২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

বিদেশে বসে সরকার, কী করা দরকার

-

দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে পতিত কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক শক্তি। সর্বশেষ তাদের আগরতলায় একটি প্রবাসী সরকার গঠনের চেষ্টার কথা জানা যাচ্ছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে। এ ধরনের একটি অপচেষ্টা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর প্রতিবেশী দেশে অবস্থানরত কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা তখন ভারতে অবস্থান করছিলেন।

যতদূর জানা যাচ্ছে, আওয়ামী প্রবাসী সরকার ২৫ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এ সরকারকে বৈধতার একটি মোড়ক দিতে এর মধ্যে হাসিনা পদত্যাগ করেননি, তিনি এখনো বৈধ প্রধানমন্ত্রী মর্মে একটি ধারণা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। এর সাথে বিস্ময়করভাবে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন যুক্ত হয়ে পড়েছেন। আইনমন্ত্রী এটিকে রাষ্ট্রপতির শপথ ভঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সত্যি সত্যি প্রবাসী সরকার গঠন হলে সেটির মূল লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে অস্থির করা এবং পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করা।

একের পর এক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথমে পদত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। এর পরে সে বক্তব্য থেকে রহস্যজনকভাবে ফিরে এসে জয় উল্লেখ করেন যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। এ সময় বাংলাদেশে বিক্ষোভ সৃষ্টির জন্য শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উস্কানি দিচ্ছেন এমন একটি টেলিফোন কথোপকথন প্রকাশ হয়। এর ফলে গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টির মতো অবস্থা তৈরি হয়। খোদ সেনাবাহিনীর কনভয়ে আক্রমণ করা হয় গোপালগঞ্জে।

শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনী কঠিন পদক্ষেপ নিলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এরপর বাংলাদেশে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনড ফোর্সে বিদ্রোহে উসকানি দেয়া হয়। বিপ্লবের দিনগুলোতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করা পুলিশ সদস্যদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ তৈরির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আনসারকে বিদ্রোহের উসকানি দেয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের হস্তক্ষেপে সচিবালয় ঘেরাও করার মতো আনসার বাহিনীর একটি অংশের সহিংস কর্মসূচি ব্যর্থ হলে অন্য পেশাজীবীদের সামনে আনা হয়।

প্রথমে অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য গার্মেন্ট খাতকে বেছে নেয়া হয়। সেটি ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যুৎ খাতকে বেছে নেয়া হয় অস্থিরতার জন্য। বিদ্যুতের সরবরাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এর উপকরণ কয়লা গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত করার চেষ্টা হয়। দ্রুত কয়লা ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেন সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা। এরপর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে দিয়ে বিদ্রোহের উসকানি দেয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার সেটিও নিয়ন্ত্রণ করে।

টার্গেট অর্থনীতি
পতিত সরকারের নানামুখী অপচেষ্টার শীর্ষে ছিল দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা। তারা জানত ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় ব্যাংক খাতের মাফিয়া হিসাবে পরিচিত এস আলম, সালমান রহমান, নজরুল ইসলাম মজুমদারের মাধ্যমে কয়েক লাখ কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে বের করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রাথমিক হিসাব অনুসারে শুধু এস আলমই নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দুই লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ বের করে নিয়েছে। যার বড় অংশই এখন পতিত সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে। মাফিয়া স্বৈরাচারের ধারণা ছিল অন্তর্বর্র্তী সরকার দায়িত্ব নেবার সাথে সাথে অর্থের অভাবে ব্যাংকগুলো ভেঙে পড়বে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ উপদেষ্টা এমনভাবে পদক্ষেপগুলো সাজিয়েছেন যাতে একদিকে ব্যাংক খাত থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থের যতটা সম্ভব ফেরানো যায় এবং লুটেরাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করে বিনিযোগকৃত অর্থ উদ্ধার সম্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে গ্রাহকদের কিছু সমস্যা হলেও কোনো ব্যাংক যাতে একেবার দেউলিয়া হয়ে না পড়ে তার জন্য সহায়তা বজায় রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ব্যাংকে তহবিল লুটেরাদের হাতে থাকা ব্যাংক শেয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে এবং সেই শেয়ার সাবেক মালিকদের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

দ্রুত এই পদক্ষেপ নেয়ার কারণে ব্যাংক খাতের ওপর জনআস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। সমস্যাক্রান্ত ব্যাংকগুলো একদিকে সীমিতভাবে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দানের প্রচেষ্টা নিচ্ছে অন্যদিকে পণ্য আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়া যাতে সচল থাকে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের কারণে পণ্য আমদানি রফতানি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। রিজার্ভ আবার বাড়তে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলোর তহবিল ঘাটতি কমতে শুরু করেছে। বিদেশী ক্রেতারা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।

এরপর সরকারের সামনে ব্যাংক খাতের ওপর জনআস্থা যথাসম্ভব ধরে রেখেই মধ্য মেয়াদি সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই জোর দিতে হবে ব্যাংকে আমানতের টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকদের যাতে ফিরে যেতে না হয়। এর মধ্যে স্টান্ডার্ট চার্টার্ড ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটা বিদেশী ব্যাংকও গ্রাহকদের টাকা সঙ্কটের কথা জানানোয় হতাশা তৈরি হচ্ছে। জনআস্থা ধরে রাখতে এ বিষয়টি দেখার পাশাপাশি তারল্যের প্রকৃত কোনো সঙ্কট থাকলে সেটির প্রতিকার করতে হবে।

অর্থ উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দুজনই বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় যোগ দিতে এখন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছেন। এ সময় আর্থিক খাতে যাতে কোনো ব্যত্যয় না ঘটে তার জন্য নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পরিস্থিতি মনিটরিং করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে লুটপাটের কারণে আস্থা হারিয়ে আইডিবি আল রাজি গ্রুপসহ বেশ কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারী চলে গেছেন। তাদের আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হলে ব্যাংক খাতে এক দিকে মানুষের আস্থা বাড়বে অন্য দিকে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

এর পাশাপাশি পাচার করা অর্থ ব্যাংক খাতে ফেরানোর বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। ব্যাংক মাফিয়াদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ জব্দ ও বিক্রির মাধ্যমে সে তহবিল ব্যাংকগুলোতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সাথে বিদেশী সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে পাচার করা অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

সরবরাহ নিশ্চিত রাখা
পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রজুড়ে ছিল জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ বিঘ্নিত করা। বাংলাদেশে ‘মরা কার্তিক’ নামে খ্যাত সময়ে সবজি পেঁয়াজ মরিচের সরবরাহ কম থাকে এবং দাম বেড়ে যায়। এবার এর সাথে বন্যা যুক্ত হওয়ায় হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর সাথে ডিম সিন্ডিকেটের অতি মুনাফার কারণে ডিমের দামও বাড়তে থাকে। সরকার জরুরিভাবে ডিম আমদানি এবং বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে মুল্য বৃদ্ধির ষড়যন্ত্র বেশ খানিকটা ঠেকিয়ে দিয়েছে।

সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টার ত্বরিত পদক্ষেপে মেট্রোরেলের যে ক্ষতি পূরণে শত কোটি টাকা এবং এক বছর সময় লাগবে বলে আগের সরকার ঘোষণা করেছিল সেটি আড়াই মাসের কম সময়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সচল করা হয়েছে। শুক্রবার মেট্রোরেল চালু করে এর সেবার আওতা বাড়ানো হয়েছে।

প্রচারে দুর্বলতা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। সরকারের অনেক সাফল্য প্রচারের অভাবে জনগণ জানতে পারে না। এক্ষেত্রে আগের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও কাজে যে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে সে বিষয়গুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার। এতে জনগণ বুঝতে পারবে কোন অবস্থা থেকে দেশকে টেনে তুলছে অন্তবর্তী সরকার। এ ব্যাপারে বড় মন্ত্রণালয়গুলো শ্বেতপত্র তৈরির কাজ করতে পারে।

এক্ষেত্রে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আইসিটি, স্থানীয় সরকার, পানিসম্পদ ও ব্যাংকিং খাতকে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে যে অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে সে বিষয়গুলো প্রকাশ করতে পারে। এটি করা হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে অর্থনীতির স্থিতি নষ্ট করার পতিতদের উদ্যোগ বিফলে যাবে।

নাশকতার অপচেষ্টা প্রতিরোধ
বিভিন্ন পেশাজীবী ও ফোর্সকে উসকে দিয়ে সরকারকে অচল করা প্রচেষ্টা বিফলে যাবার পর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হতে পারে বলে নানা সূত্র থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যার অংশ হিসাবে কৌশলগত স্থানগুলোতে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের মাধ্যমে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো হতে পারে। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ও এর সাথে কার্যকরভাবে নিজেদের উদ্যোগকে সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আগের দেড় দশকে এনএসআই ও ডিজিএফআইতে মাঠ পর্যায়ের নিয়োগগুলো পর্যালোচনা করে অপেশাদার অযোগ্য ও দলবাজদের চিহ্নিত করে সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের অনুকূল ভাবনার লোকদের নিয়ে আসা প্রয়োজন। এসব সংস্থায় শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দানের প্রক্রিয়াও শুরু করা দরকার।

গোয়েন্দা প্রশাসনকে অতীতে রাজ পরিবারের অর্থ লুটপাটের সহযোগী হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কিভাবে কাদেরকে দিয়ে করা হয়েছে তার প্রমাণাদি সে সব সংস্থার রক্ষিত থাকার কথা। রাষ্ট্রের সংবেদনশীল সংস্থাকে বেআইনি কাজে ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে একটি সাধারণ নীতিমালা হতে পারে যে, রাজনৈতিক আনুগত্যের জন্য কাউকে আইনের মুখোমুখি না করে যারা আইন ভেঙে আর্থিক দুর্নীতি ও জাল জালিয়াতির অপরাধে জড়িয়েছে তাদের আইনের মুখোমুখি করা।

স্থবির প্রশাসনে গতি আনা
সরকারের আড়াই মাস অতিবাহিত হবার পর স্থবির প্রশাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের প্রায় সবাই দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আন্তরিক এবং তারা সততা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছেন। তবে দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের পর এক ধরনের অরাজক রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে গতি আনা এত অল্প সংখ্যক উপদেষ্টার জন্য বেশ কঠিন। উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেরই এ ধরনের চাপ নেয়ার বিষয়ে আগের অভিজ্ঞতা নেই।

এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যাদের হাতে চার পাঁচটা গুরুত্বপর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে এবং যেগুলো পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে সেসব ভার কমানো হতে পারে।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যেসব খাতে অভিজ্ঞ ব্যক্তি উপদেষ্টা পরিষদে নেই সেসব খাত থেকে উপদেষ্টাদের বাছাই করা যেতে পারে। বিশেষভাবে জনপ্রশাসন পুলিশ বিচার বিভাগ ব্যবসায়ী সম্প্রদায় গণমাধ্যম ও প্রতিরক্ষা পটভূমি থেকে আরো উপদেষ্টা বাছাই করা যেতে পারে।

এর সাথে জনপ্রশাসনসহ সরকারের যেসব ক্ষেত্রে স্থবিরতা তৈরি হয়ে আছে সেসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরি। দেড় দশকের স্বৈরশাসনের পর তৈরি করা সরকারের প্রশাসন বিন্যাসের জন্য প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ সব সময় সমীচীন হয় না। কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শীর্ষ পর্যায়ে রেখে দিয়ে এবং আগের আমলের তৈরি করা ফিট লিস্ট থেকে জেলা প্রশাসক নিয়োগের কুফল হলো প্রশাসন অন্তর্বর্র্তী সরকারের অ্যাজেন্ডার সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতে পারছে না। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবার সময় সম্ভবত এসে গেছে। বঞ্চিত কর্মকর্তারা অথবা যাদের দীর্ঘ বঞ্চনা নিয়ে প্রশাসন থেকে বিদায় করা হয়েছে তারা দায়িত্বে এলে রাষ্ট্রকে সঠিক ট্র্যাকে ফেরানোর জন্য কাজ করতে তারা অনেক বেশি আন্তরিক হবে।

চার দিকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচার তার প্রচার প্রোপাগান্ডা অনেক বাড়িয়েছে। তিনটি ক্ষেত্রে এই প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিবেশীদের আনুক‚ল্যে চালানো এ প্রচারের শীর্ষে ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতন। এটি এখন বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকখানি হারিয়েছে। এখন সংবেদনশীল ধর্মীয় ইস্যুকে উসকে দিয়ে হানাহানি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এক দিকে মহানবী সা:কে অবমাননা করে সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট দেয়া হচ্ছে আবার তার প্রতিবাদে আইএস মার্কা ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে মিছিল বের করা হচ্ছে। আবার সাথে সাথে এ খবর ভারতীয় পত্রপত্রিকাসহ এক শ্রেণীর বৈশ্বিক মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে। সেই সাথে বাংলাদেশের এবারের বিপ্লব যে দেশের প্রায় সব মানুষের অংশগ্রহণে হয়েছে সেটিকে আড়াল করতে ইসলামিস্টদের ভূমিকা অনেক বড়ভাবে উপস্থাপন করে দেখানো হচ্ছে যেন মনে হয় এখানে কার্যত ইসলামী পরিবর্তন ঘটেছে। সেসাথে সংস্কার ও নির্বাচনসহ বিপ্লবের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির চিন্তার ভিন্নতাকে পরস্পরের মধ্যে সঙ্ঘাতে রূপ দেবার জন্য নানাভাবে চক্রান্ত করা হচ্ছে।

কি করা যেতে পারে
বৃহৎ প্রতিবেশীদের সমর্থনপুষ্ট কর্তৃত্ববাদী সরকারের নানামুখী ষড়যন্ত্র ঠেকাতে বর্তমান অবস্থায় কী করা দরকার সে বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন নিশ্চয় ভাবছে। এ বিষয়ে বিবেচনার জন্য কিছু উদ্যোগ সামনে নেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্বয় আরো বাড়ানো, অর্থনীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে যতটা সম্ভব পুনর্বিন্যাস করা, ছাত্র হত্যার নির্মমতার বিষয়গুলো ডকুমেন্টারি নাটক সিনেমার মাধ্যমে যত দ্রুতত সম্ভব জনগণের সামনে তুলে ধরা, গণহত্যার যে বিচার কার্যক্রম এর মধ্যে শুরু করা হয়েছে সেটিকে আরো কাঠামোবদ্ধ ও পেশাদার রূপ দেয়া, কমিটমেন্টহীন নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রশাসনের দায়িত্বে আনাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কমিটেড যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে নিয়ে আসা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ করে বিদেশে কর্মরত কূটনীতিকদের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে নিয়োগদানে কমিটমেন্ট ও যোগ্যতার বিষয় বিবেচনায় রাখা।

সবশেষ কিন্তু অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো কূটনৈতিক ও নিরাপত্তানীতি সতর্কভাবে বিন্যাস করা। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিকে আরো কার্যকর ও সমাধানমুখী করতে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করা যেতে পারে। এর সাথে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য উদ্যোগগুলোকে সমন্বয় করতে হবে। ফ্যাসিবাদকে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া শক্তিকে বাদ দিয়ে অন্য শক্তিগুলোকে যথাসম্ভব আস্থার মধ্যে রাখা। প্রবাসী সরকার গঠনের কোনো উদ্যোগ পতিত স্বৈরাচার নিলে এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা জোরদার করতে হবে। এই উদ্যোগে সরব নীরব সমর্থন যাতে অন্য কোনো বড় শক্তি না দেয় সেজন্য ক‚টনৈতিক উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সাথে রাজনীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যবধান রেখা তৈরি করে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার। সরকারকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন মনে করা হলে বিপ্লবের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে সরকারে নিয়ে আসা যেতে পারে।
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement