মন যে পুড়েছে সাগরিকায়
- জসিম উদ্দিন রানা
- ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে।’ বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমারের এই গানটিকে প্যারোডি আকারে গাইলে হবে, ‘কী আশায় টেস্ট খেলে বাংলাদেশ...।’
চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। আগামী নভেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে বাংলাদেশ দল। ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর পুরো দলের মানসিক অস্থিরতা, না পারার বেদনা, স্কিলে ঘাটতি, মাঠে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং-বোলিংয়ে জর্জরিত হওয়া, ম্যাচ টেম্পারমেন্ট না থাকায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি বিদ্যমান। এমন ভাঙা ও পোড়ামন নিয়ে পরবর্তী টুর্নামেন্ট/সিরিজ খেলতে গেলে কতটুকু অগ্রগামিতায় বিশ্বাস ফিরে আসবে, সেটি একটা বড় প্রশ্ন । বলতেই হবে কি আশায় বাঁধি খেলাঘর।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় অল্পতে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। এক দিনে ১৬ উইকেট হারিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সাগরিকায় পাঁচ দিনের দ্বিতীয় টেস্ট ফয়সালা হয়েছে তৃতীয় দিনেই। যে পিচে প্রোটিয়ারা ছয় উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল, সেই একই পিচে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ভীষণ হতাশাজনক। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পর ফলোঅনে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগাররা থামে ১৪৩ রানে। দুঃস্বপ্নের মতো পারফরম্যান্স দেখিয়ে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। টাইগার শিবিরে এমন করুণ পরিণতি কি হয়েছিল আগে!
হ্যাঁ, হয়েছিল। পরিসংখ্যানে দেখা যায় নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ৩১০ রানে পরাস্ত হয়েছিল তারা। সেই রেকর্ড ২২ বছর ধরে টিকে আছে। অন্য দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা পেল নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ। তাদের আগের কীর্তিটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে ইনিংস ও ২৫৪ রানের ব্যবধানে জিতেছিল তারা।
হারের পর বাংলাদেশ প্রতিবার তোতা পাখির মতো বলে, সামনে উন্নতির কথা। বাদ গেল না গতকালও। শান্ত বললেন, ‘আমাদের আরো অনেক কিছু উন্নতি করতে হবে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা ভালো বোলিং করেছি। তবে সব বিষয়ে উন্নতি করতে হবে। এটা শুধু মানসিকতার ব্যাপার নয়। মানসিকতা, দক্ষতা দুই দিকেই উন্নতি করতে হবে।’ মুখস্থ সেই কথা থেকে বেরিয়ে সত্যিকারের উন্নতি আদৌ কি করতে পারবে বাংলাদেশ। পিছিয়ে পিছিয়ে যেতে কোন দেয়ালে পিঠ ঠেকাবেন টাইগাররা? বিদ্যুৎ চমকের মতন একটি জয়ে কিছুটা আশার বাতি জ্বালিয়ে দর্শকদের ক্ষণিকের আনন্দ দেয়ার পর ফের সেই ধারাবাহিত হারের বার্তা। ২৪ বছর ধরে তো তাই দেখা যাচ্ছে। হারের মধ্যেও যে প্রতিযোগিতা হয়। সে উদ্দম কোথায়। প্রতিযোগিতামূলক হার হলেও ভক্তকুল সেটি মেনে নেয় আনন্দে। ভরসা জোগায় পরবর্তীতে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্রেফ তিন ব্যাটার পৌঁছেছিলেন দুই অঙ্কে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সংখ্যা একটি বাড়লেও নাজমুল হোসেন শান্তর দলের সংগ্রহ উল্টো আরো কমে যায়। প্রতিরোধ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো ঝাঁজই দেখাতে পারেননি স্বাগতিক ব্যাটাররা। তাইজুলের বোলিং ছিল এই সিরিজে ইতিবাচক দিক। ৫২.২ ওভারে ১৯৮ রান খরচায় নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৮২ রান করে মুমিনুল নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন। কাগিসো রাবাদা ৯ ওভারে ৩৭ রানে নিলেন পাঁচ উইকেট আর কেশভ মহারাজ ১৬.৪ ওভারে ৫৯ রান খরচায় নিলেন পাঁচ উইকেট।
যেমন তাইজুল ব্যাটিং করেছে, একটি শতরানের পার্টনারশিপ গড়েছে, তাতে প্রমাণিত হয় আমরা ব্যাট করতে পারি। এখন টপ অর্ডারে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রথম ইনিংসে এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছেন আটজন ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৫৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে এক অঙ্কে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের সংখ্যা একজন কমেছে। তাতে অবশ্য দলীয় সংগ্রহ বাড়েনি। ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১৪৩ রানে। ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স এমন থাকলে ধবলধোলাই না হয়ে উপায় কী! প্রথম টেস্টে হেরেছে সাত উইকেটে।
একের পর এক এমন হারের দৃশ্য দেখে এলেই প্রশ্ন জাগে, কী কারণে টেস্ট খেলে নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনী? টেস্ট যে পাঁচ দিনের খেলা সেই মেজাজ তারা দেখাতে পারেন কই! দুই ইনিংস মিলিয়েও খেলতে পারে না ৯০ ওভার। দল হয়ে খেলতে না পারলে এমনটা বারবার হবে। দলের সাথে যারা জড়িত, তারা ঠিকই উপলদ্ধি করতে পারছেন কোথায় গলদ। কিন্তু না শুধরে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। মনোসংযোগের অভাব নাকি ভিন্ন কোনো ইস্যু তা বের করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। তা না হলে। মনপোড়া সাগরিকা ফিরে আসবে বারবার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা