২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কানপুরেই কি তার শেষ টেস্ট!

-


দুই টেস্ট ও তিনটি টি-২০ ম্যাচ খেলতে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টে পরাজয়ের পর ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের খুঁজে গতকাল কানপুরে মাঠে নেমেছে টাইগার বাহিনী। দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে গত পরশু হঠাৎই টি-২০ ও টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে শেষ হওয়া বিশ্বকাপেই টি-২০-এর শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। আর সম্ভব হলে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা খেলতে চান দেশের মাটিতে। দক্ষিণ আফ্রিকা দল আগামী মাসেই আসছে বাংলাদেশ সফরে। কানপুর টেস্টের আগে সাকিব বলেন, যদি তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়, তিনি শেষ টেস্টটা দেশের মাটিতে খেলতে চান। কিন্তু আদৌ কি ঢাকায় সেই ম্যাচ খেলতে পারবেন বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার!

সাকিবের বাংলাদেশে ফেরার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের কথায়। যিনি স্পষ্ট করেছেন, সাকিবের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না বিসিবি।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সাকিবের নিরাপত্তার বিষয়টি বোর্ডের হাতে নেই। বোর্ড কাউকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা দিতে পারে না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকেই। নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের ওপর মহল থেকে আসতে হবে। বিসিবি কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত সংস্থা নয়। আমরা সরকারের কারো সাথে এ বিষয়ে এখনো কোনো কথা বলিনি। ওর বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন, তাই এ নিয়ে আমরা বেশি কিছু করতেও পারব না। নির্দিষ্ট একজনকে নিরাপত্তা দেয়ার সামর্থ্যও নেই বিসিবির।’

বিসিবি সভাপতি অবশ্য চান সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটি দেশের মাটিতে খেলুন, ‘সাকিব যদি এখান থেকে শেষ টেস্ট খেলতে পারে, ওর মতো আমিও বিশ্বাস করি এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না।’
অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, অক্টোবরে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজই হতে পারে সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। কিন্তু এত ঝক্কি-ঝামেলার পরও ঘরের মাঠে আদৌ কি শেষ টেস্ট খেলতে পারবেন তিনি, নাকি কানপুরে ভারতের বিপক্ষে চলমান ম্যাচটিই হবে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। কারণ নিরাপত্তার অভাব অনুভব করলে তিনি হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে আসবেন না দেশে। সে ক্ষেত্রে কানপুরেই হবে এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শেষ টেস্ট।

সমস্যাটা মূলত তৈরি হয় চলতি বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাকিব এমপি নির্বাচিত হওয়ায়। মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু বৈষমীবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল ও অস্থিরতার পর থেকেই দেশছাড়া সাকিব। ছাত্র আন্দোলনে নীরব ভূমিকা ছিল ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের। ছাত্র ভাইদের রক্তে যেখানে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে, সে সময় তিনি টরোন্টোতে জিরাফ, জেব্রা, সিংহের সান্নিধ্যে পেতে গেছেন। তার বউয়ের ভাষায় তা ছিল, ‘এ ওয়েল স্পেন্ট ডে ইন টরোন্টো’।

সাকিব যেহেতু শাসক দলেরই সদস্য ছিলেন, তাই তার বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছে জনরোষ। সরকার পতনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গার্মেন্টকর্মী রুবেল হত্যার ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় ১৫৬ জন আসামির তালিকায় ২৮ নম্বরে আছেন সাকিব। দেশে ফিরলে গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠিত এই অলরাউন্ডার। গ্রেফতার না হলেও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে দেশত্যাগে। তার পরিবার বর্তমানে বাস করছে যুক্তরাষ্ট্রে। সব দিক দিয়েই নিশ্চয়তা চেয়েছেন বাঁ হাতি এই অলরাউন্ডার।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement