০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বৃক্ষরোপণ

-

দাদু আরমান সাহেব এশার নামাজের পর টিভির সামনে বসেন। উদ্দেশ্য দেশের বন্যা পরিস্থিতি জানা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। আরমান সাহেবের বাড়ি গ্রামে। এখানে কোনো পত্রিকা পাওয়া যায় না। পত্রিকা পেতে হলে ছয় কিলোমিটার দূরে বালিগাঁও যেতে হয়। কারো কাছে পত্রিকা আনতে টাকা দিলে সে এসে বলে, আনতে ভুলে গেছি দাদা বা কাকা বলে কেটে পড়ে। তখন আরমান সাহেবের মনটা একেবারে বিগড়ে যায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর এ কথা শুনে।
একবার কলমা বাজারের কিছু দোকানদার এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের জন্য পত্রিকা আনার জন্য ব্যবস্থা করছিলেন তিনি। কয়েক মাস দেয়ার পর হকার বলে, আরো কিছু পত্রিকা গ্রাহক না বাড়ালে আমার পোষাবে না। চেষ্টা করে আরমান সাহেব গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। পত্রিকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। আরমান সাহেব মনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন মানুষ এত টাকা খরচ করে অথচ মাসে ২০০-৩০০ টাকা পত্রিকা পড়ার পেছনে খরচ করবে সে মন-মানসিকতা এখনো গড়ে ওঠেনি এখানে। তার আশপাশে অনেক শিক্ষিত ভদ্রলোক আছে কিন্তু পত্রিকা পড়ার ব্যাপারে একবারে উদাসীন।
আরমান সাহেব দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। তার এলাকার লোকজন একটু ব্যতিক্রম সংস্কৃতিমনার অভাব রয়েছে তাদের মধ্যে। এ নিয়ে ভাবেন তিনি। শিল্প সংস্কৃতি হলো মানুষের প্রাণ। আর প্রাণই না থাকে তাহলে তো সে মৃত মানুষের সমান। সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত পত্রিকা পড়েছেন সে অভ্যাস রয়ে গেছে তার। ঘরে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে তার। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ধর্মীয় বই রয়েছে। নামকরা দেশ-বিদেশের লেখকের বই রয়েছে তার সংগ্রহে। এক বই কতবার পড়বেন!
শহরে গেলে নতুন বই কিনে আনেন তিনি। দুই-তিন দিনে পড়ে শেষ করে ফেলেন। মাঝে মধ্যে স্থানীয় বাজারে শহীদ মফিজ জয়নাল স্মৃতি পাঠাগার যান, সেখানে গিয়ে সন্ধ্যায় বই পড়েন। বয়সের কারণে সেখানে মাঝে মধ্যে যাওয়া হয় না। তাছাড়া ঘরে বসে পত্রিকা, বই পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। টিভির খবর দেখার সময় মাঝে মধ্যে নাতি উহান এসে হাজির। বয়স আট বছর। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। একটু চঞ্চলতা আছে তার মধ্যে।
দাদু তুমি কি দেখো?
দাদু বলে, খবর দেখছি দাদা ভাই। দাদু, খবর ভালো লাগে না। কার্টুন দাও। একটু পর দেই দাদা ভাই। দেখো কত পানি! মানুষের ঘর-বাড়ি ভেসে যাচ্ছে। পানির তোড়ে বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। উহান টিভির দিকে তাকিয়ে- ঘর-বাড়ি ভেসে যাচ্ছে কেন দাদু?
দাদু বলে, বন্যার কারণে দাদাভাই।
বন্যা কেন হয় দাদু? উহান জিজ্ঞেস করলো।
দাদু বললো, নানা কারণে বন্যা হয়। আমাদের দেশ নিচু। উজানে বেশি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে আমদের দেশে বন্যা দেখা দেয়। তাছাড়া কত দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দেয়। আরো কিছু কারণ আছে- খাল-বিল, পুকুর, জমি ভরাট করে রাস্তা, ঘর-বাড়ি তৈরি করছে মানুষজন। পানি চলাচলের বাধা সৃষ্টি করে ফলে লোকালয়ে এসে পড়ে তখন বাড়ি-ঘর রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যায় এবং নদীপাড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। আমরা গাছ কেটে বন উজাড় করে দিচ্ছি, এ জন্য পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে খরা, ঝড় তুফানের সৃষ্টি হয়। দাদু,কিছু দিন আগে রেমাল নামে ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেল আমাদের দেশে। আমাদের দেশের সুন্দরবনের অনেকগুলো হরিণ মারা গেছে।
উহান বলে, আমরা বেশি করে গাছ লাগাব দাদু।
হ্যাঁ, আমরাও গাছ লাগাব দাদু। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের উচিত বাড়ির আশপাশে খালি জায়গায় বনজ-ফলদ গাছ লাগানো।
প্রতি বছর সরকার জুন মাসে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা পয়সায় গাছ বিতরণ করে।
উহান বলে, দাদু আমিও একটি গাছ লাগাব।
দাদু বলে, হ্যাঁ তুমিও গাছ লাগাবে। আগামীকাল বালিগাঁও হাটে গিয়ে কিছু গাছ আনব, তার মধ্যে একটি তালগাছ আনব। তুমি তালগাছ লাগাবে। বাড়িতে তালগাছ থাকলে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
উহান খুশি হয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলে- আমরা বেশি করে গাছ লাগাব দাদু।


আরো সংবাদ



premium cement
এ সরকার জনপ্রত্যাশার কী করবে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

সকল