বাবা ও ভাই বেঁচে থাকলে খুশি হতেন
‘গত সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাকে জমিসহ বাড়ি দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু সেই জমি আর বাড়ি এখনো পাইনি। জানি না আর পাবো কি না।’ -ঋতুপর্ণা চাকমা- রফিকুল হায়দার ফরহাদ
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অভিনন্দন আর প্রশংসায় ভাসছেন বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল। টানা দ্বিতীয় বারের মতো সাফ শিরোপা জিতে নেপাল থেকে এসেছে তারা। প্রশংসার পাশাপাশি সংবর্ধ্বনা পাচ্ছেন সাবিনা খাতুনরা। তবে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে ড্র করার লাল-সবুজ মেয়েদের শিরোপা ধরে রাখাটা অনিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল। গ্রুপের পরের ম্যাচে ভারতের কাছে ০-৩ গোলে হারলেই বিদায় নিতে হতো ২০২২ এর চ্যাম্পিয়নদের। তবে সেই ম্যাচে হার বা ড্র নয়। রীতিমতো ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়েই সেমিতে যায় পিটার জেমস বাটলার বাহিনী। এরপর সেমিতে ভুটানকে ৭-১ এবং ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ হারিয়ে সাফ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখে বাংলাদেশ। এই আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ঋতু পর্না চাকমা। প্রতি ম্যাচেই তার গোল বা অ্যাসিস্ট। ফাইনালে উইনিং গোল ছাড়াও ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম গোল তার। গত সাফেও বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন রাঙ্গামাটির এই মেয়ে। সেবার তিনি বদলি হিসেবে খেললেও এবার নিয়মিত সদস্য। বাম পায়ের এই মিডফিল্ডার জানান, ‘ভারতকে হারানোর পরই আমাদের শিরোপা ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। মনে হচ্ছিল এবারো পারব শিরোপা ধরে রাখতে। শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছি।
বয়সভিত্তিক জাতীয় দল থেকেই খেলে আসছেন স্কিলফুল এই ফুটবলার। ভুটানের মাঠে দুই দফা ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করাতে ব্যর্থ হলেও এরপর আর হতাশায় পুড়তে হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীকে। বাকি সব সাফেই চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ। তবে গত দুই সিনিয়র সাফের তুলনায় গিয়ে ঋতু জানান, ‘এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল সবচেয়ে কঠিন। এখানে সব দলই ছিল শক্তিশালী। প্রবল প্রতিপক্ষ। বিশেষ করে নেপাল, ভুটান ও ভারত। তিন দলই ছিল গোছানো।।’ যোগ করেন , পাকিস্তানের সাথে ড্র করার পর আমরা সব ফুটবলার বসেছিলাম, সবাই সিদ্ধান্ত নেই আমাদের ভালো করতেই হবে ভারতের বিপক্ষে। প্রথমে ম্যাচ ড্র করতে হবে। সেটা না পারলেও বেশি গোলে হারা যাবে না। কিন্তু ম্যাচে আমরা এতটাই দুর্দান্ত খেলি যে ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয়। এই জয়ের পর আমাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে চলে যায়। বুঝতে পারছিলাম এবারো চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছি আমরা।
ভারতের বিপক্ষে ঋতুর ক্রস থেকে গোল করেছিলেন তহুরা খাতুন।। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯১ মিনিটে ঋতুর মাপা ক্রসে মাথা লাগিয়ে হার এড়ানো গোল ছোট শামসুন্নাহারের। ‘যে কয়টি গোলে আমার অ্যাসিস্ট এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে করা অ্যাসিস্টই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছি না। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ক্রস না করলে তো হেরেই যেতাম।’ ‘আর দুই গোলের মধ্যে অবশ্যই ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে করা গোলটাই আমার বেশি স্মরণীয়।’ জানান ঋতু। যোগ করেন, ‘আমি গোলের জন্যই শটটি নিয়েছিলাম। শট নেয়ার আগে গোলরক্ষককে একুট দেখে নেই। এরপর শট। সেই শটে কিভাবে যে গোল হয়ে গেছে আমি তো অবাকই হয়ে গেছি।, তথ্য দেন, ‘এভাবে দূরপাল্লার শটে গোল আমার আরো আছে। ভুটানের বিপক্ষেও সেমিতে আমার গোলটি দূর থেকে নেয়া শটে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমার এই চেষ্টাগুলো সফল হয়নি। একটি শট বারে লেগেছিল।’
খেলেন লেফট উইং পজিশনে। এই পজিশনে থেকে বেশি গোল করা সম্ভব নয়। এর পরও আন্তর্জাতিক ফুটবলে সিনিয়র ও জুনিয়র মিলে ১০টি গোল তার। এর মধ্যে আছে এএফসি মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভুটানে রয়্যাল থিম্পু কলেজের হয়ে একটি গোল।
ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে তার বক্তব্য, নেপাল তাদের দর্শকের সামনে খেলবে। দল হিসেবেও তারা শক্তিশালী। সব কিছুই আমাদের বিপক্ষে। এর পরও এই ফাইনাল আমরা জিতেছি আত্মবিশ্বাসের জোরে। ফুটবলারদের পণ ছিল ভালো কিছু করবেই হবে প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে। সেটা করে দেখেছি। ফাইনাল জয়ের দিনটিই আমার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয়। জানান, পাকিস্তানের সাথে ড্র করার পর আমাদের দল নিয়ে নেতিবাচক নিউজ করা হয়। এতে অবশ্য আমাদের উপকরাই হয়েছে। আমরা আমাদের ভুলগুলো নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করি।
চার বোন আর এক ভাই ছিলেন ঋতু পর্নারা। তবে ২০২২ সাফের কিছু দিন আগে একমাত্র ভাইটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। আর বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান ২০১৫ সালে। ঋতুর মতে, ভাইটি ছিল আমার পিঠাপিঠি। আজ আমি ফুটবলে এই পর্যায়ে এসেছি বাবা ও ভাইয়ের উৎসাহে। বাবা খুব সাপোর্ট দিতেন। বাবা এবং ভাই যদি আমার এই সাফল্য দেখতে পারতেন তাহলে খুব ভালো লাগত। আফসোস দু’জনেরই কেউ-ই আমার এই সাফ সেরা হওয়ার ঘটনাটা দেখে যেতে পারলেন না।
ফেডারেশনের কাছে ঋতুর দাবি তাদের বেতন যেন নিয়মিত দেয়া হয়। সাথে অন্য সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। চান আরো বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং নিয়মিত মহিলা লিগ । বড় বড় ক্লাব যেন মহিলা লিগে দল গড়ে এটাও চাওয়া তার।
গত সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাঙ্গামাটির ঘাগড়া আর্মি ক্যাম্পের মেজর আশিকের উদ্যোগে ঋতুপর্নাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। তখন মেজর আশিক জমিসহ বাড়ি দেয়ার আশ্বাস দেন। ঋতু জানান, ‘আমি সেই জমি দেখে পছন্দও করে এসেছি। কিন্তু সেই জমি আর বাড়ি এখনো পাইনি। জানি না আর পাবো কি না। সেই মেজর আশিকও অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।’ উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটির ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ি গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন ঋতুপর্না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা