১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সালাহউদ্দিনের সময়ে সাফল্য-ব্যর্থতা

সালাহউদ্দিনের সময়ে সাফল্য-ব্যর্থতা -


খেলোয়াড়ী জীবন শেষে কোচিং পেশায়। ক্লাব ফুটবল ও জাতীয় দলের কোচ। সেই কাজী সালাহউদ্দিন মাঝে ফুটবল থেকে দূরে থাকলেও ২০০৩ সালের বাফুফের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাথে ছিলেন জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানও। তখন আমিরুল ইসলাম বাবুকে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার করা নিয়ে তৎকালীন বাফুফে সভাপতি এস এ সুলতানের সাথে বিরোধে জড়ান সালাহউদ্দিন। শেষে বাফুফে ছেড়ে চলে যান। পরে ২০০৮ সালের বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করে স্রোতের বিপরীতে পাশ করেন অপর প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব:) আমিন আহমেদ চৌধুরীকে হারিয়ে। সেই যে শুরু সভাপতি পদে থাকা সেই মিশনের অবসান হতে যাচ্ছে ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে তিনি প্রথমে ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সভাপতি পদে। কিন্তু কাল হঠাৎ বাফুফে ভবনে এসে সংবাদ সম্মেলনে করে জানান দেন, তিনি এবারের নির্বাচনে লড়বেন না। ফলে সালাহউদ্দিন আমলের অবসান হতে যাচ্ছে ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে তিনি এখনো সাফের সভাপতি।
বাফুফের চারবারের সভাপতি থাকাকালীন ১৬ বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে সাফল্য এবং ব্যর্থতা আছে। বিতর্কেও জড়িয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ ও অধিনায়ক। বাংলাদেশের প্রথম পেশাদারী ফুটবলার হিসেবে হংকং লিগে খেলা এই ফুটবলার বাফুফের সভাপতি থাকার সময়ে বাংলাদেশ সাফের সব শিরোপা জিতলেও সিনিয়র পুরুষ সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বাংলাদেশ কলম্বো এবং মালে সাফে অংশ নেয়। তবে ২০০৫ সালের সাফের ফাইনালে খেলা বাংলাদেশ দল সেই আসরে কোনো ম্যাচ না জিতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।

অবশ্য এরপর ২০১০ সালে ঢাকা এস এ গেমস ফুটবলে বাংলাদেশ দল পুরুষ ফুটবলে স্বর্ণ পদক পুনরুদ্ধার করে। এরপর অবশ্য সেই স্বর্ণ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এসএ গেমসে পরে বাংলাদেশ ব্রোঞ্জ পদক জিতলেও সাফের ফাইনালে আর খেলতে পারেনি। ২০০৯ সালে ঢাকা সাফ ফুটবলের সেমিতে ভারতের কাছে হার। এরপর ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৮ সাফের গ্রুপ পর্বেই বিদায়। ২০২১ সাফে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়া লিগ পর্বের আসর শেষে। অবশেষে ২০২৩ সালের সাফে বাংলাদেশ সেমিতে খেলার সুযোগ পায়। আর সর্বশেষ ফিফা প্রীতিম্যাচে ভুটানের কাছে হার। এই ভুটানের কাছে ২০১৬ সালেও এশিয়ান কাপ বাছাই প্লে-অফে এই থিম্পুর মাঠে ১-৩ গোলে হেরেছিল। সালাহউদ্দিনের সময়ে ভুটানের কাছে সিনিয়র দলের দুই দফা হার। রয়েছে বয়সভিত্তিক আসরেও এই দুর্বল দলটির কাছে একাধিক হার। তার সময়ে বাংলাদেশ এএফসির পুরুষদের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে একটিবারের জন্যও চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেনি। তবে অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা দল দুইবার এএফসির টুর্নামেন্টের ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছিল। যদিও সর্বশেষ গত বছর সেটাও পারেনি।

এই মহিলা ফুটবলে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে কাজী সালাহউদ্দিনের সময়ে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো মহিলা সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়। যে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার মিশন এবার। এছাড়া অনূর্ধ্ব-১৫ দল, অনূর্ধ্ব-১৬ দল, অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও অনূর্ধ্ব-২০ দল মহিলা সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-২০ পুরুষ সাফে বাংলাদেশ শিরোপা জিতেছে। যে ট্রফি এত দিন ধরা দিচ্ছিল না। অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৫ পুুরুষ দল একবার করে সাফে শিরোপায় হাত লাগিয়েছে তার সময়ে।
তবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তার সময়ে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ জেতেনি। জয় শুধু বিশ্বকাপ বাছাই প্লে-অফে। মালদ্বীপ, লাওস, পাকিস্তান ও লেবাননের বিপক্ষে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ বাছাই প্লে-অফে ঢাকার মাঠে লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশের এবং ২০১০ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের চূড়ান্ত পর্বে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে জয় সালাহউদ্দিনের সময় বড় প্রাপ্তি।
তার সময়ে ঘরোয়া লিগ নিয়মিত হয়েছে। তা জুনিয়র ও সিনিয়র এবং বিপিএল পর্যন্ত। তবে জেলা লিগ চেষ্টা করেও নিয়মিত করতে পারেননি। গতকাল তিনি অবশ্য জেলাগুলোকে প্রতিশ্রুত ফল দেয়ার ঘোষণা দেন। কারণ তিনি সেই ফুটবল জোগাড় করেছেন।
তবে ২০১৯ এসএ গেমসে মহিলা ফুটবল দলকে নেপাল পাঠাতে না পারা গত বছর মহিলা দলকে অলিম্পিক বাছাই ফুটবলে অংশ নিতে মিয়ানমার পাঠাতে না পারাটা ব্যর্থতা। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ দলকে এএফসির আসর খেলতে কিরগিজিস্তান পাঠাতে পারেননি।
জানা গেছে, নানা কারণেই এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না সালাহউদ্দিন। এর একটি হলো তার পরিবার চাচ্ছে না তিনি যেন নির্বাচনে অংশ না নেন। একটি সূত্র জানিয়েছে তা।

 


আরো সংবাদ



premium cement