২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অর্থনীতি ও রাজনীতি

-

অর্থনীতি ও রাজনীতি- এ দুইয়ের মধ্যে কে বড় কে ছোট, কে কার দ্বারা কতখানি প্রভাবিত, উদ্বুদ্ধ কিংবা পরিচালিত হয় তা বিশ্বব্যাপী কোথাও আজো খোলাসা করা সম্ভব হয়নি। কেননা যুগে যুগে স্থান, পাত্র ও প্রক্রিয়াভেদে অর্থনীতি ও রাজনীতি অধিকাংশ সময় অনিবার্যভাবেই সমতালে ও সমভাবনায় এগিয়ে চলছে। চলারই কথা। কেননা, মনে হয়েছে বড্ড পরস্পর প্রযুক্ত এরা। যদিও অনেক সময় এটিও দেখা গেছে, রাজনীতি অর্থনীতিকে শাসিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ করেছে : আবার অর্থনীতি রাজনীতিকে অবজ্ঞার অবয়বে নিয়ে যেতে চেয়েছে বা পেরেছে। এ কথা ঠিক, বহমান বর্তমান বিশ্বে ক্রমেই অর্থনীতিই রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের পথে নিয়ে যাচ্ছে। কেননা, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন থেকে শুরু করে সবপর্যায়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান- সব কিছুতেই নীতি নির্ধারণে অর্থ নিয়ামক ভূমিকায়। সিদ্ধান্ত হয় আর্থিক প্রভাবের, সক্ষম সম্ভাবনার নিরিখে। রাজনীতি নীতিনির্ধারণ করে অর্থনৈতিক জীবন যাপনকে জবাবদিহি, সুশৃঙ্খল, সুশোভন, সুবিন্যস্ত করবে এটিই ঠিক। কিন্তু নীতিনির্ধারক যদি ভক্ষক হয়ে নিজেই অর্থনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টির কারণ হয়, তখন আমজনতার অর্থনৈতিক জীবনযাপন পোষিত (facilitated, supported) হওয়ার পরিবর্তে যদি নিজস্ব তাগিদে ও প্রয়োজনে নিজস্ব উপায়ে সংগ্রহে ব্যাপৃত হতে হয় তখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের এখতিয়ার ও ক্ষমতা খর্ব হয়। আইনসভায় নীতিনির্ধারক বিধি-বিধান তৈরি করবেন সবার জন্য প্রযোজ্য করে, নিরপেক্ষভাবে, দূরদর্শী অবয়বে। কিন্তু সেই আইন প্রয়োগে যদি নীতিনির্ধারক নিজেই নিজেদের স্বার্থ অধিকমাত্রায় দেখতে থাকেন তাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, প্রতিপক্ষরূপী বিরুদ্ধবাদীদেরকে বঞ্চিত করতে স্বেচ্ছাচারী অবস্থান গ্রহণ করেন তখন ওই আইনের প্রয়োগে নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সন্দেহ তৈরি হয়। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আমজনতার আগ্রহ নেতিবাচক মনোভাবে ও সর্বোপরি রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।

উন্নয়ন কর্মসূচি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিপালিত হবে দলমত নিরপেক্ষভাবে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুযোগ-সুবিধা অধিকার আদান-প্রদান, নীতি-নিয়মকানুন, আইনশৃঙ্খলার বিধানাবলি বলবৎ, প্রয়োগ ও বাস্তবায়িত হবে- এটি সাংবিধানিক সত্য ও প্রথা। কিন্তু যদি দেখা যায় ক্ষমতাসীন নীতিনির্ধারক তা শুধু নিজের, নিজের এলাকায়, গোত্রে, দলে ও কোটারির মধ্যে বরাদ্দ বিভাজন সীমিত করে ফেলে এবং বিরুদ্ধবাদীদের বঞ্চিত করায় মেতে ওঠে তাহলে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে। এখানে এ রূপ পরিবেশে রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে, নিয়ন্ত্রক ও নিয়ন্ত্রিতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি উৎপাদনে সম্পদে সংসার সমাজসহ নীতিনির্ধারককেও একটি রূপময়, বেগবান, ঐশ্বর্যমণ্ডিত ও আনন্দঘন সক্ষমতা দান নির্মাণ করবে কিন্তু রাজনৈতিক নীতিনির্ধারক যদি ভুল পদক্ষেপের দ্বারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকে, সমৃদ্ধির সক্ষমতা ও সুযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ-পক্ষপাতযুক্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলে তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরিবেশ হয় বিপন্ন এবং এর ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা শুধু দ্বিধাগ্রস্ত নয়, হয় বাধাপ্রাপ্তও।

গণতন্ত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের। নির্বাচনের ইশতেহারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচির নানান প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে রাজনৈতিক দল। ভোটারকে প্রতিশ্র“তি দেয়া হয় সক্ষমতায় গেলে এ জাতীয় উন্নয়নের বন্যায় ভেসে যাবে দেশ। কিন্তু নেতৃত্ব তা যদি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে না পারে তাহলে ব্যর্থতার ও অভিযোগের তীর নিক্ষিপ্ত হয় খোদ রাজনীতিরই নেতিবাচকতার দিকে।

অতীতে রাজা-বাদশাহদের রাজনীতি আবর্তিত হতো মসনদে আহরণকে কেন্দ্র করে; সে সময় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র হতো সেভাবেই। মসনদ আহরণের মুখ্য প্রেরণা ও শক্তির উৎস থাকত অর্থ-প্রতিপত্তি উদ্ধার ও অধিকার। এই ভারতবর্ষে কোম্পানি আমলে এ দেশ প্রশাসিত হয়েছিল সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের ভিত্তিতে, লক্ষ্য থাকত জমি থেকে খাজনা রাজস্ব আদায়কামী অর্থনীতি। ১৯৭৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেছিলেন তা ছিল জমিদারের মাধ্যমে রায়তের কাছ থেকেই রাজস্ব আহরণের জন্যই। কিন্তু প্রজার অর্থনীতি উন্নয়ন, তার প্রতি দায়িত্ব পালন সবই কোম্পানির মুনাফামুখী দৃষ্টিভঙ্গিতে উপেক্ষিত থাকে। ফলে রায়ত বা প্রজাকুল অর্থনৈতিক জীবনযাত্রার পদে পদে নানান বঞ্চনার শিকার হতো। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের মূল কারণ যতটা না সামাজিক কিংবা ধর্মীয় তার চাইতে বেশি ছিল অর্থনৈতিক। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকার এ দেশের শাসনভার গ্রহণ করার পর নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গটি সামনে আসে। নাগরিকদের ওপর কর আরোপ প্রথা প্রবর্তন করা হয় স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনা হয়। এসবই কিন্তু মূলত এবং মুখ্যত অর্থনীতির সাথে সাযুজ্য সামঞ্জস্য আনার জন্য, দায়বদ্ধ পরিবেশ সৃজনের জন্য। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর হাজার মাইল দূরত্বে অবস্থিত দু’টি অঞ্চলকে নিয়ে একটি পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনামলে দেখা গেল পূর্ব পাকিস্তান নানান বৈষম্যের, অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও পক্ষপাতিত্বকরণের শিকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত ও মূল কেন্দ্রবিন্দু এই অর্থনৈতিক বণ্টন বৈষম্য দূরীভূত করাকে নিয়ে। সে সময় প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক অর্থনীতির চিন্তাচেতনা বেশ ব্যাপ্তি লাভ করে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শেষে উল্লেখ করা হয়েছিল- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম...’। অর্থাৎ বাংলাদেশের অভ্যুদয় বিশেষ করে পাকিস্তানের সমাজ সংসার থেকে পৃথক স্বাধীন সার্বভৌমত্ব অর্জনের মূল কারণ ও প্রেরণা ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি তথা শোষণ ও বণ্টন বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে মুক্তি। প্রাক্তন পাকিস্তানি রাজনীতির ব্যর্থতা ছিল আঞ্চলিক উন্নয়ন তথা স্বয়ম্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার ব্যাপারে সব অঞ্চল সুষম, সুশোভনীয় সুশীল আচরণে অপারগতা।
বাংলাদেশের ৫৩তম বছর বয়োক্রমকালে ইতোমধ্যে নির্বাচিত-অনির্বাচিত মিলে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সরকার নেতৃত্বে এসেছে। প্রত্যেকের কিছু না কিছু অবদানে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীদের সংখ্যা কমছে, দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে বা হচ্ছে। শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, মানুষের মাথাপিছু আয়ের উন্নতি সাধিত হয়েছে। বাজেটের বপু বেড়েছে, এডিপির আকার বেড়েছে। এখানে স্বভাবত প্রশ্ন এসেছে, অর্থনীতির এই উন্নয়নে সরকারগুলোর একক কৃতিত্ব কতখানি। এসব সাফল্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সৃজনশীলতা, নির্ভরযোগ্যতা, সততা স্বচ্ছতা জবাবদিহির কারণে বেড়েছে না দেশ অভ্যন্তরস্থ অর্থনীতির স্বয়ংক্রিয় স্বচ্ছ সলিলা শক্তির বলে এটি বেড়েছে। এটিও দেখার বিষয় যে, পরিস্থিতি এমন হয়েছে কি না আমজনতার নিজস্ব উদ্ভাবন প্রয়াসে অর্জিত সাফল্য বরং নীতিনির্ধারকের নিজেদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি, ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের দ্বারা বরং বাঞ্ছিত উন্নয়ন অভিযাত্রা বাধাগ্রস্ত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে কি না। নাগরিকের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন প্রয়াসে ক্ষমতালোভী দুর্নীতিদগ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধা সৃষ্টি করেছে কি না কিংবা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও সেবা প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হয়েছে কি না।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ ও অর্থনীতিতে কর ডিজিপির রেশিও কাক্সিক্ষত সাধারণ মাত্রার (জিডিপির ১৫-১৬ শতাংশ) চাইতে যথেষ্ট কম। বর্তমানে কর জিডিপি রেশিও ৭-৮ এর মধ্যে ঘোরাফিরা করছে, অর্থাৎ জিডিপির ৬-৭ শতাংশ কর আওতার বাইরে বা রাজস্ব অনাহরিত থেকে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে জিডিপির ৪-৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থই ঘাটতি হিসেবে প্রাক্কলিত হতে হচ্ছে এবং এ ঘাটতি দ্বারা মূলত উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়িত হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে যথা পরিমাণ ন্যায্য কর রাজস্ব অর্জিত হলে ঘাটতি বাজেট হয় না এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশের কাছে হাত পাততে হয় না। গভীর অভিনিবেশ সহকারে বিচার বিশ্লেষণের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়- কেন ন্যায্য কর রাজস্ব আহরিত হয় না বা হচ্ছে না, কারা করনেটের বাইরে এবং তাদেরকে করনেটের আনার পথে প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা কোথায়? এসবের কৌণিক দৃষ্টিতে পরীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশ সমাজ ও প্রশাসন কর রাজস্ব সুষমকরণের পথে স্বচ্ছতার ন্যায়ানুগতার, পক্ষপাতহীন পদক্ষেপ নিতে অপারগ হয়েছে বা হচ্ছে কিংবা কর প্রদানে, রেয়াত বা অব্যাহতি প্রাপ্তিতে অন্তর্নিহিত অপারগতা বা দুর্বলতা রয়েছে। সাধারণ ও অসাধারণ করদাতায় বিভক্ত সমাজে অসাধারণ করদাতারা সাধারণ একদাগে যে কর ফাঁকি দেয় সহস্র সাধারণ করদাতার ওপর তার চাপ পড়ে। বড় করদাতারা নীতিনির্ধারকের প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যেতে থাকলে কর প্রদান ও আহরণের সংস্কৃতি সুস্থ ও সাবলীল হতে পারে না। আইন প্রণেতাদের বেশির ভাগ অংশ বৃহৎ করদাতা হলে ক্ষমতার বলয়ে বসবাসকারী হিসেবে রেয়াত ও ছাড় গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপক কর রাজস্ব রাষ্ট্র্রের হাতছাড়া হয়ে যায়। যথাযথ কর রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। অথবা কথাটি এভাবে ঘুরিয়ে বলা যায়, নীতিনির্ধারক নেতৃত্বের যে বলিষ্ঠ কমিটমেন্ট দরকার কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যে, যে সুষম পরিবেশ, যে পক্ষপাতহীন আচরণ, যে দৃঢ়চিত্ত মনোভাবের প্রয়োজন যেন থেকেও তা থাকে না। আইনসভায় যে অর্থবিল উত্থাপিত ও গৃহীত হয় সেখানে ছাঁটাই প্রস্তাব পেশের কিংবা বিভিন্ন গঠনমূলক মত প্রকাশ বা প্রস্তাবনা পেশের উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থায় বেশ সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে ফিসকেল মেজারসগুলো যা যা উত্থাপিত হয় তাই গৃহীত হচ্ছে। মূল বাজেটে আয়-ব্যয়ে প্রাক্কলিত বরাদ্দ যথাযথ অর্জিত হচ্ছে কি না তার জবাবদিহিকরণের সুযোগ সেখানে অনুপস্থিত। সামষ্টিক অর্থনেতিক ব্যবস্থাপনায় রাজস্ব আয় ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অনিবার্যতা অনস্বীকার্য।

আরেক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মধ্যম আয়ের পথযাত্রী দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিট হওয়ার উপযুক্ত উৎপাদন, বিপণন, সেবা, নির্মাণ পরিবেশ সবই বিদ্যমান সত্ত্বেও অর্থাৎ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব ৬-৭ এর বেশি প্রদর্শিত কিংবা হিসাবের আওতায় আসছে না। সাধারণ হিসাবে দেখা যায়, জিডিপির প্রায় দুই থেকে তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি যথাযথ হিসাবভুক্ত হতে পারছে না। অদূরদর্শী ও দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচির দ্বারা মোটা অঙ্কের অর্থ উৎপাদন, বিপণন ও পরিবহন খাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্নীতিতে লোপাট হয়েছে টাকা। বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যে চোরাকারবারে, আমদানি-রফতানি ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে নানানভাবে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সৌভাগ্যের ওপর ভাগ বসানো হয়েছে। ব্যাংকের অর্থ লুটপাট হয়েছে, আত্মসাতসহ নানান প্রকার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ব্যাংকের আস্থা বিনষ্ট হয়েছে, পুঁজিবাজারে পুঁজি প্রবাহ তলানিতে নেমেছে। পণ্য সরবরাহে চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেশন ব্যবসায়-বাণিজ্যে টেন্ডারবাজি সবই ব্যয় বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। নির্মাণ ব্যয়ের বৃদ্ধি সব কিছু বাবদ যে অতিরিক্ত অর্থের লোপাট হয়েছে তা জিডিপিকে দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল যথেষ্ট। এখন এই অতি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টির নানান সমস্যা সীমাবদ্ধতাকে নিয়ন্ত্রণ দূরীভূত করণের দায়িত্ব যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের তারা কি তা করতে পেরেছিলেন, পারছেন বা পারবেন। পারস্পরিক দোষারোপের অবয়বে অর্থনীতির যে ক্ষয়ক্ষতি সাধন তা কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। কোনো ঘটনার জন্ম দিয়ে সেই ঘটনার ওপর দোষ চাপালেই ক্ষয়ক্ষতির দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ শেষ হয় না। ঘটনার কারণ ও কার্যকারণ ও পর্যালোচনাযোগ্য। দলীয় বা কোটারিগত, শ্রেণীগত পক্ষপাতিত্বে অর্থনীতিতে যে ভারসাম্যহীন পরিবেশ সৃষ্টি করে তা অবশ্যই অনুধাবনীয়। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, জনগণ নিজেদের দিন এনে দিন খাওয়ার টানাপড়েনের অর্থনীতিতে অতিশয় আগ্রহী ও মনোযোগী হতে বাধ্য হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে, রাজনীতির নিজেরই দায়িত্বশীল হওয়ার যৌক্তিকতা হারিয়ে যায়নি, যেতে পারে না।

লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান


আরো সংবাদ



premium cement