ওয়ানডেতে খেই হারাচ্ছে বাংলাদেশ
- জসিম উদ্দিন রানা
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কিছু মাস আগে ওয়ানডেতে বরাবরই স্বস্তির আশ্রয় ছিল বাংলাদেশ। টেস্ট বা টি-২০তে যেমনই হোক, এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সমীহ করার মতো শক্তি হয়ে উঠেছিল তারা। ধারাবাহিকতা, উন্নতির ছাপ, বিশ্বমানে ওঠার সম্ভাবনা কিংবা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস, সব কিছু এই সংস্করণেই ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ বিশ্বকাপের পর ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি- পরপর দু’টি আইসিসি টুর্নামেন্টে ভয়াবহ বাজে ক্রিকেট খেলে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতেও মিলছে না সাফল্য। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে শক্তিশালী দল হয়ে ওঠার যে আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি আপাতত মিলিয়ে গেছে হাওয়ায়। দিন দিন খেই হারাচ্ছে টাইগাররা।
২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১৪টি। ফল আসেনি তিন ম্যাচে আর পরাজয় ২৬টি। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এত ম্যাচ হারেনি অন্য কোনো দল। জয়-পরাজয়ের অনুপাত বিবেচনায় বাংলাদেশ (০.৫৩৮) শুধু আয়ারল্যান্ডের (০.৫৩৩) উপরে। অথচ টেস্ট ও টি-২০তে বিপরীত চিত্র। টেস্টে গত দুই বছরে ১৪ ম্যাচের ৬টি জিতেছে। পাকিস্তানকে তাদের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করেছে। জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠেও। এ ছাড়া ঘরের মাঠে আছে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি। টি-২০তে ৩৮ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ২২টি।
এ নিয়ে টানা তিনটি আইসিসি ওয়ানডেতে (২০১৯, ২০২৩ বিশ্বকাপ ও ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি) প্রথম পর্ব থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। ২০২৩ সাল থেকে ৯টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে জিতেেছ তিনটিতে। দুটিই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এই সময়ে আফগানিস্তান ও কিউইদের বিপক্ষে দু’টি করে সিরিজ হেরেছে। ঘরের মাঠেও তাদের বিপক্ষে হার। গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফিরতে হয় হোয়াইটওয়াশ হয়ে। উন্নতির ছাপ নেই পারফরম্যান্সেও। ৪৩ ম্যাচে মাত্র ছয়বার তিন শ’ ছুঁতে পেরেছে। গত দুই বছরে ওয়ানডেতে টাইগার ব্যাটারদের সম্মিলিত সেঞ্চুরি আটটি। এর মধ্যে দু’টি করেছেন ওপেনাররা। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯ রান করেন সৌম্য। একই বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ‘মেকশিফট’ ওপেনার হিসেবে ১১২ রান মিরাজ। এর বাইরে লিটন, তানজিদদ, এনামুল হক, নাঈম শেখ, লিটনদের ওপেনিংয়ে হতাশা।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার জানালেন, ‘এখনই বলব না যে, ওয়ানডেতে নিচের দিকে চলে যাচ্ছি। তবে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। ২০২৭ বিশ্বকাপের জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন মুশফিক ও রিয়াদ। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ব্যর্থতার কারণেই এমনটি হয়ে আসছে বলে মনে করেন ওয়াসিম জাফর। ভারতের সাবেক এই ওপেনার বলেছেন, ‘২০১৯ বিশ্বকাপে আমরা শুধু সাকিবকে অসাধারণ পারফর্ম করতে দেখেছি। মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর শট নির্বাচন হতাশাজনক ছিল। মাস্ট উইন ম্যাচে তাদের উচিত ছিল সামনে থেকে নিজেদের প্রমাণ করাতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আইসিসির টুর্নামেন্টে এটিই বাংলাদেশের চিত্র।’
রাওয়ালপিন্ডির পিচ ৩০০ করার মতো ছিল বলে মনে করেন জাফর। বাংলাদেশ-১৯ দলের হয়ে কাজ করা এই ভারতীয় কোচ বলেছেন, ‘তারা এই পিচে সহজেই ৩০০ রানের বেশি করতে পারত। নিজেদের দোষেই তারা পারেনি। বোলিং বিভাগের কাছে একটু বেশিই চাওয়া হয়েছে।’
অন্যরা যখন যুগের চাহিদার সাথে তাল মেলাচ্ছে, বাংলাদেশ তখন খেই হারাচ্ছে। গোটা ক্রিকেট পৃথিবী যেখানে লিফটে চড়ে ওপরে উঠছে, বাংলাদেশ সেখানে সিঁড়ির আশ্রয় নিচ্ছে। ক্রিকেটার থেকে শুরু করে দলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও নেতিবাচক মানসিকতার ধারক হয়ে যাচ্ছেন। ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর ঘটনাও নির্বাচক আবদুর রাজ্জাকের চোখে স্রেফ ‘অ্যাকসিডেন্ট’!
দলের সাধ্যসীমা সেই ২২৮ থেকে ২৩৬-এর মধ্যেই। সাড়ে তিন শ’র দুনিয়ায়ও তারা ১৮১টি ডট বল খেলছেন। বাংলাদেশের সাবেক পারফরম্যান্স পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান অ্যানালিস্ট মহসিন শেখের মতে, ‘এভাবে খেলতে থাকলে বাংলাদেশের দশা জিম্বাবুয়ের মতো হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ দলের এমন বাজে পরিণতির জন্য বোর্ডের অব্যবস্থাপনা, ঘরোয়া কাঠামো ধসে পড়া ও মেধার অবমূল্যায়নকে দায়ী।’
সাবেক কিউই পেসার শেন বন্ড বলেন, ‘বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ ভালো, তাদের গতিময় বোলার আছে, একজন বাঁ হাতি পেসার আছে, যা নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের মতো দলেও নেই। কিন্তু ছোটখাটো ভুলগুলোই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেয়। ক্যাচ মিস ও রানআউট হাতছাড়া করা জয়ের পথে বড় বাধা।’
সাবেক ক্রিকেটার দীনেশ কার্তিক বলেন, ‘বয়সীরা অবসর নিয়ে তরুণদের বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। আপনাদের সত্যিই নতুন মুখের দিকে তাকাতে হবে। তখনই আপনি দল হিসেবে উন্নতি করবেন। একই খেলোয়াড়দের যদি ধরে রাখেন, আপনি হয়তো ঘুরেফিরে একই ফল পাবেন।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা