২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট সিরিজ

শুরুর স্বস্তি কেড়ে নিলেন অশ্বিন

৩৪ রানে ৩ উইকেট (রোহিত শর্মা, শুবমান গিল ও বিরাট কোহলি) হারানোর পর বোলারদের যে উচ্ছ্বাসটা ছিল, দিন শেষে অশ্বিন ও জাদেজা তা ম্লান করে দিয়েছেন: ওয়ালটন -

সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে) : ভারত (প্রথম ইনিংস)-৭৮ ওভারে ৩৩৪/৬ (জয়সওয়াল ৫৬, রোহিত ৬, গিল ০, কোহলি ৬, পান্ত ৩৯, অশ্বিন ১০০*, জাদেজা ৮৩*, হাসান ৪/৫৮)

চেন্নাই টেস্টের প্রথম দুই সেশন রাজত্ব করেছে বাংলাদেশই। টস জিতে বোলিংয়ে এসেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন টাইগার বোলাররা। ১৪৪ রানেই ভারতের ৬ উইকেট তুলে নেন হাসান-নাহিদ ও মিরাজ। এর পরই প্রতিরোধ গড়ে তুলেন অশ্বিন-জাদেজা। বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করে অশ্বিন তুলে নেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। সবশেষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই চেন্নাইতেই তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ১০৮ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগার স্পর্শ করেন অশ্বিন। ৮৬ রান নিয়ে তার সাথে অপরাজিত আছেন জাদেজা। সপ্তম উইকেটে এই জুটির সংগ্রহ ১৯৫। ভারতের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান। দিনের প্রথম দুই সেশনে পতন হওয়া ভারতের ৬ উইকেটের মধ্যে ৪টি নিয়েছেন হাসান মাহমুদ, ১টি করে নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
এখন উল্টো চিত্র দেখছে বাংলাদেশ। অশ্বিনের সেঞ্চুরিতে পিষ্ট বাংলাদেশ। একটা সময় যখন ভারতের স্কোর আড়াই শ’ হওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল তখন রবীন্দ্র জাদেজার সাথে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে নিয়ন্ত্রণ এনে দিয়েছেন অশ্বিন। ৭ম উইকেটে রেকর্ড ১৯৫ রানের জুটি গড়ে পেছনে ফেলেছেন শচিন টেন্ডুলকার ও জহির খানের ১৩৩ রানের জুটিকে। ২০০৪ সালে ১০ম উইকেটে ঢাকায় এই জুটি গড়েছিলেন শচিন-জহির। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ম কিংবা তার নিচে এখন সর্বোচ্চ জুটির মালিক জাদেজা-অশ্বিন।
গতকাল চেন্নাই এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে টস জিতে বোলিং নেয় বাংলাদেশ। নতুন বল হাতে নিয়ে শুরুতেই ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নিতে থাকেন হাসান। ছোট ছোট সুইংয়ে বল ভেতরে ঢুকিয়ে ব্যাটারদের বেকায়দায় ফেলতে থাকেন। রোহিত শর্মা তার বলে একবার এলবিডব্লিউর হাত থেকে আম্পায়ার্স কলে বেঁচে গেলেও থিতু হতে পারেননি। অ্যাঙ্গেলে পরাস্ত করে ভারতের অধিনায়ককে স্লিপে ক্যাচ বানান হাসান। ১৯ বলে ৬ রান করে ফেরেন রোহিত।
তিনে নামা শুবমান গিল রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তিনি অবশ্য ফেরেন আলগা শট খেলে। হাসানের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে জমা পড়েন ৮ বল খেলা গিল। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পরিস্থিতিতে দলকে ভরসা দিতে পারেননি বিরাট কোহলি। ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার হাসানের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লিটনের গ্লাভসে থামেন। দশম ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। নিজের টানা তিন ওভারে উইকেট নেয়ার উল্লাসে মাতেন হাসান।
এরপর দুই বাঁ হাতি যশস্বী জয়সওয়াল ও ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা রিশভ পান্ত মিলে প্রতিরোধ গড়েন। বিশেষ করে ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে সেরে ওঠা পান্ত খেলতে থাকেন চেনা ঢঙে। ৩ উইকেটে ৮৮ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ভারত। চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৯৯ বলে ৬২ রান। জুটি ভাঙেন হাসানই। মধ্যাহ্ন বিরতির পর পান্ত-জয়সওয়ালের জুটি আর বেশি এগোয়নি। থিতু থাকা পান্ত অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে দেন লিটনের হাতে ক্যাচ। ৫২ বলে ৬ চারে ৩৯ করে ফেরেন তিনি।
তরুণ জয়সওয়াল দলের হাল ধরে রেখেছিলেন। রয়েসয়ে খেলে ৯৫ বলে তুলে নেন ফিফটি। এই ব্যাটারকে গতিতে পরাস্ত করেন পেসার নাহিদ রানা। ঘণ্টায় দেড় শ’ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিতে বল করে স্লিপে ক্যাচ বানান ৫৬ করা ওপেনারকে। ১১৮ বল মোকাবেলায় ৯ চার মারেন তিনি। ৯৮ বলে ৪৮ রানের জুটি ভাঙার পরের ওভারেই আরেক ধাক্কা খায় ভারত। স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ধুঁকতে থাকা লোকেশ রাহুল। ৫২ বলে তিনি করেন ১৬ রান। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখনো দিশেহারা স্বাগতিকরা।
ওই অবস্থায় অশ্বিন ক্রিজে গিয়েই হাত খুলে খেলতে থাকেন। বাংলাদেশের ক্লান্ত বোলারদের চেপে বসতে না দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন। ১৭৬ রান নিয়ে চা বিরতিতে থেকে ফিরে অশ্বিন ও জাদেজার কাঁধে ভর দিয়ে শেষ সেশনে বিনা উইকেটে ১৬৩ রান করে ভারত। এই সময়ে ৩২ ওভারে গড়ে ৫.০৯ গড়ে ওঠে রান। অশ্বিনই আগে ৫৮ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। জাদেজা হাফ সেঞ্চুরি পান ৭৩ বলে। বাংলাদেশকে হতাশ করে তাদের জুটি শতরানে পৌঁছায় ১১৪ বলে। টেস্টে সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের আগের সর্বোচ্চ ছিল ১২১। ২০০০ সালে সৌরভ গাঙ্গুলি ও সুনীল যোশির গড়া সেই জুটি পেরিয়ে যান অশ্বিন ও জাদেজা। দিনের দুই ওভার বাকি থাকতে মাত্র ১০৮ বলে অশ্বিন পূরণ করেন সেঞ্চুরি।
সারাদিন বাংলাদেশের ওভার রেট ছিল খুবই ধীরগতির। প্রথম দুই সেশনে মোট বোলিং হয় মাত্র ৪৮ ওভার। আধা ঘণ্টা সময় বাড়িয়েও দিনশেষে ১০ ওভারের ঘাটতি থেকে যায়। আর হাসান ছাড়া বাংলাদেশের বাকি বোলাররা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। সাকিব আল হাসান আক্রমণে আসেন ৫৩তম ওভারে। তার বোলিংয়ে ছিল না চেনা ধার।


আরো সংবাদ



premium cement