যেমন হলো টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন
- জসিম উদ্দিন রানা
- ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০৫
বিশ্বকাপের এবারের আসরে ৭ ম্যাচে ২১.৮৫ ব্যাটিং গড়ে ১৫৩ রান করেন তৌহিদ হৃদয়। যা বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতেই বোঝা যায় চলতি আসরে বাংলাদেশী ব্যাটাররা ছিল কতটা ফর্মহীন। পুরো আসরে দলের বোলাররা কাজটা অনেক সহজ করে দিলেও ব্যাটাররা একের পর এক দলকে করেছে হতাশ। নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শেষে দলের ব্যাটিংয়ের এমন হতশ্রী পারফর্ম সহসা মেনে নিতে না চাইলেও এটাই বাস্তব সত্য। গ্রুপপর্ব ও সুপার এইট মিলিয়ে সাত ম্যাচে তিনটিতে জয় পায় বাংলাদেশ, যার সবগুলোই গ্রুপ পর্বে। শুরু থেকেই অবশ্য পারফর্ম করেছে দলের বোলিং বিভাগ। ৭ ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪টি উইকেট নিয়েছেন রিশাদ হোসেন। যা সুপার এইটের শেষ পর্যন্ত ছিল আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ।
বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ এবং সবশেষ বিশ্বকাপ, তিন জায়গাতেই বাংলাদেশ দলের একটাই মানসিক অশান্তি এবং ছন্দহীন পারফর্ম। প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যখন খেলা হয়েছে, তখন ব্যাটারদের প্রতি সাহায্যটা কম ছিল অবশ্য অন্য দেশগুলোও ভুগেছে। তবে ওখানে বোলারদের একটু সুবিধা ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার পর উইকেট হয়তো কিছুটা ভালো ছিল, তাও বাংলাদেশ তাদের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। ভক্ত-ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল দেখতে পারেনি। কয়েকটা ম্যাচে জেতার কথা ছিল, কিন্তু টাইগার বাহিনী তা পারেনি। বিশেষ করে শেষ ম্যাচটা ১২.১ ওভারে চেজ করার ইন্টেন্ট সবারই ছিল, একটা পর্যায়ে গিয়ে তারা মনে করেছে আর হবে না, তখন সাধারণভাবে জেতার চেষ্টা করেও পারেনি। মোট কথা কোনো পরিকল্পনাই কাজে দেয়নি।
দীর্ঘ এক যাত্রাই ছিল বৈকি! যুক্তরাষ্ট্র সফর দিয়ে শুরু। সেখানে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলে এরপর লম্বা এক বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গত শুক্রবার ঢাকায় ফিরেছে দলটি। ভালো-মন্দের মিশেলে কেটেছে বাংলাদেশের। যেভাবেই হোক, সব মিলিয়ে তিন ম্যাচে জিতেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। নিজেদের ইতিহাসে এক বিশ্বকাপে এত বেশি ম্যাচ কখনোই খেলেনি বাংলাদেশ দল। ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো খেলেছে সুপার এইটে। যদিও সামগ্রিক বিচারে এই সাফল্য নেহায়েত নগণ্য। এক দশক আগে ২০১৪-তে ঘরের মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপের আসর দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন তাসকিনের। তিনিও স্বীকার করেছেন তার এই ১০ বছরের এই ক্যারিয়ারে এত লম্বা সময় ধরে দলের ব্যাটিংয়ের বাজে অবস্থা দেখেননি।
বড় টুর্নামেন্ট নিয়ে বড় দলগুলোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকে। বাংলাদেশের এমন কোনো পরিকল্পনা না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক আকরাম খান, ‘যারা ভালো দল তারা সাধারণত ২-৪ বছরের টার্গেট নিয়ে পরিকল্পনা করে। যেমন বিশ্বকাপ যদি ৫০ ওভারের হয়, ৪ বছর পর কী হবে সেটা নিয়েই আগায়। টি-২০তেও একই বিষয়। এই ফরম্যাট তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য অনেক ভালো। যাদের গতি বেশি, শক্তি-সামর্থ্য আছে তাদের জন্য ভালো। প্রতিটি বড় দল কিন্তু তাদেরই নিচ্ছে।’
আফগানিস্তান ম্যাচে ১২.১ ওভারে রান তাড়া করতে পারেনি। টাইগারদের এই নেতিবাচক মানসিকতা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। আকরাম খানও টাইগারদের এমন মানসিকতায় কষ্ট পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির উদাহরণ দিয়ে আকরাম বলেন ‘অ্যাপ্রোচটা ইতিবাচক থাকতে হয়। আমি হজে ছিলাম, সেখান থেকেই অনেক কষ্টে খেলা দেখে খুবই মর্মাহত আমি। ১৯৯৭ সালে কেনিয়া আমাদের সঙ্গে ১৬৬ রান করেছিল। খেলায় বৃষ্টি হয়েছিল, কার্টেল ওভারে পরিকল্পনায় পরিবর্তন করেছিলাম। রফিককে ওপেনিং করিয়েছি, নান্নু ভাই তিন নম্বরে গেল। ২৭-২৮ বছর আগে আমরা যখন এই পরিকল্পনা করতে পারলাম, তখন এবার সেমিফাইনাল খেলার জন্য কেন পারিনি। আমরা সবসময় ব্যাটার বেশি নিয়ে খেলি, সে দিক থেকেও আমাদের সুবিধা ছিল। কিন্তু কোনো অ্যাপ্রোচই দেখা যায়নি। দেশের মাটিতে ভালো খেলা সম্ভব হলেও দেশের বাইরে সম্ভব হচ্ছে না কেন।’
এবারের বিশ্বকাপে মোট সাতটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে তিন ম্যাচে জয়, বাকি চারটিতেই হার। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারায় শান্তরা। তবে সুপার এইটে কোনো জয় পায়নি। তাই প্রাপ্তি বলতে শুধু এতটুকুই বলা যায় যে, সুপার এইট নিশ্চিত করা। ভক্তরা হতাশ হয়েছেন ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও। বিশেষ করে লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিমরা ছিলেন একেবারেই ছন্দহীন। ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে যেমন ডুবিয়েছেন দলকে। সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয় ও রিশাদ হোসাইন ছাড়া বাকি সবাই বলের চেয়ে কম রান করেছেন।
লিটন কুমার দাস বিশ্বকাপে রানের চেয়ে বল বেশি খরচ করেছেন। ৭ ম্যাচে লিটন খেলেছেন মোট ১৪৯ বল; রান করেছেন মাত্র ১৩৯। চার মেরেছেন মাত্র ১২টি, ছয় মেরেছেন ৩টি। ৪৯ শতাংশ বল তিনি ডট করেছেন। তার স্ট্রাইকরেট মাত্র ৯৩.৩। নাজমুল হোসেন শান্ত ৭ ম্যাচ ১১৭ বলে রান করেছেন মাত্র ১১২। বাউন্ডারি মেরেছেন ৭টি আর ওভার বাউন্ডারি ৫টি। শান্তর স্ট্রাইকরেট মাত্র ৯৫.৭। জাকের আলী অনিক আস্থার প্রতিদান এতটুকুও তিনি দিতে পারেননি। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৪ রান করেছেন জাকের। চার ম্যাচে ৪৬ বলে ৩৫ রান। তার স্ট্রাইকরেট মাত্র ৭৬.১।
তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়ে মাতামাতি কম ছিল না। অথচ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচের তিনটিতেই ডাক মেরেছেন! এক ম্যাচে ৩৫ ও আরেক ম্যাচে ২৯ ছাড়া আর কোনো ম্যাচেই ভালো খেলতে পারেননি ওপেনার। ৭ ম্যাচে ৭৯ বলে করেছে ৭৬। মোট ১১ চারের বিপরীতে মেরেছেন একটি ছক্কা। স্ট্রাইকরেট মাত্র ৯৬.২। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭ ম্যাচে ১০১ বলে রান মাত্র ৯৫। এক ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান ২৫; স্ট্রাইকরেট ৯৪.১। বল হাতে ৯ ওভারে ৫০ রান খরচায় এক উইকেট। সৌম্য সরকার দুই ম্যাচের প্রথমটিতে ডাক পরের ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে ১০ বলে ১০। দুই ম্যাচে ১২ বল খেলে তার রান ১০।
তৌহিদ হৃদয় ৭ ম্যাচে ১১৯ বলের বিপরীতে তার রান ১৫৩। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ করেছেন ৪০ রান। স্ট্রাইকরেট ১২৮.৬। সাকিব আল হাসান ৭ ম্যাচে ১০৪ বলে করেছেন ১১১। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ৬৪। স্ট্রাইকরেট ১০৬.৭। বল হাতে ১৭.২ ওভারে ১৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট পেয়েছেন। তানজিম সাকিব ৭ ম্যাচে ২৪ ওভারে। ৬.২১ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১১ উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে এক বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ব্যাট হাতে ২৩ বলে করেছেন ১২ রান। মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বকাপে ২৬ ওভারে ৫.৪৬ ইকোনমি রেটে নিয়েছে ৮ উইকেট। তাসকিন আহমেদ ৬ ম্যাচে ২১.২ ওভারে ৮ উইকেট নিয়েছেন। ৫ ম্যাচে ৩৩ বল খেলে করেছেন ২৮ রান।
রিশাদ হোসেন ৭ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৪টি। বাংলাদেশের হয়ে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ। ব্যাট হাতে ৬ ম্যাচে ২৬ বলে রান করেছেন ৪০। তার স্ট্রাইকরেট ১৫৩.৮।
এত কিছুর পরও ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে খুশি বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমাদের টার্গেট ছিল সুপার এইটে খেলা। আমরা টার্গেট অ্যাচিভ করতে পেরেছি, তার জন্য সবাই খুশি। টপ অর্ডার টানা ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাটিংয়ে এভাবে ফেইল করতে আমি কখনো দেখিনি। দুর্দান্ত বোলিং করেছে আমাদের পেসার ও স্পিনাররা। বিশেষ করে রিশাদ। ওর জন্য একটা বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল নিজেকে প্রমাণ করার। সব মিলিয়ে এ ওয়ার্ল্ডকাপে আমরা ভালো খেলেছি।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা