০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

অব্যবস্থাপনাতেই শুরু বিপিএল

-


দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি-ভিত্তিক টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। একটি ট্রফি, ৪৬টি ম্যাচ, তিন ভেনুতে সাত দলের লড়াই। সবার চোখে স্বপ্ন শিরোপা। কারো প্রথমবার, কারো একাধিকবার ছুঁয়ে দেখার, কারো নিজের কাছে ধরে রাখার মিশন। ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হয়ে খেলা চলবে ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত। তিন ভেনু মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচগুলো। এক মাসব্যাপী চলা এই আসরের প্রত্যেকটি দলের রয়েছে নিজস্বতা, শক্তি এবং লড়াই করার মানসিকতা। আজ উদ্বোধনী ম্যাচে বেলা দেড়টায় মুখোমুখি হবে দুর্বার রাজশাহী ও ফরচুন বরিশাল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ক্যাপিটালস। সরাসরি দেখাবে টি-স্পোর্টস।
ঢাকা পর্ব থেকে বিপিএল শুরুর পর সিলেটে হবে দ্বিতীয় পর্ব। ৬-১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেটে হবে ১২টি ম্যাচ। এরপর ১৬-২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম পর্বে হবে ১২টি ম্যাচ। বিপিএলের শেষ পর্ব হবে মিরপুরে। ২৬ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিগ পর্বসহ প্লে-অফ ও ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিপিএলকে নতুনভাবে শুরুর লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে যুব উৎসব অনুষ্ঠান, মাসকট উন্মোচন এবং তিনটি ভেনুতে মিউজিক ফেস্টের আয়োজন করেছে বিসিবি।

বিপিএলে এবার সাত দল হলো ঢাকা ক্যাপিটালস, চিটাগং কিংস, দুর্বার রাজশাহী, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স, রংপুর রাইডার্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্স। পুরনো দলের মধ্যে নেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এ ছাড়া বদল হয়েছে ঢাকার মালিকানা। আবার ফিরে এসেছে দুর্বার রাজশাহী। সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসরের স্পন্সরশিপ কিনেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি। ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সব হোম সিরিজের স্বত্বও এই ব্যাংকটির কাছে।
‘ডানা ৩৬’- বিপিএলের অফিসিয়াল মাসকট। প্রথমবার বিপিএলে যুক্ত করা হয় মাসকট। ‘ডানা ৩৬’ মাসকটটি-ডানা বা পাখা প্রসারিত করা একটি ‘সাদা পায়রা’ যা শান্তির প্রতীক এবং প্রতিপাশে ১৮টি করে মোট ৩৬টি রঙিন পালক উপস্থাপন করে ৩৬শে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় স্মৃতি। যা প্রতিটি স্বপ্নবাজ, উদ্যমী, অপ্রতিরোধ্য তরুণকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। ‘ডানা’ শব্দটি পাখা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক।
বিপিএল চলাকালীন ‘শহীদ মুগ্ধ কর্নারে’ বিনামূল্যে পানি পাবেন দর্শকরা। সেখানে থাকা কিউআরকোডের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় জুলাই ফাউন্ডেশনে অনুদানও দিতে পারবেন তারা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও রিসাইক্লিংয়ের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি ভেনুতে থাকবে ‘বর্জ্য-শূন্য’ জোন।
মুখে মুখেই বিপিএলে নতুনত্ব

অনেক আগ থেকে বিপিএলে নতুনত্বের ঘোষণা দেয়া হলেও কার্যত পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটা। জুলাই বিপ্লবে নিহত মুগ্ধর হৃদয় স্পর্শী বাক্য ‘পানি লাগবে পানি’ প্রাধান্য দিয়ে ফ্রিতে পানি পান করাবে বিপিএল কর্তৃপক্ষ। সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে পুষ্টি। তারা স্টেডিয়ামের চার দিকে ছয়টি জোনে বিনামূল্যে পানি পান করাবে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ ছাড়া আর কোনো নতুনত্বের কথা বলতে পারেনি বিপিএল কর্তৃপক্ষ।
টিকিট নিয়ে সেই পুরনো চিত্র। বিপিএল শুরুর আগের দিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টিকিট নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। টিকিট সংগ্রহের জন্য ভোর থেকেই স্টেডিয়ামের ১ ও ২ নম্বর ফটকের সামনে ভিড় জমিয়েছেন হাজারো দর্শক। কিন্তু টিকিট বুথ বন্ধ থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। সকাল থেকে অনিশ্চয়তায় অপেক্ষা করা দর্শকদের দাবি, টিকিট ছাড়া কেউ ফিরবেন না।
ক্ষোভ বাড়তে থাকলে একপর্যায়ে দুই নম্বর ফটকের সামনে জড়ো হন দর্শকেরা। তারা ভুয়া ভুয়া বলে সেøাগান ও গালাগাল শুরু করেন এবং প্রবল ধাক্কাধাক্কিতে ফটক খুলে ফেলেন। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দর্শকদের বের করে দিলেও দৌড়াদৌড়ির মধ্যে কয়েকজন দর্শক আহত হন। পরে লোহার ফটক তালাবদ্ধ করা হলেও উত্তেজনা থামেনি।

বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, বিপিএলের বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি করা হবে অনলাইনে। একই কথা বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও। গত ৩০ অক্টোবর বোর্ড সভায় বিপিএলের ১১তম আসরের টিকিট সম্পূর্ণ অনলাইনে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে বিসিবির টিকিটিং কমিটির সদস্য সৈয়দ আলি আসাফ জানান, বেশির ভাগ টিকিট মূলত অফলাইনেই থাকবে, ৩০-৩৫ শতাংশ অনলাইনে থাকবে। কারণ অনলাইনে অভ্যস্ত হতে মানুষদের এখনো সময় লাগবে। এবার বিপিএলের টিকিট বিক্রির সব দায়িত্ব মধুমতী ব্যাংককে দেয়া হয়েছে। তবে খেলার আগের দিন পর্যন্ত মধুমতী ব্যাংককে মাঠের কাছে কোনো বুথ করতে দেখা যায়নি। আসাফ জানান, ‘প্রথম দিন বলে একটু সমস্যা হচ্ছে। এটা দ্রুতই সুন্দর হবে।’
বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন স্বীকার করেছেন, টিকিট নিয়ে এই অরাজকতার দায় বিসিবিকে মাথা পেতে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘দর্শকদের কাছে তথ্য আরো আগে পৌঁছানো উচিত ছিল। এখানে ব্যাংকসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের জটিলতা ছিল, তবে দায় আমাদেরই।’

 


আরো সংবাদ



premium cement