০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ফ্রান্সের সামনে স্পেন

ফ্রান্সের সামনে স্পেন -

বিংশ শতাব্দীতে জার্মান ও ইতালিয়ান আধিপত্যের কাছে অনেকটাই ঢাকা পড়ে ছিল ফ্রান্স ও স্পেনের ফুটবল। কিন্তু ধীরে ধীরে সাম্প্রতিক দশকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও সফল দুই ফুটবল পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে ফ্রান্স ও স্পেন। ১৯৮৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জয়ের পর এ পর্যন্ত ১৩টি বিশ্বকাপ ও ইউরোর ফাইনালের মাত্র চারটিতে এই দুই দলের কোনো দল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি। এ সময়ের মধ্যে স্পেন দু’টি ইউরো ও বিশ্বকাপ জিতেছে। অন্য দিকে ফ্রান্স দুইবার বিশ্বকাপ ও ২০০০ সালে একবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুলেছে। আগামী ১৪ জুলাই বার্লিনে ফাইনালে জায়গা করে নেবার পথে বিশ্ব ফুটবলে নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে সফল দুই দল ফ্রান্স ও স্পেন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে একে অপরের মোকাবেলা করবে। বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে আলিয়াঞ্জের এরিনয়ায় ম্যাচটি শুরু হবে আজ দিবাগত রাত ১টায়।
এ পর্যন্ত পাঁচটি ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছে স্পেন ও ফ্রান্স। আজ জিততে পারলে স্পেন রেকর্ড চতুর্থ শিরোপার দিকে একধাপ এগিয়ে যাবে। অন্য দিকে ফ্রান্সের সুযোগ থাকবে স্পেন ও জার্মানির সমান তিন শিরোপা রেকর্ডে ভাগ বসানোর। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ফ্রান্স শুধু একবার বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে পারেনি। ২০২০ ইউরোতে শেষ ষোলতে তারা সুইজারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে হেরে বিদায় নিয়েছিল। ২০১৬ ইউরোতে রানার্স-আপ ছাড়াও ২০১৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ও ২০২২ বিশ্বকাপে রানার্স-আপ শিরোপা জয় করে ফ্রান্স।
সেমিফাইনালে খেলার আগে আক্রমণভাগে যেখানে স্পেনকে এবারের আসরে অন্য কোনো দলই টপকে যেতে পারেনি সেখানে এখনো কোনো গোল হজম না করা ফ্রান্সের জেদি রক্ষণভাগ সবাইকে বিস্মিত করেছে। তরুণ দুই উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামসের উপর ভর করে স্পেন শেষ চারের টিকিট পেয়েছে। ইয়ামাল এখনো পর্যন্ত জালের ঠিকানা খুঁজে পাননি। গোল করতে পারলে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোলের রেকর্ড গড়বেন বার্সেলোনার এই তরুণ তুর্কি। তবে ঠিকই সর্বোচ্চ তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন। বিপরীতে টুর্নামেন্ট ফেবারিট ফ্রান্স শুধু কিলিয়ান এমবাপ্পের উপর আক্রমণে নির্ভর করে শক্তিশালী রক্ষণভাগ নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। গত পাঁচ ম্যাচে ফ্রান্স শুধু এক গোল হজম করেছে, তা-ও আবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে।

স্বাগতিক জার্মানির সাথে সমান ১১ গোল করে এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্পেন। জার্মানিকে কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তের গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলতে এসেছে স্প্যানিশরা। এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছে লা রোজারা। ইউরোর ইতিহাসে পেনাল্টি ছাড়া কোনো দলই পাঁচ এর বেশি ম্যাচে জিততে পারেনি।
কোয়ার্টার ফাইনালে মূল দলে খেলা তিন খেলোয়াড়কে পাচ্ছে না স্পেন। ডিফেন্ডার ডানি কারভাহাল ও রবিন লি নরমান্ড হলুদ কার্ডের কারণে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন। অন্য দিকে পেড্রি হাঁটুর ইনজুরির কারণে ইউরো থেকে ছিটকে গেছেন।
কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করা ফ্রান্স ইউরোর সেমিফাইনালে উঠেছে শুধু শক্তিশালী রক্ষণভাগকে পুঁজি করে। জার্মানির মাটিতে ফরাসি স্ট্রাইকাররা মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। কাতার বিশ্বকাপে আট গোল করা সুপারস্টার এমবাপ্পে এখনো পর্যন্ত জার্মানিতে একটিমাত্র গোল করেছেন পেনাল্টি থেকে। ইউরো ক্যারিয়ারে এমবাপ্পের এটাই প্রথম গোল। ফরাসি কোচ দেশ্যম বলেছেন, ‘আক্রমণভাগ যদি নিজেদের প্রমাণ করে তবে ম্যাচ জয় অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ইউরো কিংবা বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টগুলোতে স্টাইকারদের ব্যর্থতায় খুব বেশি দূর এগোনো যায় না।’
ইউরো ২০২০’তে অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার আঁতোয়ান গ্রিজম্যান ছয় গোল করেছিলেন। একইসাথে দু’টি অ্যাসিস্টও করেছিলেন। কিন্তু জার্মানিতে তাকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্রান্স যদি আজ কোনোমতে জিততে পারে তবে সেটা হবে স্পেনের ক্ষয়প্রাপ্ত রক্ষণভাগের কারণে। নিষেধাজ্ঞার কারণে স্পেনের রক্ষণভাগের এবারের আসরের দুই নির্ভরযোগ্য কাণ্ডারি অভিজ্ঞ ডানি কারভাহাল ও সেন্টার-ব্যাক রবিন লি নরমান্ড সেমিফাইনালে খেলতে পারছেন না। ৩৮ বছর বয়সী জেসুস নাভাস হয়তো কারভাহালের স্থানে ফিরতে পারেন। ফরাসি সুপারস্টার এমবাপ্পেকে আটকাতে অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন রয়েছে।
দুই দলের কোচের মধ্যেও একটি লড়াই দেখতে প্রস্তুত হয়ে আছে ফুটবলপ্রেমীরা। দর্শনের দিক থেকে দুই কোচের ভিন্ন মত থাকলেও লক্ষ্য কিন্তু একটাই, ১৪ জুলাই বার্লিনের ফাইনাল। ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যম ফুটবল ইতিহাসের তৃতীয় ব্যক্তি যিনি খেলোয়াড় ও ম্যানেজার হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়েছেন। শেষ চারটি বড় টুর্নামেন্টের তিনটিতেই তার অধীনে লেস ব্লুজরা ফাইনালে খেলেছে। বিপরীতে স্প্যানিশ কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তে তার দলকে স্বাধীনভাবে ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করেছেন। এমনকি তারা যদি কোনো ভুলও করত- সেটাও তিনি আমলে নিতেন না।

 


আরো সংবাদ



premium cement