২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সাফে চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে : রাকিব

-

একজন নয়, পাঁচ থেকে ছয়জন করে বিদেশী একেক দলে। এদের কেউ ব্রাজিলের, কেউ বা নাইজেরিয়া, গাম্বিয়া, ইউক্রেন বা অন্য কোনো দেশের। কিন্তু এদের টপকেই গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রাকিব হোসেন। বসুন্ধরা কিংসের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে গত পরশু লিগের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় বাফুফের পক্ষ থেকে। এটি অবশ্য বরিশালের এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারে প্রথম সেরা খেলোয়াড় হওয়া নয়। এর আগেও দু’টি স্বাধীনতা কাপে তিনি সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। অবশ্য সে দু’টি ছিল টুর্নামেন্টে সেরা হওয়া। এবার পেলেন দেশের ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ লিগের সেরা ফুটবলারের খেতাব। এমন অর্জনে বেশ উৎফুল্ল জাতীয় দলের এই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। জানান, ‘বিদেশী ফুটবলার এবং দেশী অন্যদের সাথে ফাইট করে সেরা হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এই পুরস্কার আমার সামনে এগোনোর প্রেরণা। এখন আমার মূল লক্ষ্য সাফে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করানো।’ পরশু অবশ্য ক্লাব দলের অনুশীলনের কারণে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ছিলেন না রাকিব।
২০২১ ও ২০২৩ এই দুটি সাফে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন রাকিব। দুই আসরেই অল্পের জন্য ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ অস্কার ব্রুজন ও হাভিয়ার কারবেরার দলের। তাই সাফে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করানোই প্রধান লক্ষ্য তার।
বরিশাল শহরে বড় হওয়া এবং বরিশালের স্টেডিয়ামে স্থানীয় সিনিয়র দুই বড় ভাই সোহেল ও রাকিবের হাত ধরেই তার ফুটবলে আসা। বড় রাকিব ভাই-ই আমাকে প্রথম এক জোড়া বুট কিনে দেন। সেই বুট পরে এলাকার একটি টুর্নামেন্টে খেলেন জুনিয়র রাকিব। ২০১৪ সালে পাইনিয়ার লিগে টিপু সুলতান স্পোর্টিং ক্লাব দিয়ে ঢাকার ফুটবলে আগমন তার। ২০১৬ সালে আরাফ স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করেন তৃতীয় বিভাগে। এরপর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলেন ভিক্টোরিয়ার হয়ে। ২০১৭-১৮ সিজনে রহমতগঞ্জের হয়ে বিপিএলে অভিষেক। এরপর চলে যান চট্টগ্রাম আবাহনীকে। সেখানে এক বছর কাটিয়ে ঢাকা আবাহনীতে যোগ দেন। ২০২২-২৩ সিজন থেকে তিনি দেশ সেরা ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের অপরিহার্য ফুটবলার। রাকিব জানালেন, বরিশালের আরিফ হোসেন ও ইয়াসিন খান ভাই জাতীয় দলে খেলার পর আমার মধ্যেও অনুপ্রেরণা জাগে লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার। সেই লক্ষ্যও পূরণ হয়েছে।
রাকিবের মতে, ‘আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট চট্টগ্রাম আবাহনী। সেখানে কোচ মারুফুল হক বেশ ভালোভাবে গাইড করেছেন বলে আমি এই পর্যায়ে উঠতে পেরেছি। চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলার সময়ই আমি ২০১৮ সালে জাতীয় দলে ডাক পাই।’ আর এখন তিনি লাল সবুজ জার্সিতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড। গোল করছেন, গোল করাচ্ছেন। রাকিব জানান, ‘জাতীয় দলে আমার ৪টি গোল আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় গত সাফে ভুটানে বিপক্ষে করা গোলটি। কারণ আমার গোলের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ০-১ গোলে পিছিয়ে ছিল। আর আমি গোলটি করেছিলাম প্রায় শূন্য ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে।’
রাকিবকে গত লিগের সেরা খেলোয়াড়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলেও এর আগেই বিদেশীরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। বসুন্ধরা কিংসে খেলা ব্রাজিলের রবসন রবিনহো বলেছিলেন, ‘রাকিব বিদেশী লিগে খেলার মত প্রতিভা সম্পন্ন।’ রাকিবের অফার এসেছিল বিদেশী দিকে খেলার। তথ্য দেন, গত সাফের সময়ে ভারতের আই লিগে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলাম এজেন্টের মাধ্যমে। কিন্তু আমি আই লিগে খেলার সাহস করিনি। আমার কাছে ওই লিগে খেলাটা বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল।
রাকিবের গোল আছে ঢাকা আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস উভয় দলের জার্সি পড়েই পরস্পরে বিপক্ষে। বসুন্ধরা কিংসের আগমনের পর আবাহনী যে স্বাধীনতা কাপে জিতেছিল কমলাপুর স্টেডিয়ামে, সেই ম্যাচের ফাইনালে বসুন্ধরার বিপক্ষে গোল করেছিলেন রাকিব। আবার গত লিগের প্রথম পর্বে আবাহনীর বিপক্ষেই বসুন্ধরা কিংসের ২-০ গোলের জয়ের একটি গোল তার। অপর গোলের জোগান দাতা। এই দুই বিগ ম্যাচে পরস্পরের বিপক্ষে গোল করাটাকে বেশ উল্লেখযোগ্য বলে জানালেন তিনি। তার মতে, ‘আবাহনী-বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ মানে অন্যরকম উত্তেজনা। দেশের ২ সেরা দলের লড়াই। সেখানে আমি দুই দলে বিপক্ষেই গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে।’
গত লিগের সেরা খেলোয়াড় হয় রাকিব এই ধারা অব্যাহত রাখতে চান। সে সাথে তার লক্ষ্য ইতোমধ্যেই তার যে তারকা খ্যাতি জুটেছে, উঠতি ফুটবলাররা তাকে আদর্শ মনে করছে, তা ধরে রাখতে। রাকিবের মতে, অনেক উঠতি খেলোয়াড়ই আমাকে তাদের আদর্শ মনে করে। এটা আমার জন্য বাড়তি প্রেরণা। আমিও চাই আমার উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আরো বেশি করে অন্য খেলোয়াড়দের কাছে প্রিয় হতে। অবশ্য এটা একই সাথে আমার জন্য ভালো একটা চ্যালেঞ্জ।


আরো সংবাদ



premium cement