১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নবী সা:-কে ভালোবাসা

-


আমরা রাসূল সা:-কে আমাদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। সেই ভালোবাসার প্রকৃতি কী? কী জন্য আমরা ভালোবাসি? ভালোবাসা বলতে কী বুঝি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজ করার জন্য আমি কয়েকটি ভালোবাসার ধরন এখানে উল্লেখ করলাম। যেমন- আমরা মাকে ভালোবাসি, কারণ তিনি আমাকে ১০ মাস পেটে ধারণ করেছেন, আড়াই বছর বুকের দুধ দিয়ে আমার পুষ্টির জোগান দিয়েছেন, বুকে ধারণ করে শিশু থেকে যৌবনে পৌঁছে দিয়েছেন। আর আল্লাহর নির্দেশনা তো আছেই। বাবাকে ভালোবাসি, কারণ বাবার সব ঘাম ঝরানো পরিশ্রম ছিল আমার জন্যই। ভাইবোনকে ভালোবাসি, কারণ তারা একই মায়ের পেট থেকে একই রক্তে-মাংসে গড়া। স্ত্রীকে ভালোবাসি, কারণ সে হলো, আমার জীবন চলার পথে একান্ত সাথী। সন্তানদের ভালোবাসি কারণ এরা আমার হৃদয়ের গ্রন্থি এবং আমার পরবর্তী প্রজন্ম। শিক্ষক-ওস্তাদকে ভালোবাসি, কারণ তারা আমার আলোকিত পৃথিবীর পথপ্রদর্শক। সব মুসলিম উম্মাহকে ভালোবাসি কারণ এরা আমার শরীরের অঙ্গ-পতঙ্গের মতো হৃদয়ের অংশ। এখানে লক্ষণীয় যে, একজনের ভালোবাসার কারণ অন্যজন থেকে ভিন্ন। এখন আপনার জন্য সহজ হবে, বলুন কেন কী কারণে আমরা রাসূল সা:-কে ভালোবাসি?

আমরা আল্লাহকে ভালোবাসি কারণ তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের রব, আমাদের মনিব, আমরা তার গোলাম। তিনি সার্বিকভাবে আমাকে লালন-পালন করেন, খিদে পেলে তিনি আমাদের খাওয়ান, তৃষ্ণার্ত হলে পান করান, অসুস্থ হলে শেফা দেন, আপদে-বিপদে তিনিই আমাদের রক্ষা করেন। দু’টি চোখে পৃথিবীর আরো যত নিয়ামত আমরা দেখি বা ভোগ করে থাকি, তা আমাদের সেই মহান প্রভুই জোগান দিয়ে থাকেন। তাঁর প্রেরিত মানবতার মহান বন্ধুকে ভালোবাসি ঈমানের অংশ হিসেবে। কারণ তিনি আল্লাহর রাসূল ও বান্দা। তাঁর মাধ্যমেই আমরা ইসলামী জীবনব্যবস্থা পেয়েছি। তাঁকে ভালোবাসি দ্বীনের জন্য।
সত্যিই তো আমরা এমন একজন মূল্যবান নবীকে পেয়ে বা তাঁর উম্মত হতে পেরে সার্বক্ষণিক আনন্দিত এবং মহান রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করি যিনি দয়া করে আমাদের শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত করেছেন। রাসূল সা:-কে ভালোবাসতে হবে তাঁর সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে। প্রতিদিনই বলতে হবে, ‘রাজিতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল ইসলামে দিনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন রাসূলান।’ অর্থাৎ- আল্লাহকে রব হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সা:-কে রাসূল হিসেবে পেয়ে আমি খুশি।’

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে নবী! তুমি বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ তা ছাড়া স্বয়ং নবী সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর জন্য গ্রহণ করো এবং আল্লাহর জন্যই ত্যাগ করো।’ এটিই হলো, রাসূল সা:সহ মুসলিম উম্মাহকে ভালোবাসার প্রকৃত মানদণ্ড আর এই কারণেই আমরা রাসূল সা:-কে ভালোবাসি। অর্থাৎ রাসূল সা:-এর প্রতি ভালোবাসা হলো দ্বীনের জন্য তথা ইসলামী জীবনব্যবস্থার জন্য, যেই দ্বীন আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক মনোনীত, যেই জীবনব্যবস্থা অন্যান্য জীবনব্যবস্থার ওপর বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ তাঁর নবীকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে সেই জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এ জন্য তাঁকে পাহাড়সম বিশাল বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। নিজের পরিবার, সমাজ ও কায়েমি স্বার্থবাদীদের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। মরুভূমির তপ্ত বালিকায় নিজের রক্ত ঝরাতে হয়েছে। ‘শি’বে আবু তালিব’-এ জেল জীবন বরণ করতে হয়েছে। একটি ইসলামী সমাজের মডেল প্রদর্শনের জন্য নিজের প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছে। সেখানে তিনি একটি পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ কায়েম করে পৃথিবীবাসীর সামনে তার সুফল বাস্তবে দেখিয়ে গেছেন।

রাসূল সা: সেই দায়িত্ব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দিয়ে গেছেন এবং এ দায়িত্ব বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকেই পালন করতে হবে। এই দায়িত্ব পালন করা হলে কেবল রাসূল সা:-এর প্রতি ভালোবাসার দাবি করা যাবে। অর্থাৎ রাসূলকে ভালোবাসা মানে তাঁর কাজকে ভালোবাসা, রাসূলকে ভালোবাসা মানে তাঁর অনুসরণে দাওয়াতে দ্বীনের জন্য ইস্পাত-কঠিন ঈমান, প্রজ্ঞা এবং সার্বিক প্রচেষ্টা নিয়োগ করা। রাসূলের সুন্নাহ অনুসারে তাঁর মিশনকে এগিয়ে নেয়ার সব প্রচেষ্টাই হবে আশেকে রাসূলের প্রকৃত কাজ। সুন্নাহর অনুসরণ বলতে এই প্রচেষ্টার সমষ্টিকেই বুঝায়।
আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে রাসূল সা:-কে প্রেরণ করেছিলেন এই দায়িত্ব দিয়ে যে, তিনি আল্লাহর একক ও অবিভাজ্য সার্বভৌমত্বের অধীনে সব প্রকার বাতিল ব্যবস্থাকে উৎখাত করে একটি নতুন নিরাপদ পৃথিবী রচনা করবেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূলকে যেই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন, সেই উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হলেই নিজেকে আশেকে রাসূল দাবি করা যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহই তো সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে সব দ্বীনের ওপর বিজয়ী করে দেন। আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।’ (সূরা আল ফাতাহ-২৮) আল্লাহর পক্ষ থেকে যে হেদায়াত তথা আল কুরআন ও সত্য দ্বীন তিনি পেয়েছেন তা মানুষের গোটা জীবনব্যবস্থার প্রত্যেকটি বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে কেবল আল্লাহর আনুগত্য ও বিধান বিজয়ী ছিল। সেখানে আল্লাহর আনুগত্য ও বিধানের বিপরীত সব প্রকার চিন্তা-চেতনা নামমাত্রও ছিল না। আর এটিই তাঁর কাজ এবং এ কাজ তাঁকে অবশ্যই করতে হয়েছে।
লেখক : প্রবন্ধকার ও গবেষক

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার যুদ্ধে ‘প্রকৃত বিরতির’ আহ্বান ব্লিংকেনের পার্লমেন্টে আস্থা ভোট দেবেন জার্মান চ্যান্সেলর বাতাসে কদবেলের ঘ্রাণ! জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইউক্রেনকে আরো সহায়তা দিতে ব্লিংকেনের প্রতিশ্রুতি ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান হলের সিট বণ্টন নিয়ে উত্তপ্ত কুবি, প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে মুখরোচক খাবারে সরগরম লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে ভারতের লাভ? মন্ত্রিসভায় চীন-পাকিস্তানবিরোধী ব্যক্তিরা! লড়াই করেও ভারতের কাছে হেরে গেল দ. আফ্রিকা

সকল