হজযাত্রার কাহিনী
- মীযানুল করীম
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৪৪, আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:১৩
(তৃতীয় কিস্তি)
সৌদি আরবে একটি জিনিস স্পষ্ট। সেখানে রৌপ্যমুদ্রা বা দিরহামের কোনো দাম নেই। সবকিছু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এবং ডলারের উচ্চমূল্যের দরুন। সৌদি আরবে সবকিছুর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। যেমন- সাধারণ লিকার চা এক রিয়াল, আর চায়ের প্রতি কাপ দুই রিয়াল বা স্বর্ণমুদ্রা, রঙ চা প্রতি কাপ পাঁচ রিয়াল বা স্বর্ণমুদ্রা। এক রিয়ালের দাম বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৩ টাকার সমান। সৌদি আরব সব স্বর্ণমুদ্রাকে কাগজের মুদ্রা বানিয়ে নিয়েছে। পার্চমেন্টের দামি কাগজে তৈরি একেকটি মুদ্রা। মুদ্রার গায়ে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ, বর্তমান বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান- এই তিনজনের ছবি খোদাই করা। সারা দেশে এই তিনজনের ছবি শুধু চালু আছে।
মক্কা ও মদিনা শরিফের হারামে প্রতি রাকাত নামাজে এক লাখ রাকাত নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়, এ বিশ্বাসে সেখানে নামাজের জামাতে খুব ভিড় হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সম্মেলন ঘটে। আফগানিস্তান, ভারত, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, সেনেগাল, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি নানা দেশের মানুষের মিলন ঘটে। আর বাংলাদেশীরা তো আছেই।
মক্কায় আমরা বিলাসবহুল হোটেলে ছিলাম। ওই হোটেল থেকে হারাম শরিফ কাছে। হজ থেকে ফিরে আসার পরে আমার এক আপনজন সৌদি কুইজিন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। কিছু বলতে পারিনি। কারণ মক্কা শরিফে নিজস্ব পরিবেশে ছিলাম। হোটেলে সময়মতো সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবার দিত। মদিনা শরিফেও হোটেল ছিল উপযোগী। যাওয়ার সময় জেদ্দা থেকে মক্কা গিয়েছি; কিন্তু দিন দীর্ঘ হওয়ায় টের পাইনি। অথচ পথ অনেক দীর্ঘ।
সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনায় থাকাকালে যে হোটেলগুলোতে ছিলাম, সেখানে অধিকাংশ বাংলাদেশী। সেলুনগুলোতেও বাংলাদেশীরা। ওদের শুধু রুটি তৈরির তারিফ করতে পারলাম না। আর সব কিছু ঠিক আছে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও জাতির প্রভেদ উত্তরণ করে সবাই আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার জন্য ছুটছে। কালো-সাদা, নারী-পুরুষের কোনো প্রভেদ নেই। সবাই নামাজের জামাতে শামিল হচ্ছে। অনেক শারীরিকভাবে দুর্বল পুরুষ-মহিলা তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য কেনা চেয়ার মসজিদে দান করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের পুরস্কার দিন।
আমরা হোটেলে নাশতার সময় রুটি ও ডাল এবং ডিম রেগুলার পেতাম। নারী-পুরুষের কোনো প্রভেদ ছিল না। দুপুর এবং রাতের খাবার সময়মতো পৌঁছানো হতো।
সৌদি সরকার দেশের উন্নয়ন করছে ঠিকই, তবে আগের ব্যবস্থা আবার জেঁকে বসছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হজের সময়ও জিনিসপত্রের দাম খুব একটা কমেনি। সৌদি আরব থেকে স্বর্ণমুদ্রা উঠে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মনে পড়ে গেল অতীতে হজের সময় লুটপাটের কথা। ফলের দাম খুব একটা কম নয়। অথচ বড়দিন উপলক্ষে অমুসলিম দেশগুলোতে জিনিসপত্রের দাম কমানো হয়। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আরব-আমিরাতসহ কোনো কোনো দেশে রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম কমানো হয়। সৌদি আরবে জিনিসের দাম আরো কমানো যায়। সৌদি সরকার হজযাত্রীদের জন্য অনেক কিছুু করেছে; কিন্তু মানুষের ভিড়ে তাও যথেষ্ট হচ্ছে না। হজের ওপর সৌদি সরকারের একটি বিশেষ মন্ত্রণালয় আছে; কিন্তু তাও কুলোচ্ছে না। মাঝে করোনা মহামারীর কারণে হজ বন্ধ থাকার দরুন এখন ভিড় বেশি। প্লেনে খরচ বেশি হলেও মানুষের ভিড় কমছে না। আমরা নিজেরা বেসরকারিভাবে হজ করেছি। প্লেন সরকারি হলেও খরচটা ছিল বেসরকারি হিসাবে। যাওয়ার সময় দীর্ঘক্ষণ সাগরের উপর দিয়ে উড়েছি। প্রথমে আরব সাগর, এরপর লোহিত সাগর। প্লেন ঢাকা থেকে ছাড়তে অনেক সময় লাগিয়েছে। তবে শেষদিকে খাবার ভালো ছিল। প্রতি ফ্লাইটে প্রায় একইরকম খাবার আইটেম পরিবেশন করা হয়। নাশতা ও ভাত একসাথে দেয়া হয়। তবে মাঝে মধ্যে পানি এবং চা পরিবেশন করা হয়। নাশতার মধ্যে ছিলÑ কেক, রুটি এবং ভাতের মধ্যে পোলাও, গোশত; সাথে ছুরি, কাঁটাচামচ, পানি। সব একসাথে দেয়ার কারণে অনেকের অসুবিধা হতো খেতে। ক্ষুধা যখন চরমে, তখন খাবার না খেয়ে উপায় থাকে না। যাওয়া-আসার শেষদিকে খাবার দেয়া হতো এ কারণে। সিটে বসে খাওয়া যায়, এমন সুবিধা ছিল; কিন্তু সবাই তা সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। একজনের জন্য যথেষ্ট খাবার ছিল; কিন্তু সে খাবারও খাওয়া যায়নি। (চলবে)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা