অবশেষে স্বস্তি। ফুরালো অপেক্ষা। খরা কাটিয়ে পেল পূর্ণতা, টানা চার ওয়ানডে সিরিজ হারের পর জয়ের দেখা। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজ হারালো ২-১ ব্যবধানে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম দুই ম্যাচ শেষে ১-১ সমতা থাকায় এই ম্যাচটা রূপ নেয় অলিখিত ফাইনালে। যেখানে শেষ হাসি বাংলাদেশের।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ১৭৯ রানের রেকর্ড রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৯৬ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। জবাবে ক্যারিবীয়রা গুটিয়ে গেছে ৩০.১ ওভারে মাত্র ১১৭ রানে।
যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহৎ জয়। এই ফরম্যাটে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টা ১৮৩ রানের। সিলেটে আয়ারল্যান্ডকে ২০২৩ সালে এই ব্যবধানে হারিয়েছিল স্বাগতিকরা।
২৯৬ রান হোম অব ক্রিকেটে গত ৭ বছরের মাঝে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। ২০১৮ সালে শেষবার মিরপুরে এতো রান দেখেছিল দল। এছাড়া ১০ ম্যাচ পর ওয়ানডেতে আড়াই শতাধিক রান করলো বাংলাদেশ।
বড় রানের পুঁজি পাবার পর বাকি কাজটা ছিল বোলারদের। যে কাজটা ঠিকঠাক করছেন নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেনরা। মাথা উঁচু করে সফরকারীদের দাঁড়াতেই দেননি তারা।
৪.৪ ওভারে ১৬ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসুম, অ্যালিক আথানেজ ফেরেন ২১ বলে ১৫ রান করে। পরের দুই উইকেটও তার। ৭ম ওভারে এসে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরান আকিম অগাস্টেকে (০)।
পরের উইকেট তুলে নেন ৮.২ ওভারে, দলীয় ৩৫ রানে। আরেক ওপেনার ব্র্যান্ডন কিংকে বোল্ড করে দেন তিনি। ১৭ বলে ১৮ রান করেন কিং। পরের শিকারী তানভীর ইসলাম। ক্যারিবীয় অধিনায়ককে ফেরান তিনি।
শাইহোপকে থিতু হবার সুযোগ দেননি তানভীর, ১৬ বলে ৪ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। ১৩.১ ওভারে ৪ উইকেট হারানোর পর শেরফানে রাদারফোর্ড ও কেসি কার্থি হাল ধরার চেষ্টা করেন। তবে জুটি বড় হতে দেননি রিশাদ।
একই ওভারে জোড়া আঘাত করেন তিনি। প্রথমে রাদারফোর্ডকে ১২ রানে মিরাজের ক্যাচ বানানোর পর ফেরান রোস্টন চেজকেও (০)। ৬৩ রানে ৬ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪ রান যোগ হতে ফেরেন কার্থি।
৪৩ বল খেলে ১৫ রান করে তানভীরের শিকার তিনি। ৮২ রানে গুদাকেশ মোতিকে (৭) ফেরান রিশাদ। যা সিরিজে তার ১২তম উইকেট। শেষ ২ উইকেট নেন মেহেদী মিরাজ। জাস্টিন গ্রিভস ১৫ ও আকিল হোসেন আউট হন ১৭ রানে।
এর আগে রেকর্ড গড়া জুটিতে জয়ের সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার আর সাইফ হাসান। তাদের বদৌলতে কোনো উইকেট না হারিয়েই ২৫ ওভারে ১৭৬ রান তোলে বাংলাদেশ। যা ওয়ানডে ওপেনিং জুটিতে দেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি।
তবে এরপরও তিন শ’ পেরোতে পারেনি টাইগারা। পরের ২৫ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে এসেছে ১২০। এক ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বড় বাঁধ সাধেন আকিল হোসেন। তাতে ৩ উইকেটে ২৫২ থেকে মাত্র ৯ রান যোগ করতেই আরো ৪ উইকেট হারায় দল।
মিরপুরের জুজু কাটিয়ে আজ নতুন রূপে দেখা দেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। সিরিজ জেতার মিশনে দারুণ শুরু এনে দেন দলকে। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে খেলতে থাকেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে।
শুরুটা করেছিলেন সাইফ, তবে সেই পথ ধরে এগিয়ে গেছে সৌম্যও। ৮ ওভারেই ৬০ রানে পৌঁছায় দল। তাতে ৭ বছর ১০ মাস পর মিরপুরে ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটি পেরোয় ৫০ রানের গণ্ডি। এরপর আর পেছনে ফেরেননি তারা।
এদিকে ৪৮ বলে ফিফটি তুলে নেন সৌম্য। আর ৪৪ বলে প্রথম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন সাইফও। তবে ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেয়া হয়নি তার। আটকে গেছেন ৬ চার ও ৬ ছক্কায় ৭২ বলে ৮০ রান করে।
২৫.২ ওভারে তার বিদায়ে ১৭৬ রানে ভাঙে জুটি। তবে এটিই ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। সর্বোচ্চ রানের জুটি তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের (২৯২)। আজকের জুটিতে হয়েছে আরো কিছু রেকর্ড।
ওয়ানডেতে মিরপুরে শেষবার শতরানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিল বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ১১ নভেম্বর। সেবার ১৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস।
অন্যদিকে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের শেষ সেঞ্চুরি ছিল ২০২৩ সালের মার্চে। তামিম ইকবাল ও লিটন দাস মিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ১০২ রান। এরপর ৩১ মাস আর ৪৫ ইনিংসে তিন অঙ্কের দেখা পায়নি উদ্বোধনী জুটি।
এদিকে ইনিংসটাকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেয়া হয়নি সৌম্য সরকারেরও। সঙ্গী হারিয়ে ধাক্কা খাওয়া সৌম্য ৮৬ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৯১ রান করে ২৮.১ ওভারে উইকেট দেন আকিলকে। ১৮১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর কমে আসে রানের গতি। পরের ৭০ বলে ৫০ রান যোগ করেন তাওহীদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। হৃদয় আউট হন ৪৪ বলে ২৮ করে। শান্ত কিছুটা ভালো খেললেও ৫৫ বলে ৪৪ রানের বেশি করা হয়নি।
এরপর একই ওভারে মাহিদুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদকে ফেরান আকিল। তাদের কেউ দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। তবে শেষ ২৪ বলে ৩৫ রান তুলে দলকে তিন শ’র কাছাকাছি পৌঁছে দেন মিরাজ ও সোহান।
নুরুল হাসান সোহান ৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন, মেহেদী মিরাজ শেষ বলে আউট হন ১৭ বলে ১৭ রান করে। আকিল হোসেন ৪ ও অ্যালিক আথানেজ নেন ২ উইকেট।
সব মিলিয়ে টানা চার ওয়ানডে সিরিজ হারের পর সিরিজ জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।



