২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গণতন্ত্র ও নির্বাচনে অবিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ

-

(প্রথম কিস্তি)
১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর গেটিসবার্গের ঐতিহাসিক ভাষণে আব্রাহাম লিঙ্কন গণতন্ত্র সম্পর্কে বলেছিলেন- ÔGovernment of the people, by the people, for the people, shall not perish from the earth’. বিভিন্ন পণ্ডিত গণতন্ত্রের বিবিধ সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে আব্রাহাম লিঙ্কনের সংজ্ঞাটি সবচেয়ে সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মাত্রই জানে যে, গণতন্ত্রের মূলকথা হচ্ছে, শাসনকার্যে জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণের সুযোগ দান, বহুদলীয় ব্যবস্থার উপস্থিতি, বিরোধী মতাদর্শকে সহ্য করা, বাক, ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার, নাগরিকদের সমান অধিকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, আইনের শাসন, মানবাধিকার সংরক্ষণ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি নির্বাচন মোটা দাগে বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল। অবশিষ্ট সংসদ নির্বাচনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন ছিল। যখন যে দল বিজয়ী হয়েছে তারা দাবি করেছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। বিরোধী পক্ষ বলেছে, নির্বাচনে কারচুপি, ষড়যন্ত্র, ভোট ডাকাতি হয়েছে। আবার প্রায় প্রতিবারই যারা বিরাধী দলে ছিল তারা দীর্ঘদিন ধরে সংসদ বর্জন করেছে।

১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর সাংবিধানিক পরিষদ ভেঙে দেয়া হয়। সংবিধানের আওতায় নতুন পার্লামেন্ট গঠনের জন্য ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। বিরোধী দলের মধ্যে মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি রাজনৈতিক ময়দানে বেশ তৎপর ছিল। নবগঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে সব দল কর্মতৎপর হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক অবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলগুলো সরকারের প্রচণ্ড সমালোচনা করতে থাকে। আন্দোলন দমানোর জন্য সরকার শক্তি প্রয়োগ শুরু করে। ‘এমনিতেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দেশের শহরাঞ্চলগুলো ছিল অশান্ত। স্বাধীনতার পর মাত্র এক বছর না যেতেই বিরোধী আন্দোলনের চাপে আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছিল। পরিস্থিতি যখন ক্রমে অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ইতোমধ্যে প্রণীত নিবর্তনমূলক আইনগুলোও সরকারের ভাবমর্যাদা দিনে দিনে বিনষ্ট করে দিতে থাকে। কিন্তু নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রাসাদে এত সহসাই ধস নামবে, আওয়ামী লীগ নেতারা তা মেনে নিতে চাইছিলেন না। পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এই অসহিষ্ণুতার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল।’ (মওদুদ আহমদ, বাংলাদেশ : শেখ মজিবর রহমানের শাসনকাল)

১৯৭৩ সালে বিরোধী দলগুলো একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাতে থাকে। শেখ মুজিব বিরক্ত হয়ে বিরোধী দলগুলোকে বিদেশীদের সাথে ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিরোধী দলগুলোর প্রতি মারমুখো হয়ে উঠে, বিভিন্ন জনসভা পণ্ড করা এবং তাদের অফিস আক্রমণ করতে থাকে। এমনকি বর্ষীয়ান রাজনীতিক আতাউর রহমান খানকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। বিরোধী নেতারা দাবি করেন, ‘জাতির পিতা’ বলে কোনো কথা নয়- প্রধানমন্ত্রী এবং একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বাংলাদেশের মতো রাজনীতি অনুপ্রাণিত দেশে কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে অবস্থান করতে পারেন না। এক পর্যায়ে শেখ মুজিব বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

১৯৭৩ সালের নির্বাচন ছিল অনেকটা প্রহসনমূলক। আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা তখন বেশ হ্রাস পেলেও নেতা মুজিবের ইমেজ অনেকটাই বজায় ছিল। এতদসত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জোরজবরদস্তি করে নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চেষ্টা করেন। তারা সব রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিল। শেখ মুজিব ও তার মন্ত্রীরা ত্রাণকাজের জন্য ব্যবহার্য হেলিকপ্টার নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করেন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র পেশ করার সময়ে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রত্যক্ষ বিরোধের ঘটনা ঘটে। শেখ মুজিব, তোফায়েল আহমদ, কে এম ওবায়দুর রহমানসহ ছয়জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এসব আসনে অন্য কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেনি। অভিযোগ করা হয়, ওই সব আসনে আওয়ামী কর্মীরা অন্য কাউকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেয়নি। এ ছাড়া পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বল প্রয়োগে প্রত্যাহার করানো হয়। তারাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

বিরোধী দলগুলো এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালায় ও ক্ষমতাসীন দলের এহেন আচরণকে ফ্যাসিস্ট মনোভাবের পরিচায়ক বলে অভিযোগ উত্থাপিত করে। জাসদ মনোনয়নপত্র দাখিল করার জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণের দাবি জানায়। জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রব এক জনসভায় ঘোষণা করেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল নয়, কারণ সরকার এক ভীতি প্রদর্শনের পন্থা বেছে নিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, জাসদের অনেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেয়া হয়নি এবং সরকার এ ক্ষেত্রে সামান্য সৌজন্যবোধও প্রদর্শন করেনি। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেন। ... বলাবাহুল্য, আওয়ামী লীগের এই মনোভাব নির্বাচনী প্রচারণার গোটা সময়জুড়ে অব্যাহত ছিল এবং নির্বাচনের দিনে তা চরমতম পর্যায়ে উপনীত হয়। এ ধরনের প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বে¡ও প্রায় দুই ডজন আসনে বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা নিশ্চিত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যান। ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর কোনো কোনো আসনে স্থানীয় অফিসাররা বিরোধীদলীয় প্রার্থীকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষণাও করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের বিজয়ী হতে দেয়া হয়নি। (মওদুদ আহমদ)

মওদুদ আহমদ ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পরিস্থিতি তুলে ধরে লিখেন, ‘বেতার ও টেলিভিশনে নির্বাচনের ফলাফল প্রচার শুরু হতেই আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তৎপর হয়ে ওঠেন। যখন তারা দেখতে পান, আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রথম সারির নেতা বিরোধী কয়েকজন নেতার কাছে পরাজিত হতে চলেছেন, তখন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত ঘটে। নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্বাহ্নে গঠিত কেন্দ্রীয় প্রচার কমিটিকে স্তব্ধ করে দিয়ে গণভবনের একটি কন্ট্রোল রুম নির্বাচন পরিচালনা ও কৌশল পরিনির্ধারণের সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে। যখন পরাজয়ের সম্মুখীন আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যাকুল কণ্ঠে বারবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ট্রোল রুমে আবেদন জানাতে থাকেন, তখন গোটা প্রশাসনযন্ত্র ও রক্ষীবাহিনী বিপন্ন নেতাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ভোট গণনা ও ফলাফলের প্রবণতা যখন কয়েকজন বিরোধী নেতার সুনিশ্চিত জয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তখন অন্ততপক্ষে ছয়টি নির্বাচনী এলাকায় জরুরিভিত্তিতে হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। তারা সমস্ত ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয় ও আগেই পেপার ভর্তি বাক্সগুলোর পরিবর্তে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে রেখে আসে।’ মওদুদ আহমদ আরো লিখেন, ‘এটি সত্য যে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অুনষ্ঠিত হলেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করত। আওয়ামী লীগ বিঘ্ন সৃষ্টি না করলে যে ৯টিতে বিরোধী দল জয়লাভ করেছিল তার সাথে আর বড়জোর ২০টি আসন যোগ হতে পারত। সংসদের ৩১৫টি আসনের মধ্যে ৯টির পরিবর্তে ৩০টি আসনে বিরোধী দল জয়লাভ করলে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিশেষ কোনো ক্ষতি হতো না। এরপরও সবগুলো আসনে জয়লাভের জন্য তারা যেভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, তার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিই হয়েছে বেশি। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে চিরস্থায়ী শত্রুতার বীজ রোপিত হয়েছে, পরস্পরের প্রতি জন্মলাভ করেছে অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। গোটা নির্বাচনের ফলাফল নিয়েই জনমনে সন্দেহের সূত্রপাত ঘটেছে।’ (বাংলাদেশ অবজারভার, ৪ মার্চ ১৯৭৩)

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবদুর রাজ্জাক ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎকালে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। মুজিব তাকে বলেন, ‘ওরা তো পাঁচটি আসনও পাবে না।’ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ইতিহাস শেখ সাবরে স্টেটসম্যান হইবার একটা সুযোগ দিছিল, এইডা তিনি কাজে লাগাবার পারলেন না।’ (আহমদ ছফা, যদ্যপি আমার গুরু)

শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত আচরণ সবসময়ে গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। এ বিষয়ে আবুল মনসুর আহমদ বলেন, ‘সত্যই মুজিবুর রহমানের মধ্যে এই দুর্বলতা ছিল যে, তিনি যেটিকে পার্টিপ্রীতি মনে করতেন, সেটি চিল আসলে তার ইগোইজম-আত্মপ্রীতি। স্বরাজ দেশের জন্য খুবই দরকার। কিন্তু সেটি যদি আমার হাত দিয়া না আসে তবে না আসাই ভালো। ...আমার বিবেচনায় মুজিবুর রহমানের আত্মপ্রীতি ছিল খুবই প্রবল। এটিকে তিনি পার্টিপ্রীতি বলিয়া চালাইতেন। শেখ মুজিবের এই ইগোইজমকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতলব হাসিলের জন্য মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরাই চতুর্থ সংশোধনীর নেপথ্যে নায়কের ভূমিকা পালন করে।’ (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর)

বস্তুত মুজিব চিন্তাচেতনায় প্রকৃত গণতন্ত্রী ছিলেন না, তিনি হয়তো ক্ষমতালিপ্সু ছিলেন। তাই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই তিনি জনগণের প্রিয়ভাজন হতে গণতন্ত্রের কথা বলতেন। তিনি কোনোদিনই বিরোধী দল বা প্রতিপক্ষকে সহ্য করতে পারতেন না। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা এর সাক্ষী। সত্তর দশকের শুরুতে নব্যস্বাধীন বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বিশেষ করে জাসদ ও বামদলগুলো যে চরমপন্থী কার্যকলাপ শুরু করেছিল তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মুজিবের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছিল। মুজিব নেতা হিসেবে যতটা সফল হয়েছিলেন, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ততটা দক্ষতা দেখাতে পারেননি। ফলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি তার প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্যই একদলীয় ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। কারো কারো মতে, সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট নেতারা মুজিব ও আওয়ামী লীগের কাঁধে সওয়ার হয়ে দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সাধনের পথ সুগম করতে সচেষ্ট হয়েছিল। অবশ্য মুজিবের ব্যক্তিগত আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়ন করা হলে প্রকৃত তথ্যটি অনুধাবন করা সম্ভব হতে পারে। মুজিব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন, বিশেষ করে ক্ষমতায় আরোহণের পরে।

শুরুতেই তিনি সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ করেছিলেন। এর মাধ্যমে শুরুতেই তিনি দেশের ইসলামী দলগুলোর পুনরুত্থান বা পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনাকে শেষ করে দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূল কথাই হচ্ছে : সকল মত ও পথের সহাবস্থান। কিন্তু মুজিব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তার অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী দলগুলোকে স্বাধীন বাংলাদেশে মাথা জাগানোর সুযোগ দিতে চাননি। তবে তার শাসনকালে বিরোধী দল হিসেবে ইসলামী দলগুলোর পুনর্জাগরণ সম্ভব না হলেও মওলানা ভাসানীর সাহসী উচ্চারণ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) উত্থানকে তার মোকাবেলা করতে হয়েছে। মওলানা ভাসানীর মতো জনপ্রিয় বর্ষীয়ান নেতাকে গৃহবন্দী করতে মুজিব কুণ্ঠিত হননি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের নেতাকর্মীদের ওপর তো তিনি তার ভাষায় ‘লাল ঘোড়া’ দাবড়িয়েছিলেন। হাজার হাজার জাসদকর্মীর ওপর রক্ষীবাহিনীর যে নির্যাতন-নিপীড়ন নেমে এসেছিল তা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। এমনকি মস্কোপন্থী ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) ও ছাত্র ইউনিয়নও মুজিবের সমালোচনা করে রেহাই পায়নি।

লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব
ayubmiah@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement