২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নাসরুল্লাহর পর মধ্যপ্রাচ্য কোন পথে

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ - ছবি : সংগৃহীত

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর ইসরাইল ও হিজবুল্লাহ সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ইসরাইল আক্রমণ তীব্র করেছে। যোগাযোগ ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং গ্রুপের অভিজাত বাহিনীকে আঘাত করে কয়েক ডজন হিজবুল্লাহ কমান্ডারের পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদেরকে হত্যা করেছে। হিজবুল্লাহ রকেট ও ড্রোন হামলায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রতিরোধ গোষ্ঠীর নতুন নেতা জানিয়েছেন, ইসরাইলের স্থল অভিযান মোকাবেলায় হিজবুল্লাহ প্রস্তুত। এর মধ্যে ইসরাইল সেটি শুরু করেছে।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করতে পারেন যে, হিজবুল্লাহকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে ঠেলে দেয়ার পর সহিংসতার বর্তমান স্তরের বাইরে তারা প্রতিশোধ নেবে না অথবা ইসরাইলি সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা বিশ্বাস করতে পারেন যে, হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যুদ্ধের প্রয়োজন হবে এবং ইসরাইলকে সে সুযোগ দেয়া হবে। হিজবুল্লাহর কিছুটা দুর্বল অবস্থায় অনেকেই ভাবছেন, উত্তর ইসরাইলের বাসিন্দাদের ফেরানোর জন্য সেটিই ভালো হবে। তবে সন্দেহ নেই যে, এক পর্যায়ে হিজবুল্লাহ এর কঠিন জবাব দেবে। তখন এমন দাবানল জ্বলে উঠবে যা ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই লড়াইয়ে টেনে আনতে পারে। আর তাতে রাশিয়ার জড়িয়ে পড়া অসম্ভব নয়। এ ধরনের সঙ্ঘাত লেবানন এবং সম্ভবত ইসরাইলকেও ধ্বংসের মুখে নিয়ে আসবে।

ইসরাইলের ‘জয়ে’ অন্তহীন যুদ্ধ
আজ ইসরাইলিরা লেবাননে তাদের ‘কৃতিত্ব’ উদযাপন করছে। কিন্তু আগামী কয়েক দশক ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিনি ও লেবানিজদের ওপর যে দুর্ভোগ চাপিয়েছে তার জন্য তাদের ভারী মূল্য দিতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষক লুবনা মাসরওয়া। ইসরাইলের মিডিয়াও হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডে উচ্ছ্বাসের সাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইসরাইল বিশ্বাস করে যে তারা হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন করেছে। বিরোধী দলের নেতা ইয়ার ল্যাপিড পর্যন্ত লিখেছেন : ‘আমাদের সব শত্রুকে জানাতে দিন যে, ইসরাইলে যে কেউ আক্রমণ করবে সে মারা যাবে।’

ইসরাইলি সেনাবাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যাতে একজন বিমানবাহিনীর কমান্ডার ও পাইলটদের মধ্যে রেডিও যোগাযোগের কথোপকথন ছিল। এতে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল টোমার বারকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি এখানে একটি বিজয় প্রদর্শন করেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’ একজন পাইলট উত্তর দেন : ‘খুব ভালো। অপরিসীম গর্ব। আমরা সবার কাছে, সর্বত্র পৌঁছাব।’

হারেৎজ পত্রিকা রিপোর্ট করেছে, ইসরাইলের বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণের জন্য চাপ দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ পূরণের সুযোগ পাওয়ার আগে, হিজবুল্লাহর বর্তমান বিশৃঙ্খল মুহূর্তে এটি দখল করতে হবে।

তিনটি ফ্রন্টে যুদ্ধ চলছে, আর একেকটিতে ইসরাইল জয়লাভ করছে, এমন আবহ ছড়িয়েছে দেশটিতে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন রাফাহ আক্রমণ, হামাসের সাথে গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়া এবং লেবাননে একটি নতুন ফ্রন্ট খোলার বিষয় মিলিয়ে তিনবার বাইডেনকে দৃশ্যত অস্বীকার করেছেন। তার পরও তিনি প্রতিবার পার পেয়ে গেছেন। এখন আরো হত্যাকাণ্ড চালাতে তার সম্ভবত কোনো বাধা নেই।

কোনো সীমানা নেই, নেই লাল রেখা
ইসরাইলি পাইলট ও ড্রোন অপারেটরদের এখন আর ভাবতে হয় না, একটি লক্ষ্যস্থলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কত বেসামরিক লোক নিহত হতে পারে। সম্প্রতি আঞ্চলিক সেনাকমান্ডারদের হত্যাকাণ্ড চালানোর সিদ্ধান্ত অর্পণ করা হয়েছে। লেবানন, গাজা ও পশ্চিম তীরে সব বেসামরিক নাগরিকই এখন হামলার লক্ষ্যবস্তু। শিশু হত্যার নিষেধাজ্ঞাও বিলীন হয়ে গেছে। এই যুদ্ধে কোনো সীমানা বা রেড লাইন নেই। ইসরাইল একটি জাতিকে ক্ষুধার দিকে ঠেলে দিতে পারে, এটি তার কারাগারে নিয়মিত নির্যাতন ও ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়ে উৎসব করাতে পারে। ইসরাইল হিজবুল্লাহ কমান্ড সেন্টারের চারটি বøকের ফ্ল্যাটে হামলায় ৩০০ জনকে হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোক ছিল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে নীরব।

ক্ষমতার মদমত্ততা ইসরাইলকে একটি গভীর বিভ্রমে ঠেলে দিয়েছে। হিজবুল্লাহ প্রধান ও সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করে নতুন যোদ্ধাদের এগিয়ে আসা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত, হিজবুল্লাহ বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করেনি এবং ইসরাইলের সাথে একটি বড় যুদ্ধে জড়াতে তারা আগ্রহী ছিল বলেও মনে হয়নি। তাদের আক্রমণ ছিল সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনমূলক। কার্যকর আঘাতের জন্য নয়। হিজবুল্লাহ আরও বলেছিল যে, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেই তাদের সঙ্ঘাত শেষ হবে। এই সংযম এখন বিলুপ্তপ্রায়।

হিজবুল্লাহর সামনে এখন কোনো বিকল্প নেই। গাজার হামাসের মতো, হিজবুল্লাহ এখন এমন একটি সঙ্ঘাতে লিপ্ত যেখানে শত্রু কেবল তাদের মূল ভ‚মি থেকে উৎখাতই করতে চায় না, তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে চায়। ফলে এটি এখন হিজবুল্লাহর অস্তিত্বের যুদ্ধ।

এরপর কী
এরপর কী? এটি এমন একটি প্রশ্ন যা ইসরাইল খুব কম সময়েই নিজেকে জিজ্ঞাসা করে। কিংবা এই তিক্ত সঙ্ঘর্ষের ইতিহাস থেকে দেশটি শিক্ষাও নেয় না। হত্যা করে কোনো যোদ্ধা গোষ্ঠীর বিলুপ্তি ঘটানো গেছে এমন নজির নেই। হিজবুল্লাহকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং পাল্টা আঘাত করা তাদের জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। ইসরাইল তার কর্মকাণ্ড দিয়ে এর মধ্যে আরব বিশ্বে একটি তরুণ প্রজন্ম তৈরি করেছে যারা একদিন প্রতিশোধ নেবে।

এরপর ইসরাইল লেবাননের কিছু অংশকে গাজায় পরিণত করতে পারে, দক্ষিণ লেবানন ও উত্তর গাজা পুনর্দখল করতে পারে, ঘরবাড়ি ও জীবন ধ্বংস করতে পারে, পুরো অঞ্চলের সাথে যুদ্ধ করতে পারে; তবে এটি সঙ্ঘাতের মূল উৎসকে উপেক্ষা করতে পারে না যা ফিলিস্তিনের জাতীয় কারণ।


আর ইসরাইলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের দেশ ফিলিস্তিনি এবং লেবানিজদের ওপর কয়েক দশক ধরে যে দুর্দশা চাপিয়েছে তার জন্য ভারী মূল্য দিতে হবে। আজ ইসরাইলিরা লেবাননে তাদের অর্জন উদযাপন করছে। কিন্তু জয় আসে অনেক বড় মূল্যে। ইসরাইলের জয় আসলে কোথায়? তাদের ‘কৃতিত্ব’ হলো এক সপ্তাহে প্রায় ১০০০ লেবানিজকে হত্যা করা, যাদের মধ্যে ৫০ জন শিশু। এটি মৃত্যুকে স্বাভাবিক করেছে এবং মানবতার শেষ নিদর্শনগুলোকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।

স্থল আক্রমণের চ্যালেঞ্জ
ইসরাইল এখন লেবাননের ভূমিতে সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক গোল্ডবার্গের মতে, স্থল অভিযান আগ্রাসন বাড়ানোর আরেকটি পর্যায় হলেও ইসরাইলিরা এটাকে খুব ভয় পায়। ইসরাইলিরা মাটিতে হিজবুল্লাহর মোকাবেলা করতে ভয় পায়। তার জন্য ওপর থেকে বোমা ব্যবহার করা এক জিনিস। হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সাথে তাদের নিজ ভূখণ্ডে লড়াই করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।

ইসরাইল ইতোমধ্যে লেবাননে অন্তত দু’বার বা তিনবার আক্রমণ করেছে। একটিতেও লেবাননে থাকা এবং দখল করা জমি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ২০০৬ সালে শেষবার যখন হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধ করেছিল তার ফল ভালো হয়নি। এবার, তেল আবিবকে গাজা উপত্যকায় এক বছর যুদ্ধের পর তার সশস্ত্রবাহিনীর ক্লান্তির অতিরিক্ত চাপের মুখোমুখি হতে হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক জর্জিও ক্যাফিয়েরো বলেছেন, ইসরাইল যদি দক্ষিণ লেবাননে স্থল আগ্রাসন চালায়, তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য কয়েক দশক ধরে প্রস্তুতি নেয়া হিজবুল্লাহর কিছু বাড়তি সুবিধা হতে পারে। গোল্ডবার্গ উল্লেখ করেন যে, আপনি কাকে জিজ্ঞাসা করছেন তার ওপর নির্ভর করে, লেবাননে সম্ভাব্য যুদ্ধের বিষয়ে কী দৃষ্টিভঙ্গি পাবেন। বসতি স্থাপনকারীরা বলবে, ‘আমরা দক্ষিণ লেবাননে বসতি স্থাপন করতে চাই’, এবং অন্যরা বলবে, ‘আমরা লেবাননের সেনাবাহিনীকে জাগিয়ে তুলতে চাই যাতে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে এটি বিদ্রোহ করে।’ অন্যরা মনে করেন ‘লেবানিজরা রাস্তায় নামবে এবং ইসরাইলের পক্ষে বিদ্রোহ করবে।’ ইসরাইলিরা মনে করে অনেক কিছুই ঘটতে যাচ্ছে কিন্তু কোনো সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং কোনো সুস্পষ্ট কৌশল বাস্তবে নেই।

হিজবুল্লাহ আবার ফিরে আসবে
বিশ্লেষকের মতে, হিজবুল্লাহর কার্যনির্বাহী নেতৃত্ব সরিয়ে নেয়ার সাথে সাথে, ইসরাইল সংগঠনটিকে ‘পঙ্গু’ করতে সক্ষম হয়, কিন্তু এর প্রভাব খুব স্বল্পমেয়াদি হবে কারণ হিজবুল্লাহ একটি বড় সংগঠন। এটি চ্যানেল পেয়েছে, কমান্ডের চেইন পেয়েছে, বিভিন্ন কাঠামো ও যন্ত্রপাতি পেয়েছে।

বিশ্লেষক ক্যাফিরো উল্লেখ করেছেন, নাসরুল্লাহর হত্যা হিজবুল্লাহর জন্য বিশাল আঘাত ছিল। কিন্তু এর কোনোটির মানেই এই নয় যে ইসরাইল হিজবুল্লাহকে পরাজিত করেছে। লেবাননের সমাজে এবং অন্যান্য আরব-ইসলামী দেশে এটি বিরাট সমর্থন তৈরি করেছে। এটি অনেক যোদ্ধা ও আঞ্চলিক সমর্থনসহ একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে এখনো রয়ে গেছে।

ক্যাফিরো এই প্রত্যাশার বিরুদ্ধেও সতর্ক করেন যে, হিজবুল্লাহ তার অস্ত্র ফেলে দেবে এবং ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে, অথবা তেল আবিব তার উত্তর প্রতিবেশীর ওপর তার নৃশংস হামলা বন্ধ করবে। হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে এই দ্ব›দ্বটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, আরও অনেক রক্তপাত বাকি আছে।

গাজার ব্যর্থতার প্রভাব লেবানন ফ্রন্টে
ইসরাইল গাজায় বেশ খারাপ কাজ করছে এবং এটি লেবাননকেও মুক্তির সুযোগ হিসাবে দেখছে। গাজায় ইসরাইল তার সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারেনি। হামাস এখনো সেখানে আছে এবং শত্রæতা শেষ হলে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার অংশ হতে পারে।

কয়েক বছর ধরে, ইসরাইলি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, হিজবুল্লাহকে অবশ্যই সীমানা থেকে এবং লিটানি নদীর উত্তর থেকে দূরে ঠেলে দিতে হবে। ইসরাইলের রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা এলিটরা সাধারণত একমত যে এজন্য একটি সামরিক অভিযান অনিবার্য। ১৬ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলি বাস্তুচ্যুত লোকদের প্রত্যাবর্তনকে একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের লক্ষ্যে উন্নীত করেন। দু’দিন পরে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ৭ অক্টোবর-পরবর্তী যুদ্ধে একটি নতুন পর্যায় ঘোষণা করেন, যেখানে মনোযোগ কেন্দ্র উত্তর সীমান্তে স্থানান্তরিত হবে।

লেবাননের অভ্যন্তরে একটি বাফার জোন তৈরি করতে স্থল আক্রমণের হুমকির মুখে, ইসরাইল হিজবুল্লাহকে তার দাবি ত্যাগ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে যে সীমান্ত বরাবর তার বাহিনী প্রত্যাহার করার জন্য গাজায় যুদ্ধবিরতি পূর্বশর্ত। গাজা যুদ্ধের প্রায় এক বছর, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজা, পশ্চিম তীর এবং উত্তরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ইসরাইলি অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছে।

অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে, হিজবুল্লাহ একটি অ-আলোচনাযোগ্য উদ্দেশ্য হিসাবে গাজা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছে এবং এ জন্য তার শত শত যোদ্ধা মারা গেছে। এখন এই অবস্থান পরিত্যাগ করা তাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক পরাজয়ের সমতুল্য হবে ।

হিজবুল্লাহ নেতারা বারবার বলেছেন যে, তারা গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ এবং তাদের নিজস্ব সমান্তরাল লড়াইকে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার যুদ্ধ হিসাবে দেখেন, যাতে তারা হারতে পারেন না। ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলা হয়তো গ্রুপটিকে দুর্বল করেছে, কিন্তু এর রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষমতা অক্ষত রয়েছে এবং এর রিজার্ভের মধ্যে একটি বড় অস্ত্রাগার রয়েছে। এর কমান্ডে এখনো বেশ কয়েক হাজার যোদ্ধা রয়েছে।

৭ অক্টোবর হামাসের বিধ্বংসী হামলার চেয়ে হিজবুল্লাহর সাথে সঙ্ঘাতে ইসরাইলের পরিণতি অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে। ইরান যদি সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনে তার অ-রাষ্ট্রীয় মিত্রদের সাথে লড়াইয়ে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং হিজবুল্লাহকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি মারাত্মক হতে পারে। এ ধরনের একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টানবে।

দু’টি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়
সা¤প্রতিক দু’টি ঘটনা এখনকার হিসাব নিকাশ বোঝার জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। একটি হলো জেরুসালেম পোস্টের একটি প্রতিবেদনে নেতানিয়াহু প্রশাসনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরাইল লেবাননকে তাদের প্রতিশ্রুত ভূমির অংশ বলে মনে করে। এর অর্থ হলো, ইসরাইলের লক্ষ্যের মধ্যে লেবানন দখল অন্তর্ভুক্ত। অন্যটি হলো, ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার প্রতিশোধ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। হাসান নাসরুল্লাহর হত্যা আমেরিকার সে প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিপরীত।

এই দুটি বিষয় বার্তা দেয় যে, ইরানি নেতৃত্ব এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রাখে না। তারা মনে করে, ইরানবিরোধী যে গুপ্তচর নেটওয়ার্ক একের পর এক অন্তর্ঘাতী কাজ ইরানের অভ্যন্তরে ও লেবানন-সিরিয়ায় ঘটিয়ে চলেছে তা মোসাদের একক নেটওয়ার্ক নয়, এর সাথে সিআইএ নেটওয়ার্ক সংযুক্ত রয়েছে। ফলে এখন এটি ইরানের জন্যও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে রূপ নিতে পারে।

তাদের সামনে এই প্রশ্ন রয়েছে যে, প্রতিরোধ অক্ষকে দুর্বল করার পরের আঘাতটি ইরানের ওপর প্রবলভাবে আসবে। ফলে সমঝোতার রাস্তাকে ইরান আর সমাধানের পথ মনে নাও করতে পারে। সেটি হলে এই সঙ্কটে ক্রেমলিনের আরো সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসব ঘটনাবলি থেকে মনে হয়, মধ্যপ্রাচ্য নতুন যুদ্ধের গভীর ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে। ইসরাইল যেভাবে বিজয় এখন উদযাপন করতে চাইছে সেটি অচিরেই মরীচিকা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement