২৮ অক্টোবর ও ১/১১ একই সূত্রে গাঁথা
- কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক, পিএসসি (অব:)
- ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১:১৮
২০০৬ সালে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়াতে ছিলাম। বিএনপি-জামায়াতের সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১৪ দলীয় জোট প্রতিদিন তখন নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন স্থানে তারা নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ, জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে যাচ্ছে। সে সময়ে বিদেশে বসে আমরা আই টিভিতে দেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতাম। ইতোমধ্যেই সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মনোনয়ন করা হয়েছে। তিনি যাতে দায়িত্ব নিতে না পারেন সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট তখন তুমুল আন্দোলন করছে। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন ছিল ২৮ অক্টোবর ২০০৬। এ দিন খবরে দেখলাম ঢাকার পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায় দিন-দুপুরে লগি-বৈঠা দিয়ে একেবারেই নিরীহ মানুষগুলোকে নৃশংসভাবে হত্যা ও লাশের ওপর নাচানাচি করার ভয়ঙ্কর দৃশ্য; যা দেখে হতভম্ব বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কী করে এবং কেন এ পৈশাচিকতা মানুষের ওপর মানুষ চালাতে পারে! বুঝতে দেরি হলো না যে, দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে; ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে দেশের জন্য। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা একই পন্থায় নিরীহ মানুষকে হত্যা করছিল প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে।
কিছু দিনের মধ্যেই টের পেলাম, এ নৃশংসতার সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত ছিল ১/১১ নামে আখ্যায়িত দিনটির। এটিও যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল আমি তা তখনই বুঝতে পেরেছিলাম। ওই দিন আমি লাইবেরিয়া থেকে জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক আয়োজিত একটি ভিজিটে আইভরিকোস্টের রাজধানী আবিদজানে বাংলাদেশ সেক্টর হেডকোয়ার্টারে ছিলাম। সন্ধ্যায় একটি পার্টি চলাকালীন আমার পাশে বসে কয়েকজন সেনা অফিসার একত্রিত হয়ে বিবিসি শুনছিলেন, বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে, এটি শোনার সাথে সাথে তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, ‘হক তো এটা পছন্দ করবে না’। কেননা, তারা আমাকে একজন সচেতন দেশপ্রেমিক অফিসার হিসেবেই জানতেন। পরবর্তীতে ওই সব অফিসারকে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়। সে সময়ে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অধিকাংশ অফিসারই আওয়ামী ঘরানার কট্টর সমর্থক ছিলেন। সুতরাং বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি যে, বাংলাদেশে যে ঘটনায় এসব অফিসার ও ইন্ডিয়া খুশি হবে, সে ঘটনা অবশ্যই দেশের স্বার্থবিরোধী।
সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ প্রায়ই বলতেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্যে দিনের আলোতে পল্টনে লগি-বৈঠার মাধ্যমে পিটিয়ে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঘাত করে নিরীহ একদল মানুষকে নির্মম নিষ্ঠুর নৃশংস পন্থায় হত্যা করার মতো ঘটনা যাতে আর কোনো সময় না ঘটে সে জন্যই ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি, শুক্রবার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল।
জেনারেল মইন গর্ব করে বলতেন, জানুয়ারির ১১ তারিখে এ ঘটনাটিকে তিনি ঐতিহাসিক রূপ দেয়ার জন্য আমেরিকার ৯/১১ এর আদলে দিনটিকে ১/১১ আখ্যা দিয়েছেন। জানা যায়, এসব নিরপরাধ নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষগুলো ছিল জামায়াত-শিবিরের সদস্য। জেনারেল মইনকে কোনো একটি সভায় এ প্রসঙ্গে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘটানো হয়েছে এবং হত্যাকারীদের ছবি ভিডিও সবই বিদ্যমান, অথচ তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? তিনি কৌশলে প্রশ্নটির উত্তর এড়িয়ে যান। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ১১ জন সুযোগ্য জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল মইন ইউ আহমদকে নিয়োগ দেয়ার পেছনেও ইন্ডিয়ার হাত ছিল।
প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়ার অতি প্রিয় ও তাদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ও এদের দোসররা যে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাভাবিক নির্বাচনের মাধ্যমে কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না তা তারা ও ইন্ডিয়া খুব ভালো করেই জানে। কেননা, এ ফ্যাসিবাদী দলগুলো দেশের স্বার্থের চেয়ে ইন্ডিয়ার স্বার্থ রক্ষায় সবসময় কাজ করে থাকে। এ দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা তাদের কোনো অ্যাজেন্ডায় নেই। তাই যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসার জন্য তারা সিঁড়ি হিসেবে ২৮ অক্টোবরের নৃশংস অমানবিক ঘটনার সৃষ্টি করে এবং মইন ইউ আহমদ ও আমলা শ্রেণী তা ব্যবহার করে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য। সুতরাং ২৮ অক্টোবর ও ১/১১ রহস্য একই সূত্রে গাঁথা।
লেখক : সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা