২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নির্বাচনের ভাঙাচোরা রোড, কাটাছেঁড়া ম্যাপ

-

দেশে সংস্কারের চেয়ে চারদিকে বেশি আলাপ এখন নির্বাচন নিয়ে। কথা ছিল, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। দেখা যাচ্ছে, মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে মতিগতিতে ব্যাপক পরিবর্তন। নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপিসহ কয়েকটি দল। রোডম্যাপ বললেও সোজা কথায় নির্বাচনের শিডিউল বা তফসিল চায়। এমন কথাও বলা হচ্ছে, নির্বাচনের পর সংস্কার হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রয়োজন মতো সংস্কার করবেন।

এর মধ্যে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের তার সরকারের চার বছর মেয়াদের ইঙ্গিত দেশের রাজনীতিতে আচমকা ঢেউ তুলেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘... এটি (অন্তর্র্বর্তী সরকারের মেয়াদ) চার বছরের কম হওয়া উচিত, এটি নিশ্চিত। আরো কম হতে পারে। এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে মানুষ কী চায়, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায় তার ওপর।’

ড. ইউনূস একটি ফাঁক রেখেছেন। সেটি হচ্ছে- রাজনৈতিক দলগুলো কী চায় তার ওপর। মানে রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে যায়, তাহলে তিনি সংস্কার বাদ দিয়েই নির্বাচন দিয়ে চলে যাবেন। এভাবেই দেশীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদটি বাংলায় প্রচার করেছে রবি-সোমবার দিনভর। এতে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা থ বনে যায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেও সাবধান হয়ে যায়। তারা ঠিক দেখেছেন, শুনছেন কি না, এ নিয়ে ঘোরের মধ্যে পড়ে যান দলগুলোর নেতারা। একপর্যায়ে সংশোধনী আনা হয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে দিয়ে। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছর হবে- আলজাজিরাকে এমন কোনো বক্তব্য দেননি প্রধান উপদেষ্টা। দেশের কিছু গণমাধ্যম ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সেই সাথে যোগ করেন, সংসদের মেয়াদ চার বছর করা নিয়ে কাজ চলছে।

সেখানে দেখা দিয়েছে আরেক গোলমাল। মুখে মুখে এ ক’দিন নানা কথা বলা হলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ কমানোর পক্ষে নয় বিএনপি। অন্যান্য দলেও নানা মত। নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর করার প্রস্তাব এসেছে বলে ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্দরে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে। তারেক রহমানের এক প্রস্তাবনায়ও চার বছরের কথা রয়েছে। কিন্তু কথাটি প্রচার পেয়েছে ইউনূসের বরাতে। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৯) ফাঁকে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, সাধারণত নিয়মিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়। সংবিধানে নতুন করে চার বছরের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন এ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতিনিধি ও সংগঠনের সাথে ১৫-১৬টি সভা করেছে। কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ চার বছর করার পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপিসহ আলোচিত দলগুলোর মনোভাব ভিন্ন। এই ভিন্নতার মধ্যে আরেক ভিন্নতা প্রকাশ পেয়েছে এবারের আন্দোলনের আরেক নেপথ্য মাস্টারমাইন্ড কবি, রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহারের মাইন্ড থেকে। তিনি বিএনপিকে নির্বাচনের জন্য উতলা না হয়ে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। জাতীয়তাবাদী ঘরানার আরেক মাস্টার আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মাইন্ডে আরেক চিন্তা। তিনি চান দেশ আবার প্রেসিডেনশিয়াল ফরমেটে ফিরুক। তার যুক্তিও বাজারে এসেছে একটি বিশেষ মহল থেকে। তাদের অভিমত, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংসদীয় শাসন পদ্ধতি কখনো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়নি। শাসনের নামে কায়েম হয়েছে অপশাসন। গণতন্ত্রের নামে বার বার দেয়া হয়েছে দুর্বৃত্তায়ন-স্বৈরতন্ত্রের গাঁথুনি। সেই সাথে বেড়েছে বৈষম্য। গণতন্ত্র থেকেছে কেবল কথার কথায়। অথচ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই পাকিস্তান ভাঙা হয়েছে। বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। বাস্তবে দেশ স্বাধীনের পর গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে সর্বময় ক্ষমতায় দখলদারিত্ব কায়েম করা হয়েছে। এর মধ্যে আর রাখঢাকও রাখা হয়নি। সিনা টান করে বীরবিক্রমে একদলীয়-একনায়কীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরপর ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। দফায় দফায় শাসক বদলেছে। কিন্তু একদলতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদ ঠিকই চলেছে। প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি তা ঠেকাতে পারবে বলে যুক্তি তাদের।

এমন নানা যুক্তি ও কথার মধ্যে আলজাজিরার কেওয়াজের মধ্যেই বোমা ফাটিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’। সেখানে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেয়া হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এটি ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটি করেছে, বলেছে সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা ইতোমধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামত উপেক্ষা করব না।’ তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আপনার কোনো আপত্তি নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘কোনো একটি দল বা আরেকটি দলকে বেছে নেয়ার জন্য আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি রাজনীতিকদের আকাক্সক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করছি।’

ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় দেয়া ওই সাক্ষাৎকারটি সোমবার প্রচার হয় দ্য হিন্দুর অনলাইন সংস্করণে। সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দেয়া বিবৃতির কথা তুলে ধরে হিন্দুর সাংবাদিক প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, নতুন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সময় আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত থাকার বিষয়ে তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসী। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেননি।’ তখন হিন্দুর সাংবাদিক বলেন, ‘তিনি দিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে...।’ জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘ভালো। এখন বাংলাদেশ ও সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বলি। সম্ভবত তিনি সঠিকভাবে অবগত নন। এটি অপপ্রচার, যা বিশ্বজুড়ে চলছে। কিন্তু যখন তিনি বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে গিয়ে বাস্তবতা সম্পর্কে জানবেন, তখন জনাব ট্রাম্প অবাক হবেন যে, তাকে কতটা ভিন্নভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

এই আনলিমিটেড সংবাদ যন্ত্রণার মধ্যে যোগ হয়েছে রাষ্ট্রচিন্তক পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা আলোচিত বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারের হাটহাজারীর ইসকন মন্দিরে যাওয়ার ঘটনা। ফরহাদ মজহার মাত্র ৯ নভেম্বর ইসকনের বিরুদ্ধে একটি কড়া লম্বা পোস্ট লিখেছিলেন। এর ৯ দিনেই আরেক রূপ। এই সময়ের মধ্যেই ইসকনের অ্যাকটিভ সদস্য তুলসি গ্যাবার্ডের নাম যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে গত ১৩ নভেম্বর ঘোষণা করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সংস্কার ও নির্বাচনবিষয়ক জল্পনা, গুঞ্জন, কানাঘুষার মধ্যে এসব ঘটনা ও নতুন নতুন বিষয় যোগ হয়ে গোটা আবহকে এবড়োখেবড়ো করে দিচ্ছে। নির্বাচনের রোডে খানাখন্দক বাড়াচ্ছে। ম্যাপে আনছে ঘষামাজা। কেউ কেউ ভুলেই যাচ্ছেন, ১৫ বছর সাত মাসের কর্তৃত্ববাদের কথা। সেই সাথে অবিশ্বাস্যভাবে সেই দানবীয় সরকারটির পতনের ঘটনাবলি। যা ধারণা করাও কঠিন কারো কারো জন্য। কী থেকে কী হয়ে গেল! কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি শুরুতে ছিল কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ও শান্তিপূর্ণ। তাদের দাবিগুলো ছিল এক দিকে যৌক্তিক, আরেক দিকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে। তারা ক্ষমতার প্রার্থী ছিল না। সরকারের বিদায়ও চায়নি। তারা চেয়েছিল শুধু সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতির সংস্কার। কোটার বিলুপ্তি নয়। সরকারের পক্ষে ওই দাবি মেটানো সম্ভব ছিল। কিন্তু সরকার তা কেবল অগ্রাহ্যই করেনি। মারমুখী হয়ে হত্যা-দমন-পীড়নে ছাত্রদেরকে প্রতিপক্ষ করে দিয়েছে। আর গোটা সমাজের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর পর যা হওয়ার তাই হলো।

১৫ বছর সাত মাসের তুলনায় তিন সাড়ে তিন মাস কোনো সময়ই নয়। কিন্তু মানুষের চাহিদা-আকাক্সক্ষা অফুরান। দাবিও বিস্তর। কোনো ছাড় নেই। নগদে সবার সব দাবি এখনই পূরণ করতে হবে। মানতে হবে। নইলে আদায় করে ছাড়া হবে। এ অবস্থা কারা করেছে, তা সবারই জানা। অবস্থাটা এমন, খুন-খারাবি, চুরি-পাচার করে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পারিষদ, এখন সে সবের দায় শোধের ভার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও তার সরকারের। সেই দায়িত্ব তিনি পালন করে চলছেনও। রাষ্ট্র মেরামতসহ নানা দাবি ও মানুষের উচ্চমাত্রার প্রত্যাশা অন্তর্র্বর্তী সরকারের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ জিততেই হবে সরকারকে। ষড়যন্ত্র, প্রতিবিপ্লবের অপচেষ্টা বা সময়কে দোষারোপের কোনো সুযোগ নেই।

সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস হলে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরসূরিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারাই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। কারণ তাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, আহত ও জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি। তিনি বলেন, নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সব মানুষকে একটি বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। পরিবারে মতভেদ থাকবে, বাগি¦তণ্ডা থাকবে, কিন্তু আমরা কেউ কারো শত্রু হবো না। কাউকে তার মতের এবং ধর্মের জন্য শত্রু মনে করব না। আমরা সবাই সমান। এই সরকার সাম্য ও মানবিকতার ভিত্তিতে দেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ড. ইউনূস বিভিন্ন সময় তার কিছু যন্ত্রণার কথাও বলেছেন। কিছু অপশক্তি তাকে নানা ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ করতে চায়, সরকারের বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচার, তার দোসর এবং ভারতের মোদি সরকার একের পর এক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এ কথা তিনি আগে এভাবে বলেননি। এখন বলেছেন বলে কি তিনি এবং তার সরকার নিস্তার পেয়ে গেছেন? মোটেই না। এ সরকারকে ব্যর্থ করতে তার মাথা ও ঘাড়ের ওপর ঘুরতে থাকা যন্ত্রগুলো কেবল মোকাবেলা নয়, জনপ্রত্যাশাও পূরণ করতে হবে। দেশে প্রায় ১৬ বছর গণতন্ত্র নেই, ভোটাধিকার নেই। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য এ দেশের মানুষ লাগাতার সংগ্রাম করেছে। সুতরাং এই সরকারের অপরিহার্য দায়িত্ব দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণ নিশ্চিত করা। এ জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করব, গণতন্ত্রের পথের অভিযাত্রাকে সরকার যথোচিত গুরুত্ব দেবে। ষড়যন্ত্রের শিরোমণিদের বিচার, সংস্কার, নির্বাচনসহ সরকারের কাজের ভলিউম বিশাল। সেই সাথে গণ-আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা, তাদের কর্মসংস্থান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা, প্রশাসন ঠিক করা, বাজারের আগুন নেভানোসহ কাজের লিস্ট বড় দীর্ঘ। একটিও পাশ কাটানোর সুযোগ নেই তার।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu108@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement