৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গণতন্ত্র ও নির্বাচনে অবিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ

-

(দ্বিতীয় কিস্তি)
শেখ মুজিব একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে তার ক্ষমতার মসনদ নিষ্কণ্টক ও চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন। তিনি ও তার সরকার চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করে শুধু দেশের ও জনগণের ক্ষতি করেনি; বরং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকেও তিনি জটিল পরিণতির দিকে নিজেকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তিনি ব্যর্থতার চোরাবালিতে এমনভাবে আটকে গিয়েছিলেন যে, পরিত্রাণের কোনো উপায় তার ছিল না। এমন অবস্থায় নিজের ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য তিনি বাকশাল গঠন করে ক্ষমতা-কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। মুজিবের এ অভিলাষ ও দুর্বল অবস্থার সুযোগ গ্রহণে সচেষ্ট হয় বামপন্থীরা, বিশেষ করে মস্কোপন্থী দলগুলো। তারা দলে দলে বাকশালে যোগ দেয়। তারা আশা করেছিল এ পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা মুজিবকে পুরোপরি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। মজার বিষয় হলো- উল্টো মুজিবই তার ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য সমাজতন্ত্রীদের নিজস্ব বলয়ে আটকে ফেলেন। প্রকৃতপক্ষে, উভয়ের বিশ্বাস ও লক্ষ্য ছিল আলাদা। মুজিবভক্ত আওয়ামী নেতাকর্মীরা মুজিবের এ পরিবর্তনকে দ্বিতীয় বিপ্লবের পদক্ষেপ মনে করতে থাকে। গণতন্ত্রে কবর রচনা করে মুজিব কোন বিপ্লব সাধন করতে চেয়েছিলেন তার কোনো সুস্পষ্ট জবাব আওয়ামী নেতাকর্মীরা কোনো দিন দেয়নি। তবে বলা হয়, মুজিব অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের পদক্ষেপ নেন। এরূপ বক্তব্য ছিল প্রহসনমূলক। কারণ সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন ও শরণার্থীদের পুনর্বাসনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলেও অর্থনীতিকে যুদ্ধ-পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেনি, সামনে এগিয়ে যাওয়া তো ছিল আরো কঠিন ব্যাপার। বড় বড় শিল্প-কারখানা, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করা হলে সেগুলো দুর্নীতি, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার কারণে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিল। ভূমি ব্যবস্থায় সংস্কার আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও ক্ষমতাসীন ধনীগোষ্ঠীর কারণে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলায় চরম অরাজকতা ও নৈরাজ্য দেখা দেয়। ফলে দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীন এক ভয়াল জনপদের বাসিন্দা হয়ে পড়ে।

সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা ছিল মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা বাক-স্বাধীনতা হরণ করা। বিরোধী দলগুলোর কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। চারটি সরকার নিয়ন্ত্রিত দৈনিক পত্রিকা ছাড়া অন্য সব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়। ভিন্নমত ও পথ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনের নিবর্তনমূলক আটকাদেশ দিয়ে জেলখানা ভর্তি করা হয়, যার অধিকাংশই ছিল বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী। জনগণ তথাকথিত দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচিতে কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখতে পায়নি; বরং চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের গ্লানি তখনো সর্বত্র বিরাজ করছিল। এমনকি রাজনৈতিক নিপীড়ন ও নির্যাতনের স্টিমরোলার নেমে এসেছিল তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। (মওদুদ আহমদ)

১৯৭৩ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পরে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে চায়নি। তারা গণতন্ত্র হত্যার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাকশাল গঠন করে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে। এমনকি আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ হয়। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ফলে ১৯৯৫ সালে শেখ মুজিবকে পরিবারসহ আত্মাহুতি দিতে হয়। আওয়ামী লীগও গভীর গিরিখাদে পতিত হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে সাধারণ সৈনিকরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি সামরিক শাসক হয়েও বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করেন। এ নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও তার ফলে কোনো রাজনৈতিক জটিলতা দেখা দেয়নি; বরং সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পেরেছে, সেটিই ছিল বড় কথা।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে মে মাসে বিদ্রোহী সৈনিকদের হাতে নিহত হলে সে বছরের ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে বিএনপি প্রার্থী বিচারপতি আবদুস সাত্তার ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। কয়েক মাসের ব্যবধানে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তিনি সামরিক আইন জারি করেন। কয়েক বছর পরে ১৯৮৬ সালের ৭ মে তিনি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করেন। এরশাদ ততদিনে জাতীয় পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করে ফেলেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। তবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নেয়। এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুব কম। সে নির্বাচনটি দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তখন বিরোধী দলের আন্দোলন ক্রমান্বয়ে তীব্র হয়ে ওঠে এবং জেনারেল এরশাদের পদত্যাগ দাবি করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি আবার নির্বাচনের আয়োজন করেন; কিন্তু তখন সব দলই নির্বাচন বর্জন করে। এ নির্বাচনেও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুব কম। ফলে নির্বাচনটি প্রহসনে পরিণত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এরশাদবিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ১৯৯০ সালে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন এবং অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসন এবং আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পায়। বিএনপি জামায়াতের ২০টি আসনের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। নির্বাচনটি দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়। মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু আগে এক উপনির্বাচনে বিএনপি সরকার অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে বিরোধী দলগুলো তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে এবং জামায়াতের প্রস্তাবিত ‘কেয়ারটেকার সরকার’ প্রতিষ্ঠার দাবি জোরদার হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বিএনপি সরকার সে দাবি মেনে না নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে। সব বিরোধী দল তা বর্জন করে। মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি সম্মিলিতভাবে ‘কেয়ারটেকার সরকার’ প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে আন্দোলন তুঙ্গে নিয়ে গেলে বিএনপি সরকার অগ্রহণযোগ্য ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্ট অধিবেশন ডেকে সংবিধান সংশোধন করে তাতে ‘কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থা সংযোজন করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭৫ শতাংশ ভোটার ভোট দেয় এবং আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। বিএনপি ১১৬টি আসন নিয়ে বিরোধী দলে বসে। ওই নির্বাচনটিও দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০১ সালে আবারো কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবারে ৭৫ শতাংশ ভোট পড়ে এবং বিএনপি ও জামায়াত জোট ১৯৩টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ পায় মাত্র ৬২টি আসন। দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষকরা ওই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করে।

২০০৬ সালে পরবর্তী সংসদীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার কেয়ারটেকার সরকারের সম্ভাব্য প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অবসরের বয়স বৃদ্ধি করে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নতুন কেয়ারটেকার সরকার গঠন নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান ঘোষণা করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। দেশী-বিদেশী নীল-নকশার আলোকে সেনাসমর্থিত একটি সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারা দোর্দণ্ড প্রতাপে দুই বছর শাসন চালানোর পরে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় এবং আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজন করে। এতে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে বলে দাবি করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট পায় ২৩৮টি আসন এবং বিএনপি পায় মাত্র ৩০টি। এ নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য দাবি করা হলেও তা যে ‘সামরিক-অসামরিক আমলা-আওয়ামী লীগ-বিদেশী নীল-নকশার’ আওতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার পক্ষেও জোরালো যুক্তি দেখা গেছে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট তথা সেকুলার ও বামপন্থীরা মিলে সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বিরোধী দল বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানোর পরিকল্পনা করে এবং তা প্রায় দেড় যুগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

২০১৪ সালের নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে অযাচিতভাবে আদালতের ওপর বন্দুক রেখে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বিরোধী দলগুলো এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ভয়াবহ নির্যাতন চলতে থাকে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে এমন প্রহসনে পরিণত করে যে, ১৫৫ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যায়। সেবারে ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগই পায়নি। একমাত্র ভারত ও ভুটান ছাড়া বিদেশের কেউই ওই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। অনেকেই একে ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে।

পাঁচ বছর পরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলোকে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দেন। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে জাপা নেতা জেনারেল এরশাদকে চাপ দিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেন। বাস্তবে দেখা গেল, নির্বাচনের আগের রাতেই কারচুপি করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়েছে। সেবারেও নির্বাচন দেশ-বিদেশে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রিয়াজ তখন মন্তব্য করেছিলেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। বিবিসি ভোটে ব্যাপক জালিয়াতির কথা উল্লেখ করে। অনেকেই একে ‘মধ্যরাতের নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে।

২০২৪ সালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। বিরোধী দলগুলো সর্বাত্মকভাবে এ নির্বাচন বয়কট করলে আওয়ামী লীগ নিজ দলের একাধিক প্রার্থীকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায়। ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। আমলাদের মধ্যে প্রচুর টাকা বিতরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শুরু থেকেই নির্বাচনী তামাশা আঁচ করতে পেরে তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি নির্বাচন কমিশনে চিটি পাঠিয়ে জানান, তারা আসন্ন নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ তাদের ভাষায়- it is not sufficiently clear whether the necessary conditions will be met. অনেকেই একে ‘ডামি নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করে।

বস্তুতপক্ষে, শেখ হাসিনা তার পিতার মতোই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে ভয় পেতেন। পিতা ও কন্যা উভয়ই বিরোধী দলকে সহ্য করতে পারতেন না। তারা কোনো সমালোচনা গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন না। তারা সবাইকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অপমান করাটাকে গৌরবের মনে করতেন। তারা এমনভাবে নির্বাচনব্যবস্থা কুক্ষিগত করেছিলেন যে, বিরোধী দল বা সাধারণ ভোটারদের অধিকার বলে কিছু ছিল না। এভাবে ১৯৭৩, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যে চারটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রতিটি ছিল বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, জোরজবরদস্তি ও প্রতারণার বাস্তব উদাহরণ। একইভাবে জেনারেল এরশাদের ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনও ছিল তামাশা ও প্রহসনের দৃষ্টান্ত। সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা ছিল দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট গ্রহণের ব্যাপারে বিশ^স্ততা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারেনি।

লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement