রিজওয়ানের অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয়া হলো যে কারণে

সাবেক অধিনায়কের বিস্ফোরক মন্তব্য

পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে একটি কারণ উল্লেখ করেছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
পাকিস্তান ওয়ানডে দলের বর্তমান ও সাবেক অধিনায়ক
পাকিস্তান ওয়ানডে দলের বর্তমান ও সাবেক অধিনায়ক |সংগৃহীত

উইকেটকিপার ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সরিয়ে পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক করেছে পাকিস্তান।

সোমবার (২০ অক্টোবর) নানা নাটকীয়তার পর এই সিদ্ধান্ত জানায় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

কিন্তু কেন মোহাম্মদ রিজওয়ানকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হলো সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেনি পিসিবি। তবে, পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে একটি কারণ উল্লেখ করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিসিবির একটি সূত্রে ডন জানিয়েছে, মূলত প্রধান কোচ মাইক হেসন ও নির্বাচক কমিটির সাথে মতপার্থক্যই মোহাম্মদ রিজওয়ানের অধিনায়কত্ব হারানোর প্রধান কারণ।

সংবাদমাধ্যমটি ওই সূত্রের বরাতে আরো জানায়, দল নির্বাচনে মোহাম্মদ রিজওয়ান আরো বেশি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। ওয়ানডে দল নির্বাচনে অধিনায়কের সাথে কোচ ও নির্বাচক কমিটির মধ্যে এই মতভিন্নতা দেখা দেয়। এরপরই প্রধান কোচ মাইক হেসন রিজওয়ানকে সরানোর উদ্যোগ নেন।

সূত্রমতে- এরপর নির্বাচক কমিটিও কোচের সাথে একমত হয় এবং অবশেষে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সরিয়ে দেয় তারা। এমন পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ রিজওয়ান আগামীতে ওয়ানডে দলে থাকবেন কিনা, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে, মোহাম্মদ রিজওয়ানকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ। তিনি দাবি করেছেন, ‘সম্পূর্ণ ধর্মীয় কারণে মাইক হেসন রিজওয়ানকে সরিয়ে দিলেন। খেলা সংক্রান্ত কারণে তাকে সরানো হয়নি।’

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে লতিফ বলেন, ‘শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে তুলে নেয়ায় রিজওয়ানকে সরিয়ে দেয়া হলো।’

লতিফের দাবি, দলের মধ্যে রিজওয়ান এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে চাইছিলেন যেখানে ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে। সেটাই নাকি পছন্দ হয়নি হেসনের।

লতিফ বলেন, ‘হেসনই অধিনায়ক বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাকিস্তানের সাজঘরে রিজওয়ান যে সংস্কৃতি নিয়ে আসতে চাইছিল সেটা তার পছন্দ ছিল না। কেন সেটা কেউ বুঝতে পারছে না?’

আগে একাধিকবার প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন রিজওয়ান। ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া জয় ফিলিস্তিনের মানুষদের উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। পাকিস্তান সুপার লিগে তার দল মুলতান সুলতান ফিলিস্তিনের মানুষদের আর্থিক সাহায্য করেছিল। সেই বিষয়কেই তুলে এনেছেন লতিফ। তবে, সাবেক এই অধিনায়কের কথা কতটুকু সঠিক, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

মোহাম্মদ রিজওয়ান থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয়ায় রশিদ লতিফের মতো ক্ষুব্ধ সাবেক পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমিরও। রিজওয়ানের সাথে অন্যায় করা হয়েছে বলে মনে করেন আমির, ‘আমি মনে করি না যে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা হয়েছে। সে তো কোনো বাজে ওয়ানডে অধিনায়ক ছিল না।”

রিজওয়ানের নেতৃত্বে বড় দুই দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমির বলেন, ‘রিজওয়ান দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতিয়েছে — এমন কৃতিত্ব তো আমাদের অনেক বড় বড় অধিনায়কও অর্জন করতে পারেননি। এসব আমরা ভুলে গেলে চলবে না।’

রিজওয়ান পাকিস্তানের হয়ে ২০টি ওয়ানডে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। এর মধ্যে তার নেতৃত্বে ৯টি জয়ের বিপরীতে দল হেরেছে ১১টিতে, জয় শতাংশ ৪৫। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর, অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবুয়ের সফরের আগে তাকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

অবশ্য টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি রিজওয়ান। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান চারটি ম্যাচ হারের পর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। নিউজিল্যান্ড সফরের আগে রিজওয়ানের জায়গায় অলরাউন্ডার সালমান আলি আগাকে অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয় পাকিস্তান।

গত বছর রিজওয়ানের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও এ বছর পারফরম্যান্স অনেকটাই নিম্নগামী। বিশেষ করে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম পর্বেই ছিটকে যাওয়াটা বড় ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

তবে বারবার অধিনায়কত্ব পরিবর্তন আনা মোটেও ভালো কিছু নয় বলছেন আমির, ‘অধিনায়কত্ব এক সিরিজ ভালো বা খারাপ হলেই মাপা উচিৎ নয়। আমরা সবাই সাবেক খেলোয়াড়, বিশ্লেষক— এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। আমরা আমাদের ক্রিকেটে স্থিতিশীলতা রাখতে দিই না।’

আমির আরো বলেন, একজন অধিনায়ক রাতারাতি তৈরি হয় না। একজনকে প্রস্তুত করতে দুই-তিন বছর সময় লাগে। কিন্তু এখানে এক সিরিজ খারাপ গেলেই তাকে বদলে দেয়া হয়। আমি মনে করি না এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। রিজওয়ান একজন স্মার্ট অধিনায়ক, তার মধ্যে নেতৃত্বের স্বাভাবিক গুণ আছে।’

রিজওয়ানের জায়াগায় শাহীনকে অধিনায়ক করার প্রসঙ্গে আমির বলেন, ‘যদি শাহীনকে অধিনায়ক করতেই হতো, তাহলে তাকে আগে সহ-অধিনায়ক বানানো যেত এবং সেখান থেকে বিচার করা যেত সে কেমন করছে। বিশেষ করে ওর ফিটনেস বিবেচনায় রেখে।’

পাকিস্তানের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হিসেবে শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রথম পরীক্ষা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজ। আগামী ৪ নভেম্বর হবে সিরিজের প্রথম ম্যাচ।