথা আইনসভা কার্যত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দিয়ে গঠিত ছিল না। যিনি ওই তিন (তথাকথিত) সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হয়েছিলেন, তিনি সংসদ নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারপ্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সংসদ নেতা বা সরকারপ্রধান নির্বাচন সংসদের প্রধান দায়িত্ব। এরপর অন্যতম দ্বিতীয় দায়িত্ব হচ্ছে, রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা। জাতীয় সংসদের আরো একটি মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে, সরকারের যাবতীয় কার্যক্রমের জবাবদিহি নেয়া এবং সরকারকে সঠিক পথে রাখা। বিগত তিন সংসদের কার্যক্রম নিয়ে কিঞ্চিত আলোচনা হতে পারে ওই দায়িত্বগুলো কোন মাত্রায় পালিত হয়েছে। প্রথমত, সংসদগুলো বিনা ভোটে ‘সিলেকটেড’ হয়ে ‘ইলেকটেড’ হয়েছেন। শত শত প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত গত তিন সংসদের কোনোটি কি বৈধতা পেতে পারে? তা ছাড়া কোনো এক ব্যক্তি সিলেকশনে তথাকথিত এমপিদের সংসদের আসনে বসার কোনো অধিকার ছিল কি না। যদি না থাকে তাহলে ওই তথাকথিত এমপিরা কিভাবে একজনকে সংসদ নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারে? তার পর এমন তথাকথিত সংসদ কেমন করে একজনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারে। একই সাথে ওই সংসদগুলো যত কানুন তথা আইন (বেশির ভাগ কালাকানুন) প্রণয়ন করেছে, সেই অধিকার রাখে কি না। সে ক্ষেত্রে গত সাড়ে ১৫ বছর ওই তিন সংসদ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান ‘আইন বিভাগ’ তাদের কার্যক্রমকে এখন কোনো বিবেচনায় দেখবে? তথাকথিত তিন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও পরিচালনা বাবদ রাষ্ট্রের যে বিপুল অর্থের অপচয় হয়েছে, তার দায় রাষ্ট্র না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বহন করবে জাতির সম্মুখে এখন এটিও এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে। সংসদের প্রতিটি অধিবেশন পরিচালনা বাবদ রাষ্ট্রের তথা জনগণের প্রতিদিন প্রতি মিনিটের জন্য খরচ হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। শুধু একাদশ সংসদের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন রচনা করে টিআইবি। সেই প্রতিবেদনে বলা হয় :

‘সংসদে সদস্যরা দেরিতে আসায় ২২টি অধিবেশনে কোরাম সঙ্কটে ব্যয়িত সময়ের প্রাক্কলিত অর্থমূল্য প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ আট হাজার ৭৭৯ টাকা।’ কিছুকাল পূর্বে টিআইবির কার্যালয়ে ‘পার্লামেন্টওয়াচ : একাদশ জাতীয় সংসদ-১ম থেকে ২২তম অধিবেশন (জানুয়ারি ২০১৯- এপ্রিল ২০২৩)’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য-উপাত্ত উত্থাপন করা হয়েছে।

মোট ২২টি অধিবেশন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যেখানে একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোরাম সঙ্কটে মোট ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে; যা কার্যদিবস অনুযায়ী গড়প্রতি ১৪ মিনিট ৮ সেকেন্ড। অধিবেশন শুরুর তুলনায় বিরতি পরবর্তী সময়ে কোরাম সঙ্কটের আধিক্য লক্ষণীয় ছিল। ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে শুরু হয়। কোরাম সঙ্কটে মিনিট প্রতি ব্যয় প্রায় দুই লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ টাকা। আর কোরাম সঙ্কটে ব্যয়িত সময়ের প্রাক্কলিত অর্থমূল্য প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ আট হাজার ৭৭৯ টাকা।

উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের বৈঠক চলাকালে কোনো সময়ে উপস্থিত সদস্য সংখ্যা ৬০ জনের কম হলে, অন্যূন ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত বৈঠক স্থগিত কিংবা মুলতবি করা হয়। এই ন্যূনতম ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না থাকলে সংসদের কোরাম সঙ্কট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্য দিকে জাতীয় সংসদের ১১ জানুয়ারি ২০১৮ সালে আইনপ্রণেতাদের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। একপর্যায়ে কোরামের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক ৬০ জন সংসদ সদস্যও অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিষয়টি কেউ স্পিকারের নজরে আনেননি। ফলে ৬০ জনের কমসংখ্যক সদস্য নিয়েও চলে অধিবেশন।

টিআইবির গবেষণায় আরো বলা হয়, আইন প্রণয়ন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের অধিবেশনগুলো প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর ছিল না বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সাথে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনায় স্পিকারের জোরালো ভূমিকার ঘাটতি ছিল বলে মনে করে সংস্থাটি।

টিআইবির দাবি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে আইন প্রণয়ন, বাজেট ও স্থায়ী কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতা চর্চার ব্যাপকতা ছিল। সংসদীয় কার্যক্রমে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও শক্তিশালী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ ছিল। সংসদে মোট ২২ অধিবেশনে কোরাম সঙ্কটে মোট ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। যার প্রাক্কলিত অর্থমূল্য প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এ ছাড়া সংসদ সচিবালয় সূত্রে প্রাপ্ত অবাক করার মতো একটি তথ্য হলো, জাতীয় এক দৈনিকে প্রকাশ পায় যে, গত তিন সংসদে শুধু শেখ প্রশস্তি করা বাবদ রাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হয় ১০০ কোটি টাকা।

এখানে মাত্র একটি সংসদের অপব্যয়ের হিসাব। দশম ও দ্বাদশ সংসদের অপচয়ের কোনো হিসাব নেই। তার হিসাব পাওয়া গেলে অপচয়ে এক ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যেত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একাদশ সংসদে পাসকৃত ৫২ শতাংশ বিলের ক্ষেত্রে কোনো সংশোধনী গৃহীত হয়নি এবং ৪৭ শতাংশ বিলের ক্ষেত্রে আংশিকভাবে সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীসমূহে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব থাকলেও সংশোধনী গ্রহণের ক্ষেত্রে শব্দ সন্নিবেশ ও প্রতিস্থাপনই প্রাধান্য পেয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উত্থাপিত প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর না দিয়ে বিরোধী দলের অতীত ইতিহাস, বিলের প্রয়োজনীয়তা, যথেষ্ট যাচাই-বাছাইপূর্বক বিলের প্রস্তাব উত্থাপিত ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে বিলের ওপর প্রদত্ত নোটিশসমূহ খারিজ করা হয়েছে। সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বিলের ওপর উত্থাপিত অধিকাংশ নোটিশ খারিজ হয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো সংশোধনী ছাড়াই বিল পাস হয়েছে।’

সংসদ নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী যতই দক্ষ যোগ্য হোন না কেন, সংসদকে গতিশীল করা, কার্যকর করার ব্যাপারে সংসদ নেতার কিছু ভূমিকা থাকে বটে। তবে সেটি মুখ্য নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সংসদ প্রাণবন্ত করা, সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধি অনুসরণ করে দ্রুত সংসদ সঞ্চালন করতে পারেন। সময়ের অপচয় না করে, প্রতিদিনের কাজ নিষ্পন্ন করা, একই সাথে সংসদের ব্যয় সঙ্কুলন করতে পারেন একমাত্র দক্ষ স্পিকার। ঠিক এভাবেই সংসদ পরিচালনা করেছিলেন দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের স্পিকার মীর্জা গোলাম হাফিজ।

এখানে বলে রাখা ভালো, সংসদের স্পিকারদের আইন জ্ঞানে পোক্ত থাকতে হয়। বিশেষ করে সংবিধান ও সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির প্রতিটি ধারা তার ঠোটস্থ থাকতে হয়। মীর্জা গোলাম হাফিজ, সংসদের পরিচালনার একটা বিশেষশৈলী ছিল, কোনো সময় যদি কোনো সদস্য বৈধতা প্রশ্ন (পয়েন্ট অব ওর্ডার) তুলে কথা বলার অনুমতি চাইতেন, তখন স্পিকার জনাব গোলাম হাফিজ বলতেন, অনারেবল মেম্বার প্লিজ ফরমুলেট ইয়োর পয়েন্ট। কিন্তু সংসদ সদস্য যদি কোনো গুরুত্বহীন বিষয় বা সেখানে সংবিধান বা সংসদ কার্যপ্রণালীর কোনো ব্যত্যয়কে চিহ্নিত করতে না পারতেন, তবে জনাব গোলাম হাফিজ ক্ষোভের সাথে বলতেন, মিস্টার মেম্বার, দিস ইজ নট অ্যাট অল এ পয়েন্ট অব ওর্ডার, বাট ডিজর্ডার। প্লিজ রিজিউম ইয়োর সিট। তার পরও যদি সদস্য মহোদয় কথা বলতেই থাকতেন, তখন স্পিকার গোলাম হাফিজ, ওই সদস্যের মাইক বন্ধ করে বলতেন, মিস্টার মেম্বার আই ওন্ট সি ইউ অ্যান্ড ওন্ট হিয়ার ইউ। এভাবে অর্থহীন আলাপ চালিয়ে সংসদের মূল্যবান সময় নষ্ট হতে দিতেন না মির্জা সাহেব। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদের স্পিকার ছিলেন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শেখ রাজ্জাক আলী।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাসংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী গৃহীত হয়েছিল স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে। মস্তিষ্ক বা ব্রেন অপারেশন যেমন জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, ঠিক তেমনই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে সংবিধান সংশোধন করা। ঘটনার দিন রাতে স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী ও তদানীন্তন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন, অবলীলাক্রমে সংবিধানের একের এক ধারার সংযোজন-বিয়োজন করছিলেন। এমন জটিল কাজ দেখে সে রাতে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পিনপতন নীরবতা অবলম্বন করছিলেন সব দলের সব সদস্য। এই দুই স্পিকারই ছিলেন বিএনপি মনোনীত অসাধারণ আইন জ্ঞানে সমৃদ্ধ ব্যক্তিদ্বয়। তার পর সংসদের দ্বিতীয় কোনো স্পিকারকে তাদের পাশে আসন দেয়া যায় না। গত তিন সংসদ ইতিহাসে অর্থহীন এবং রাষ্ট্রের অর্থ অপচয়কারী সংসদ হিসেবে পরিগণিত হবে। সেসব সংসদে গৃহীত হয়েছিল যতসব কালো আইন। এ কারণে গত ১৫ বছর সংসদ পরিণত হয়েছিল অর্থহীন ও অকার্যকর এক প্রতিষ্ঠানে।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement