৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫
`

শিরোপা জয়ের হুঙ্কার অযৌক্তিক নয়

তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা জানসেনকে অভিনন্দন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের : ক্রিকইনফো -

ইতিবাচক, আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্ববান। এই যদি হয় একটা দলের লক্ষ্য, তা হলে তারা তো পারবেই।
‘আগে কখনো ফাইনাল খেলিনি। কিন্তু আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সত্যিই ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য একটি পরিপূর্ণ দল লাগে।’ এভাবেই কথাগুলো বললেন দলকে ফাইনালে উঠানো প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।
আইসিসির টুর্নামেন্টে যে প্রোটিয়ারা অভিশপ্ত, দুর্দান্ত ক্রিকেট খেললেও যারা নকআউটের জাল ছিঁড়তে পারে না, শেষ চার ধাপ তথা সেমিফাইনালের চৌকাঠ পেরোতে পারে না। ওই দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন অধিনায়ক। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক কিংবদন্তি ব্যর্থ হয়েছেন। কখনো বৃষ্টিতে কপাল পুড়েছে, কখনো নিজেরাই পুড়িয়েছেন কপাল। গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ ডু প্লেসিসদের হাতে বিশ্বকাপ জেতার মতো দল ছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের ওপর ভর করা অভিশাপ যেন মোচন করলেন মার্করাম।
ওয়ানডে ও টি-২০ বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাতবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার দুঃস্মৃতিকে পেছনে ফেলে অবশেষে মেগা ইভেন্টের ফাইনালের টিকিট পেয়েছে চোকার্স খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেই শিরোপা জয়ের হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে গতকাল আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটে হারিয়ে জানালেন, বিশ্বের যেকোনো দলকে হারিয়ে শিরোপা জিততে পারি আমরা। সে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে আমাদের মাঝে।
প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের তোপে পড়ে ১১.৫ ওভারে মাত্র ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। টি-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেমিফাইনাল ম্যাচে এর আগে কখনই এত কম রানে অলআউট হয়নি কোনো দল। ৫৭ রান স্পর্শ করতে ৬৭ বল বাকি রেখে ১ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা।
ফাইনালে উঠেই শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন দক্ষিণ আফ্রিকার দলপতি এইডেন মার্করাম। ‘অবশ্যই অসাধারণ অনুভূতি। সাদা বলের দুই ফরম্যাটে দীর্ঘ দিন ধরেই একসাথে খেলছে এই দলটি। ফাইনালে উঠতে পারাটা দারুণ। আমাদের বিশ্বাস বিশ্বের যেকোনো দলের সাথে লড়াই করতে পারি ও শিরোপা জিততে পারি। সেই সুযোগ সামনে আসায় ভালো লাগছে।’
শুধু গতকালই নয়, পুরো আসরে অসাধারণ বোলিং করেছে প্রোটিয়া বোলাররা। বেশ কিছু ম্যাচে ব্যাটারদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। তবে অবশ্যই কন্ডিশন পক্ষে ছিল। তার পরও সবকিছু ঠিকমতো করেছে বিধায় তাদের প্রশংসা করতেই হবে। সেমিফাইনালে টসে জিতলে নাকি ব্যাটিং নিতেন মার্করাম। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় নাম হয়েও যাদের বিশ্বকাপ শিরোপা অধরা। প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠায় দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররাও ভাসছেন আবেগে। সাবেক প্রোটিয়া পেসার ডেল স্টেইন তার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এখন খুবই আবেগময় সময়। আমরা ফাইনালে।’
সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক স্মিথ পর পর দু’টি পোস্ট দেন, একটিতে লেখেন, ‘আমরা ফাইনালে।’ আরেকটিতে লেখেন, ‘এর চেয়ে বেশি খুশি হতে পারতাম না এইডেন মার্করাম ও তার দলের জন্য। আর কেবল এক ম্যাচ।’
গত সাত বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে হৃদয় ভেঙেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯৯২ বিশ্বকাপে জয়ের পথে ছিল প্রোটিয়ারা। বৃষ্টির পরে কি না ১ বলে ২২ রান; এমন সমীকরণের ফাঁদে পড়ে ইংল্যান্ডের কাছে হারে তারা। ১৯৯৯ আসরে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচ টাই হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিদায় প্রোটিয়াদের। ২০০৭ বিশ্বকাপে তারা হারে অসিদের কাছে। ২০০৯ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তান হারায় তাদের। ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপে হারে ভারতের বিপক্ষে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড। এরপর গত বছর ভারতে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে টেম্বা বাভুমার দল।
মার্করাম ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জিতেছেন। গত বছর ভারতে বাভুমার ইনজুরিতে দুই ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দু’টিতেই জয় পান। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপেও অপরাজিত মার্করামের দক্ষিণ আফ্রিকা। অপেক্ষা শেষ ধাপ পেরোনো। ১০ বছর আগে যে ছেলেটি নিজেকে ইতিবাচক ভাবতেন, সে শুধু ছোটদের বিশ্বকাপই জেতায়নি, বড় হয়ে প্রথমবারের মতো তুলেছে বড়দের বিশ্বকাপের ফাইনালেও। ফাইনালে ওঠার পথে জিতেছে টানা ৮ ম্যাচে।
অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালের আগে প্রায় প্রতি ম্যাচেই অনেকটা হারতে হারতে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শন পোলক, গ্রায়েম স্মিথ কিংবা এবি ডি ভিলিয়ার্সকে পেছনে ফেলে কাজের কাজটা ঠিকই করে দিলেন মার্করাম। দলকে শুধু ফাইনালেই তোলেননি, স্নায়ুযুদ্ধেও জিততে শিখিয়েছেন। মার্করাম এখন পর্যন্ত কোনো পর্যায়ের বিশ্বকাপেই অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ হারেননি! তিনি বিশ্বকাপে মোট ১৬টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন। অপেক্ষা আর মাত্র একটির।


আরো সংবাদ



premium cement