৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সাগরিকায় বোলারদের আকুতি

-


দর্শক থাকুক অথবা না থাকুক, প্রতিপক্ষ শিবিরে যাই ঘটুক-দক্ষিণ আফ্রিকার সব মনোযোগ নিজেদের দিকেই। ১০ বছর উপমহাদেশে জিততে না পারার দাগ নিয়ে বাংলাদেশে পা রেখেছিল তারা। মিরপুরেই ওই দাগ মুছে গেছে। এখন তাদের চোখ সিরিজ জেতায়। প্রায় সাত মাস পর চট্টগ্রামে টেস্ট হচ্ছে। এ ম্যাচে তারাই চোখ রাঙ্গাচ্ছেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের যেন উল্টোচিত্র চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ। তাই টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিতে দ্বিধা করেননি দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। প্রথম দিনের প্রথম সেশনে সেই মার্করামের উইকেটই বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য। মিরপুরে বাংলাদেশের বোলাররা প্রোটিয়া ব্যাটারদের কাবু করতে পারলেও সাগরিকায় ভিন্ন বার্তা।
ব্যাটিং বেছে নেয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ৬৯ রান। এই জুটি ভাঙতে ১৬তম ওভারেই দুই প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ দেখা গেছে। এইডেন মার্করাম (৩৩) আলগা শটে তাইজুলকে উইকেট উপহার না দিলে জুটিটা আরো দীর্ঘ হতে পারত। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের কোনো বোলার খুব ভালো কিছু করতে পারেননি। কেবল হাসান মাহমুদ রাউন্ড দা উইকেটে বোলিং করে ডি জর্জিকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন কয়েকবার। উইকেট পেলেও প্রথম সেশনের উইকেটে খুব প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি তাইজুল ইসলাম।

শুরুটা খুব ভালো হয়নি আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজেরও। প্রথম সেশনে ২৮ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেটে ১০৯ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনশেষে সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩০৭ রান। দ্বিতীয় দিনে তারা আরো রানের চূড়ায় থাকবে এটা একপ্রকার নিশ্চিত। হতে পারে স্বাগতিক বোলারদের পরীক্ষা নিয়ে ৫০০ রানের উপরে গিয়ে ডিক্লে¬য়ার করতে পারে। দলীয় প্রথম ১০০ রান করতে প্রোটিয়ারা মাত্র ২৫.৩ ওভার খেলে, যা ওয়ানডের মতো। ২০০ রান করে ৫৪.৩ ওভারে আর ৩০০ রান করে ৭৯.৬ ওভারে। এতেই বুঝা যায় বোলারদের কী পরিমাণ প্যারা তারা দিয়েছে। জর্জি ১৪৬ বলে ৮ চার ও দুই ছক্কায় সেঞ্চুরি করেন। অপরাজিত আছেন ১৪১ রানে। স্টাবস সেঞ্চুরি করেন অবশ্য টেস্ট মেজাজে। ১৯৪ বলে ৫ চার ও তিন ছক্কায়। অধিনায়ক মার্করামেরও চাওয়া, ‘আমরা মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিংটা করে যেতে চাই। ভিন্ন কন্ডিশনের আবহে নিজেদেরকে ক্রিজে মানিয়ে নিতে চাই। যাতে সাব কন্টিনেন্টে আমরা নিজেদের ভালোভাবে এডজাস্ট করে নিতে পারি।’

প্রোটিয়া ব্যাটারদের সাজঘরে ফেরানোর অন্তত চারটি সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। নখদন্তহীন বোলিংয়ে উইকেট পাওয়ার সুযোগগুলো নষ্ট না হলে প্রোটিয়া ইনিংসটা হতে পারত অন্য রকম। তন্মধ্যে দু’বার জীবন পাওয়া জর্জি সেঞ্চুরি করে আছেন বহাল তবিয়তে। এর মাঝেও মুমিনুল একটা রেকর্ড গড়েছেন। ওপেনিং জুটিতেই স্কোর বোর্ডে ৬৯ রান জমা করেন এইডেন মার্করাম ও টনি ডি জর্জি। তবে তাদের জুটিটা বড় করতে দেননি তাইজুল ইসলাম। প্রোটিয়া ওপেনার ৩৩ রানে ফিরেছেন মুমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে। এই ক্যাচটি ধরে নতুন রেকর্ড গড়েছেন মুমিনুল। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে উইকেটরক্ষকের বাইরে এখন সর্বোচ্চ ৪০ ক্যাচ তার। ৩৮ ক্যাচ নিয়ে তালিকার দুইয়ে মাহমুদুল্লাহ। তার সমান ৩৮ ক্যাচ ধরেছেন মিরাজও। ইমরুল কায়েস ৩৫ ও সাকিব নিয়েছেন ২৯ ক্যাচ।

দুই পেসার হাসান মাহমুদ ১৩ ওভারে দিলেন ৪৭ রান, নাহিদ রানা সমান ওভারে দুই মেডেনে খরচ করলেন ৩৪ রান। তাইজুল ৩০ ওভারে ১১০ রান খরচায় দু’টি উইকেটও পেলেন। মিরাজ ২১ ওভারে ৯৫ রান দিয়ে থাকলেন উইকেট-শূন্য। আর পার্ট টাইম বোলার মুমিনুল হক ৪ ওভারে দিলেন ১৫ রান।
বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়েছে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংও। নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে টি-২০-এর যুগে চাপ বাড়াতে হয় আঁটসাঁট ফিল্ডিং দিয়ে। গতকাল সেটিও হয়নি। এমন সবকিছুর যোগসাজশে প্রথম দিন শেষে ব্যাকফুটে চলে গেছে বাংলাদেশ। উইকেট থেকেও চোখরাঙ্গানি মিলছে বেশ। দিনের শেষ দিকে সেঞ্চুরির পর স্টাবস তাইজুল ইসলামের যে বলে বোল্ড হলেন, তা প্রত্যাশিত উচ্চতাতে ওঠেনি। উঠলে হয়তো ব্যাটের নিচের কানায় লেগে তা স্ট্যাম্প ভাঙত না। বাংলাদেশের জন্য এমন কিছু অশনিসঙ্কেতেরই বার্তা বহন করে। আজ বোলারদের একাগ্রতা, সঠিক লাইন-লেন্থ এবং ভাগ্যের কিছু সহায়তা থাকলে কিছু একটা হতে পারে। তাদের আকুতি কি শুনবেন সৃষ্টিকর্তা।

 


আরো সংবাদ



premium cement