সাঁতার দম্পতির স্বর্ণময় জীবন
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪০
স্ত্রী সোনিয়া আক্তার টুম্পার গলায় ১১টি স্বর্ণ। অন্যদিকে স্বামী আসিফ রেজা পেয়েছেন ৪টি স্বর্ণ। এবারের ম্যাক্স ৩৩তম জাতীয় সাঁতারে সাঁতারু দম্পতির এই অর্জন অন্যদের ছাড়িয়ে গেছে। তবে দুইজনের কেউই এবারের আসরের সেরা সাঁতারু হতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে সোনিয়ার আফসোসটা একটু বেশিই। না পেরেছেন স্বামীর মতো দ্রুততম সাঁতারু হতে। না পেলেন সেরা সাঁতারুর পুরস্কার। আসিফ অবশ্য একটি ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রথম হয়েছেন। আর তাতেই বাজিমাত। কারণ যে ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে প্রথম হন দ্রুততম সাঁতারুর খেতাব জোটে তারই। সে কাজই তিনি করেছেন এবারের জাতীয় সাঁতারের তৃতীয় দিনে। তবে নেই কোনো রেকর্ড। সামিউল ইসলাম রাফির মতো একাধিক ব্যক্তিগততে স্বর্ণও নেই। সোনিয়া অবশ্য পিছিয়ে গেছেন ১১টি স্বর্ণের মধ্যে একটিও রেকর্ড না থাকায়। তাই সেরা সাঁতারু হতে পারেননি। এর পরও আলোচনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই দুই সাঁতারু। জামাই-বউ মিলে যে পুলে ঝড় তুলেছেন।
কুষ্টিয়ার ছেলে আসিফ রেজা। সোনিয়া টুম্পার বাড়ি ঝিনাইদহে।
আসিফের সাঁতারে আসা ২০০২ সালে। সোনিয়ার আগমন ২০০৩ সালে। দুইজনের প্রথম দেখা ২০০৪ সালে বগুড়ায় হওয়া জাতীয় সাঁতারের সময়। আর ভালো লাগা তথা মন দেয়া-নেয়ার পর্বের শুরু ২০০৫ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে। যদিও বিয়ে পিঁড়িতে বসেছেন ২০২১ সালে এসে।
এ পর্যন্ত কত স্বর্ণ জিতেছেন সোনিয়া তা সঠিক বলতে পারলেন না। তার দেয়া তথ্য, সম্ভবত ১০০-এর কাছাকাছি হবে। আসিফ জানালেন, জুনিয়র ও সিনিয়র মিলে ৭০-৮০ টির মতো স্বর্ণ আছে আমার।’ ঘরোয়া সাঁতারে এতে স্বর্ণ তবে এসএ গেমসের এই দম্পতির কোনো স্বর্ণ নেই। এই কষ্ট বেশ তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের। তবে দুইজনেরই আছে এস এ গেমসের রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ। এস এ গেমসে তিনটি পদক সোনিয়ার। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এস এ গেমসে ৪ গুণিতক ১০০ মিটার মিডলে রিলেতে ব্রোঞ্জ পদক তার। এরপর ২০১৬ সালের গৌহাটি-শিলং গেমসে ২০০ মিটার বাটার ফ্লাইয়ে রৌপ্য এবং ৪ গুণিতক মিডলে রিলেতে ব্রোঞ্জ জয়। আসিফের এস এ গেমসের পদক চারটি। ২০১৬ সালে ১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল রিলে এবং ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলেতে ব্রোঞ্জ জয় করেন। এরপর ২০১৯ সালের সর্বশেষ এস এ গেমসে পান ১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল রিলেতে ব্রোঞ্জ ও ২০০ মিটার মিডলে রিলেতে রৌপ্য।
সোনিয়া ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া সাঁতারু। পাশাপাশি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়াও যুব অলিম্পিক এবং কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেন।
লম্বা এই সাঁতারের সময়ে দুইজনের সেরা মুহূর্ত ২০২২ সালে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া। সেবারই জাতীয় সাঁতারে দুইজনেই জিতে ছিলেন ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলের পুরুষ ও নারী বিভাগের স্বর্ণ। ফলে এই দ্রুততম সাঁতারু হওয়ার সুবাদে তারা সুযোগ পান বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়ার। সোনিয়া জানান, ২০২২ সালটা আমাদের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয়। দুইজনই এক সাথে জাতীয় সাঁতারে দ্রুততম সাঁতারু হয়েছিলাম। এর পর বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা।
আসিফ রেজা মাত্র কয়েকটি ইভেন্ট করেন। এর মধ্যে অন্যতম ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইল সাঁতার। ‘আমি এই ৫০ মিটারেই বেশি ফোকাস করি। তাই আমি এই নিয়ে ৬-৭ বার দ্রুততম সাঁতারু হতে পেরেছি। তবে সোনিয়ার পক্ষে ১১-১২টি ইভেন্ট করে ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে স্বর্ণ জেতা কঠিন। শুধু ৫০ মিটারে খেললে সেই হতো দ্রুততম সাঁতারু।’ স্বামী আসিফের এই মন্তব্যকে নিজের করে নিলেন স্ত্রী সোনিয়াও। ‘আমি সেই শুরু থেকেই নিজের জন্য এবং বাহিনীর জন্য প্রতি আসরে ১২-১৩টি ইভেন্টে অংশ নেই। এতে আমার ও অমার বাহিনীর স্বর্ণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই শুধু ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলকে ফোকাস করতে পারি না। তা না হলে আমিও প্রায় প্রতিবারই দ্রুততম মহিলা সাঁতারু হতে পারতাম।’
এবারের জাতীয় সাঁতারে অল্পের জন্য দ্রুততম মহিলা সাঁতারু হতে পারেননি সোনিয়া। যুথী আক্তারের কাছে হেরে রৌপ্যতে সন্তুষ্টি। এবারের আসরে এই একটিই রৌপ্য তার। সোনিয়ার মতে, এই ইভেন্টেও স্বর্ণ জিততে পারলে ভালো লাগতো। চেষ্টাতো করেছি। কিন্তু পারিনি বলে খুব একটা কষ্ট নেই। গত বারও তো প্রথম হতে পারিনি এই ইভেন্টে।
সাঁতার নিয়ে ব্যস্ততা। স্বর্ণ জয়ের তীব্র ক্ষুধা। তাই সন্তান সন্ততির দিকে পা বাড়াননি এই জুটি। আসিফ জানান, এখনো আমরা সাঁতারে মহা ব্যস্ত। তাই বাবা হওয়ার পথে এগুচ্ছি না। সাঁতারে সিরিয়াসনেস কমলেই সেই চিন্তা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা