১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

সেঞ্চুরি টেস্টের অপেক্ষায় মুশফিক

সেঞ্চুরি টেস্টের অপেক্ষায় মুশফিক -


হাবিবুল বাশার সুমন একসময় বলেছিলেন, ‘মুশফিক কিন্তু এক শ’ টেস্ট খেলতে পারে।’ এই বাশারের নেতৃত্বেই ২০০৫ সালে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। দেশের জার্সিতে ২০০৮ সালে বাশার প্রথম খেলেছিলেন পঞ্চাশতম টেস্ট। ২০০৯ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের পর মুশফিক পঞ্চাশতম টেস্ট খেলেন ২০০৬ সালে।
লর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ধীরগতির সেই বাহনে চড়ে তিনি পৌঁছে গেছেন নব্বইয়ের ঘরে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটের হিসাবে লাল বলের ক্রিকেটে নব্বইয়ের ঘর ছুঁলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টটি তাকে নিয়ে গেছে সেই গন্তব্যে। টেস্ট ক্রিকেটে নিবেদিতপ্রাণ মুশফিক। তিনি মেধা, প্রজ্ঞা, নিবেদন, সততার এক দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন।

আগে মাঠে এসে মুশফিকের অনুশীলনের চিত্র নতুন নয়। আবার দল মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছে মুশফিক তখনও অনুশীলনে। সেটিও অনেকবার দেখেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। অনুশীলনে বেশি জোর দেন বলেই ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাস পান। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই তার ব্যাটে রানের ফুলঝুরি। জাতীয় দলের সূচি থাকুক বা না থাকুক, মুশফিক মাঠে থাকেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন অনুশীলনে। ফিটনেস নিয়ে প্রচুর কাজ করেন। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামই যেন ঘরবাড়ি। পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, উদ্যম, সবই যেন মুশফিকের বিশেষণ। বয়স আর ক্যারিয়ার বাড়ার সাথে সাথে সেই আলোয় এখন ঔজ্জ্বলতা বাড়ছে। নামের পাশে যুক্ত হয়েছে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল।’

২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখে বাংলাদেশ। এরপর পেরিয়ে গেছে ২৪ বছর। বাংলাদেশ খেলেছে ১৪৪টি টেস্ট; কিন্তু এখনো কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেটার ছুঁতে পারেননি ১০০তম টেস্টের মাইলফলক। নব্বইয়ের ঘরে প্রবেশ করা মুশফিকের সামনে সুযোগ রয়েছে তিন অঙ্কের মাইলফলক ছোঁয়ার। নিজের নাম তোলারও সুযোগ রয়েছে রেকর্ড বুকে। এ জন্য প্রয়োজন আরো ১০ টেস্ট। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই টেস্ট সিরিজ শেষে মুশফিক এ বছরই ৬ টেস্ট খেলার সুযোগ পাবেন। ভারতরে বিপক্ষে সেপ্টেম্বরেই রয়েছে দুই টেস্ট। এরপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে বাংলাদেশ। তার খেলার সুযোগ রয়েছে আরো ২ টেস্ট। বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখানে খেলবে আরো ২ টেস্ট। শতভাগ ফিট থাকলে এ বছরই মুশফিক আরো ৬ টেস্ট খেলার সুযোগ পাবেন।

অবশ্য পরের ৪ টেস্ট খেলার জন্য মুশফিককে অপেক্ষা করতে হবে লম্বা সময়। আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে ২০২৫ সালের জুন-জুলাইয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা সফর করবে। সেখানে ২ টেস্ট খেলবে। এরপর বছরের শেষ দিকে আয়ারল্যান্ড সফরে রয়েছে আরো ২ টেস্ট। তবে ২ টেস্ট আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২ টেস্ট আগামী সফর শিফট করেছে। ওই ২ টেস্ট কবে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। সব সূচি ঠিক হলে আগামী বছরই মুশফিকের শততম টেস্ট খেলার সম্ভাবনা প্রবল।

৫ হাজার ৮৯২ রান নিয়ে বাংলাদেশের সবার চেয়ে এগিয়ে মুশফিক। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ৬ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে তার প্রয়োজন ১০৮ রান। ৩৯.১১ গড় ও ৪৮.২৯ স্ট্রাইক রেটে ৮৯ ম্যাচে ১৬৪ ইনিংসে মুশফিক এই রান করেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এতটা লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে টিকে থাকা, পারফর্ম করা এবং রেকর্ডের মালা পরা সব কিছুই কঠিন। কঠিন এই কাজটা মুশফিক শতভাগ একাগ্রতা দিয়েই করছেন। সামনে আরো বড় কিছুর অপেক্ষা।
হাবিবুল বাশার বিশ্বাস করেন মুশফিক পারবেন, ‘মুশফিক ১০০ টেস্টও খেলতে পারে। ওর ফিটনেস, সামর্থ্য, প্রতিজ্ঞা- সবকিছুই ওর পক্ষে। সুযোগ আছে সবার আগে রেকর্ডটা নিজের করে নেয়ার।’

৯০ টেস্ট, ১৬৬ ইনিংস
৫৮৯২ রান, সর্বোচ্চ ২১৯*
গড় ৩৯.০১, স্ট্রাইক রেট ৪৮.২৫
সেঞ্চুরি ১১, হাফসেঞ্চুরি ২৭
বাউন্ডারি ৬৯৬, ছক্কা ৩৫,
নট আউট ১৫


আরো সংবাদ



premium cement