০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১,
`

নারী দলের ট্রফি জয়টা বিশেষ কিছু

পিটার জেমস বাটলার
সাফ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অন্যান্য কর্মকর্তারা : পিআইডি -


খেলেছেন ইংলিশ লিগের প্রতিষ্ঠিত ক্লাব ওয়েস্ট হ্যামে। খেলা ছেড়ে আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানা এবং লাইবেরিয়া জাতীয় দলে কোচ ছিলেন। মাঝে মালয়েশিয়ার ক্লাব ফুটবলে কোচিং করিয়ে গত বছর নভেম্বরে বাফুফে এলিট একডেমির দায়িত্ব নেন। ঠিক এর আগেই বাংলাদেশ নারী দলের হেড কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন অভিমানে ছেড়ে দেন দায়িত্ব। পরে সাইফুল বারী টিটু এশিয়ান গেমস ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ফিফা প্রীতিম্যাচে কোচ হন। তবে সাফ ফুটবলের শিরোপা ধরে রাখার মিশন সামনে থাকায় বাফুফে একাডেমি থেকে এনে বাটলারকে সাবিনাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি হেঁটেছেন সফল কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের পথেই। ২০২২ সালে ছোটন যেমন নেপালকে তাদের মাঠে হারিয়ে বাংলাদেশকে সাফে চ্যাম্পিয়ন করান। এবার বাটলারও সাবিনাদের শিরোপা জিতিয়ে এনেছেন কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়াম থেকে। সাফের প্রতিপক্ষ সেই নেপাল। তবে আগের বার ৩-১ এ জয় এলেও এবার সেই জয় ধরা দেয় ২-১ এ। বাংলাদেশ নারী দলের এই সাফল্যকে নিজের কোচিং ক্যারিয়ারের জন্য বিশেষ কিছুই বললেন এই ব্রিটিশ কোচ। জানান, এই জয়ে দেশের মানুষ খুশিতে মাততে পেরেছে। এতে বেশ ভালো লাগছে।

তবে শিরোপার চেয়ে ফুটবলার তৈরির দিকেই বেশি আগ্রহ এই কোচের। জানান, আমি হলাম পরিকল্পনাকারী নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরিতে ভালো বাসি। তবে অবশ্যই সাবিনাদের সাথে এবারের সাফ ট্রফিটা বিশেষ কিছু। একেবারেই ভিন্নধর্মী। শিরোপা জয়কে বড় করেই দেখা হয়। যদিও আমার কাছে নতুনদের নিয়ে কাজ করাটা আনন্দের। সে সাথে কোনো দলকে আরো ভালো অবস্থানে নেয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তথ্য দেন, আমি বোতসোয়ানাকে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ৮৪তে উন্নীত করেছি। এটাও কিন্তু বড় অর্জন আমার জন্য। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার টুর্নামেন্টে একাধিকবারই ফাইনালে খেলেছে আমার দল। বিশ্বাস করুন আমার কাছে চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদটা অতটা গুরুত্ব পায় না। যতটা দলের অন্য সাফল্যটা অগ্রাধিকার পায়। যদিও অনেকের কাছেই ট্রফি জেতাই বিশাল কিছু।

বাফুফের সাথে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি বাটলারের। তবে তা মহিলা দলের জন্য নয়। তিনি বাফুফের এলিট একাডেমি দেখতেন। সেখানে এই একাডেমি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছে। তিনি ফুটবলার তৈরি করেছেন। এই খেলোয়াড় সৃষ্টির কাজকে বেশ উপভোগ করেন তিনি। জানান, আমাকে বাফুফের সাবেক সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন এবং নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ মহিলা দলের দায়িত্ব নিতে বলে। তখন নারী ফুটবল দল খুব বাজে সময় পার করছিল। এই পরিস্থিতিতে আমি দায়িত্ব নেই। শেষ পর্যন্ত দলকে চ্যাম্পিয়ন করে আমি আমার কাজ শেষ করেছি। এরপরই তথ্য দেন, আমার সাথে কিন্তু নারী ফুটবল নিয়ে কোনো চুক্তি নেই। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা সম্পর্কে প্রশংসা তার। সাবিনা তার দায়িত্ব সঠিকভাবেই সম্পন্ন করেছে।
সাফ শিরোপা জিতেই বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডগামী বিমান ধরতে চেয়েছিলেন বাটলার। কিন্তু এখনো যাননি। কবে যাবেন সেই বিষয়েও কিছু বলতে পারেননি। ক’দিন আগে দাদা হয়েছেন তিনি। মেয়ে সন্তান জন্ম হয়েছে তার ছেলের ঘরে। এই নাতনীকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন বাটলার। জানান, আমি অপেক্ষায় আছি নতুন সভাপতির সাথে সাক্ষাতের। তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।

২০২২ সালের সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের বিদেশে লিগে খেলার প্রস্তাব আসে। ডিফেন্ডার আঁখি খাতুনকে চেয়েছিল সুইডেনের ক্লাব। সিরাত জাহান স্বপ্নাকে নিতে চেয়েছিল ভারতের উড়িষ্যা ক্লাব। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে তাদের খেলালোর চেষ্টা করেছিলেন বাফুফের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। শেষ পর্যন্ত কোনোটাই হয়নি। অবশ্য সাবিনাদের ইউরোপে খেলাটা ব্যাপারে সতর্ক বক্তব্য বাটলারের। জানান, বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা। মেধা যোগ্যতা সবই আছে। তবে শারীরিক গঠন ও উচ্চতা তাদের ইউরোপে খেলার অন্যতম বাধা। এরপরও তারা যদি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে, তাদের সঠিক নার্সিং করা হয় তাহলে এই ফুটবলারদের পক্ষে ভালো করা সম্ভব। কোচের মতে, মনিকা চাকমা, ঋতু পর্না চাকমা এবং স্বপ্না রানীরা বাংলাদেশ দলে স্পেশাল ফুটবলার।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ হয় কোচের। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ফুটবলাদের সাফ জয়ীদের সংবর্ধনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। ড. ইউনূসের সাথে দেখা করে তার প্রশংসা করলেন বাটলার। জানান, যথেষ্ট ভদ্র মানুষ প্রধান উপদেষ্টা।

 


আরো সংবাদ



premium cement