জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিবেশী দু’টি দেশ
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০:২০
জাতীয় নিরাপত্তা হলো একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা যা নাগরিক, অর্থনীতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষাই জাতীয় নিরাপত্তা। এর মধ্যে অসামরিক মাত্রাগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সন্ত্রাস থেকে নিরাপত্তা, অপরাধ হ্রাস, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পরিবেশ নিরাপত্তা, খাদ্যনিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে, জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, অন্যান্য রাষ্ট্রের ক্রিয়াকলাপের পাশাপাশি, সহিংস অরাষ্ট্রীয় নেতাদের পদক্ষেপ, মাদক, সংঘটিত অপরাধ, বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর দ্বারা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব।
সরকারগুলো একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির পাশাপাশি কূটনীতিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক বর্জন ও পারমাণবিক বিস্তারের মতো নিরাপত্তাহীনতার আন্তর্জাতিক কারণগুলো হ্রাস করে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে নিরাপত্তার শর্ত তৈরি করতেও কাজ করতে পারে। জাতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার যতই বিস্তৃত হচ্ছে ততই প্রবল হচ্ছে নিরাপত্তার ধারণা। নিরাপত্তার ধারণাটি আজ আর সেকেলে বা গতানুগতিক তত্ত্বকথায় সীমিত নয়। আধুনিক প্রযুক্তি বিপ্লবের ফলে নিরাপত্তা ধারণাটি ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভর ও সংবেদনশীল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় ছিল যখন রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা সম্পর্কে অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলি বিবেচনা করত। প্রতিবেশীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় প্রস্তুত থাকত। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাজার মাইলের দূরত্বেও আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে।
সা¤প্রতিক ইসরাইল বনাম মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের দিকে নজর দিলে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। ইসরাইল আক্রমণ করছে ইরান অথবা ইরাকের লক্ষ্যবস্তুতে। দূর থেকে জবাব দিচ্ছে হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরান। সুতরাং নিরাপত্তার ধারণাটি ভৌগোলিক বলয় অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকতা লাভ করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একক বৈশ্বিক ব্যবস্থা (New World Order) জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে নতুন করে উপস্থাপন করেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইচ্ছা করলেই হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করতে পারে। বিশ্বের যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে তারা সক্ষম। তাই জাতীয় নিরাপত্তা তথা, নাগরিক নিরাপত্তা বিষয়ের সাথে অনিবার্যভাবেই যোগ হয়েছে নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা। গতানুগতিক নিরাপত্তার ধারণায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ। শত্রুতা অথবা মিত্রতার জন্য আমাদেরকে প্রতিবেশীর দিকেই তাকাতে হয়। বৈশ্বিক ব্যবস্থার বা আন্তর্জাতিক বলয়ের এত কিছু পরিবর্তনের পরও বাস্তবতা এই যে, প্রতিবেশী আমাদের শত্রুতার অথবা মিত্রতার ধারক। অবশ্য ভারতের প্রাচীন কূটনৈতিক ভাষ্যকার চাণক্যের ভাষায়- প্রতিবেশী কখনোই মিত্র হতে পারে না। আজকের আধুনিক বিশ্বে তারই প্রতিফলন দেখতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতার কথা যদি আমরা স্বীকার করি তাহলে দেখা যাবে, আমাদের দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার একই বাস্তবতার প্রমাণ দিচ্ছে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ও ভারত চিরশত্রুতার ইতিহাস দিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে আশা করা গিয়েছিল যে, সেই লালিত চিরশত্রুতার অবসান ঘটবে। কিন্তু তা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অকৃপণ সহযোগিতার পরও বাংলাদেশের মানুষ ভারতমুখী হয়নি। ভারতের একজন প্রবীণ তাত্ত্বিক জয়প্রকাশ নারায়ণ বলেছিলেন, ‘ইন্ধিরাকা বাপ এক পাকিস্তান বানায়াথা। লেকিন উসকা লাড়কি দ্যো পাকিস্তান বানায়া।’ বসন্ত চ্যাটার্জি নামে কলকাতার এক বাবু এসেছিলেন বাংলাদেশ সফরে। তার লিখিত গ্রন্থটির নাম ‘ইনসাইড বাংলাদেশ’। সেখানে তিনি লিখেছেন- স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের মানুষ কী করে ভারতবিরোধী হয়ে ওঠে। মূলত ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত কখনোই বাংলাদেশকে মিত্রতার চোখে দেখেনি। তাদের কাম্য ছিল অধীনতামূলক মিত্রতা। আর তাদের বশংবদ শেখ হাসিনা ১৫ বছরে বাংলাদেশকে প্রায় করদরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন উজাড় করে সব কিছু দিয়েছেন। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে ভূলুণ্ঠিত করে তিনি নৌ, স্থল ও রেলওয়ে ট্রানজিট দিয়েছেন। অন্যায়ভাবে বাণিজ্যিক সুবিধা দিয়েছেন। বন্দর সুবিধা দিয়েছেন। নদীর পানি দিয়েছেন। সব কিছু দিয়েও বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি। তিস্তার পানি আসেনি। সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। লজ্জার কথা বাংলাদেশের মন্ত্রীরা সেই হত্যার সাফাই গেয়েছেন। বারবার ‘জিরো কিলিং’-এর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন ঘটেনি। এর প্রধান কারণ ছিল এই যে, বাংলাদেশে তাদেরই সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। গুলি করতে তারা পরোয়া করত না।
৩৬ জুলাইয়ের গণবিপ্লব বাংলাদেশকে নতুন করে স্বাধীন করে। এই দ্বিতীয় স্বাধীনতার মাধ্যমে ভারতের অধীনতামূলক মিত্রতার অবসান ঘটে। শেখ হাসিনা মিত্র দেশে পলায়ন করেন। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীর এই অঞ্চলে ভৌগোলিক রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ ঘটায়। বাংলাদেশে ভারতের দৃশ্যত কর্তৃত্বের অবসান ঘটায় তারা রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় যে, ৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাইয়ে ভারত-বাংলাদেশ গোটা সীমান্তে ‘উচ্চ সতর্কতা’ জারি করে ভারত। অধীন সীমান্ত স্বাধীন সীমান্তে পরিণত হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নড়েচড়ে বসে। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেন। এরপরও তাদের দাপট থামেনি। সরকার পরিবর্তনের পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো এরকম :
২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৬ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ভোর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কান্তিভিটা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী কিশোর নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হন আরো দু’জন। ৭ অক্টোবর ২০২৪ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হয়। পরে তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা। সীমান্তে বাংলাদেশীদের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের গুলিতে হত্যার ঘটনা দিন দিন আরো উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে আগ্রাসী মনোভাব বাড়ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের খবরে এসেছে, সীমান্তে গত ১৫ বছরে ছয় শতাধিক বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ।
৩৬ জুলাইয়ের গণবিপ্লবের পর নানা ছলা-কলায় ভারত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে চেয়েছে। প্রথমত সংখ্যালঘু কার্ড খেলে বাংলাদেশকে বারবার দুষীয়ে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চেয়েছে। দ্বিতীয়ত, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চেয়েছে। তৃতীয়ত, অতীত সরকারের দোসরদের মদদ দিয়ে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চেয়েছে। অতি সাম্প্রতিক দুর্গাপূজা উপলক্ষে নানা ধরনের মিথ্যাচার ছড়িয়ে এবং নানা উৎপাত সৃষ্টি করে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছে। এসবের প্রতিবাদে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবসময় সোচ্চার থেকেছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। পাশাপাশি সব কয়টি সীমান্ত হত্যার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র দফতরের চিঠিতে বলা হয়েছে, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বারবার প্রতিশ্রুতির পরও বিএসএফের হাতে বারবার হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে, সীমান্ত হত্যার এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত ও অযাচিত। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৭৫ সালের ঘটনাবলির পর ভারত বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করে। কাদের সিদ্দিকীর মতো লোককে ব্যবহার করে তারা বারবার বাংলাদেশ সীমান্তে আক্রমণ করে। ইতোমধ্যে শত শত আওয়ামী লীগার ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে ব্যবহার করে অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। গণবিপ্লবের পর বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সেখানে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ লাভের পর বাংলাদেশের মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। শোনা যায়, শেখ হাসিনা অন্যত্র রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের চেষ্টা করছেন। বাস্তবতা এই যে, যতদিন তিনি ভারতে অবস্থান করবেন বাংলাদেশের মানুষের ভারতপ্রীতির কোনো সম্ভাবনা নেই। একটি মনস্তাত্তি¡ক যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
ভারতের সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণ বাংলাদেশ বৈরিতার নানা প্রমাণ দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের জনগণ সে কারণেই জাতীয় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেখা যাচ্ছে, অতি সামান্য ঘটনায় ভারতীয় হাইকমিশন বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করছে। যেমন- সাতক্ষীরায় একটি মন্দিরে স্বর্ণের মুকুট চুরি গেছে। সেটিও তাদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে নগ্নভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা হস্তক্ষেপ করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে লেখা চিঠিগুলো কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছে। বাংলাদেশ সরকার সংযত থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। যেমন- বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সেদিন বলেছেন, ভারত শেখ হাসিনাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দিলেও সম্পর্কের অবনতি হবে না। কিন্তু ভারত সেই সংযম ও সহিষ্ণুতা দেখাতে পারছে না। ভারতীয় কোনো কোনো পত্রিকায় কাশ্মির স্টাইলে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর কথা বলা হচ্ছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক মানে হচ্ছে- রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তাৎক্ষণিক আক্রমণ পরিচালনা করে প্রতিশোধ গ্রহণ। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বারবার এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশের ব্যাপারে এ ধরনের কথা চিন্তা করতে পারে ভারত এটিও বাংলাদেশের মানুষকে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন করেছে। এ ধরনের শত্রæতার অবসান না হলে জাতীয় নিরাপত্তা অনিশ্চিতই থেকে যাবে। আর নাগরিক সাধারণ সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনায় ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করতে থাকবে। উভয় রাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি উদ্বেগজনক। এই গেল ভারতের কথা। এবার আসুন আমাদের অপর প্রতিবেশী মিয়ানমারের দিকে তাকাই।
এমনিতেই বাংলাদেশ মিয়ানমার সম্পর্ক ভালোই ছিল। আশির দশক থেকে রোহিঙ্গা মুসলমান বিতাড়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। এরপর যতই বছর গেছে ততই বেড়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ। সা¤প্রতিককালে তা ভয়াবহ ও বিপজ্জনক রূপ লাভ করেছে। অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। গণবিপ্লবের পর নতুন সরকারের প্রত্যাশা ছিল- মিয়ানমার নতুন করে চিন্তা করবে। কিন্তু নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। ৮ অক্টোবর প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধ চলায় নতুন করে রাখাইন রাজ্যের নাগরিকরা বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সশস্ত্র সঙ্ঘাত নিয়ন্ত্রণ ও রাখাইন থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে দ্রুত, স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ফেরত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশ সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। সেখান থেকে আসা গোলাগুলিতে বাংলাদেশের নাগরিক নিহত হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর মিয়ানমার বাংলাদেশের ব্যাপারে আরো বৈরী আচরণ করছে। এতদিন আমরা ভারত সীমান্তে বাংলাদেশী নিহত হওয়ার কথা শুনেছি। এবার আমরা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশী নিহত হতে দেখলাম। ১০ অক্টোবর দুপুরের দিকে বাংলাদেশী মাছ ধরার কয়েকটি ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলি ছোড়ে। তাতে একজন জেলে নিহত হয়। আহত হয়েছে তিন জেলে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর-আইএসপিআর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ৫৮ জন জেলেসহ ছয়টি মাছ ধরার ট্রলার আটক করেছিল মিয়ানমার।
ট্রলারগুলো মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল। পরে আলোচনাক্রমে ওই জেলেদের ফেরত আনা হয়। জেলেদের ধরতে গিয়ে মিয়ানমার গুলি চালায়। আর তাতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
উপরের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী আমাদের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের সম্প্রতি গণবিপ্লব, নতুন পরিবেশ ও নতুন সমীকরণের সৃষ্টি করেছে। ভারত ও মিয়ানমার উভয়-প্রতিবেশীই বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থার এ পরিবর্তনকে সম্ভবত দুর্বলতা হিসেবে দেখছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈরিতা তারই প্রমাণ। মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বসুলভ নয়। এখন আবার সীমান্তে এবং সাগরে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার বৈরিতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল চোখে দেখছে। কিন্তু সরকার যদি হয় জনসমর্থনে শক্ত, তাহলে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই সরকার জনসমর্থন তুষ্ট এবং যেকোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে অধিকতর সক্ষম। ভারত ও মিয়ানমার যত দ্রুত এই বিষয়টি বুঝবে, ততই সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে- সকলের প্রতি মিত্রতা কারো প্রতি শত্রুতা নয়। প্রতিবেশী দুটো দেশের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি মিত্রতাসুলভ। সুতরাং তারা শত্রুতার অবসান ঘটিয়ে মিত্রতার ক্ষেত্র তৈরি করবে, এটিই বাংলাদেশের নাগরিক সাধারণ আশা করে। তাতে উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক স্বাধীনতা দ্রুত নিশ্চিত হবে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা