১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩০, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

রাজনৈতিক পরিসরে জামায়াত

-

পৌরাণিক গাথায় এক জাদুকরী পাখি হচ্ছে ফিনিক্স। জীবন সায়াহ্নে এই পাখির সারা দেহে আগুন ধরে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ছাই থেকে আবার জন্ম নেয় নতুন ফিনিক্স। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কি ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে এসেছে?

আওয়ামী সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই এই দলটির ওপর খড়গহস্ত হতে শুরু করে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাদান এবং নেতাদেরকে ধর পাকড় শুরু করে। প্রথমে তারা কোণঠাসা করা শুরু করে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে। ২০১০ সালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে বন্দী অবস্থায়ই বিচারের মুখোমুখি করা হয়। অতি দ্রুততার সাথে প্রশ্নবিদ্ধ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফাঁসি বা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। এসব বিচার প্রক্রিয়া ব্যাপক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলা হলেও অভিযুক্তদের পক্ষে আন্তর্জাতিক মানের বিদেশী আইনজীবীদের নিযুক্ত করতে সব ধরনের বাধা দেয়া হয়। প্রায় ৪০ বছর আগের ঘটনার অভিযোগের বাদিপক্ষের বানানো সাক্ষীদেরকে রাজধানীতে সেফ হোমে এনে প্রশিক্ষণ দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু অভিযুক্তের পক্ষের সাক্ষীকে আদালত ভবন থেকে প্রকাশ্যে অপহরণ করে সীমান্তের অপর পাড়ে ভারতের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সেই আদালতের বিচারকের বিদেশী বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ‘স্কাইপ’-এর মাধ্যমে রায়ের দিকনির্দেশনা চেয়ে কথোপকথন বিস্তারিত প্রকাশিত হয়। এসব প্রকাশের জন্য সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে চরম নির্যাতন করা হয়। যুদ্ধাপরাধের কথিত মামলাসমূহের প্রক্রিয়া এবং রায় দানের বিষয়ে তৎকালীন ‘ডিজিএফআই’ এবং ‘প্রতিবেশী’ দেশের সংশ্লিষ্টতার বিস্তর কাহিনীর অভিযোগ রয়েছে। কাজেই জামায়াত এসব রায়ের মাধ্যমে তাদের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির ঘটনাকে বিচারিক হত্যাকাণ্ড বলে মূল্যায়ন করে।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের নামে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি শুরু হয় জামায়াত-শিবির নেতাদের বলপূর্বক গুম করার ঘটনা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দু’জন শিবির নেতাকে আশুলিয়ায় কুষ্টিয়াগামী বাস থেকে নামিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালজুড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। এ সময় বিএনপি এবং জামায়াতের অগণিত নেতাকর্মীকে ঘুম ও খুন করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক শিবির নেতাকে গ্রেফতার করে হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। লক্ষ্মীপুরে একজন জনপ্রিয় জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করে তারই বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি এলাকায় একজন পরোপকারী ডাক্তার ছিলেন। অন্য দিকে সাতক্ষীরা অঞ্চলে বিজিবির নেতৃত্বে বুলডোজার চালিয়ে খুঁজে খুঁজে জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল।

বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী-যুব-ছাত্রলীগ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের নির্যাতনের উন্মুক্ত ছাড়পত্র পেয়ে যায়। তাদের অপছন্দনীয় হলেই জামায়াত বা শিবির বলে কাউকে মারধর করা এবং পুলিশে হস্তান্তর করা নৈমিক্তিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জামায়াত-শিবিরের লোকদের কোনো অপরাধ ছাড়াই গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতে থাকে। দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের সব অফিস বা মিলনায়তনে ১৩-১৪ বছর ধরে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়। কয়েকজন দলীয় দাফতরিক কাজে কোথাও বসলে এমনকি একসাথে বসে ‘কুরআন-হাদিস’ চর্চা করতে গেলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে ‘নাশকতামূলক’ বা ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র’ করা অবস্থায় গ্রেফতার করার বয়ান দেয়া হতো। এমনকি পর্দানশীন একাধিক মহিলা একত্র হয়ে ‘কুরআন চর্চার’ আসরে বসলে তাদেরও গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আর যখন যে নেতাকে ধরার প্রয়োজন পড়ত তখন তাকে গ্রেফতার করে হাতে কিছু ইসলামী বই বা কয়েক ক’টি ককটেল ও ছুরি-কাঁচি ধরিয়ে দিয়ে মিডিয়াতে হাজির করা হতো। সেখানে ‘নেরেটিভ’ দেয়া হতো জেহাদি বই এবং দেশীয় অস্ত্রসহ তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উচ্চ শিক্ষালয়ের ক্যাম্পাসগুলো ছিল ধর্মপ্রাণ ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতনের কেন্দ্র। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সোনার ছেলেমেয়েরা ক্যাম্পাসে দাড়ি-টুপিওয়ালা এবং হিজাবধারী ছাত্রছাত্রীকে ‘শিবির’ এবং ‘ছাত্রী সংস্থা’ লেবেল লাগিয়ে নির্যাতন চালাত। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চাঁদা আদায়, মারধর এবং সবশেষে থানা থেকে পুলিশ ডেকে হস্তান্তর করে সংবাদমাধ্যমে ও বিভিন্ন চ্যানেলে বীরের বেশে দিগি¦জয়ের গাঁথা বর্ণনা করত। সরকার অনুমোদিত এই মানবাধিকার লঙ্ঘন ছিল ছাত্রলীগের পদোন্নতি বা দলে নিজ অবস্থান শক্ত করার যোগ্যতা। এই প্রক্রিয়াতেই বুয়েটে ধার্মিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে সারারাত পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

জামায়াত নেতাদেরকে পতিত সরকারের জেলে পুরা ছিল একটি নিত্যকার ছেলেখেলা। যখনই কোনো ইস্যুতে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠত তখনই কথিত গল্প ‘গোপন বৈঠক’, ‘নাশকতার পরিকল্পনা’ নেরেটিভ দিয়ে বাসা থেকে তুলে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হতো। অন্য দিকে দেশব্যাপী জামায়াতের নেতাকর্মীদের ব্যবসায়-বাণিজ্য বেদখল করে তাদেরকে বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গত ১৫ বছর ধরে তারা ব্যবসায়-বাণিজ্য, সংসার-বাড়িঘর সব হারিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে এবং আদালতে মামলার হাজিরা দিতে দিতে চাকরি, সহায়-সম্পদ, শরীর-স্বাস্থ্য সবই হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এমনকি বহু নেতাকর্মীকে না পেয়ে তাদের সন্তান-সন্তানাদি এবং পরিবারের ওপর নির্যাতন করে লীগ এবং পুলিশ বাহিনী। দেশজুড়ে তাদের গড়ে তোলা স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে সরকারি দলের লুটেরা বাহিনী। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করেছে এসব দখলদারিত্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে। ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে বিশ্বসেরা বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক দখলে নিয়েছে। দেশ সেরা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনায় প্রভাব খাটিয়েছে। চট্টগ্রামের কুমিরায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকায় মানারত বিশ্ববিদ্যালয় তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়ে দখল করে নিয়েছিল।

যখন দেখতে পেল কোনোভাবেই এই দলটিকে শেষ করে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না তখন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নেয় আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ও আদালতের মাধ্যমে। আর সর্বশেষ কার্ডটি খেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষপর্যায়ে। এ সময় তাদের মূর্খতা আর হঠকারিতা চরমে পৌঁছে এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পতিত স্বৈরাচার সরকারের এই আত্মঘাতী পদক্ষেপটি ছিল তাদের শেষের শুরু আর জামায়াতের ফিনিক্স পাখির মতো বিস্ময়করভাবে ফিরে আসার শুরু।

বিগত ১৫ বছর যাবত অঘোষিত নিষিদ্ধ দলটি শত অত্যাচার-নির্যাতনেও দমে যায়নি। তারা বরং দাওয়াতি কাজ, দল গঠন ও সুসংহতকরণ, ব্যাপক নীরব গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছিল কঠোর মনোবল নিয়ে। তারা বিভিন্ন সেবা নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় হাজির হয়। বন্যা, দুর্ঘটনা, দুর্যোগ-বিপর্যয়কালে জামায়াতের আমির দ্রুততার সাথে উপহারসামগ্রী নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের দুয়ারে গিয়ে হাজির হয়েছেন। এমনকি অন্য ধর্মের মানুষের দুর্যোগেও তিনি নির্দ্বিধায় তাদের কাছে চলে গেছেন উদারচিত্তে।

জামায়াতের বিস্ময়কর উত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্যে ছাত্রশিবিরের পদচারণা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কদের অনেকেই ছিলেন শিবিরের নেতাকর্মী। তারা কৌশলগত কারণে অরাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অভ্যুত্থানের পথকে মসৃণ করে রেখেছেন। আর অভ্যুত্থান-পরবর্তী দিনগুলোতে দেশজুড়ে আন্দোলনে নিহত-আহত ছাত্র-জনতার বাড়ি বাড়ি সহযোগিতা সামগ্রী এবং সান্ত্বনার বাণী নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান।

দীর্ঘদিনের টানা দুঃসহ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া জামায়াত যে আরো সুসংহত ও সুসংগঠিত হয়েছে তা মানুষ বুঝতে পারে অভ্যুত্থান প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়েই। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে সেনাপ্রধানের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের সভায় এবং উপদেষ্টা পরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জামায়াত আমিরের আত্মপ্রত্যয়ী অংশগ্রহণ অনেককেই অবাক করেছিল। এরপর থেকে প্রতিটি জাতীয় ইস্যুতে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব থাকা এবং গণমুখী বক্তৃতার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে জামায়াতের উত্থানকে বিস্ময়কর বলে মনে হচ্ছে অনেকের কাছে। একই সাথে সাম্প্রতিক বন্যায় মানবিক সেবা, মন্দির পাহারা দেয়া, আমিরের ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ও হিন্দু নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের মাধ্যমে জামায়াত রাজনীতির মাঠে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করে।

তবে এই সময়টি ছিল অভ্যুত্থান-পরবর্তী মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের সময়। সামনে অবশ্য অনেক চ্যালেঞ্জ আসতে থাকবে! সেগুলো কিভাবে জামায়াত মোকাবেলা করে তা দেখার বিষয়। দেশের ইতিহাসে মিডিয়া কখনো জামায়াতবান্ধব ছিল না; বরং বারবার অবান্ধবসুলভ আচরণে করেছে। অযৌক্তিকভাবে ও অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিডিয়া এই দলটির বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে সংবাদ প্রকাশিত করেছে। সেই মিডিয়া এখন হঠাৎ করেই জামায়াতবান্ধব হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। গত ১৫ বছর যারা জামায়াতের পক্ষের একটি সত্য ইতিবাচক সংবাদ বা প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি বা করতে পারেনি তারা নিশ্চয়ই হঠাৎ জামায়াতের প্রেমে পড়ে যাননি। এমনকি কিছু দিন আগে কয়েকজন অন্ধ আওয়ামী লীগ চাটুকার সাংবাদিক নেতাকে দেখা গেছে প্রেস ক্লাবে জামায়াতের আমিরকে ঘিরে বসে আছেন। এরা কখনো সৎ উদ্দেশ্যে জামায়াতের আমিরের পাশে বসতে পারে না। দেশের অধিকাংশ মিডিয়া ‘ইন্দো-আওয়ামী’ প্রভাবিত। তারা কি চাচ্ছে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান দেখিয়ে সেখান থেকে ভারতকে ফায়দা দিতে? মনে রাখতে হবে ভারতের নিরাপত্তা নীতির একটি বড় কনসার্ন হলো বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতি। বাংলাদেশে জামায়াতের বিষয়ে ভারতের স্পর্শকাতরতা অত্যন্ত প্রখর। ভারত বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে মৌলবাদের উত্থান বলে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি বড় ফয়সালার বিষয় হলো- আগামী নির্বাচনে অন্য ইসলামী দলগুলোর সাথে সম্পর্ক। এ বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ভূত-ভবিষ্যৎ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে নিতে হবে। ব্যক্তিনির্ভর, ফতোয়াবাজি, রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ফেরকাবাজি, গণভিত্তিহীনতা, আবেগ নির্ভরতা ও অপরিপক্বতা ইত্যাদি বিস্তর বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটতে দেখা গেছে আমাদের বিভিন্ন ইসলামী দলের ভেতরে-বাইরে। কাজেই এসব দলের সাথে ‘ঐক্য’ না ‘সমন্বয়’ কোনটি হবে সেটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের বিষয় হতে পারে।

জামায়াতের সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর বিষয় হতে চলছে বিএনপির সাথে সম্পর্ক। ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের ভূমিধস বিজয়ের পর ‘ইন্দো-আওয়ামী’ গোষ্ঠীর প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য ছিল ‘বিএনপি-জামায়াত’ জোটে ভাঙন ধরানো। পর্যবেক্ষকদের মতে ‘ইন্দো-আওয়ামী’ গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতার শেষ কয়েক বছর সেই জোটে ভাঙন ধরতে সমর্থ হয়েছিল। দেশের উদ্ভূত বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপি ও জামায়াত হয়তো বা পরস্পরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে। তবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন কখনো শত্রুতা পর্যন্ত না গড়ায়, সেই বিষয়ে উভয় দলকেই আন্তরিক থাকতে হবে।

জামায়াত-শিবিরের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের আবেগ ও আত্মবিশ্বাসের পারদে ‘অতিমাত্রা’ জামায়াতের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও আবেগ অনেক সময় তাদেরকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তাড়িত করতে পারে। পূজামণ্ডপে গান গাওয়া এবং গীতা পাঠ করার ঘটনাগুলো হলো তারই উদাহরণ। তবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জয়-পরাজয় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই পথে বিনাশ বা বিপর্যয়ও অত্যন্ত স্বাভাবিক। গত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অবস্থা ভালো ছিল। এরপরের ১৫ বছর সীমাহীন দুর্ভোগ ও বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে। আবার এখন ভালো অভিজ্ঞতা হচ্ছে। না চাইলেও হয়তো বা আবারো কখনো দুর্যোগ নেমে আসতে পারে দলটির ওপর। তবে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে বুঝা যায় তারা বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা মাথায় রাখছেন। তারা মনে করেন, দুনিয়ার রাজনীতিতে ব্যর্থ হলেও ইসলামী নীতি-আদর্শে জীবন পরিচালিত করতে পারলে পরকালের সফলতা অবশ্যম্ভাবী।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement