০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫
`

সুচী-সাবিরাদের অ্যাথলেটিক্সে ফেরা

-

তিন দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ভেটারান অ্যাথলেটিক্স। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গতকাল শেষ হওয়া এই আসরে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের বয়স্ক ও প্রবীণ অ্যাথলেটরা অংশ নেন। তারা সবাই এক সময় ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড কাঁপিয়েছেন। এখন তাদের মন চললেও শরীর চলে না। কিন্তু প্রায় অচল হতে চলা এই শরীরই তারা চালিয়েছেন স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে। আর এই বয়স্কদের অ্যাথলেটিক্সে এসে পদক জিতেছেন ভারোত্তোলক, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়রাও। বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ও ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উইং কমান্ডার (অব:) মহিউদ্দিন আহমেদ। ৭৭ বছর বয়সে তিনিও অংশ নেন এই আন্তর্জাতিক মিটে। খালি হাতে ফেরেননি তিনিও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাবেক এই পরিচালক তিন হাজার মিটার হাঁটার ব্রোঞ্জ জিতেছেন। সব দেশেরই এমন ষাটোর্ধ্ব ক্রীড়াবিদদের মিলনমেলা বসেছিল ঢাকার বুকের এই মাঠে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্রীড়াবিদই নানান ডিসিপ্লিনে অংশ নেন। তা পদকের জন্য। প্রতিষ্ঠানে চাকরি টিকিয়ে রাখতে। পরে অবশ্য তাদের নির্দিষ্ট একটি ডিসিপ্লিন পছন্দ করতে হয়। এই ভেটারান অ্যাথলেটিক্স শাহরিয়া সুলতানা সুচী, মোল্লা সাবিরা সুলতানা, তাসলিমা তাহের তানিয়ারদের নিয়ে এসেছে ট্র্রাকে। সুচী ও সাবিরা সাবেক জাতীয় ভারোত্তোলক। তানিয়া ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় এবং কাবাডি ও ফুটবলের রেফারি। তবে এদের সবার শুরুটা অ্যাথলেটিক্স দিয়ে। তাই এই ভেটারান অ্যাথলেটিক্স তাদের ফের অ্যাথলেট পরিচয়টা ফিরিয়ে দিয়েছে।
সুচী এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ভারোত্তোলন কোচ হিসেবে চাকরি করছেন। তার মেয়েও ভারোত্তোলক। সুচীর ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পদক আছে। ২০০১ সালে ভারোত্তোলনে যাওয়ার আগে তিনি ছিলেন অ্যাথলেটি। জাতীয় সিনিয়র ও জুনিয়র মিটে অংশ নিয়েছেন। আছে পদকও। সেই স্মৃতিই তাকে ফিরিয়ে এনেছে ট্রাকে। তিনি জিতেছেন শটপুটের স্বর্ন। ৪০০ মিটার দৌড়েও তিনি প্রথম হন।
২০০২ সালে বাংলাদেশ গেমসে শটপুটে চতুর্থ হন সুচী। সুচী জানান, ‘আমি ১০০ মিটার, ২০০মিটার, ৪০০ মিটার, লং জাম্পে, রিলে ইভেন্টে অংশ নিতাম।’ ২০০১ সালে জুনিয়র মিট ও সামার মিটে শট পুটে ব্রোঞ্জ জয় করেন সুচী। ২০০২ সালের বাংলাদেশ গেমসে চতুর্থ হন। অ্যাথলেটিক্সের পাশাপাশি ২০০১ সালে ভারোত্তোলন চর্চা শুরু করেন। এরপর ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের পর্ব চুকিয়ে পুরোপুরি ভারোত্তোলক হন তিনি। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা অ্যাথলেট ছিলেন তিনি।
ভারোত্তোলনে ১৩টি জাতীয় পর্যায়ের স্বর্ণ সুচীর। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের প্রশাসকও তিনি। ২০১২ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জয় করেন। ২০১১ সালে চীনে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড পিক্সে ব্রোঞ্জ আছে তার। সুচী জানান, মূলত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আউটডোর অ্যাথলেটিক্স চর্চা কঠিন ছিল। এর চেয়ে ইনডোরে ভারোত্তোলন প্রশিক্ষণ করাটা সহজ ছিল। তা ছাড়া তখন ভারোত্তোলন নতুন ডিসিপ্লিন হওয়ায় এবং এই খেলাতে চ্যালেঞ্জ কম হওয়াতে এতে জড়িয়ে যাই।
মোল্লা সাবিরা ২০০২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জাতীয় ভারোত্তোলনে স্বর্ণ জয় করেছেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১টি স্বর্ণ, ৫টি রৌপ্য ও ৩ ব্রোঞ্জপদক আছে তার। এসএ গেমসে তার দখলে ছিল দু’টি ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন। সাবিরা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় গেমসে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটারে স্বর্ণ জয় করেন। আর জুনিয়র মিটে একবার ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জয় করেন। এবারের ভেটারান অ্যাথলেটিক্সে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে রৌপ্য জয় করেন তিনি। খেলেছেন আরো কয়েকটি ইভেন্টে।
ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তাসলিমা তাহের তানিয়া। ২০০০ সালের আগে জাতীয় মিটে অংশ নেন। কলেজে পড়ার সময় তানিয়া ১০০ মিটার, ২০০মিটার, হাইজাম্প ও লংজাম্পে লড়তেন। ১৯৯৮ ও ২০০০ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স মিটে অংশ নেন। ইসলামী ইউনিভার্সিটির হয়ে জাতীয় মিটে শটপুটেও প্রতিনিধিত্ব ছিল তানিয়ার। সাথে হ্যান্ডবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতেন। এবারই তিনি প্রথম ১০০ মিটার হার্ডলসে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জয় করেন।
ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদও অংশ নিয়েছেন এবারের মিটে। তিনি ২০০ মিটারে চতুর্থ হলেও তিন হাজার মিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতেছেন। ৭৭ বছর বয়সে শরীরে সাতটি অপারেশনের পরও পদক জিতেছেন তিনি। মহিউদ্দিন জানান, আমি ইন্টার স্কুল, ইন্টার কলেজে ও বিমানবাহিনীতে চাকরি করা অবস্থায় ১০০, ২০০ ও ১৫০০ মিটারে অংশ নিতাম।’ এখন ৭৭ বছর বয়সে পাওয়া এই পদককে জীবনের অন্যতম অর্জন বললেন তিনি। মিটে ৭৮ স্বর্ণ জিতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ কাস্টমস।


আরো সংবাদ



premium cement