পার্থ-অ্যান্টিগার পার্থক্য যেখানে সুস্পষ্ট
- জসিম উদ্দিন রানা
- ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
আজ, অর্থাৎ ২২ নভেম্বর পৃথিবীর দুই প্রান্তে শুরু হচ্ছে দুটো টেস্ট ম্যাচ। পার্থ ও অ্যান্টিগা, মাঝে ব্যবধান ১৮ হাজার কিলোমিটারের, সময়ের পার্থক্য প্রায় ২৪ ঘণ্টার। পার্থে অস্ট্রেলিয়া-ভারত টেস্ট ম্যাচ শেষ করে রোহিত শর্মা-প্যাট কামিন্সরা যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকবেন, তখন দিনের সুচনা করবেন মেহেদী হাসান মিরাজ-ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটরা। প্রকৃতির রাত-দিনের এই পার্থক্যের মতো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলেও এই দলগুলোর মধ্যে বিস্তর ফারাক। অস্ট্রেলিয়া ও ভারত এই টেবিলের শীর্ষ দুই দল। আর বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সবচেয়ে নিচের দুই দল। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের চোখ যখন ফাইনালে কিংবা শিরোপা জেতার স্বপ্নে বিভোর তখন বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য তলানিতে থেকে কিভাবে এক ধাপ এগোনো যায়।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট দর্শনে পার্থক্যটা আকাশ-পাতালের মতোই। পার্থক্য সুস্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই টেস্ট ক্রিকেটকে রেখেছে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে। ব্যাগি গ্রিন টুপিটা একজন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের কাছে আজন্ম লালিত স্বপ্ন। ভারত আইপিএলের যুগে এসেও টেস্ট ক্রিকেটকে দিয়েছে প্রাপ্য সম্মান। একঝাঁক ক্রিকেটার উঠে এলেও সেরাদের ভারত বেছে বেছে বাঁচিয়ে রাখছে টেস্টের জন্যই। দেশে নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজ ৩-০তে হারের পর গৌতম গম্ভীর ও রোহিত শর্মাকে ৬ ঘণ্টা ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের নামে রীতিমতো জেরা করা হয়েছে। কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে এই অপ্রত্যাশিত হারের, যাতে ভবিষ্যতে এই ভুল আর না হয়।
অস্ট্রেলিয়াও তৈরি হচ্ছে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের জন্য। ২০২২-২৩ মৌসুমে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়া গিয়ে টেস্ট সিরিজে হারিয়েছিল তাদের, সেই দুঃখ তারা ভারতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে এবং টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হারিয়েও ভুলতে পারেনি! যে সিরিজটা অস্ট্রেলিয়া হেরে গেছে, যেটা ২২ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তানের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়। এ জন্য সমালোচনা হয়েছে নির্বাচকদেরও।
আর বাংলাদেশের কোন জবাবদিহিতা আছে বলে মনে হয়না। প্রতিবারই একই সুরে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন অধিনায়কসহ টিম ম্যানেজমেন্ট। এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে কাজে লাগাবেন। কিন্তু সেই কাজে লাগানোটা যুগ যুগ ধরে হয় না। ওয়ানডেতে কিংবা টি-২০ তে ১৫-২০ রানের আক্ষেপ ইহজীবনেও আর গেল না। ঘন ঘন কোচ পাল্টানো, কোচ-ম্যানেজমেন্ট-অধিনায়ক সমন্বয়-পরিকল্পনা না থাকা, দল নির্বাচনে পরিপক্বতার অভাবে খোলস থেকে বের হতে পারছে না লাল-সবুজের ক্রিকেটাররা। বর্তমান সময়টা যেন আরো কঠিন। টেস্টে তো হচ্ছেই না, ওয়ানডেতেও যেখানে অন্যান্য দেশগুলো সমীহ করত সে ফরম্যাটেও লজ্জার হার সইতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দুই দলই টেস্টবিমুখ। দুই দলেরই শীর্ষ খেলোয়াড়রা টেস্ট খেলতে চান না। বাংলাদেশে অনেকে টেস্ট খেললে আবার নতুন বলে ব্যাট করতে চান না। গায়ে টেস্ট ক্রিকেটার তকমা লেগে গেলে চিন্তায় থাকেন ঢাকা লিগে বা বিপিএলে দাম কমে যাবে। এ জন্য অনেকে সাদা বলে খেলতে চান। গড়ে ওঠেনি টেস্ট খেলার সংস্কৃতি। আছে মানসিকতারও ঘাটতি। ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে জেতাটা দুরূহ, যদিও বাংলাদেশের চেয়ে কম অভিজ্ঞতা নিয়েও ভারতকে হোয়াইটওয়াশ (৩-০) করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে নিউজিল্যান্ড। মিচেল স্যান্টনার আর এজাজ প্যাটেল, দু’জনে মিলে খেলেছেন মাত্র ৫০টা টেস্ট, স্যান্টনার ২৯ আর প্যাটেল ২১। অন্য দিকে তাইজুল খেলেছেন ৪৯ টেস্ট, সাকিব ৭১টা। এই অভিজ্ঞতা নিয়েও ভারতের কাছে মারই খেয়েছেন। অন্য দিকে কিউই স্যান্টনার-এজাজ মিলে ধসিয়ে দিয়েছেন ভারতের গর্বের ব্যাটিং।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলটা কেমন যেন অচেনা। ক্যারিবিয়ানে প্রবল জনপ্রিয় টি-২০। তারা খেলে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের নানান দেশে। বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট সিরিজের সময় আবুধাবিতে হচ্ছে টি-১০, গায়ানায় হবে গ্লোবাল সুপার লিগ। এমনকি নেপালেও চলবে নেপাল প্রিমিয়ার লিগ। ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের অনেকেই পৌঁছে যাবেন হিমালয়ের কোলেও। কিন্তু দেশের হয়ে টেস্ট তারা খেলবেন না। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামটাই কেমন যেন মৃতপ্রায়।
গোটা ক্রিকেট বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির দিকে। সেরা ব্যাটারদের সঙ্গে থাকবে সেরা বোলারদের আগুনে লড়াই। অন্যদিকে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াইতে না আছে কোনো আকর্ষণ না আছে বাড়তি কোনো আগ্রহ। এই সিরিজে জয়-পরাজয়ে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না বিশ্বে। শুধু নিজেদের আত্মসম্মানের ধারটাই বাড়বে। এমন দুটো দল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তলানিতে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা