প্রতিবিপ্লব সুখকর হয় না
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৭
৫ আগস্ট, ২০২৪ সাল। অসংখ্য তাজা প্রাণের রক্তের লালিমায় ঢাকা বেদনাবিধুর দিন। একই সাথে এ দেশের আবালবৃদ্ধবনিতার স্বপ্ন-জাগানিয়া উজ্জ্বল দিন। এখনো কান পাতলে শোনা যায়- প্রিয় মুখ ও সংসারের একমাত্র অবলম্বন হারানোর বিলাপ। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের অসহায় চাহনি- কেবল একটি প্রশ্ন মেলে ধরে- আমরা কি এ জন্য লড়াই করেছিলাম? এ জন্য কি আমাদের সতীর্থরা, সহপাঠীরা, বন্ধু-বান্ধবরা জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন? সতীর্থরা গুলি খেয়ে পড়ে গেছেন; কিন্তু পালিয়ে যাননি। একজনের জায়গায় দু’জন দাঁড়াতে কুণ্ঠাবোধ করেননি; বন্দুকের নলের সামনে নির্ভয়ে নিসঙ্কোচে বুক পেতে দিয়েছেন।
শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্যের অবসানে, মেধাভিত্তিক দেশ গড়তে ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে ছিল এই সংগ্রাম। গণতন্ত্রের মুক্তবাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়ার জন্য তারা লড়েছিলেন। বিজয়ীর বেশে ফিরেছিলেন এই সংগ্রামের সাহসী যোদ্ধারা।
ফ্যাসিস্টদের গুলিতে হাজারেরও বেশি সম্ভাবনাময় জীবন হয় পুরোপুরি অন্ধ অথবা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে অসহায় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। যারা এই প্রাণহানির জন্য, পঙ্গু জীবনের জন্য দায়ী, যাদের আদেশে হাজারো প্রাণ ঝরে গেছে তাদের বিচারের বাণী আজ নীরবে নিভৃতে কাঁদে। সমগ্র জাতির প্রত্যাশা ছিল এতদিনের সব বঞ্চনা, শোষণ ও অত্যাচার আর হত্যার বিচার হবে, সমাজে সুবিচার আর ইনসাফ কায়েম হবে। মুক্ত পরিবেশে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হবে। তা যেন ফিকে হয়ে আসছে।
লুটেরা, খুনি, অর্থপাচারে অভিযুক্তরা অনেকে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক আনুক‚ল্য নিয়ে আবারো নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। তাদের প্রত্যাবাসনের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা জাতীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ঘৃণা আর অবজ্ঞার সৃষ্টি করেছে জনমনে।
পতিতদের পুনর্বাসনের নগ্ন অপচেষ্টা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করছেন। ‘রাস্তায় দাঁড়ালে পুলিশ পেটায়’ বলে যারা গত দেড় যুগে গা বাঁচিয়ে চলেছেন, কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি বলে ক্ষমতাসীনদের বিদ্রুপবাণে মুখ লুকিয়েছেন, তারা আজ আগস্ট বিপ্লবের সফলতার দাবিদার! আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অস্থিরতা, পোশাকশিল্প খাতে, ওষুধশিল্পে যে অশনি সঙ্কেত এ ব্যাপারে তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ। নিশ্চুপ আয়নাঘরের কারিগরদের বিচারের মুখোমুখির ব্যাপারে। প্রশাসন নিয়ে দখলদারিত্বে তারা মরিয়া। যেভাবে হোক দ্রুততার সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে সব শেয়ালের যখন এক সুর দেখি, তখন ভয় তাড়িয়ে বেড়ায়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা, এসবের থোড়াই বিবেচনা করছেন তারা। রাজনীতির চিরচেনা এসব চিহ্নিত চরিত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজনীতির অঙ্গনে।
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক সংগ্রাম, রক্তক্ষরণ, জীবনহানির ব্যাপারে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। দেখা যাচ্ছে না সীমান্তের ওপার থেকে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সক্রিয় ভ‚মিকা। এখন মনে হচ্ছে ‘সবার উপরে নির্বাচন সত্য, তাহার উপরে নাই’ এটি প্রমাণ করার জন্য অনেকে নিবেদিতপ্রাণ।
মাঝখানে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে পানি ঘোলা করার মাধ্যমে জাতীয় বিভাজন তৈরির অপচেষ্টা জাতি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছে। তারা ভুলে গেছেন, একটি রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের উত্তরসূরি এ সরকার। বিপ্লবের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা পদ মুখ্য নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে তো সাংবিধানিক শূন্যতার কথা ওঠেনি। ওঠেনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা ত্যাগের মুহূর্তেও। প্রয়োজনের দাবিতে শূন্যতা পূরণ করা হয়েছে।
যে দেশের সাংবিধানিকভাবে সর্বোচ্চ আসনে মিথ্যাচার করা হয়, সেই ব্যক্তিকে সাংবিধানিক শূন্যতার দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় আসীন রাখার চেষ্টা আর যা-ই হোক না কেন নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। মনে হচ্ছে তারা ভুলে গেছেন জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান, সংবিধানের প্রয়োজনে জনগণ নয়।
সংবিধানে যে ধারার আলোকে নেতারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং সাংবিধানিকভাবে তার পদত্যাগ গ্রহণীয় না হওয়া যে প্রকারান্তরে তাকে ন্যায়ানুগ প্রমাণের অপচেষ্টা যতই করা হোক না কেন, জনগণ এর পেছনে গূঢ় রহস্য ঠিকই অনুমান করতে পারেন। সংবিধানের এই ধারা সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে বাতিল ঘোষণার ব্যবস্থা না করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা আত্মঘাতী হওয়ার সমূহ অশঙ্কা।
এখন নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই মানসিকভাবে তৈরি হওয়ার সময়; কিন্তু সাথে সাথে যে কার্যকরণগুলো বিপ্লবের আগুন ছড়িয়েছিল, তার সমাধান হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের একটি সম্মিলিত কর্মসূচি, যা এক দিকে বিচারকে ত্বরান্বিত করবে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পথ গতিশীল করবে এবং নির্বাচনের পথরেখা তৈরিতে সাহায্য করবে তার জরুরি প্রয়োজন। এখন সরকারের সাথে দূরত্ব তৈরি, রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি, পতিত রাজনৈতিক চরিত্রগুলোকে ক‚টকৌশলে পুনর্বাসিত করার অপচেষ্টা, বিপ্লবের পিঠে ছুরিকাঘাত করার মতো, যা প্রতিবিপ্লবকে উৎসাহিত করবে মাত্র।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
ই-মেইল : [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা