তায়কোয়ানদোতে বাংলাদেশী-ইন্দোনেশিয়ান যমজ
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শিখা ইসলামের মাথায় হিজাব। তবে ফাতিমা ইসলামের মাথায় হিজাব নেই। এই না থাকার ব্যাখ্যাটা দিলেন ফাতিমা। ‘হিজাব পরে খেলার সময় একবার হিজাবে লাগানো পিন আমার মাথায় ঢুকে যায়। এরপর আর হিজাব পরে খেলি না।’ এবারের জাতীয় তায়কোয়ানদোতে ফাতিমা ও শিখা অন্য কারণে আলোচনায়। তারা যমজ বোন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যমজ আরো ছিলেন। তবে অন্য বিষয়ে এই দুই বোন এখন সবার নজরে। এদের রক্তে যে বাংলাদেশী ও ইন্দোনেশিয়ান সংমিশ্রণ। তাদের মা ইন্দোনেশিয়ান। আর বাবা বাংলাদেশী। শিখা ও ফাতেমার জন্ম কুয়েতে। শৈশব কেটেছে আসিয়ান অঞ্চলের দেশটির রাজধানী জাকার্তায়। আর ২০১০ সাল থেকে আছেন বাংলাদেশে। দুই বোনেরই এবারের সিনিয়র জাতীয় আসরে প্রথম অংশগ্রহণ। পুমস দলগততে ব্রোঞ্জ পদকও জিতেছেন তারা কুমিল্লার হয়ে।
কুয়েতে চাকরি করতেন বাংলাদেশী জুয়েল মিয়া। সেখানেই ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে সুলেখা বেগমের সাথে পরিচয়। পরে বিয়েতে আবদ্ধ হন জুয়েল ও সুলেখা। ২০০৪ সালে বিয়ের পর ২০০৫ সালে জন্ম ফাতিমা ও শিখার। শিখা অবশ্য দুই মিনিটের বড়। জন্মের পর জাকার্তায় নানাবাড়িতে চার বছর ছিলেন দুই বোন। ২০১০ সালে দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসের সুলেখা। বাসা নিয়ে থাকছেন মোহাম্মদপুরে। স্বামী জুয়েল অবশ্য কুয়েতেই চাকরি করছেন। ক’দিন আগেই বাংলাদেশে এসে ঘুরে গেছেন।
শৈশবটা জাকার্তার সুরাবাইয়াতে। চার বছর সেখানে থাকা অবস্থান ইন্দোনেশিয়ান ভাষা শিখলেও এখন খুব একটা বলতে পারেন না তারা; বরং বাংলাদেশে ১৪ বছর থেকে শুদ্ধ বাংলা বলতে পারছেন ফাতিমা ও শিখা। ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছেন তারা। আর অন্য খেলা রেখে তায়কোয়ানদো কেন পছন্দ করা। ফাতিমা জানান, বাংলাদেশের মেয়েরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় হেনস্তার শিকার হয়। আমরাও প্রতিকূল অবস্থার শিকার হয়েছি। তাই নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তায়কোয়ানদোতে আসা। বাবা-মাও সমর্থন দিয়েছেন এই খেলা চর্চা করতে।’ ছোট বোনের সাথেই সুর মেলান শিখা।
আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পাশাপাশি এখন এই যমজ বোনরা জাতীয় আসরে পদকও জিতছেন। প্রথমে দু’জন একাধিক স্বর্ণসহ রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জেতেন জুনিয়র আসরে। আর এবার কুমিল্লা জেলার হয়ে পুমস দলগততে গলায় তুলেছেন ব্রোঞ্জ পদক। অবশ্য জুনিয়রে ফাইট ইভেন্টে ছয় আসরের পাঁচটিতে স্বর্ণ জেতেন ফাতিমা। শিখা পান তিনটি স্বর্ণ। সিনিয়রে পুমসে পদক জিতলেও দুই বোনের ইচ্ছে সিনিয়রে ফাইটে পদক জেতা।
মা ইন্দোনেশিয়ান, বাবা বাংলাদেশী এই পরিচয়টা দিতে বেশ আনন্দ হয় দুই যমজ বোনের। শিখা জানান, যখন আমরা কোথাও বলি বাবা-মায়ের পরিচয় তখন সবাই বেশ আগ্রহ নিয়েই পুরো কাহিনী শুনতে চান। তখন আমাদেরও ভালো লাগে বিষয়টি বলতে।
২০১০ সালে বাংলাদেশে আসার পর আর ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়া হয়নি দুই বোনের। সেখানে থাকা নানী-খালা, মামাসহ অন্যদের ভীষণ মিস করেন তারা। সুরাবাইয়াতে তাদের এক কাজিন কারাতে খেলেন। এটি জেনে তাদের খুব ভালো লেগেছে। আর শিখা-ফাতিমার তায়কোয়ানদোতে পদক পাওয়ায় নানার বাড়ির লোকজনরা বেশ উৎফুল্ল। এরই মধ্যে বাংলাদেশ দলে খেলা হয়েছে দুই বোনের। করোনার সময় তিনটি আন্তর্জাতিক আসরে ভার্চুয়াল আসরে ফাতিমা ও শিখা পুমস দলগততে একটি করে ব্রোঞ্জ পান। এখন তাদের টার্গেট এসএ গেমসে পদক জয়। শিখা তো এশিয়ান গেমসে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
ঢাকাতেই থাকলেও শিখার মন টানে জাকার্তার পরিবেশের জন্য। অবশ্য ফাতিমার ঢাকা-জাকার্তা দু’টিই প্রিয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা