২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘বাংলাদেশ করো ভাগ, বঙ্গসেনা দিচ্ছে ডাক’

- প্রতীকী ছবি

চলতি ৭ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়ি থেকে আরএনএফ নিউজ কর্তৃপক্ষ ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করে। সেখানে নতুন করে স্লোগান দেয়া হয় ‘বাংলাদেশ করো ভাগ, বঙ্গসেনা দিচ্ছে ডাক’। সেখানে দেখানো হয়েছে গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজগঞ্জের কাটমাড়ির চরে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গসেনার পুরুষ ও মহিলা সেনারা একত্রিত হয়ে দাবি করেছেন, বাংলাদেশে ৭৮ বছর ধরে হিন্দুরা অত্যাচারিত হচ্ছে। অত্যাচারের ভয়াবহতা বেশি ধরা পড়েছে এবার গত এক মাসে। এ কারণে তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ছয়টি জেলাকে ভাগ করে হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। নেতাদের মতে, এটিই একমাত্র সমাধান। ছয়টি জেলা হলো- যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও পটুয়াখালী। সেখানে বাংলাদেশের সব হিন্দু সংখ্যালঘু একত্রিত হয়ে সুখে বসবাস করতে পারবে। সেনাদের মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশকে ভেঙে দুই টুকরা করে স্বাধীন বঙ্গভূমি হিন্দুরাষ্ট্র গঠন করা। ভিডিওটিতে লাল পোশাকে পুরুষ সেনা হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে বড়জোর ১৬-১৮ জন অনুরূপ লাল শাড়ি পরিহিতা মহিলা ১৮-২০ জন। পুরুষদের সারিতে লুঙ্গি পরিহিত ও প্যান্ট-শার্ট পরিহিত দুই-একজন লাইনে দাঁড়ানো।

এই বঙ্গভূমি আন্দোলন নতুন নয় । ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় সংগঠনের জন্ম হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডা: কালিদাস বৈদ্য, সুব্রত চট্টোপাধ্যয় (বিলাত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার), নীহারেন্দ্র দত্ত মজুমদার (পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন আইনমন্ত্রী) এবং শরৎচন্দ্র মজুমদার (বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী)। চিত্তরঞ্জন সুতারও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর সংস্থা গোলপার্কে সভা করে প্রথম প্রকাশ্যে হোমল্যান্ড দাবি করে। এরপর মাঝে মধ্যে সভা-সমাবেশ হয়েছে। নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ এসব কাজের আঞ্জাম দিয়েছে।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর পটপরিবর্তিত হলে আন্দোলনকারীদের সাহস বেড়ে যায়। জিয়াকে হত্যার পর চট্টগ্রামকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। তখন এক শ্রেণীর সংখ্যালঘু আনন্দে আত্মাহারা হয়ে চট্টগ্রামের লালদীঘির বক্সির হাট পুলিশ মোড়ে নৃত্য করতে থাকে। তারা বাংলাদেশ ভাঙার জোর প্রস্তুতি নিতে থাকে, বঙ্গভ‚মি আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ওই বছরের ২৫ মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। তৈরি হয় সেনাবাহিনী, বঙ্গসেনা। সেনাপতি হন ডা: কালিদাস বৈদ্য। পরে বঙ্গদেশ মুক্তি পরিষদ তৈরি করে সৈন্যবাহিনী লিবারেশন টাইগার্স অব বেঙ্গল (বিএলটি)। এই সংগঠন মাঝে মধ্যেই বঙ্গভ‚মি দখলের ডাক দেয়। সীমান্তে হইচই করে, অভিযান পরিচালনা করতে আসে। কিন্তু কখনোই ব্যাপারটি এ দেশের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি।

তারা একটি প্রবাসী সরকার গঠন করে। পার্থ সামন্ত বা চিত্তরঞ্জন সুতারকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। পতাকা বানানো হয় বাংলাদেশের মতো কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত, সবুজ ও গৈরিক রঙের মধ্যে সূর্যের ছবি। ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’ এই দেশাত্মবোধক গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়। দেশের সীমানা দেয়া হয়- উত্তরে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ২০ হাজার বর্গমাইল প্রস্তাবিত সীমানার মধ্যে পড়েছে; বাংলাদেশের দু’টি বিভাগ খুলনা ও বরিশাল। এই অঞ্চল নিয়ে ২৫ মার্চ ১৯৮২ ঘোষিত হয় তথাকথিত স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। স্বাধীন বঙ্গভূমিকে বাস্তব রূপ দেয়ার সব উদ্যোগই চলছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বাংলাদেশের ওপারে সীমান্ত বরাবর চব্বিশ পরগনা, নদীয়া এবং উত্তর বাংলায় তাদের তৎপরতা চলতে থাকে। জানা যায়, ওই সময় বাংলাদেশের কয়েকজন নেতা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে ওসব এলাকায় বিচরণ করতেন। তার মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন বঙ্গসেনার পক্ষে মত দেন। চিত্তরঞ্জন সুতারের যুক্তি হলো, বাংলাদেশে মুসলমানদের শাসন চলছে। হিন্দুদের জীবন ও সম্পত্তি তাদের হাতে নিরাপদ নয়। বিশেষত বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র ঘোষণার পর ওই দেশের হিন্দুরা পরাধীন জীবনযাপন করছে। তাই প্রয়োজন হিন্দুদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র-বঙ্গভূমি!

’৮৮-এর জুলাই থেকে অবস্থাটা ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে। ওই বছর ২২ জুলাই বঙ্গসেনা এক সম্মেলন করে। এর পরই শুরু হয় একের পর এক কর্মসূচি। সীমান্ত জেলাগুলোতে চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ মিছিল মিটিং। ২৩ নভেম্বর বঙ্গভূমি দখলের জন্য বনগাঁ সীমান্তে অভিযানে কয়েক হাজার লোক সমবেত হয়। ২২-২৩ জানুয়ারি বনগাঁ থেকে বঙ্গসেনারা মহড়া চালায়। ২৪ মার্চ ও ২৫ মার্চ আবার বঙ্গভূমি অভিযান চলে। ঢাকার সংবাদমাধ্যমগুলো এই প্রথম গুরুত্বসহকারে খবর প্রচার করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভিযান চালালে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই জঙ্গিরা দ্রুত ভারতে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশে কোনো পটপরিবর্তন হলেই এই সংগঠনের নড়াচড়া দেখা যায়। এবারের নড়াচড়াও এমন এক বিষয়।

বঙ্গভূমি আন্দোলনের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে তিন ভাগ করা। দক্ষিণ-পশ্চিম বিরাট এলাকায় থাকবে হিন্দুরা, ফেনীতে আরেকটি চিকেন নেক রয়েছে, সেটি ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও খণ্ডিত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মতপ্রকাশ করেছেন। তাহলে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পৃথক হয়ে আরেকটি অংশ হবে। এর পর ঢাকাকেন্দ্রিক যে তৃতীয় অংশ থাকবে সেটি হবে মূল বাংলাদেশ, যেটি কোনোভাবেই টিকবে বলে মনে করেন না ভূকৌশলবিদ ও সমরবিদরা। বিজেপির সংসদ সদস্য সুব্রামানিয়াম স্বামী বছর দুই আগে হুমকি দেন, হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে ও মন্দির দখল করা হচ্ছে, এসব বন্ধ না হলে পুরো বাংলাদেশে দিল্লির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। তার কথায়, ‘হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাগলামি বন্ধ না হলে বাংলাদেশ দখল করতে হবে। আমি সরকারকে সেই পরামর্শই দেবো।’ কলকাতা টোয়েন্টিফোরে ফলাও করে এই সংবাদ পরিবেশিত হয়। রাজস্থানের গঙ্গাপুরে এক জনসভায় বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ‘দিমক’ বা উইপোকা বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এরা ভারতীয় যুবকদের রুটিরুজি ও চাকরি কেড়ে নিচ্ছে, গরিবের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে।’ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মালদা জেলায় গত ১০ বছর ধরে নির্বাচিত কংগ্রেসের এমপি মৌসম বেনজির নূর এর প্রতিবাদ করে বলেন, এসব একদম বাজে কথা! মালদা থেকেও বহু বাংলাভাষী হিন্দু-মুসলিম কাজের খোঁজে ভারতের নানা প্রান্তে যান, বাংলাদেশেও যান। সীমান্তবর্তী এলাকায় সারা বিশ্বে এগুলো হয়ে থাকে।

কালিদাস বৈদ্য বঙ্গসেনার সৈনাধ্যক্ষ ছিলেন সেটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। সেনা পরিচালনার চেয়ে বৈদ্যের মূল কাজ ছিল মুসলমান ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিষোদগার করা। তিনি এ বিষয়ে বই লিখেছেন, পত্রিকায় লেখালেখিও করেছেন। ইসলাম সম্পর্কে তিনি কত অজ্ঞ সেটি তার লেখনীতে পরিস্ফুট। কালিপদ বৈদ্যের বই ‘বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব’ তিনি কুরআনের কিছু সূরার নাম উল্লেখ করে সেসবের অপব্যাখ্যা করেছেন : তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এ দেশের মুসলমানরা আল্লাহর হুকুম হিসেবে এই আয়াতগুলো তামিল করতে গিয়ে ৩০ লাখ হিন্দুকে হত্যা করেছে, হিন্দুদের বাড়িঘর লুণ্ঠনের পর তা জ্বালিয়ে দিয়েছে, হিন্দু নারীদের নির্যাতনের পর ধর্ষণ করেছে।’ বৈদ্য তার বইয়ের ৫৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘শিক্ষা-দীক্ষায় মুসলমানদের অনীহার কারণও ইসলামী শিক্ষা। শিক্ষা-দীক্ষা ও নৈতিক দিক দিয়ে উন্নত সৎ মানুষ গড়ার কোনো প্রেরণা ইসলামে নেই। ইসলাম মানুষকে সম্পদ সৃষ্টিতে কোনো প্রেরণা জোগায় না। ইসলামের শিক্ষা হলো জিহাদ করে পরের সম্পদ ঘরে আনতে হবে। চুরি ডাকাতিতেই ইসলামের প্রেরণা। ইসলামী মতে, ইসলাম হলো শ্রেষ্ঠ পথ। এই পথের পথিক বিধায় একজন মুসলমান পাহাড়প্রমাণ পাপ করলেও সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা পাবে। পরলোকে জান্নাতবাসী হবে।’ বইয়ের ৫৫ পৃষ্ঠায় আছে, ‘জেহাদের সার কথা হলো বিধর্মীদের আক্রমণ করো, খুন করো, শূলবিদ্ধ করো, হাত-পা কেটে নাও। তবে, মুসলমান হতে রাজি হলে ক্ষমা করে দাও। অন্যথায় তাদের ঘরবাড়ি লুট করা, জ্বালিয়ে দেয়া, তাদের মেয়েদের ওপর অত্যাচার চালানো। এভাবে এক সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করা। যা, দেখে বা শুনে অন্যরা ভয় পেয়ে মুসলমান হয়।’ বৈদ্যের এই বইতে পাতায় পাতায় এরূপ হিংসাবিদ্বেষ ঘৃণা ছড়ানো, মিথ্যা, আপাত্তিকর ও স্পর্শকাতর বক্তব্য আছে।

ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, ‘উত্তর প্রদেশে হালাল খাবার উৎপাদন, সংগ্রহ বা স্টোরেজ, বণ্টন ও বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো।’ তবে রফতানির জন্য উৎপাদিত ‘হালাল’ পণ্যগুলো নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত। এসব পরস্পরবিরোধী নয় কি?

ভারতীয় মিডিয়ার রিপোর্টে অহরহ মুসলিমবিরোধী ও বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চলমান। বিশেষ করে বাংলাদেশে সামপ্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন, উজানের পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে মিথ্যা সংবাদ, হিন্দুদের মন্দির পোড়ানো বিষয়ে মিথ্যা বিবরণ দিয়ে তারা কিভাবে বিপাকে পড়েছেন সেসব বিষয়ে পাঠক অবহিত রয়েছেন। মাদরাসা ও সাধারণ ছাত্রদের মন্দির ও হিন্দুদের ঘরবাড়ি পাহারা দেয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করলেও ভারতীয় মিডিয়া ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। এসব বিবরণ লিখে নিবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কাজের আরেক ফিরিস্তি হলো- গো হত্যা সমিতি করে ভারতের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা ও হত্যা করা। গরুর গোশত ফ্রিজে রাখার অপরাধে, গরু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার কারণে, গরুর গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি কারণে ভারতে মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে ও আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে ছয় হাজার ৯৩৩টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তিন হাজার ৯৯৯ জন সহিংসতার ঘটনায় মারা গেছে। অথচ গরুর গোশত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে পঞ্চম স্থানে। ২০২২-২৩ সালে ভারতে মোট গোশতের উৎপাদন ৯.৭৭ মিলিয়ন টন। ভারতের সবচেয়ে বেশি গোশত উৎপাদনকারী রাজ্য হলো- মহারাষ্ট্র ১২.২৫, উত্তর প্রদেশ ১২.১৪, পশ্চিমবঙ্গ ১১.৬৩, অন্ধ্র প্রদেশ ১১.০৪ এবং তেলেঙ্গানা ১০.৮২ শতাংশ। অরুনাচল প্রদেশ, কেরালা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে গোশতবিরোধী কোনো আইন নেই। অরুনাচলের পাহাড়ি বাসিন্দারা চলতি সপ্তাহে আন্দোলনে নেমে স্লেগান দিচ্ছে, ‘গো মাতা নেহি, গাই হে।’

বাংলাদেশের প্রশাসনকে আরো গতিশীল করার জন্য এবং জনমানুষের আরো কাছাকাছি আনার জন্য এ দেশকে পাঁচটি প্রদেশ করার অভিমত দেয়া হয়েছে। জনৈক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে দু’টি করে চারটি প্রদেশ ও বৃহত্তর ঢাকা নিয়ে আরেকটি প্রদেশ।’ বিষয়টি বঙ্গভূমি আন্দোলন নিয়ে বিশ্লেষণযোগ্য। পশ্চিমে বরিশাল ও খুলনাকে বঙ্গসেনারা এমনিতে স্বাধীন বঙ্গভূমি করার পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দেয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে, এরকম পরিস্থিতিতে প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু হলে সে আন্দোলন আরো বেগবান হবে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখব সেখানেও প্রদেশ রয়েছে তবে একটি প্রদেশের ভাষা, সংস্কৃতি, লেখাপড়ার পাঠ্যপুস্তক, পোশাক পরিচ্ছদে ভিন্নতা রয়েছে। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব বা গিলগিট বালটিস্তান এক প্রদেশের সাথে অন্য প্রদেশের ভিন্নতা এমনকি শত্রুতাও বিরাজমান। ভারতের অমৃতসর, জম্মু-কাশ্মির, লাক্ষাদ্বীপ ও লাদাখ পরিবেশের সব নিয়ামক ভিন্ন। চীনের ফুজিয়ান, গুয়াংডং, হাইনান, সিচুয়ান ও ইউনান প্রদেশগুলোতে রয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা। মিয়ানমারে কাচিন, চিন, কারেন, রাখাইন, শান প্রদেশ ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন হওয়ায় প্রাদেশিক চিন্তাধারা ও প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনায় প্রাদেশিক ধারণা সহায়ক। কিন্তু বাংলাদেশে এরকম কোনো ভিন্নতা না থাকায় প্রশাসন আরো ভারাক্রান্ত হবে। প্রসঙ্গক্রমে, উপজেলা পরিষদে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। বহু বছর ধরে তারা অভিযোগ করে আসছেন যে তাদের কোনো কাজ নেই, কোনো কাজ দেয়া হয় না। বর্তমানে যেমন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাজের পরিধি কম সরকারি সুযোগ সুবিধা বেশি, প্রদেশের বেলায়ও তেমনই হবে- এটি ধারণা করা যায়। এগুলো তাই জরুরি বিষয় নয়। এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে বিদেশী চাপ, ইসলামোফোবিয়া থেকে রক্ষা করা এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো চিহ্নিত করে আশু করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement