দেশের জন্য কোচ দম্পতির ত্যাগ
সাফ ট্রফি হাতে লিটু ও অনন্যা দম্পতি- রফিকুল হায়দার ফরহাদ
- ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের টানা সাফল্য। এই মুহূর্তে জুনিয়র এবং সিনিয়র মিলে চারটি সাফের চ্যাম্পিয়ন লাল-সবুজ মেয়েরা। অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২০ এবং সিনিয়র সাফের ট্রফি সাবিনা, ছোট শামসুন্নাহার ও অর্পিতাদের হাতে। নারী দলের এই সাফল্যের সাথে এক সূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে কোচ দম্পতি সহকারী কোচ মাহাবুবুর রহমান লিটু ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার অনন্যার নাম। দু’জনই সাবেক ফুটবলার। এখন এই দম্পতি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছেন। বাংলাদেশ দলের সব অর্জনের সরাসরি সাক্ষী তারা। সর্বশেষ এবারের মহিলা সাফে অবশ্য পদ মর্যাদা বেড়েছে অনন্যার। সহকারী কোচের বদলে ম্যানেজারের দায়িত্ব। আর স্বামী লিটু ছিলেন সহকারী কোচ। আসর শেষে নেপাল থেকে ট্রফি নিয়ে তাদের দেশে ফেরা।
মহিলা দলের ম্যানেজার পদটা ছিল আমিরুল ইসলাম বাবুর। তবে তিনি এবার বাফুফের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অনন্যার এই ম্যানেজারের গুরু দায়িত্ব পালন করা। স্বামী ও স্ত্রীর জাতীয় দলের সাথে মাস গড়িয়ে বছরের পর বছর ক্যাম্পে পড়ে থাকার ফলে দুই কন্যাসন্তানকে ঠিকমতো সময়ও দিতে পারেন না তারা। তাদের এই আত্মত্যাগটা দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতেই। তবে সব আসরে তাদের দলের সাথে বিদেশে যাওয়া হয়নি। কয়েক বছর আছে বাংলাদেশ দল প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটসাল টুর্নামেন্ট খেলতে থাইল্যান্ড গিয়েছিল। তখন লিটু ইনজুরিতে থাকায় দলের সঙ্গী হতে পারেননি। আর এবারের অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা সাফে বাংলাদেশ দলের অংশ হিসেবে নেপাল যাওয়া হয়নি অনন্যার। তখন একই সময় সিনিয়র জাতীয় দলের ক্যাম্প চলছিল বাফুফে ভবনে। তাই থেকে যাওয়া ঢাকাতে।
খেলোয়াড়ী জীবনে লিটু ও অনন্যা দুইজন ছিলেন মিডফিল্ডার। লিটু ইস্কাটন সবুজ সংঘ, ভিক্টোরিয়া, ওয়ারী ও ব্রাদার্সে খেলে ২০০৩ সালে অবসরে যান। অনন্যা ২০১১ সাল লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে মহিলা লিগে খেলতে পারেননি গর্ভবতী হওয়ার কারনে। সে বছরই লিটুর সাথে বিয়ে হয় তার। এর আগে মহিলা ফুটবলের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলেছেন। লিটু মহিলা ফুটবল জাতীয় দলে কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের সাথে সম্পৃক্ত হন ২০০৯ সালে। অনন্যার অন্তর্ভুক্তি ২০১৫ সালে। লিটু জানান, ২০১৩ সালে কিরন আপা (মাহফুজা আক্তার কিরন) আমাকে বলে অনন্যাকে এএফসি কোচিং লাইসেন্স কোর্স করাতে। তখন এএফসি বলেছিল মহিলা দলের সাথে মহিলা কোচ লাগবে। ফলে অনন্যা কোসিং কোর্স করে জাতীয় দলে যুক্ত হয়।
জাতীয় দলের সাথে থেকে এই দম্পতির প্রথম সাফল্য ২০১৬ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবলে। সেবার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালকে ফাইনালে ১-০ গোলে হারায় মারিয়া মান্ডারা। সেই যে শুরু, এর সর্বশেষ সংযোজন এবারের ৩০ অক্টোবর নেপালের মাঠে নেপালকে হারিয়ে সিনিয়র সাফের ট্রফি জয়। লিটুর দেয়া তথ্য, ১৪টির মতো ট্রফি জেতা আমাদের। এর মধ্যে দুই সিনিয়র সাফের ট্রফিই বেশি স্মরণীয়।
লিটু ও অনন্যা দম্পতির দুই মেয়ে রওজা ও রাইসা। রওজার বয়স ১৩। রাইসার ৭। মা- বাবা বাংলাদেশ দলের সাথে সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন। ফলে তাদের কাছে পান না দুই মেয়ে। এদের স্কুলে নেয়া-আনা থেকে শুরু করে সব কিছুই করেন তাদের নানী। যে জন্য ঢাকায় লিটুর বাড়িতে না থেকে নারায়ণগঞ্জে নানীর কাছে থাকতে হচ্ছে দুই মেয়েকে। এ জন্য শাশুড়ির কাছে কৃতজ্ঞ লিটু। লিটুর মতে, ‘দুই মেয়েকে খুব একটা সময় দিতে পারি না। এতে খুবই কষ্ট লাগে। এর পরও জাতীয় দায়িত্বটা বেশি গুরুত্বপূর্ন। ট্রফি জিতেই সে কষ্ট ভুলার চেষ্টা করি। মূল কথা সে কোনো আত্মত্যাগ থাকলেই সাফল্যে পৌঁছা যায়।’
অনন্যার ভীষণ খারাপ লাগে যখন জাতীয় দলের ক্যাম্পের জন্য ঈদের দিনও দুই মেয়ের পাশে থাকতে পারেন না। ভারী কণ্ঠে তার বক্তব্য, আমারই তো তাদের সকালের নাশতা খাওয়ানো থেকে শুরু করে স্কুলে নেয়া-আনা সব কিছুই টেক কেয়ার করার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে সময় দিতে গিয়ে সেই কাজ আর করা হয় না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় আমাদের প্রশংসা হয় ঠিকই। কিন্তু দুই মেয়ের বেড়ে উঠার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের পাশে থাকতে পারি না, তারা যে আমাকে মিস করছে এই অভাবতো আর পূরণ হবে না।
সারা বছরই কোনো না কোনো জাতীয় দলের ক্যাম্প। এতেই ক্যাম্প ছেড়ে বাড়ি আর যাওয়া হয় না। অনন্যার মতে, ‘এখানে ক্যাম্পে প্রায় ৮০ জন মেয়ে থাকে। এখানে আমরাই তাদের অভিভাবক। এই মেয়ে গুলোও তো তাদের বাবা-মাকে রেখে ক্যাম্পে থাকছে মাসের পর মাস।’ এই কথা বলেও স্বাভাবিক মায়ের মাতৃত্ব ত্যাগ করতে পারলেন না অনন্যা। ‘ জাতীয় দলকে সাফল্য দিয়ে এই ফুটবলাররা খেলা ছেড়ে দিলেও মানুষ তাদের মনে রাখবে। কিন্তু আমার দুই সন্তান যে আমাদের মিস করছে, তাদের এই অবস্থার কথা কয় জনে স্মরণ করবে।’ এখনই মেয়েরা আমাকে বলতে শুরু করেছে, ‘অন্য মা’রা তাদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যায় তুমি কেন পারো না।’ অনন্যা যোগ করেন, ‘একবার আমার বড় মেয়ের ফ্যানে হাত ও পা কেটে গেলে তিনটি করে সেলাই লেগেছিল। তবে আমি তাদের পাশেও থাকতে পারিনি সেই সময়ে।’
অবশ্য কোচ দম্পতি হলেও বলতে পারলেন না দুই মেয়েকে ফুটবলার বানাবেন কি না। তবে ছোট মেয়ে কোচ বাবা-মাকে নিয়ে নিয়ে বেশ গর্ব করা শুরু করেছে। জানান লিটু।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা