০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

‘ওরা থাকলে আমি থাকব না’

এবার বাটলারের আলটিমেটাম
‘ওরা থাকলে আমি থাকব না’ -


এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। বাফুফে যাকে দুই বছরের জন্য কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তার বিপক্ষে অবস্থান জাতীয় দলের ক্যাম্পের ১৮ ফুটবলারের। কোচ থাকলে তারা জাতীয় দলেই খেলবে না। প্রয়োজনে গণ-অবসরে যাবে। সাবিনা-মাছুরা, নীলা, মারিয়াদের এই ঘোষণা বাফুফে ভবনে বসেই। বাফুফের ক্যাম্পে থেকে বাফুফের খেয়ে পরে তারা বাফুফের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছে। গণহারে তারা অনুশীলন বয়কট করে চলছে। তবে এবার এই ফুটবলারদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কোচ পিটার বাটলারও। গতকাল বাফুফে ভবনে তিনি জানান, ‘হয় এই ফুটবলাররা থাকবে, না হয় তিনি। এই ফুটবলাররা থাকলে আমি জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করব না।’ ব্রিটিশ কোচটির এই বক্তব্য এমন এক সময় যখন নারী ফুটবলারদের সাথে কোচের দূরত্বের কারন খুঁজতে কাজ করছে বিশেষ কমিটি। যাদের আজই রিপোর্ট দেয়ার কথা বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়ালের কাছে।
পরশু রাতে বিশেষ কমিটির কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন বাটলার। যার অধীনে গত বছর সাফ শিরোপা ধরে রাখেন সাবিনা খাতুনরা। সেই সাফের সময়ই কোচের সাথে দূরত্বের সৃষ্টি কোচ বাটলারের। কোচ একাদশে কয়েকজন সিনিয়রকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে হারের মুখে পড়ে। পরে ছোট শামছান্নাহারের গোলে সমতা। এরপর একে এক ভারত, ভুটান ও নেপালকে হারিয়ে নারী সাফের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা। তবে পাকিস্তানের কাছে ম্যাচের পরই মনিকা চাকমা মিডিয়ার কাছে কোচ বাটলারের সিনিয়রদের উপেক্ষা করার বিষয়টি সামনে আনেন। তখন কাজী সালাহউদ্দিনের মেয়াদের শেষ সময়। বাফুফের নির্বাচনের সময় দরজায় কড়া নাড়ছিল। সেই সময় বাফুফের মহিলা উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরন নিজের নির্বাচনী প্রচারণা বাদ দিয়ে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেন। কোচের সাথে সাবিনাদের দূরত্ব কমাতে টেলি কনফারেন্স করেন কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে। শেষপর্যন্ত নেপাল জয়।
এই সাফল্যে পর বাটলারকে নারী দলের হেড কোচের পদে বহাল না রেখে উপায় ছিল না বাফুফের। সফল এবং হাই প্রোফাইলের কোচকে কিভাবে বাদ দেবে বাফুফে। তাই বাটলারের সাথে দুই বছরের চুক্তি নবায়ন। এতেই বেঁকে বসে সিনিয়র ফুটবলাররা। তাদের সাথী হন কয়েক জুনিয়র ফুটবলারও। মোট ১৮ জন কোচের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জানান দেন, কোচ বাটলার থাকলে তারা গণ-অবসরে যাবে। তবে বাফুফে ফুটবলারদের এই দাবি আমলে নেয়নি। তারা বিকল্প আরো ৩০ ফুটবলারকে ( অনূর্ধ্ব-২০) সিনিয়র দলের ক্যাম্পে ডেকে বাটলারের অধীনে অনুশীলন অব্যাহত রাখে। আর বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলার নিজেদের উদ্যোগে জিম করে ফিট থাকার চেষ্টা করছে।

নেপালে থাকার সময়ই কোচ বাটলার বলেছিলেন, ‘তাদের দেশে (ইংল্যান্ড) হলে এই ভূমিকার জন্য ফুটবলাররা বহিষ্কার হতো।’ তবে বাফুফে সে পথে হাঁটেনি। হয়তো সিনিয়রদের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি তাই।
তবে কোচ বাটলারের এই আলটিমেটাম একেবারেই যৌক্তিক। কোনো ব্যক্তিত্ববান কোচ ফুটবলারদের এমন দাবির সাথে আপস করবেন না। কোচ জানান, ‘আমি নির্দিষ্ট কয়েকজনের নাম দিয়েছি। জানিয়ে দিয়েছি এরা থাকলে আমি কোচিং করাব না। এরা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে। এটা ননসেন্স। বন্ধ হওয়া উচিত এটা।’ জানান, যারা বাফুফে ভবনে থেকে বাফুফের খাবার খেয়ে ভিত্তিহীন কথা বলে তাদের আমি কোচিং করাব না।’
কোচ আরো যোগ করেন, এটা কোনো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নয়। এখানে সমঝোতার কিছু নেই। তারা থাকলে আমি থাকব না। বাংলাদেশ দুইবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন। কয়েকজন নারী বিদেশী লিগে খেলে। আমি ইংলিশ ও ফুটবল সম্পর্কে জানি। যা চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
বাটলার এখন অন্য ৩৩ ফুটবলারকে নিয়ে ভোরে অনুশীলন করান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। যেখানে আছেন সাফজয়ী দলের সদস্য আফেঈদা খন্দকার প্রান্তি, শাহেদা আক্তার রিপা, স্বপ্না রানী, উঠতি তারকা সৌরভী আকন্দ প্রীতিরা।
এ দিকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পাওয়া সুমাইয়া মাতসুমিমা থানায় জিডি করেছেন। সুমাইয়ার সাথে সুর মিলিয়ে বিদ্রোহী ডিফেন্ডার মাছুরাও ফেসবুকে লিখেছেন, এখানে বাংলাদেশে কেউ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ নেয় না। তাদের শুধু দরকার ট্রফি, কৃতিত্ব আরো অনেক কিছু। আমাদের সমস্যা তাদের কাছে মূল্যহীন বা কার্যকর নয়।


আরো সংবাদ



premium cement