২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রুহুল আমিন গাজীর স্মরণে

রুহুল আমিন গাজী - ফাইল ছবি

গাজী ভাই অফিসে এসেই টেলিফোন হাতে নিতেন। বলতেন, ‘ভালা উলানি? ইতা কিতা রে বা?’ যদিও তিনি সিলেটের লোক ছিলেন না, অনেকটা সিলেটি ভাষার মতো করে। তিনি দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। সেই সূত্রে প্রখ্যাত গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর এবং চলচ্চিত্র খল অভিনেতা বাবর প্রায় সময় আসতেন। এক দিনের কথা মনে আছে। টেলিফোন ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক নূর হোসেন বলাই বললেন যে, তিনি গাজী ভাইয়ের কাছে আসছেন। নোয়াখালীর মানুষ দেখলেই গাজী ভাই বলতেন, ‘হাগলে হাইছেনি কোনো? ‘প’ এর জায়গায় ‘হ’-এর উচ্চারণ করে তিনি আসলে নোয়াখালীর লোকদেরকে লজ্জা দিতেন। স্বপ্নে দেখছি, গাজী ভাই একটি ক্যান্টিনের পেছন দিকে বসে আছেন। তার মাথার চুল কিছুটা কামানো। আসলে তো তিনি মারা গেছেন, কিন্তু স্বপ্নের মধ্যে তিনি জীবিত। গাজী ভাই বললেন, তাকে কি যেন কামড়িয়েছে।

গাজী ভাই ‘Election Wizard’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি কখনো নির্বাচনে হারতেন না। এরকম ছিলেন সাংবাদিক নেতা রিয়াজউদ্দিন আহমদ সাহেব। একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মরহুম রিয়াজউদ্দিন আহমদ সাহেব তার মতো ছিলেন। তাকেও ‘Election Wizard’ বলা হতো। গাজী ভাই যখন মারা গেলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী ও শেখ হাসিনা মনোনীত আওয়ামী লীগের সংসদ উপনেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি এবং দিনাজপুরের সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান প্রায় একই সময়ে হাসপাতালে মারা গেলেন। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী সুজেয় শ্যামও কিছু দিন আগে মারা গেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মারা গেছেন ফিলিস্তিন মুক্তি সংগঠন হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও সম্ভাব্য উত্তরসূরি শাফিউদ্দিন।

গাজী ভাই ছিলেন ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর মতো। যদিও তিনি তার মতো বিখ্যাত লেখক ও কলামিস্ট ছিলেন না; তবে তিনি ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর মতো প্রথম জীবনে পত্রিকার প্রুফ রিডার ছিলেন। এর পরে পত্রিকার সাব-এডিটর ছিলেন, এর পরে হন চিফ রিপোর্টার। ১৯৭৭ সালের আগস্ট মাসে দৈনিক সংগ্রামের বংশাল প্রেসে একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। তখন গাজী ভাই পত্রিকার ভারী জিনিসপত্র নিজের ঘাড়ে সরিয়েছিলেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শেখ আলী আশরাফের বৃদ্ধ শ্বশুরের প্রশংসা পেয়েছিলেন। শেখ আলী আশরাফ বলতেন, ‘গাজী ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ইসলামপন্থী মুক্তিযোদ্ধা। গাজী ভাই বড় বড় অক্ষরে লিখতেন। গাজী ভাই যখন জেলে, তখন তার একজন সহকর্মী বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন।

তার মৃত্যুর পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদপুরে, যেখানে তার বাড়ি। মৃত্যুর আগের সপ্তাহে তার সাথে হঠাৎ করে দেখা হয় অনেক দিন পরে।

একটি কাজে স্ত্রীসহ গিয়েছিলাম জাতীয় প্রেস ক্লাবে। গাজী ভাই সালামের জবাবে বললেন, ‘আরে মীযান সাহেব নাকি? আপনাকে তো চিনতেই পারিনি।’ তারও মাথার চুল উঠে গিয়েছিল। গাজী ভাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও কথা বলেছিলেন। আমার স্ত্রী গাজী ভাইয়ের মৃত্যুর পরে বললেন, ‘আরে, সে দিনই তো দেখলাম গাজী ভাইকে!’ তিনি পত্রিকার রিডার থেকে চিফ রিপোর্টার হয়েছিলেন, এটি তার বিরাট সাফল্য।

adv.zainulabedin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement