১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

চিকিৎসা সুবিধায় ব্লকেড অতঃপর সমাচার

-

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি হাসপাতাল ও কিছু চিকিৎসক সম্প্রতি ঘোষণা দেন, তারা আর বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেবেন না। এটি অবশ্য মুদ্রার এক পিঠ। তবে আরো একটি পিঠও আছে। সেই আলোচনা আপাতত থাক। বর্জনকারী সেই হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের মান ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন না তোলা ভালো। তাদের প্রতি বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের রইল সাধুবাদ। কেননা, তাদের এই অস্বীকৃতি, আমাদের বুঝতে সাহায্য করছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরমুখাপেক্ষিতা কাটিয়ে ওঠা কতটা জরুরি। স্থানীয় চিকিৎসাব্যবস্থার গুণ-মান বাড়ানোসহ চিকিৎসকদের আচার-ব্যবহারে উন্নত করতে না পারা আমাদের জন্য কতটা বিপদের। আমাদের বর্তমান চিকিৎসাব্যবস্থার গুণ-মান নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতিতে রোগমুক্তির জন্য তারা ভারতে যাচ্ছেন। সেখানে চিকিৎসা নিতে ব্যয় করতে হয় কষ্টার্জিত বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। তাই কাক্সিক্ষত মানের স্বাস্থ্যসেবা না থাকার লজ্জার সাথে সাথে একটি অর্থসংক্রান্ত বিষয়ও জড়িত। সে জন্য এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।

ভারতীয় হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ‘ব্লকেড’ তুলে নেয়ার কোনো আর্জি-আকুতি জানানোর প্রয়োজন নেই বলে অনেকে মনে করেন; বরং বিকল্প খুঁজতে হবে। পরমুখাপেক্ষিতা থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার যত অনুশীলন আছে, সেটি দ্রুত রপ্ত করতে পারাই হবে উত্তম। সব দিক থেকে স্বয়ংসম্পন্ন হওয়ার যে উদ্যোগ-উদ্যম এখন সর্বত্র লক্ষ করা যাচ্ছে, চিকিৎসাব্যবস্থাকেও তার সারথি করতে হবে। একটি সমর্থহীন দেশকে কেউ শ্রদ্ধা করে না। অস্বীকার করার জো নেই, অনেক দিন ধরে বাংলাদেশী রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা পেতে ভারতে যাচ্ছেন। সেখানে ভালো চিকিৎসাসেবা পানও। বিশিষ্ট ভারতীয় চিকিৎসক দেবী শেঠিসহ অনেক ভারতীয় ডাক্তার বাংলাদেশীদের যত্ন নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তবে যারা ব্লকেডের ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের কাছে কতজন বাংলাদেশী কবে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন বা কে যাননি, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। যদি গিয়ে থাকেন, চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, প্রশ্ন হলো তারা কি প্রদেয় সেবার বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ করেননি। প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল তুমি কী আমার পর’। বাংলাদেশের অনেকে এমন ব্লকেডে একটি রাজনৈতিক ‘বদ্বু’ (দুর্গন্ধ) টের পাচ্ছেন। ‘অসাম্প্রদায়িক ভারতের’ সেসব হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বাংলাদেশ বর্জন এখন যদি কেউ সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট বলে ধরে নেন, সেটা নিয়ে বলার কিছু কি থাকবে? এমন বর্জনের পিছনে রাজনৈতিক ‘বদ্বু’ এবং স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে; এর পেছনের একটি গল্প রয়েছে। তা হলো, বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার হরণকারী এক স্বৈরাচারীর শাসনের অবসান ঘটানোয় ভারতের কেউ বড্ড বেশি চোট (ব্যথা) পেয়েছেন। আর বর্জনকারীরা বাংলাদেশের আত্মস্বীকৃত এক অপরাধীর ধর্ম পরিচয় পেয়ে এখন কাতর হয়ে পড়েছেন। আমাদের ভারতের কিছু বিষয় নিয়ে চোট ও কাতরতা নেই, তা বলব না। তবে ওই সব নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আবেগ ও চেতনা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন। কারণ, অনধিকার চর্চা-পরচর্চা কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না।

এসব বিষয় নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে বরং আসল কথায় আসা যাক, নিজেদের চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়ে আত্মঅনুসন্ধান করা, ওই আলোকে সামনে এগোনোর পথ অনুসন্ধান করাই হবে সময়ের সদ্ব্যবহার। এ বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে বরং আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা নিয়ে সামান্য কিছু কথা ‘বার্ড ডিউর’ মতো করে বলার চেষ্টা করা যাক। এ কথা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে, আমি অতি ক্ষুদ্র একজন সংবাদপত্রসেবী। এমন এক জটিল বিষয়ে কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী কিছু লিখলে তা হতো অনেক উমদা (সমৃদ্ধ)। সেটি হতো প্রয়োজনী একটি রচনা। যেহেতু সংবাদসেবীরা সবসময় ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করেন। তাই কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে দু’লাইন লেখার লোভ সামলাতে পারেন না, তা ছাড়া সাংবাদিকরা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন, তবে পেশাগত কারণে তাদের অল্পবিস্তর সবদিকে নজর রাখতে হয়। আমরা ‘লেম্যান’ সে জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে অভিজ্ঞতা না থাকা স্বাভাবিক। যাই হোক, যে কারণে প্রতি বছর দেশের বিপুল অঙ্কের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ভারতসহ বিভিন্ন দেশ দিয়ে আসতে হয় সে জন্য কিছু খোটাও শুনতে হয়।

মানুষের ৫ মৌলিক অধিকারের একটি, চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকার। বিগত ৫৩ বছরে আমরা কি তার কোনো একটি পূরণ করতে পেরেছি। এ জন্য নিকট অতীতের কোনো কর্তৃপক্ষের এতটুকু গ্লানি বোধ ছিল না। অথচ অতি সম্প্রতি দেশের মানুষ সুনির্দিষ্টভাবে জনগণ জানতে পারলেন, প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, আত্মসাৎ, অপচয় করা হয়েছে। বিশেষ করে সদ্য পতিত সরকার নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার স্বার্থে এ জনপদের অপুষ্টিতে ভোগা হার জিরজিরে মানুষের পাই পাই করে জমানো টাকা ‘মিস হ্যান্ডেলিং’ করে পানিতে ফেলেছে। যারা এসব করেছেন, তারা একবারও কি ভেবেছেন, দেশে লাখো মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিনিয়ত মরছেন। আর শাসকেরা নিজেরা নিজেদের বিবেকবান ও দারিদ্র্যবিমোচনের সৈনিক, মানবতার বন্ধু হিসেবে সবসময় আত্মপ্রচারে ব্যস্ত থাকতেন। তাদের বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষোভে দুঃখে এবং ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এখন হাজারো মানুষ পতিত সরকারকে ধিক্কা দিচ্ছেন।

আগে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫৩ বছরে দেশের ৫টি মৌলিক অধিকারের একটিও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এসব নিয়ে অতীতের সরকারের ন্যূনতম কোনো সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যাবে না। দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে, বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল হয়েছে ঠিকই, সেই হাসপাতালগুলোর এবং চিকিৎসকদের গুণ-মান নিয়ে কখনো কি কোনো নিরীক্ষা হয়েছে বলে কেউ শুনেছেন। তবে এ বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এমন খবর আছে যে, সেখানে অপচিকিৎসা হয়েছে, রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে। একই সাথে এ প্রশ্নও উঠেছে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র নিকট অতীতে কতটা অর্থ খরচ করেছে। একই সাথে জনগণ এটাও জানতে চাইবেন, চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ট জনশক্তির সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাথাপিছু হারটা কত। যত দূর জানা যায়, সেটা মোটেও উল্লেখ করার মতো নয়। তা ছাড়া যতটুকু অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে, তা থেকে কতটা লুটপাট হয়েছে, তার হিসাব কেউ কি জানেন? গত সাড়ে ১৫ বছর তো কম সময় নয়, এ সময় দেশে লুটপাটতন্ত্র ভয়াবহভাবে প্রসারিত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সেবার মান ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। আর তার ফল ছিল এ দেশের রোগীদের ভারতে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে নেমেছিল ঢল।

এমন সব অব্যবস্থার কোনো জবাবদিহি ছিল না। তা হলে প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা কি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকবেন? দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সাড়ে ১৫ বছরে দেশের কোথাও কোনো জবাবদিহির সংস্কৃতির চর্চা ছিল না। এমনকি সেই সংস্কৃতি গড়ার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টাও ছিল না। পতিত সরকার জবাবদিহিকে ভাবত নিজেদের স্বেচ্ছাধীন চলার পথে বাধা। চব্বিশের বিপ্লবের পর অনেক কিছু পাল্টেছে এবং পাল্টানোর চেষ্টা চলছে। অবশ্য পাল্টে দেয়া কাজটা খুব সহজ নয়, বড্ড কঠিন। মন্দের ভালো এটা যে, সর্বত্র অনেক কিছুর সূচনা লক্ষ করা যাচ্ছে। যা ৫৩ বছরে হয়নি, এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে সদিচ্ছা থাকলে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব নয়। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘এ গুড বিগিনিং ইজ হাফ ডান’। সে জন্য সূচনা করতে হবে সুচিন্তিতভাবে। দেশে সাধারণ চিকিৎসা হলেও জটিল চিকিৎসা তেমন একটা করা যাচ্ছে না। মানুষও এমন সব চিকিৎসা দেশে করানো নিয়ে অনাস্থায় ভুগছেন। এর পেছনে দুই কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, মানোত্তীর্ণ চিকিৎসকের অভাব ও ব্যবস্থার সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে হালনাগাদ না থাকা তাদের আচার-আচরণ নিয়ে রোগীদের অসন্তুষ্টি ও চিকিৎসাকেন্দ্রের অধিকাংশের সর্বাধুনিক সাজসরঞ্জামের বিপুল ঘাটতি। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্তৃপক্ষেরও অসহযোগিতার অভিযোগ আছে। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের বহু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের ওষুধ প্রস্তুত করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল প্রতিযোগিতা করে ওষুধ রফতানি করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রয়োজনীয় প্রায় সব অ্যালোপেথিক ওষুধ দেশে উৎপাদন হয়। এটা অবশ্যই গৌরবের। এ বিষয়ে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতে হয়তো আরো সুযোগ তৈরি হবে নতুন করে ভাবনা ও ব্যবস্থা নেয়ার। বিল্পবের পর অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতটা বাদ যাবে কেন?

সবার জানা, বাংলাদেশ সমস্যা আকীর্ণ এক জনপদের নাম। বর্তমান সরকারকে এমন এক রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়েছে যার সব সম্পদ লুট করা হয়েছে। তাদের হাতে এমন কোনো জাদুর কাঠিও নেই যে, মুহূর্তে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগার করা সম্ভব। তার পরও সম্ভাব্য স্বল্পসময়ে স্বল্পখরচে সবার কাছে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। যাতে সহজে ও সুলভে চিকিৎসার প্রসার ঘটানো যায়। একটা কথা আছে, নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো। এ জন্য কোনো আইনগত সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ বিকল্প চিকিৎসা ও ওষুধপত্র ব্যবস্থাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার সাথে সাথে দায়িত্বের একটা বোঝাও আসে।

বহুল প্রচলিত অ্যালোপেথিক চিকিৎসার বাইরে হোমিওপ্যাথি, ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক এ তিন ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থাকে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা বলা যেতে পারে। এসব পদ্ধতির চিকিৎসাব্যবস্থা কয়েক হাজার বছরের পুরনো। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী হোমিওপ্যাথি ইউনানী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এসব চিকিৎসাব্যবস্থায় সেবাগ্রহণ তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসার খরচ অনেক কম। তবে এসব চিকিৎসাশাস্ত্রের সম্মুখে তীব্র প্রতিকূলতা বিদ্যমান। প্রথমত এই তিন ব্যবস্থাতেও মানসম্পন্ন চিকিৎসকের যেমন সঙ্কট রয়েছে, সরকার স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সরকারি সাহায্য পাওয়া এখনো দুর্লভ। তাছাড়া এ তিন চিকিৎসাপদ্ধতির ওষুধের মান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। এর ব্যতিক্রমও আছে। দেশে হোমিওপ্যাথির ওষুধ তৈরির এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত, অর্থাৎ যারা সরকারের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে, ওইসব প্রতিষ্ঠানের তৈরি হোমিও ওষুধের ওপর নির্ভর করা যায়। যেমন ইউনানী ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতে হামদর্দ একটি স্বনামধন্য ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। একই সাথে বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা হোমিওপ্যাথিও দেশের চিকিৎসা সেবায় অবদান রাখছে।

দেশে অনেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রয়েছেন, বহু হোমিওপ্যাথিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রি কলেজও রয়েছে। বিকল্প এ পদ্ধতির সমস্যা সঙ্কটও অনেক। এ দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। সবার জন্য সুস্বাস্থ্য এ নীতি বাস্তবায়িত করতে হবে সরকার স্বীকৃত সব প্যাথিকে সাহায্য ও সুযোগ দিতে হবে। একই সাথে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভার্টেক্স ল্যাবরেটরিজের স্বত্বাধিকারী ও বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডা: মো: আজিজুর রহমান আক্ষেপ করে বলেছেন, সরকার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাব্যবস্থা স্বীকৃতি দিয়েছে বটে। কিন্তু আমরা যে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি, তাতে যে অসংখ্য মানুষ রোগমুক্ত হচ্ছে তারও একটা স্বীকৃতি পেলে এ চিকিৎসাশাস্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হোমিও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎসাহ পেত। উদিপ্ত হতো। জাতির সেবায় আরো বেশি অবদান রাখতে উৎসাহ বোধ করত। আমাদের চিকিৎসাসেবা লাভ করে বহু মানুষ জটিল রোগ থেকে সেরে উঠেছেন। আমি নিজে কোভিডে আক্রান্ত এবং এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছি, তারা সুস্থ হয়েছেন। আমাদের কাছে ওইসব রোগে আক্রান্ত কোনো রোগী যদি মারা যেতেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে চিকিৎসা পেশায় টিকে থাকা সম্ভব হতো না।

দুঃখের বিষয় হলো বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থাকে এখনো অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে সমস্যাটা একটু বেশি। এ চিকিৎসাশাস্ত্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আছে। বহুল প্রচলিত এক বড় প্যাথি হোমিওপ্যাথিকে অবৈজ্ঞানিক বলে মনে কর করা হয়। একই সাথে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবা হয়। হোমিওপ্যাথির এ সঙ্কট এর সূচনা থেকে। হোমিওপ্যাথির চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হানিমানের জীবনের ঘটনা থেকে তার উদাহরণ দেয়া যায়। বহুল প্রচলিত ওষুধ প্রস্তুতকারীরা হোমিওপ্যাথিকে তাদের স্বার্থের পরিপন্থী মনে করে, হানিমানের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেন। এমন চাপ সহ্য করতে না পেরে তাকে জার্মানি ছেড়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে চলে যেতে হয়েছিল। সেখানে তিনি ১৮৪৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। পৃথিবীর বহু দেশে হোমিওপ্যাথির বিকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে এ উপমহাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি দেশে হোমিওপ্যাথির বিকাশ লক্ষণীয়। জার্মানিতে রয়েছে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরির বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ব্রিটেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ছাড়াও আরো অনেক দেশের বহু মানুষ এ পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন।

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাব্যবস্থা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে পারলে দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ন্যূনতম চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছানো যেত। তবে শর্ত এই শাস্ত্রের চিকিৎসকদের মান নিশ্চিত করা, হোমিও ওষুধের গুণাগুণের দেখার কাজে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement