১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফরাসি সৌরভকে ম্লান করে ফাইনালে তারুণ্যদীপ্ত স্পেন

স্পেন ২-১ ফ্রান্স; (ইয়ামাল, ওলমা) (কোলো মুয়ানি)
-


পুরো স্পটলাইটটি ছিল পরপর দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা ফরাসি কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ১৬ বছরের স্প্যানিশ লামিন ইয়ামালের দিকে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের পুরো আলোই কেড়ে নিয়েছেন স্প্যানিশ উঠতি তারকা ফরোয়ার্ড। তাতে ফ্রান্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে গেছে স্পেন। স্পেন তারুণ্যে ফরাসি সৌরভকে ম্লান করে এক যুগ পর ইউরোর ফাইনালে পৌঁছে গেল স্পেন। এর আগে ২০১২ আসরে ফাইনালে উঠে ইতালিকে হারিয়ে শিরোপাটাও জিতেছিল স্প্যানিশরা। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন ইউরোর ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা ছয় ম্যাচে জয় নিশ্চিত করেছে। রেকর্ড ভঙ্গকারী চতুর্থ শিরোপার পথে তাদের সামনে আর মাত্র একটি ম্যাচ বাকি।

তুলনামূলক রক্ষণাত্মক ইউরো টুর্নামেন্ট দেখা গেলেও সেমিফাইনালে শুরুতেই গোলের উৎসবে মাতে দুই দল। সাথে মাতিয়ে তোলে গ্যালারি। এ ছাড়া ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিতে উঠলেও তখন পর্যন্ত ওপেন-প্লে থেকে কোনো গোল পাচ্ছিল না ফ্রান্স। এ নিয়ে তারা সমালোচনাও হচ্ছিল বেশ। তবে সেমিতে শুরুতেই সেই ডেডলক ভাঙল তারা। ম্যাচের ৮ মিনিটে লিড নেয় রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ও কাতার বিশ্বকাপের রানার্স আপ ফ্রান্স। কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্রসে রান্দাল কোলো মুয়ানির দারুণ হেডে এগিয়ে যায় দিদিয়ের দেশমের দল।
তবে স্পেন কেন আসরের সেরা দল তা বোঝাতে সময় নিল স্রেফ ১২ মিনিটে। ইউরোর ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে লামিনে ইয়ামালের গোলে সমতায় ফিরল স্প্যানিশরা। ম্যাচের ২১ মিনিটে স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতার পাসে ১৭ বছর বয়সের প্রান্তে থাকা ইয়ামাল বাঁ পায়ের মাপা ও দুর্দান্ত এক শটে ফ্রান্স গোলরক্ষক মাইক ম্যাইগন্যানকে দর্শক বানিয়ে জালে বল পাঠান। এর মিনিট চারেক পরেই দারুণ এক গোলে স্পেনের হয়ে ব্যবধান ২-১ করেন দানি ওলমো। এই স্কোরলাইন শত চেষ্টা করেও আর বদলাতে পারেনি এমবাপ্পের ফ্রান্স।

মিউনিখে গোল করে দলের জয়ে অবদান রাখার সঙ্গে ইয়ামাল খেলেছেনও দুর্দান্ত। তার পায়ে বল মানেই যেন দারুণ কিছুর সম্ভাবনা। অ্যাটাকিং থার্ডে ফ্রান্সের জন্য রীতিমতো আতঙ্ক হয়েই ছিলেন এই বার্সেলোনা তারকা। বিপরীতে এই ম্যাচে চোখ ছিল এমবাপ্পের ওপরও। নাক ভাঙার পর গতকাল প্রথমবারের মতো মাস্ক ছাড়াই খেলতে নেমেছিলেন ফ্রান্স অধিনায়ক। আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় যথেষ্ট ভালো খেলেছেন। শুরুতে দলকে এগিয়ে দেয়া গোলের নির্মাতাও ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত হাসি মুখে মাঠ ছাড়তে পারেননি। হতাশা নিয়েই বিদায় নিলেন ইউরোর মঞ্চ থেকে।
ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই নিজেদের লক্ষ্য স্পষ্ট করে দেয় স্পেন। পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি ফ্রান্সও। শুরুতে মিডফিল্ড দখলে রাখার চেষ্টা করে দিদিয়ের দেশমের দল। নিষেধাজ্ঞার কারণে দানি কারভাহাল না থাকায় নাভাসের কাঁধেই ছিল ছিল এমবাপ্পেকে থামানোর দায়িত্ব। ইয়ামালই এখন ইউরোতে ১৬ বছর বয়সে গোল করা একমাত্র ফুটবলার। পাশাপাশি এই গোলে ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হলেন ইয়ামাল (১৬ বছর ৩৬২ দিন)। এর আগে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১৭ বছর ২৩৯ দিনে গোল করেছিলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সম্রাট পেলে।

দুর্দান্ত স্ট্রাইক প্রসঙ্গে ইয়ামাল বলেন, ‘আমি বলটি দারুণ জায়গায় পেয়েছিলাম। ওই সময় খুব বেশি চিন্তা করিনি, শট নিয়েছি। ফাইনালে খেলতে পেরে আমি দারুণ গর্বিত। এসব মুহূর্ত প্রাণভরে উপভোগ করতে চাই।’
ম্যাচের আরেক গোলদাতা ওলমো বলেছেন, ‘শিরোপা হাতে নিতে আর মাত্র এক ধাপ বাকি আছে। আমরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এই দলটি অবিশ্বাস্য। এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল।’
ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যম বলেছেন, ‘স্পেন দুর্দান্ত একটি দল। তারা আবারও তার প্রমাণ দিলো। এমনকি প্রথমে আমরা গোল দিয়েও তা সেটা ধরে রাখতে পারিনি। আমাদের থেকে ভালোভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ স্পেন নিয়ে নিয়েছিল, যে কারণে আমাদের খেলতে সমস্যা হয়েছে। হারের এই দায়ভার আমার। আমি এখানে কোনো যুক্তি খুঁজছি না। কিন্তু যখন আমরা ইউরোর প্রস্তুতি শুরু করি তখন অরেলিয়েন টিচুয়ামেনি, আদ্রিয়েন রাবোয়িত ইনজুরিতে ছিলেন। ডায়ট উপামেকানো তার সেরা ফর্মে ছিলেন না। আমরা প্রত্যাশার চাপ নিতে পারিনি।’

 


আরো সংবাদ



premium cement