১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এক লরেঞ্জোতে বদলে যাওয়া কলম্বিয়া

-

ইতালি কিম্বা আর্জেন্টিনা এই দলগুলো লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অপরাজিত থাকলে বিশ্ব মিডিয়ায় খবর হয়। এমন অর্জন কলম্বিয়ার মতো দল করলে কয়জনই আর খবর রাখে। সেই কাজটিই করে চলেছে ল্যাতিন আমেরিকার এই দেশটি। যাদের দখলে বিশ্বকাপে সেরা অর্জন কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলা, যাদের ভাণ্ডারে আছে একটি মাত্র কোপা আমেরিকার ট্রফি তারাই গত ২৮ ম্যাচে অপরাজিত। ঈর্ষণীয় এই সাফল্যের সূত্রধরেই তারা এবারের দক্ষিণ আমেরিকা কাপ বা কোপা আমেরিকার ফাইনালে। সোমবার সকালে তারা এই শিরোপা পুনরুদ্ধারে নামবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। রেনে হিগুইতা, কার্লোস ভালদেরামাদের দেশের এই সাফল্যের নেপথ্যে এক আর্জেন্টাইন কোচ। তিনি নেস্টর আলবার্ট লরেঞ্জো। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৯০ এর ফাইনালে খেলা সাবেক এই ডিফেন্ডারের ছোঁয়াতেই টানা অপরাজিত কলম্বিয়া। এখন সেই ধারা পরের ম্যাচেও অব্যাহত থাকলে ২৩ বছর পর কোপা আমেরিকা জেতা হবে মাদক উৎপাদনের জন্য কুখ্যাত এই দেশটির। ভিন্ন কিছু হলেই লিওনেল মেসিদের আরেকটি শিরোপা উৎসব।
এক সময় ব্রাজিলের কোচরা দেশ ও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য দেশের সাফল্যের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে যেতেন। এখন তা আর্জেন্টিনার কোচদের দখলে। এবারের কোপা আমেরিকার সেমিতে খেলা চারদলের মধ্যে তিনটিরই কোচ আর্জেন্টিনার। উরুগুয়ের কোচ আর্জেন্টিনার ২০০২ বিশ্বকাপের কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। আর কলম্বিয়ার কোচ লরেঞ্জো। কলম্বিয়ার ফুটবলে আর্জেন্টিনার কোচদের প্রভাব বেশ পুরনো। দেশটি একবারই বিশ্বকপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তাদের শেষ আটে নিয়ে যান আর্জেন্টিনার বিখ্যাত কোচ হোসে লুইস পেকারম্যান। এই পেকারম্যান যুব ফুটবলে আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করান। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন তিনি। এই পেকারম্যান যখন কলম্বিয়ার হেড কোচ তখন লরেঞ্জো ছিলেন তার সহকারী। ২০১৮ বিশ্বকাপের পর কলম্বিয়ার কোচের দায়িত্ব ছাড়েন পেকারম্যান। লরেঞ্জোকেও চলে আসতে হয়। এরপর কলম্বিয়ার ফুটবল কর্তৃপক্ষ নিজ দেশের কোচ রেইনালেদো রুইদাকেকে দায়িত্ব দেন। তবে তিনি দলকে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করাতে পারেননি। তাই তাকে বাদ দিয়ে ২০২২ এর জুনে নেস্টর লরেঞ্জোকে হেড কোচের পদে নিয়োগ দেয় কলম্বিয়া। কলম্বিয়াই লরেঞ্জোর প্রথম জাতীয় দল।
সাবেক বোকা জুনিয়র্সের এই ফুটবলারের পরশেই বদলে যেতে থাকে কলম্বিয়া। ফলে তাদের বিপক্ষে এখন জিততে ভুলে গেছে প্রতিপক্ষরা। শুধু তাই নয়। তাদের কাছে এখন সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ধরাশায়ী হচ্ছে অনায়াসেই। এ বছর ফিফা প্রস্তুতি ম্যাচে ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ী স্পেনকে ১-০তে হারায়। এবারের কোপার সেমিতে তারা হারিয়েছে ১৯৩০ এবং ১৯৫০ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে। গত বছর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়েছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে। চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানির বিপক্ষে ২০২৩ এ ফিফা প্রীতিম্যাচে ২-০তে জয়। এখন এবার আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারলে সাফল্যের মুকুটে যোগ হবে আরেকটি পালক।
২০২২ সালে সৌদি বিপক্ষে ১-০তে জয় দিয়ে শুরু নেস্টর লরেঞ্জোর দলের। এরপর একে একে ইউরোপ, ল্যাতিন আমেরিকা এবং এশিয়ার দেশগুলোর বিপক্ষে জয় আর ড্রয়ের রেকর্ড। অবশ্য সবমিলিয়ে টানা ৩০ ম্যাচে অপরাজিত কলম্বিয়া। লরেঞ্জোর দায়িত্ব নেয়ার আগে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দেশটির দুই জয় ছিল ভেনিজুয়েলা এবং বলিভিয়ার বিপক্ষে। তাদের সর্বশেষ হার কিন্তু এই আর্জেন্টিনার কাছেই। তা ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। ১-০তে জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কলম্বিয়ার সর্বশেষ জয় ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্বে ২-০তে।
লরেঞ্জো, পেকারম্যানদের আগে ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কলম্বিয়ার কোচ ছিলেন আর্জেন্টিনার কার্লোস বিলার্দো। যদিও তিনি ব্যর্থ হন দলকে কোয়ালিফাই করাতে। পরপরই বিলার্দো আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ এনে দেন।


আরো সংবাদ



premium cement