ইহাই দেশের ব্যাডমিন্টন
- জসিম উদ্দিন রানা
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ব্যাডমিন্টনে সিনিয়রদের এত বড় একটা টুর্নামেন্ট। ইউনেক্স-সানরাইজ চ্যালেঞ্জ। ১৪ দেশের প্রায় ২০০ প্রতিযোগী অংশ নেয়। ফাইনাল খেলা। অথচ বাংলাদেশের সিনিয়র কোনো শাটলারদের দেখা গেল না ইনডোরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল বেশির ভাগ আউটডোরে খেপ খেলতে ব্যস্ত। যারা খেপ খেলার সুযোগ পাননি, তাদের ব্যাডমিন্টনের প্রতি অনীহ জন্মেছে।
খেপ খেলতে যাওয়া কয়েকজন জানালেন, ‘ভাই এখান থেকেই তো আমরা টাকা-পয়সা জোগাড় করে সারা বছরের খরচা চালাই। আমাদের কি আর বেতন আছে? আমাদের আয়ের উৎসই তো খেপ। এটা বন্ধ হয়ে গেলে শাটলাররা ব্যাডমিন্টনকে জাদুঘরে পাঠাবে। একজন শাটলারের প্রাকটিসে অনেক টাকা খরচ হয়। এ টাকা কে দেবে।’
তারা অরো জানান, ‘ফেডারেশন কোন টুর্নামেন্টের আগে ১০-১৫ দিন অনুশীলন করায়। তা ছাড়া সারা বছর তো আমাদের নিজেদের খরচেই অনুশীলন করতে হয়। এক বক্স (১২) অরিজিনাল শাটলের দাম ৪০০০-৪২০০ টাকা। আমরা ডুপ্লিকেট শাটল দিয়ে প্রাকটিস করি। তা-ও ২৫০০-৩৫০০ টাকা। সবাই শুধু রেজাল্ট চায়। খরচের কথা কেউ মুখেও আনেন না। আমরা যা রেজাল্ট করি নিজেদের প্রচেষ্টায় করি।’
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে লাইম-লাইটে উঠে আসা ইঞ্জিনিয়ার সারোয়ার জানান, ‘আমাদের ধারাবাহিকতা নেই। যে যেই জায়গার জন্য উপযুক্ত সেখানে তিনি থাকছেন না। দীর্ঘ পরিকল্পনাও একটা ফ্যাক্টর। সে পথে হাঁটছে না। এসব টুর্নামেন্টে নিজেদের অবস্থান সম্বন্ধে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যায়। আমরা কতটা পিছিয়ে, কতটা ওভারকাম করতে পেরেছি, আরো কি কি করতে হবে সে সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। তবে খেলোয়াড়রা যতটুক বুঝবেন কি উন্নতি প্রয়োজন, তার চেয়ে ঢের ভালো বুঝবেন কোচ। সে মোতবেক তিনি ট্রেনিং দেবেন। ঘন ঘন কোচ পরিবর্তন একজন শাটলারের উন্নতির পথে বাধা।’
তিনি যোগ করেন, ‘এসব টুর্নামেন্ট থেকে বড় পাওয়া হচ্ছে এখান থেকেই একজন শাটলারের আন্তর্জাতিক র্যাংকিং হয়। বিদেশে কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে গেলে র্যাংকিংয়ের প্রয়োজন হয়। তার উপরে নির্ভর করবে সে কোন ক্যাটাগরির টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবে। দেশের মধ্যে একমাত্র সোয়াদের (সামার ও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন) র্যাংকিং ৪০০-এর ভেতরে। বাদ বাকি সবার হাজারের ওপরে। যত বেশি খেলবে পয়েন্ট তত বাড়বে।’
ফেনী জেলা ব্যাডমিন্টন কোচ আবদুল হান্নান ও তসলিম হাজারি জানান, ‘শেখার, দেখার এবং আত্মস্থ করার টুর্নামেন্ট হলো ইউনেক্স-সানরাইজ আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট। যারা বিদেশ গিয়ে খেলতে পারছেন না, তারা এখানে এন্ট্রি করে বিদেশীদের সাথে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। শিখতে পারছেন। নতুন যারা ব্যাডমিন্টন খেলছেন, তারা আরো উৎসাহী হবে খেলার জন্য।’
চট্টগ্রাম ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমির কোচ, জাতীয় দলের সাবেক শাটলার ও বর্তমান জাতীয় দলের কোচ মোস্তফা জাভেদ আফসোস করে জানান, ‘প্রায় ১৬ বছর পর ডাক পেলাম ফেডারেশনে। তবে শাটলারদের নিয়ে তেমন কাজ করার সময় ছিল না। এবার ছেলে ও মেয়েরা আগের চেয়ে ভালো করেছে। শাটলারদের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এবারের সিনিয়রের সেমিফাইনালিস্ট আল আমিন জুমার জানান, ‘এ জাতীয় টুর্নামেন্ট যত বেশি হবে ততই মঙ্গল। ব্যাডমিন্টনে অনেক খরচ। কিছুদিন আগে নিজ খরচে (৮০ হাজার) বিদেশ গিয়ে খেলে এলাম। এ টাকা সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত। একজন শাটলারের যদি স্পন্সর থাকে তাহলে সে উঠতে পারে। নিজ টাকায় কার এত সামর্থ্য আছে। ফেডারেশন থেকে কোনো সাহায্য করা হয় না। সামার টুর্নামেন্টে আমি মিক্সড ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন। অথচ এই টুর্নামেন্টে আমাকে চার হাজার টাকা দিয়ে সিঙ্গেলসে এন্ট্রি করতে হয়েছে। ফেডারেশন কি চাইলেই সহযোগিতা করতে পারতো না!!
ইউনেক্স-সানরাইজ ইন্টারন্যশনাল টুর্নােমন্টে রেফারি হয়ে আসা হংকং-চায়নার সাইমন জানালেন, ‘তোমাদের অনেক প্লেয়ারের হাই কোয়ালিটি আছে। এদের নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ওরা প্রাণপণ লড়াই করেছে। এই একাগ্রতাকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের চেয়ে উন্নত প্লেয়ারদের সাথে খেলাতে পারলে ভয় কেটে যাবে। তখন তারা আরো ভালো খেলবে।’
প্রতিটি টুর্নামেন্টের সময় ফেডারেশন কর্মকর্তাদের যেমন হাঁক ডাক দেখা যায়। এটা করবো, সেটা করব, দীর্ঘ মেয়াদে ক্যাম্প হবে, বিদেশী কোচ আসবে, যতœ নিতে হবে। টুর্নামেন্ট শেষে এর ছিটে ফোঁটাও থাকে না। এবারো এর ব্যতিক্রম হবে না। তাদের একটাই কথা, ফেডারেশন প্লেয়ার তৈরি করে না। আর্থিক খরচ থেকে তারা দূরেই থাকতে চায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা